ঈমান ভঙ্গের কারণ সমূহঈমান ভঙ্গের কারণ সমূহঈমান ভঙ্গের কারণ সমূহঈমান শব্দের অর্থ হলো বিশ্বাস। একজন প্রকৃত মুমিন হতে হলে সর্ব প্রথম ঈমান ঠিক করতে হবে। ইসলামের সকল বিধি বিধান মেনে চলতে হবে। কিছু কথা বা কাজ আছে যার কারণে ঈমান নষ্ট হয়ে যায় ,কোনো ব্যক্তি যদি ঈমান আনার পরে ওগুলো করে থাকে তাহলে তার ঈমান আর থাকবে না।
মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষকে হেদায়াতের জন্য যুগে যুগে অসংখ্য নবী রাসূল প্রেরণ করেছেন। যারা নবীদের অনুসরণ করবে তারা সৎপথ পাবে। আর যারা তাঁদের অনুসরণ করবে না কিংবা অবাধ্যতা বা বিরোধিতা করবে তারা পথভ্রষ্টতায় নিপতিত হবে।
এছাড়াও এমন কিছু কাজ-কর্ম রয়েছে, যা মুসলমানের ঈমান ধ্বংস করে দেয়, তাকে ‘মুরতাদে’ পরিণত করে তথা ইসলাম থেকে খারিজ করে দেয়।
অনেক কারণে ঈমান নষ্ট হয়ে যায়। তার মধ্যে কিছু কারণ উল্ল্যেখ করা হলো :
১। আল্লাহর সাথে শিরক করা
ঈমান ভঙ্গের কারণ সমূহের মধ্যে সবচে বড় শিরক শব্দের অর্থ হলো শরিক বা অংশীদার করা। মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিনের সাথে অন্য কাওকে শরিক করাকে শিরক বলে থাকে। মহান আল্লাহ তায়ালা শিরক কারীকে কখনো ক্ষমা করবে না। মৃত্যুর পরে তার স্থান হবে জাহান্নামে।
মহান আল্লাহ তায়ালা শিরক কারী সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে অনেক গুলো আয়াত নাজিল করেছেন। তার মধ্যে একটি হলো ,নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সঙ্গে অংশীদার করা ক্ষমা করেন না। তা ব্যতীত অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন; এবং যে কেউ আল্লাহর সঙ্গে শিরক করে সে এক মহাপাপ করে।(সূরা নিসা ,আয়াত নং : ৪৮)
অন্য আয়াতে বলেছেন ,কেউ আল্লাহর সঙ্গে শিরক করলে অবশ্যই আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করবেন এবং তার আবাস জাহান্নাম। আর জালিমদের জন্য কোনো সাহায্যকারী নেই।’ (সূরা মায়িদা ,আয়াত নং : ৭২)
আরেকটি আয়াতে বলেছেন ,‘আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য স্থির কর না। তাহ’লে নিন্দিত ও (আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে) বিতাড়িত অবস্থায় জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে’ (সূরা বানী ইসরাঈল ,আয়াত নং : ৩৯)
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন ,‘যে কেউ আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যকে ডাকে, যার কোন সনদ তার কাছে নেই, তার হিসাব তার পালনকর্তার নিকটে রয়েছে। নিশ্চয়ই কাফিররা সফলকাম হবে না’ (সূরা মুমিনূন ,আয়াত নং : ১১৭)।
২। আল্লাহ এবং বান্দার মাঝে কাউকে মাধ্যম তৈরী করে তাকে ডাকে এবং তার নিকট শাফায়াত কামনা করে।
মহান আল্লাহকে ছেড়ে অন্য কারো ওপর ভরসা করা কুফরী। অনেকে পীর ,অলি আউলিয়ার ওপর ভরসা করে তাদেরকে সুপারিশকারী হিসেবে গ্রহণ করে ,তারা মনে করে পীর ,অলি আউলিয়া তাদেরকে নিয়ে জান্নাতে যাবে। যদি কোনো ব্যক্তি এরকম করে তাহলে শিরক করা হবে।
একমাত্র আল্লাহ তায়ালার ওপর ভরসা রাখতে হবে ,না হলে ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে। কারণ শাফায়াতের মালিক একমাত্র মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন।
মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন ,‘তারা আল্লাহকে ব্যতীত যার ইবাদাত করে তা তাদের ক্ষতিও করতে পারে না, উপকারও করতে পারে না। তারা বলে, এরা আল্লাহর নিকট আমাদের সুপারিশকারী। বল, তোমরা কি আল্লাহকে আকাশমণ্ডলি ও পৃথিবীর এমন কিছুর সংবাদ দিচ্ছ, যা তিনি জানেন না? তিনি মহান, পবিত্র এবং তারা যাকে শরিক করে তা হতে তিনি ঊর্ধ্বে।’ (সুরা ইউনুস, আয়াত নং : ১৮)
৩। যদি কোন মুসলিম ব্যক্তি মুশরিকদেরকে কাফির মনে না করে অথবা তাদের কুফরীর ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে অথবা তাদের মতবাদসমূহ সঠিক মনে করে
মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন ,নিশ্চয়ই মুশরিকরা অপবিত্র। (সূরা তওবা ,আয়াত নং : ২৮) মুশরিক ব্যক্তিরা যে কথা বলে তা সত্যিক মনে করলে ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে।
মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে আরো বলেছেন ,‘তোমরা মুশরিক নারীদেরকে বিবাহ কর না, যতক্ষণ না তারা ঈমান গ্রহণ করে। অবশ্য মুসলিম ক্রীতদাসী মুশরিক নারী অপেক্ষা উত্তম, যদিও তাদেরকে তোমাদের কাছে ভাল লাগে।
তোমরা কোন মুশরিক পুরুষের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ো না, যে পর্যন্ত না সে ঈমান আনে। একজন মুসলমান ক্রীতদাসও একজন মুশরিকের তুলনায় অনেক ভাল, যদিও তোমরা তাদের দেখে মোহিত হও। তারা জাহান্নামের দিকে আহবান করে’ (সূরা বাক্বারাহ ,আয়াত নং : ২২১)।
৪। হজরত মুহাম্মদ (সা) এর দেখানো পথ ব্যতীত অন্য কোনো পথ উত্তম মনে করে
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) যে কথা বলেছেন ও কাজ করেছেন তা সবই সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। নবী (সা) এর দেখানো পথ অনুসরণ করলে সেগুলো মেনে চললে মহান আল্লাহ তায়ালা অনেক খুশি হন। যদি কোনো ব্যক্তি নবী (সা) এর দেখানো পথ উত্তম মনে না করে অন্য পথ অনুসরণ করে তাহলে তার ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে।
মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন ,‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার নারী-পুরুষের সে বিষয়ে ভিন্ন সিদ্ধান্তের অধিকার নেই। যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হবে (সূরা আহযাব ,আয়াত নং : ৩৬)
৫। মুহাম্মাদ (সা.) আনীত কোনো বিধানকে অপছন্দ করা
মুহাম্মদ (সা) তার উম্মতের জন্য যে বিধান গুলো করেছেন তা সবই মহান আল্লাহ তায়ালার নির্দেশেই করেছেন। সেগুলোকে অপছন্দ করলে ঈমান থাকবে না।
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন ,আর যারা কাফির তাদের জন্য রয়েছে দুর্গতি এবং তিনি তাদের কর্ম বিনষ্ট করে দিবেন। এটা এজন্য যে, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তারা তা পসন্দ করে না। অতএব তাদের কর্মসমূহ আল্লাহ ব্যর্থ করে দিবেন’ (সূরা মুহাম্মদ ,আয়াত নং : ৮ -৯ )
৬। দীনের কোনো বিধান নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা
যারা ইসলাম বা ইসলামের কোনো বিধান নিয়ে ঠাট্টা – বিদ্রুপ করে তাহলে তার ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে। এরূপ ব্যক্তিদের সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে না হলে তাদের মতোই ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে।
এসম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন ,যখন আল্লাহর আয়াত সমূহের প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন ও বিদ্রূপ করতে শুনবে, তখন তোমরা তাদের সাথে বসবে না, যতক্ষণ না তারা প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে। অন্যথা তোমরাও তাদেরই মত হয়ে যাবে। আল্লাহ মুনাফিক ও কাফিরদেরকে জাহান্নামে একই জায়গায় সমবেত করবেন’ (সূরা নিসা ,আয়াত নং : ১৪০)।
৭। জাদু করা ঈমান ভঙ্গের কারণ সমূহ এর মধ্যে উন্নতম
জাদুকর ব্যক্তি এবং যে ব্যক্তি তার জাদুর ওপর সন্তুষ্ট থাকবে তারা উভয়ই কুফরী করল। তাদের উভয়ের ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ তায়ালা জাদুকে কুফরী ও শয়তানি মনে করেন। কারণ শয়তানরাই মানুষকে জাদু শিক্ষা দিত।
আবু হুরাইরাহ (রা) হতে বর্ণিত ,হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেন ,‘তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক জিনিস থেকে বেঁচে থাক। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ঐ ধ্বংসাত্মক জিনিসগুলো কি? তিনি বললেন, (১) আল্লাহর সাথে শিরক করা (২) যাদু করা (৩) অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা, যা আল্লাহ হারাম করে দিয়েছেন (৪) সূদ খাওয়া (৫) ইয়াতীমের সম্পদ আত্মসাৎ করা (৬) যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করা (৭) সতী-সাধ্বী মুমিন মহিলাকে অপবাদ দেয়া’
৮। মুসলিমদের বিরুদ্ধে মুশরিকদের সমর্থন ও সহযোগিতা করা
`যদি কোনো মুসলিম ব্যক্তি মুশরিকদের সাহায্য করে তাহলে তার ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন ,‘তোমাদের মধ্যে যে তাদের (বিধর্মীদের) সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে। আল্লাহ তা‘আলা যালিমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না’ (সূরা মায়িদা ,আয়াত নং : ৫১)
৯। কাউকে দীন-শরিয়তের ঊর্ধ্বে মনে করা
যারা দীন ত্যাগ করে অন্য কোনো ধর্ম কে বড় মনে করে তার ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন ,যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য ধর্মকে গ্রহণ করবে তার কোন আমল গ্রহণ করা হবে না এবং সে আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (সূরা আলে ইমরান ,আয়াত নং : ৮৫)।
১০। দীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া ঈমান ভঙ্গের কারণ সমূহ
‘যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের নিদর্শনাবলি দ্বারা উপদিষ্ট হয়েও তা হতে মুখ ফিরিয়ে নেয় তার অপেক্ষা অধিক অপরাধী আর কে? আমি অবশ্যই অপরাধীদের শাস্তি দিয়ে থাকি।’ [সুরা সাজদা, আয়াত নং : ২২