সাহরী ও ইফতারে আমরা যে ভুল গুলো করে  থাকি  

রমজান মাস হলো সিয়াম সাধনার মাস। সাহরী ও ইফতার হলো রোজার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সাহরীর মাধ্যমে আমরা রোজার শুরু করে থাকি আর ইফতারের মাধ্যমে রোজার সমাপ্তি করে থাকি। 

আমরা অনেকেই আশেপাশের অনেকে রোজা রাখে বলে তাদের দেখাদেখি রোজা করে থাকি। রোজাকে ইবাদাতের বদলে অনুষ্ঠানে মনে করে সেভাবে চলতে থাকি। 

আবার অনেকে ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা রাখে না। যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা না করে তাহলে ওই ব্যক্তির জন্য রোজার কাজ বা কাফ্ফারা আদায় করতে হবে। রোজার কাফ্ফারা হলো একটি রোজার জন্য একটানা ৬০ টি রোজা রাখতে হবে। এই ৬০ দিনের মধ্যে একদিন বাদ পড়লে বা ভেঙ্গে ফেললে পুনরায় আবার ৬০ টি রোজা রাখতে হবে। 

যদি কেও মনে করে একাধারে ৬০ টি রোজা রাখা সম্ভব নয় বা ৬০ টি রোজা একাধারে রাখলে অসুস্থ হয়ে পরবে সেক্ষেত্রে অন্য কাফ্ফারা আদায় করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কাফ্ফারা হলো ৬০ জন মিসকীনকে একবেলা পরিপূর্ণভাবে খাবার খাওয়াতে হবে। তাহলে রোজার কাফ্ফারা আদায় হবে। 

অনেকেই রোজা রাখি কিন্তু সাহরী ও ইফতারের সঠিক নিয়ম জানি না। যার ফলে রোজা রেখেও ভুলের কারণে আমাদের রোজা সঠিক হয় না। আমাদের সবার উচিত রোজার পরিপূর্ন নিয়ম জেনে এবং তা পালন করে শুদ্ধ ভাবে রোজা রাখা। 

সাহরী ও ইফতারের সময় কখন শুরু ও শেষ হবে তা ইসলাম শরীয়তে স্পষ্ট করে বলা আছে। নিজের ইচ্ছামত ধারণা পোষণ না করে ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক চলে ইফতার ও সাহরী করতে হবে। সাহরী ই ইফতারে আমরা যে ভুল গুলো করে থাকি সেগুলো নিম্নে বর্ণনা করা হলো : 

ইফতারে যে ভুল গুলো করে থাকি 

১। ইফতারে বিলম্ব করা। 

ইফতারের সময় হলে সাথে সাথে ইফতার করতে হবে এটাই সঠিক নিয়ম। আমরা অনেকেই সাংসারিক বা অন্য কাজে ব্যস্ত থাকলে ইফতার দেরিতে করে থাকি। মনে করে থাকি  সারা দিন না খেয়ে থাকতে পারলে এখনো আর একটু সময় থাকতে পারব। কোনো সমস্যা হবে না। 

এভাবে ইফতার করা যাবে না। ইফতারের সময় হলে সাথে সাথে ইফতার করে নিতে হবে। হাদিস শরীফে বলা হয়েছে , আমাদের প্রায় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন , দ্রুত ইফতারকারী কল্যাণ লাভ করতে থাকে। ’ (সহিহ বোখারি ও মুসলিম)

২। আজান শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা  করা 

আজান দিলেই ইফতার করতে হবে। অনেকে আজান শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে বসে থাকি। আবার অনেকে মনে করে থাকে নিজ এলাকায় যখন আজান দিবে তখন ইফতার করবো তার আগে নয়। 

অন্য জায়গাতে আজান শুনেও ইফতার না করে নিজ  এলাকায় আজানের জন্য অপেক্ষা করে থাকি। যেকোনো জায়গাতে আজান শুনলেই ইফতার করে নিতে হবে। 

৩। ইফতারের সময় আজানের উত্তর না দেওয়া 

আজানের উত্তর দেওয়া সুন্নত। কিন্তু ইফতারের সময় আজানের উত্তর দেওয়া যাবে না। তখন উচিত হলো ইফতারের নিয়ত করে ইফতার করা এবং ইফতার শেষ করে ইফতারের দোয়া পাঠ করা। 

৪। ইফতারের আগে দোয়া না করা 

মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন বান্দার দোয়া সব সময় কবুল করেন। কিছু কিছু সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন ,ওই সময় গুলোতে দোয়া করলে মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন সাথে সাথে কবুল করে নেন। 

তার মধ্যে একটি সময় হলো ইফতারের আগের দোয়া। এই সময় সকল বান্দার দোয়া মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন সাথে সাথে কবুল করে নেন। 

হাদিস শরীফে বলা হয়েছে , রাসূল (সা.) বলেছেন, তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। পিতামাতার দোয়া, রোজাদারের দোয়া ও মুসাফিরের দোয়া। ’ (মুসনাদে আহমদ)

অথচ আমরা এই সময়টাতে উদাসীন ভাবে কাটাই। বিশেষ করে মেয়েরা ,তখন সাংসারিক কাজে ব্যস্ত থাকে। 

আমাদের উচিত এই সময় টা  অবহেলায় না কাটিয়ে সঠিক ভাবে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া পাঠ করা। 

৫। ইফতারে অধিক  সময় ব্যয় করে নামাজে দেরি করা 

দ্রুত ইফতার করে নামাজ আদায় করতে হবে। অনেকে ইফতারের সময় অতিরিক্ত খাবারের আয়োজন করে। যার কারণে ইফতার করতে করতে নামাজের সময় পার হয়ে যায়। 

হাদিস শরীফে বলা হয়েছে ,হজরত ইবনে আতিয়্যা (রা.) থেকে বর্ণিত , রাসূল (সা.) সামান্য ইফতার গ্রহণ করে দ্রুত নামাজ আদায় করে নিতেন। (সহীহ মুসলিম )

সাহরীর সময় আমরা যে ভুলগুলো করে থাকি 

১। সাহরী না করা 

সাহরীর জন্য পরিমিত সময় ও ঘরে খাবার থাকার পরেও ইচ্ছাকৃত ভাবে সাহরী না করে রোজা রাখা। আমাদের উচিত শরীর সময় সাহরী করে রোজা রাখা। 

সাহরীর  সময় সাহরী না করে রোজা রাখলে অন্য জাতির মতো উপোস থাকা হবে। অন্য জাতির মানুষ ও রোজা রাখে। তাদের সাথে আমাদের রোজার প্রার্থক্য হলো সাহরী করা। 

আমরা সাহরী করে রোজা রাখি আর অন্য জাতির মানুষ সাহরী করে না। হাদিস শরীফে ,হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সাহরি করার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, আমাদের ও অন্যান্য কিতাবের অধিকারী জাতির (ইহুদি ও খ্রিস্টান) রোজার পার্থক্য সাহরি খাওয়া। (সহিহ মুসলিম)

২। আজান শোনার পরেও খেতে থাকা 

আজান শোনার পরে আর খাওয়া যাবে না। আজান শোনার সাথে সাথে খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে। না হলে রোজা শুদ্ধ হবে না। 

হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাহরি ও নামাজের মাঝে পঞ্চাশ আয়াত তেলাওয়াত পরিমাণ সময় অবশিষ্ট থাকতো। (সহীহ বুখারী )

আধুনিক যুগের ইসলামি স্কলারদের মতে পঞ্চাশ আয়াত তারতিল তথা যথা নিয়মে ধীরস্থিরভাবে তেলাওয়াত করতে বিশ মিনিট সময় প্রয়োজন হয়।

Sharing Is Caring:

Leave a Comment