উচ্চারণ সহ চার কুল এবং এর ফজিলত 

পবিত্র কুরআন মজীদে ১১৪ টি সূরা রয়েছে। প্রতিটি সূরা অনেক মর্যাদাপূর্ণ। কিছু সূরা আছে যেগুলোর ফজিলত আরো অনেক বেশি। এই ফজিলতপূর্ণ সূরার মধ্যে সূরা কাফিরুন ,সূরা ইখলাস ,সূরা নাস ,সূরা ফালাক অন্যতম। এই চারটি সুরাকে একসঙ্গে ৪ কুল বলা হয়। 

সূরা কাফিরুন পবিত্র কুরআনের ১০৯ তম সূরা। এর আয়াত সংখ্যা ৬ এবং রুকু সংখ্যা ১। সূরা ইখলাস পবিত্র কুরআনের ১১২ তম সূরা। এর আয়াত সংখ্যা ৪এবং রুকু সংখ্যা ১। সূরা ফালাক পবিত্র কুরআনের ১১৩ তম সূরা। এর আয়াত সংখ্যা ৫এবং রুকু সংখ্যা ১। সূরা নাস পবিত্র কুরআনের সর্বশেষ ১১৪ তম সূরা। এর আয়াত সংখ্যা ৬এবং রুকু সংখ্যা ১। 

সূরা ইখলাস ,সূরা ফালাক ,সূরা নাস এর ফজিলত 

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি রাতে যখন ঘুমাতে যেতেন, তখন নিজের উভয় হাত এক সঙ্গে মিলাতেন। তারপর সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস পড়তেন এবং উভয় হাতে ফুঁক দিতেন। তারপর দেহের যতটুকু অংশ সম্ভব হাত বুলিয়ে নিতেন। তিনি মাথা, মুখমণ্ডল ও শরীরের সামনের অংশ থেকে শুরু করতেন। তিনি এরূপ তিনবার করতেন।’ (বুখারি)

হাদিসের অন্য বর্ণনায় এসেছে, শয়তানের অনিষ্ট ও জাদুটোনা থেকে বাঁচতে সকাল-সন্ধ্যায় এ ৩ সুরার আমল খুবই কার্যকরী। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা সুরা ইখলাস ও এই দুই সুরা ( সুরা ফালাক ও সুরা নাস) পড়বে সে সব বিপদ-আপদ থেকে নিরাপদ থাকবে।’ (তিরমিজি)

 ফজর আর মাগরিবের এই দুই ওয়াক্তের ফরজ নামাজের পর সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস প্রতিটি তিনবার করে পড়া সুন্নত। অন্যান্য ফরজ সালাতের আদায় করে একবার করে এই তিন সুরা পড়ার কথা বলা হয়েছে।’ (আবু দাউদ)

সূরা কাফিরুন এর ফজিলত 

 উরওয়া ইবনে নওফাল তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুল (সা.) তাকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘কেন এসেছো?’ তিনি বললেন, এজন্য এসেছি— যাতে আপনি আমাকে কিছু শিক্ষা দেন; যা আমি শোয়ার সময় পড়তে পারি। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যখন তুমি বিছানায় যাবে, তখন “কুল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরুন” পড়বে। তারপর এটি শেষ করে শুইবে। কেননা, এটি শিরক থেকে মুক্ত করে।’ (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদিস : ২৬৫২৮; নাসায়ি, হাদিস : ১০৫৬৯)

৪ কুল এর উচ্চারণ 

সূরা কাফিরুন আরবি উচ্চারণ :

قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ – لَا أَعْبُدُ مَا تَعْبُدُونَ – وَلَا أَنتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ – وَلَا أَنَا عَابِدٌ مَّا عَبَدتُّمْ – وَلَا أَنتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ – لَكُمْ دِينُكُمْ وَلِيَ دِينِ -.

উচ্চারণ : কুল ইয়া আইয়ুহাল কাফিরুন। লাআ বুদু মা তা’আবুদুন। ওয়ালা আনতুম আবিদুনা মা-আ’বুদ। ওয়ালা আনা আবিদুম মা-আবাত্তুম। ওয়ালা আনতুম আবিদুনা মা আ’বুদ। লাকুম দি-নুকুম ওয়ালিয়া দ্বিন।

অর্থ : বলুন, ‘হে কাফিররা! আমি তার ‘ইবাদাত করি না যার ‘ইবাদাত তোমরা করো। এবং তোমরাও তাঁর ‘ইবাদাতকারী নও যাঁর ‘ইবাদাত আমি করি। এবং আমি ‘ইবাদাতকারী নই তার যার ‘ইবাদাত তোমরা করে আসছ। তোমরা এবাদতকারী নও, যার এবাদত আমি করি। তোমাদের কর্ম ও কর্মফল তোমাদের জন্যে এবং আমার কর্ম ও কর্মফল আমার জন্যে।

সূরা ইখলাস এর আরবি উচ্চারণ :

قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ – اللَّهُ الصَّمَدُ – لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ – وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ

উচ্চারণ :কুল হুআল্লাহু আহাদ। আল্লাহুচ্চামাদ। লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইউলাদ। ওয়া লাম ইয়াকুল্লাহু কুফুয়ান আহাদ।’

অর্থ : (হে রাসুল! আপনি) বলুন, তিনিই আল্লাহ, একক। আল্লাহ অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি। আর তার সমতুল্য কেউ নেই।’

সূরা ফালাক এর আরবি উচ্চারণ :

قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ  – مِن شَرِّ مَا خَلَقَ – وَمِن شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ – وَمِن شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ – وَمِن شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ

উচ্চারণ : কুল আউজু বিরাব্বিল ফালাক্ব; মিন শাররি মা খালাক্ব; ওয়া মিন শাররি গাসিক্বিন ইজা ওয়াক্বাব; ওয়া মিন শাররিন নাফ্ফাছাতি ফিল উক্বাদ; ওয়া মিন শাররি হাসিদিন ইজা হাসাদ। 

অর্থ : বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি প্রভাতের পালনকর্তার, তিনি যা সৃষ্টি করেছেন, তার অনিষ্ট থেকে। অন্ধকার রাত্রির অনিষ্ট থেকে, যখন তা সমাগত হয়, গ্রন্থিতে ফুঁৎকার দিয়ে জাদুকারিনীদের অনিষ্ট থেকে এবং হিংসুকের অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে।

সূরা নাস এর আরবি উচ্চারণ 

قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ – مَلِكِ النَّاسِ – إِلَهِ النَّاسِ – مِن شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ – الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ – مِنَ الْجِنَّةِ وَ النَّاسِ

উচ্চারণ : কুল আউজু বিরাব্বিন নাস; মালিকিন্ নাস; ইলাহিন্ নাস। মিন্ শররিল ওয়াস্ওয়াসিল খান্নাস; আল্লাজি ইউওয়াসয়িসু ফি ছুদুরিন নাস। মিনাল ঝিন্নাতি ওয়ান নাস। 

অর্থ বলুন, আমি আশ্রয় চাই মানুষের পালনকর্তার কাছে, মানুষের অধিপতির কাছে, মানুষের মাবুদের কাছে। তার অনিষ্ট থেকে, যে কুমন্ত্রণা দেয় ও আত্মগোপন করে, যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে। জ্বিনের মধ্য থেকে অথবা মানুষের মধ্য থেকে।

Sharing Is Caring:

Leave a Comment