হজরত মুহাম্মদ (সা) এর সাথে জান্নাতে নৈকট্য লাভের আমল

প্রতিটি মুমিন ব্যক্তি নবী রাসূলকে ভালোবাসে।নবী-রাসুলরা হলেন মানবজাতির জন্য রহমত। তাঁরা অন্ধকার পৃথিবীকে আলোকিত করেছেন। হজরত ঈসা (আ.) থেকে আমাদের রাসুল (সা.) পর্যন্ত কোনো নবী-রাসুল প্রেরিত না হওয়ায় এ যুগকে আইয়ামে জাহেলিয়া বলা হয়। আল্লাহ তাআলা আমাদের মহানবী (সা.)-কে প্রেরণ করে আমাদের প্রতি বড়ই অনুগ্রহ করেছেন। 

 কোনো মুমিন ব্যক্তিকে তার প্রিয় ব্যক্তি কে একথা জিজ্ঞেস করলে সবার উত্তর হবে হজরত মুহাম্মদ (সা)। আমাদের সর্বশেষ ও প্রিয় নবী হলো হজরত মুহাম্মদ (সা)।  রাসুল (সা.)-এর কারণে আমরা কোরআন পেয়েছি, হাদিস পেয়েছি এবং দ্বিনের সঠিক পথ পেয়েছি।

প্রতিটি মুমিন ব্যক্তির হৃদয়ে নবীজির নৈকট্য লাভের জন্য সুপ্ত বাসনা থাকে।  পৃথিবীতে নবীর সঙ্গী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন একমাত্র সাহাবায়ে কিরামগণ । দুনিয়ার জীবনে আর কোনো মুমিনের এ সৌভাগ্য  আসবে না।

আমরা সবাই মনে প্রাণে এটাই চাই যে মৃত্যুর পরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে জান্নাতে প্রবেশ করতে। প্রতিটি হজযাত্রী গণ মদিনায় রওজা জিয়ারতের সময় এই সুপ্ত বাসনা আরো তীব্র হয়ে ওঠে। 

প্রতিটি মুমিন ব্যক্তি যেন নবীজির নৈকট্য লাভ করতে পারে এজন্য নবীজি (সা) কিছু আমল বর্ননা করেছেন। যা পালন করলে জান্নাতে নবজীর নৈকট্য লাভ করতে পারবো। কয়েকটি আমল  হলো : 

একটি দোয়া:

হজরত মুনাইজির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- ‘যে ব্যক্তি সকালে এ বাক্যগুলো বলবে আমি দায়িত্ব গ্রহণ করেছি যে, তাঁর হাত ধরে তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করাবো। ’ (আত-তারগিব ওয়াত তারহিব)

দোয়াটি হলো :

رَضِيْتُ بِاللهِ رَبًّا وَّ بِالْاِسْلَامِ دَيْنَا وَّبِمُحَمَّدٍ نَبِيَّا

উচ্চারণ : ‘রাদিতু বিল্লাহি রাব্বাও ওয়া বিল ইসলামি দিনাও ওয়া বিমুহাম্মাদিন নাবিয়্যা’

অর্থ ‘আল্লাহকে প্রভু হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নবি হিসেবে গ্রহণ করতে পেরে আমি সন্তুষ্ট ও খুশি হয়েছি। 

বেশি বেশি সিজদা করা 

রাবিআহ ইবনে কাব রা: বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সা:-এর সাথে রাতযাপন করতাম। একদা আমি তাঁর অজু ও ইস্তিঞ্জা করার জন্য পানি আনলাম। তখন তিনি আমাকে বললেন, তোমার কিছু চাওয়ার থাকলে চাইতে পারো। তখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আপনার সাথে জান্নাতে থাকতে চাই। 

রাসুলুল্লাহ সা: বলেন, ওটা ছাড়া আর কিছু চাও কি? আমি বললাম, এটাই চাই। রাসুলুল্লাহ সা: বললেন, তাহলে বেশি বেশি সিজদার দ্বারা তুমি এই ব্যাপারে আমাকে সাহায্য কোরো। (মুসলিম, হাদিস : ৪৮৯)

বেশি বেশি দরূদ পাঠ করা 

মহানবী (সা.)-এর নাম বললে ও শুনলে তাঁর প্রতি দরুদ পড়া ওয়াজিব। তবে বারবার তাঁর নাম বললে ও শুনলে প্রথমবার দরুদ পড়া ওয়াজিব, অন্যান্য বার মুস্তাহাব। মুখে উচ্চারণ করলে যেমন দরুদ ও সালাম ওয়াজিব, তেমনি কলমে লিখলেও ওয়াজিব। জীবনে একবার দরুদ পড়া ফরজ।

মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘সেই ব্যক্তি অপমানিত হোক, যার সামনে আমার নাম উচ্চারণ করা হলে দরুদ পাঠ করে না।’ (মিশকাত : ৯২৭)

আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘সেই ব্যক্তি কৃপণ, যার কাছে আমার নাম উচ্চারণ করা হলে দরুদ পাঠ করে না।’ (মিশকাত, হাদিস : ৯৩৩)

আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ শরিফ পাঠ করে, আল্লাহ তাআলা তার প্রতি ১০টি রহমত বর্ষণ করেন, ১০টি পাপ মোচন করেন এবং ১০টি মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। (নাসায়ি : ১/১৪৫, মুসনাদে আহমদ : ১/১০২)।

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের দিন আমার কাছে অতি উত্তম হবে ওই ব্যক্তি, যে আমার ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করে। (তিরমিজি)

কন্যা সন্তান ও বোনদের লালনপালন করা 

আনাস ইবনে মালেক রা. বর্ণনা করেন, একবার রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মধ্যমা ও শাহাদাত অঙ্গুলীর দিকে ইশারা করে বলেন ,যে ব্যক্তি দুই কন্যা বা দুই বোনের ভরণ-পোষণ করবে কিংবা তিন কন্যা বা তিন বোনের ভরণ-পোষণ করবে, যতক্ষণ না তাদের বিয়ে হবে কিংবা সে মৃত্যুবরণ করবে, আমি এবং সে জান্নাতে এভাবে (পাশাপাশি) থাকব। (সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৪৪৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১২৪৯৮)

এতিমের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করা :

সাহাল বিন সাদ রা: বলেন, রাসুলুল্লাহ সা: বলেছেন, আমি ও এতিম প্রতিপালনকারী জান্নাতে এভাবে থাকব (তিনি তর্জনী ও মধ্যমা অঙ্গুলি দিয়ে ইঙ্গিত করেন এবং এই দুটির মধ্যে তিনি সামান্য ফাঁক রাখেন)। (বুখারি, হাদিস : ৫৩০৪)

উত্তম চরিত্রের অধিকারী হওয়া 

আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা: বলেন, একবার রাসুল সা: বললেন, আমি কি তোমাদের ওই ব্যক্তি সম্পর্কে অবগত করব না যে কিয়ামতের দিন আমার সবচেয়ে প্রিয় এবং সর্বাধিক নিকটবর্তী হবে? সাহাবায়ে কিরাম চুপ রইলেন। রাসুল সা: একই প্রশ্ন করলেন দুই বা তিনবার। তখন তাঁরা বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! অবশ্যই বলুন। তিনি বললেন, সে হলো ওই ব্যক্তি, যার চরিত্র সবচেয়ে সুন্দর। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৬৭৩৫)

নবীজির প্রতি ভালোবাসা 

আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী করিম (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করল, কিয়ামত কখন হবে? তিনি বলেন, তুমি কিয়ামতের জন্য কী জোগাড় করেছ? সে বলল, কোনো কিছু জোগাড় করতে পারিনি, তবে আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে ভালোবাসি। তখন তিনি বলেন, তুমি তাঁদের সঙ্গেই থাকবে, যাঁদের তুমি ভালোবাসো।

আনাস (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.)-এর কথার দ্বারা আমরা এত আনন্দিত হয়েছি যে অন্য কোনো কথায় এত আনন্দিত হইনি। আনাস (রা.) বলেন, আমি নবী করিম (সা.)-কে ভালোবাসি এবং আবু বকর, ওমর (রা.)-কেও। আশা করি তাঁদের প্রতি আমার ভালোবাসার কারণে তাঁদের সঙ্গে জান্নাতে বসবাস করতে পারব, যদিও তাঁদের আমলের মতো আমল আমি করতে পারিনি। (মুসলিম, হাদিস : ২৬৩৯)

Sharing Is Caring:

Leave a Comment