সূরা আল কাওসার পবিত্র কুরআন শরীফের সব চেয়ে ছোট সূরা। সূরা কাওসার পবিত্র মক্কা নগরীতে নাজিল হয়েছে। এই সূরা কুরআন শরীফের ৩০ তম পারার ১০৮ তম সূরা। এর আয়াত সংখ্যা ৩ টি এবং রুকু ১ টি।
এই সূরার প্রথম আয়াতে আল কাওসার শব্দ থেকে নামকরণ করা হয়েছে কাওসার। যার অর্থ হচ্ছে প্রভূত কল্যাণ। এ সুরাকে সূরা নাহার ও বলা হয়। সূরা কাওসারে হাউজে কাওসার সম্পর্কে বলা হয়েছে।প্রথমে সূরা কাওসার ও হাউজে কাওসার সম্পর্কে হাদিস ও তফসির থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে নিই।
হজরত মুহাম্মদ (সাঃ ) এর পুত্র কাসেম এবং শেষ পুত্র ইব্রাহিম যখন মারা যায় তখন কাফেররা হজরত মুহাম্মদ (সাঃ ) কে নিয়ে অনেক কটূক্তি করতে লাগলেন। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ )তাদের কথায় অনেক মর্মাহত হলেন।
যারা মুহাম্মদ (সাঃ ) কে নিয়ে কটূক্তি করতেন তারমধ্যে একজন হলো এস ইবনে ওয়ায়েল। যখন রাসূল (সাঃ ) এর বিষয়ে কিছু বলা হতো তখন তিনি বলতেন, তোমরা তাকে নিয়ে চিন্তা করতেছো কেন তার কথা বাদ দাও সে তো লেজকাটা বা নির্বংশ।
সে মারা গেলে তার নাম নেওয়ার কেও থাকবে না। এসব কটূক্তি শুনে রাসূল (সাঃ ) অনেক কষ্ট পেতেন। তখন হজরত মুহাম্মদ (সাঃ ) এর কষ্টকে দূর করার জন্য আল্লাহ তায়ালা সূরা কাওসার নাম এ সূরাটি নাজিল করে তাকে সান্তনা দেন।
আরও বলেন, হে নবী !আপনাকে যারা নির্বংশ বলতেছে তারাই নির্বংশ হয়ে যাবে। তাদের নাম নেওয়ার মতো কেও বেঁচে থাকবে না। তাই আপনি বিস্মিত না হয়ে ধৈর্য ধারণ করুন।
সূরা কাওসার নাজিলের সময় সাহাবীগণ মুহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ )এর চেহারা মোবারকে নূরানী হাসি দেখতে পেয়েছিলেন। হজরত আনাস (রাঃ ) হতে বর্ণিত ,একদিন মসজিদে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ ) আমাদের সামনে উপস্থিত হলেন।
হঠাৎ মহানবী (সাঃ ) এর মাঝে তন্দ্রা অথবা এক ধরনের অচেতনতার ভাব দৃশ্যমান হলো। এরপর মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ ) হাসিমুখে মাথা উত্তোলন করলেন। আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ !আপনার হাসির কারণ কি ?
তিনি বললেন ,এই মুহূর্তে আমার নিকট একটি সূরা নাজিল হয়েছে। তার পর মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সস ) বিসমিল্লাহ সহ সূরা কাওসার পাঠ করে শোনালেন। তারপর রাসূল (সাঃ ) জিজ্ঞাসা করলেন তোমরা কি জান ,কাওসার কি ?আমরা বললাম আল্লাহ তায়ালা ও তার রাসূল ভালো জানেন।
হজরত মুহাম্মদ (সাঃ ) বললেন, এটা জান্নাতের একটি নহর। আল্লাহ তায়ালা আমাকে দেবেন বলে ওয়াদা করেছেন। এতে অনেক কল্যাণ আছে ।মহানবি হজরত মুহাম্মাদ (সা) বলেছেন কেয়ামতের দিন হাউজে কাওসারের পাশে আমার উম্মত গন অবতরন করবে ।
কেয়ামতের দিন হাউজে কাওসার থেকে আমার উম্মতরা পানি পান করতে যাবে। তখন কিছু লোককে ফেরেশতাগণ হাউজ থেকে হটিয়ে দেবে। আমি বলব, হে রব !সে তো আমার উম্মত। আল্লাহ তায়ালা বলবেন ,আপনি জানেন না ,আপনার পরে তারা নতুন মত ও পথ অবলম্বন করেছিল। (মুসলিম শরীফ ,বোখারী ,আবু দাউদ ,নাসায়ী )
হাউজে কাওসারের পানি দুধের থকে শুভ্র, মধুর চেয়ে মিষ্টি, বরফের চেয়ে ঠাণ্ডা এবং মিসকের চেয়েও অধিক সুঘ্রাণ সম্পন্ন ।হাউজে কাওসারের দৈৰ্ঘ্য ও প্রস্থে সমান। তার কোন সমূহের প্রত্যেকটি কোন এক মাসের রাস্তার সমান।
হাউজে কাওসারের পানির মূল উৎস হলো জান্নাত। জান্নাত থেকে দুটি খালের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হয়। খাল দুটি একটি স্বর্ণের আরেকটি রৌপ্যের। এর পানি পান করার পাত্র থাকবে আকাশের তারকাসম। হাউজে কাওসার থেকে একবার পানি পান করলে আর কখনো পিপাসার্ত হবে না।
তবে এখানে এটা জানা আবশ্যক যে কাওসার ও হাউজ একই বস্তু নয়। হাউজের অবস্থান হাশরের মাঠে ,যার পানি কাওসার থেকে সরবরাহ করা হবে। আর কাওসারের অবস্থান হলো জান্নাতে।
সূরা কাওসার আরবি উচ্চারণ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
- ইন্না আ ‘তাইনা -কাল কাওসার।
- ফাসাল্লি লিরাব্বিকা ওয়ান’হা ‘র।
- ইন্না শানিয়াকা হুয়া’আলআবতার।
সূরা কাউসার বাংলা অনুবাদ
পরম করুনাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নাম শুরু করছি
- নিশ্চয় আমি আপনাকে কাওসার দান করেছি।
- অতএব আপনার পালন কর্তার উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি করুন।
- যে আপনার শত্রু ,সেই লেজকাটা ,নির্বংশ।
সূরা কাওসারের আমল
কোনো সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এ সূরা পাঠ করলে আল্লাহ তায়ালা সে নিয়ত পুরুন করে দিবেন। অজিফাটি ফজরের নামাজ পর ১ বার এবং মাগরিব নামাজ পর ১ বার অর্থ্যাৎ দিনে ২ পার আমল করতে হবে।
ওযু সহকারে ১১ বার দরূদ শরীফ পরে ১৩৩ বার সূরা কাওসার পড়তে হবে ,১৩৩ বারের বেশিও পড়বেন না কম ও পড়বেন না ,আবার পুনরায় ১১ বার দরূদ শরীফ পড়তে হবে।
তারপর সকল মনের আসা আকাংখ্যার কথা আল্লাহর কাছে পেশ করবেন। ইনশা আল্লাহ যে নিয়তে যান্ত্রিকতার সাথে এই অজিফা করবেন সে নিয়ত আল্লাহ খুব দ্রুত পুরুন করে দিবেন।
সূরা কাওসার বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ১০০০ বার তেলাওয়াত করে ,১০০০ হাজার বার দরূদ পরে ,তবে আশা করা যায় ,স্বপ্নে হজরত মুহাম্মদ (সাঃ ) এর জেয়ারত পেয়ে ধন্য হবে মুমিন। (তাফসীরে নুরুল কুরআন )