তাহিয়্যাতুল ওযুর নামাজের নিয়ম | নিয়ত এবং ফজিলত 

নামাজ হলো মুমিন ব্যক্তির জীবনের শ্রেষ্ঠ ইবাদাত। মহান আল্লাহ তায়ালা দৈনিক ৫ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। এই ৫ ওয়াক্ত নামাজ ঠিকমতো আদায় না করলে গুনাহ হয়ে থাকে।

মহান আল্লাহ তায়ালা ফরজ ইবাদাতের পাশাপাশি নফল ইবাদাতও করতে বলেছেন। নফল ইবাদাতের মাধ্যমে গুনাহ মাফ হয়ে থাকে এবং মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। 

তাহিয়্যাতুল ওযুর নামাজ আদায় করা মোস্তাহাব। ওযু করে কারো সাথে কথাবার্তা না বলে ,ওযুর অঙ্গগুলো শুকানোর পূর্বেই দুই রাকাত নামাজ আদায় করতে হয়। ইসলামী পরিভাষায় এই নামাজকে তাহিয়্যাতুল ওযুর নামাজ বলা হয়। 

তাহিয়্যাতুল ওযু নামাজের অনেক ফজিলত রয়েছে। হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন ,আল্লাহ তায়ালা বলেন ,যে ব্যক্তি ওযু ভাঙার পরে ওযু করলো না সে আমাকে অবজ্ঞা করলো ,আর যে ব্যক্তি ওযু করার পরে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়লো না সেও আমাকে অবহেলা করলো। (হাদিসে কুদসী)

তাহিয়্যাতুল ওযু নামাজের সময় 

নামাজের কিছু নিষিদ্ধ ও মাকরূহ সময় আছে ,এই নিষিদ্ধ ও মাকরূহ সময় ব্যতীত যে কোনো সময় ওযু করার পরে এ নামাজ পড়া যায়। 

নামাজের নিষিদ্ধ সময় :

১। সূর্য যখন উদিত হতে থাকে এবং যতোক্ষণ না তার হলুদ রঙ ভালোভাবে চলে যায় ও আলো ভালোভাবে ছড়িয়ে পড়ে।

২।  ঠিক দ্বিপ্রহরের সময়; যতোক্ষণ না তা পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়ে।

৩। সূর্য হলুদবর্ণ ধারণ করার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত।

নামাজের মাকরূহ সময় :

১। ফজর উদয় হওয়ার পর দুই রাকাত সুন্নত থেকে অতিরিক্ত পড়া মাকরুহ। (মুসলিম, হাদিস : ১১৮৫)

২। ফজর নামাজের পর সূর্য উদয় হওয়া পর্যন্ত। (বুখারি, হাদিস : ৫৫১)

৩। আসরের পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত নামাজ পড়া মাকরুহ। (বুখারি, হাদিস : ৫৫১)

৪। ইকামতের সময় নামাজ পড়া মাকরুহ। (মুসলিম, হাদিস : ১১৬০)

৫। ঈদের নামাজের আগে ঈদগাহে কোনো নামাজ পড়া মাকরুহ।

৬। ঈদের নামাজের পরে ঘরেও কোনো নামাজ নেই, ঈদগাহেও নেই। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১২৮৩)

৭।সময় যদি এত কম হয় যে সুন্নত পড়তে গেলে ফরজ নামাজের সময় শেষ হয়ে যাবে, এমন সময় নামাজ পড়া মাকরুহ।

৮। খুব ক্ষুধা ও খানার প্রতি তীব্র চাহিদা হলে সে সময় নামাজ পড়া মাকরুহ। এর ফলে খানার সঙ্গেই মন লেগে থাকবে, নামাজের সঙ্গে নয়। (মুসলিম, হাদিস : ৮৬৯)

৯। প্রস্রাব-পায়খানার বেগ নিয়ে নামাজ পড়া মাকরুহ। (মুসলিম, হাদিস : ৮৬৯)

তাহিয়্যাতুল ওযু নামাজের নিয়ম 

সাধারণ সুন্নাত ও নফল নামাজের ন্যায় যেকোন সূরা-কিরাত দ্বারা ‘ তাহিয়্যাতুল অজু’ আদায় করা যায়। উভয় রাকাআতেই সূরা ফাতিহার পর অন্য সূরা মিলাতে হবে এবং আখেরী বৈঠক আত্তাহিয়্যাতু, দরুদ শরীফ ও দোয়ায়ে মাছূরা সব পড়ে সালাম ফিরাতে হবে।অজুর পর দুই রাকাআত নামাজ পড়লে জান্নাত ওয়াজিব

তাহিয়্যাতুল ওযু নামাজের নিয়ত 

 نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّىَ لِلّٰهِ تَعَالٰى رَكْعَتَىْ صَلٰوةِ تَحْيَةُ الْوَضُوْءِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللّٰهِ تَعَالٰى مُتَوَ جِّهًا اِلٰى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِ يْفَةِ : اَللّٰهُ اَكْبَرُ

অর্থ: আমি আল্লাহর ওয়াস্তে কিবলামুখী হয়ে দুই রাক’আত তাহিয়্যাতুল অজু সুন্নাত নামায আদায় করছি, আল্লাহু আকবার।

তাহিয়্যাতুল ওযু নামাজের ফজিলত 

তাহিয়্যাতুল ওযু নামাজ সম্পর্কে হজরত ওকবা ইবনে আমের জুহানী (রা) হতে বর্ণিত ,হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন ,যে ব্যক্তি ওযু করার পর একাগ্রতা এবং আল্লাহর দিকে মনকে ধাবিত করে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়বে আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব করে দেবেন। (মুসলিম ,হাদিস নং : ২৩৪)

হজরত ওমর (রা) হতে বর্ণিত , রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এভাবে (সুন্দর করে) অজু করবে, তারপর দুই রাকাত নামাজ আদায় করবে, যাতে (দুনিয়ার) কোনো খেয়াল করবে না, তার পেছনের সব (ছগিরা) গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ১৫৯; মুসলিম, হাদিস : ২২৬)

হাদিস শরীফে বলা হয়েছে , একদিন ফজরের নামাজের সময় বেলাল (রা.)-কে নবী (সা.) বললেন, ‘বেলাল! আমাকে বলো দেখি, ইসলামে দীক্ষিত হওয়ার পর থেকে তোমার কোন্ আমলটি তোমার কাছে (সওয়াবের আশার দিক থেকে) সবচেয়ে উত্তম বলে মনে হয়? কারণ, আমি জান্নাতে আমার সামনে সামনে তোমার জুতার আওয়াজ শুনেছি।’

তখন বেলাল (রা.) বললেন, ‘তেমন কোনো আমল আমার নেই; যার দ্বারা আমি (বিপুল সওয়াবের) আশা করতে পারি। তবে দিনরাতের যখনই আমি অজু করি; তখনই সেই অজুর মাধ্যমে যে কয় রাকাত সম্ভব হয়, আমি নামাজ আদায় করি।’ (বুখারি, হাদিস : ১১৪৯; মুসলিম, হাদিস : ২৪৫৮)

Sharing Is Caring:

1 thought on “তাহিয়্যাতুল ওযুর নামাজের নিয়ম | নিয়ত এবং ফজিলত ”

Leave a Comment