যে কারণে জান্নাতে ক্লান্তি আসবে না 

যে কারণে জান্নাতে ক্লান্তি আসবে না 

যে কোনোকাজ বার  বার করলে  তার প্রতি ক্লান্তি চলে আসে। এক পরিবেশে দীর্ঘদিন থেকেও একঘেয়েমি ও অবসাদ চলে আসে। ওখানে আর হাতে ইচ্ছা হয় না। ননুন পরিবেশে যেতে ইচ্ছে করে। জান্নাতে ক্লান্তি না আসার কারণ

কিন্তু জান্নাত এমন একটি জায়গা যেখানে মানুষ অনন্তকাল অবস্থান করলেও অবসাদে ভুগবে না ,তার মধ্যে কোনো ক্লান্তি আসবে না। কিন্তু কেন? নিম্নে কোরআন-হাদিসের আলোকে এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলো। জান্নাতে ক্লান্তি না আসার কারণ

 

১।  নতুনত্ব শেষ হবে না 

জান্নাতের সমস্ত নিয়ামত এমন ভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে যে তার স্বাদ ও তৃপ্তি কখনো শেষ হবে না। একই জিনিস বার বার খেলে একেক সময় একেক স্বাদ পাবে। জান্নাতের সৌন্দর্য মহান আল্লাহ তায়ালা এমন ভাবে করেছেন যা বার বার দেখলেও মুমিন ব্যক্তিদের মাঝে কোনো ক্লান্তি আসবে না। 

জান্নাতের সৌন্দর্য ও খাবার দাবার সব সময় নতুন ও নতুন স্বাদ মনে হবে। অনন্তকালেও জান্নাতের নতুনত্ব শেষ হবে না। 

পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে ,যারা ঈমান আনে এবং ভালো কাজ করে তাদের সুসংবাদ দাও যে তাদের জন্য আছে জান্নাত, যার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত। যখনই তাদের ফলমূল খেতে দেওয়া হবে, তখনই তারা বলবে, আমাদের আগে জীবিকারূপে যা দেওয়া হতো এটা তো তাই।

তাদের অনুরূপ ফলই দেওয়া হবে (পূর্বের ফলটি নয়)। এবং সেখানে তাদের জন্য আছে পবিত্র সঙ্গিনী, তারা সেখানে স্থায়ী হবে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৫)

 

২। শারীরিক কাঠামোর উন্নয়ন 

শরীর দুর্বল থাকলে সহজে ক্লান্তি ও অবসাদ চলে আসে। শারীরিকভাবে শক্তিমান ব্যক্তি তুলনামূলকভাবে কম ক্লান্ত হয়। জান্নাতদের দেহে মহান আল্লাহ তায়ালা কোনো দুর্বলতা রাখবে না। 

তাদের প্রত্যেকের শরীরের এমন শক্তি থাকবে যা দুনিয়ার ১০০ জনের শক্তির সমান। তাদের পরিপূর্ন রূপে সুঠাম ও শক্তিশালী করবেন যার কারণে জান্নাতীরা কখনো অবসাদে ভুগবে না। 

জান্নাতিরা জান্নাতে প্রবেশের সময় তাদের শরীরে লোম থাকবে না, দাড়ি-গোঁফও থাকবে না এবং চোখে সুরমা লাগানো থাকবে। তারা হবে ৩০ অথবা ৩৩ বছরের যুবক। (তিরমিজি, হাদিস : ২৫৪৫)

আমর ইবনুল আস (রা.) বলতেন, ‘ক্লান্তি ও অবসাদ মানবচরিত্রের প্রবঞ্চনা মাত্র।’ (আল-মাজমুউল লাফিফ, পৃষ্ঠা ৭৭)

 

৩। ভিন্ন জগৎ ও ভিন্ন জীবন 

জান্নাতের মুমিনদের জীবন ব্যবস্থা দুনিয়ার মানুষের জীবন ব্যবস্থা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হবে। যা পার্থিব জীবনের সঙ্গে কোনোভাবেই তুল্য নয়। জান্নাতের প্রতিটি বিষয় হবে ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।

 যেমন পার্থিব জীবনে মানুষ মদ পান করলে নেশাগ্রস্ত হয় এবং ভারসাম্য হারায়। কিন্তু জান্নাতে আল্লাহ এমন মদ সৃষ্টি করবেন, যাতে নেশা থাকবে না। আল্লাহ বলেন, ‘সেই শুরা পানে তাদের শিরঃপীড়া হবে না, তারা জ্ঞানহারাও হবে না।’ (সুরা ওয়াকিয়া, আয়াত : ১৯)

 

৪। অনুকূল পরিবেশ 

 মানুষের ভেতর তখনই অবসাদ ও ক্লান্তি আসে যখন সে প্রতিকূল পরিবেশে থাকে। যেখানে মানবপ্রকৃতির প্রতিকূল বিষয় থাকে। জান্নাতে সব কিছুই জান্নাতিদের অনুকূল থাকবে। তাই সে কখনো ক্লান্ত হবে না। 

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জান্নাতিরা জান্নাতে পানাহার করবে। তবে থু থু ফেলবে না, প্রস্রাব-পায়খানা করবে না এবং নাকও ঝাড়বে না। এ কথা শুনে সাহাবিরা বললেন, তবে ভক্ষিত খানা যাবে কোথায়? উত্তরে তিনি বললেন, এক ঢেঁকুরে শেষ হয়ে যাবে। 

তাদের শরীরের ঘাম মিশকের মতো সুঘ্রাণযুক্ত হবে। আল্লাহর পবিত্রতা এবং প্রশংসা তাদের অন্তঃকরণে এভাবে দেওয়া হবে, যেভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস দেওয়া হয়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৭০৪৪)

 

৫। সর্বোত্তম আবাস 

জান্নাত হলো মহান আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টি জগতে মানুষের জন্য সর্বোত্তম আবাস। আল্লাহ তায়ালা অপরূপ সৌন্দর্যে জান্নাত সৃষ্টি করেছেন। জান্নাতের এমন অপরূপ সৌন্দর্যে জান্নাতীরা এমনভাবে মুদ্ধ হবে যে অন্য কোথাও স্থানান্তর করতে ইচ্ছা করবে না। 

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন ,‘যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদের আপ্যায়নের জন্য আছে ফিরদাউসের উদ্যান, সেখানে তারা স্থায়ী হবে। তা থেকে স্থানান্তর কামনা করবে না।’ (সুরা কাহফ, আয়াত : ১০৭-১০৮)

 

মুনাফিকের চরিত্র ও পরিনাম কি হতে পারে জেনে নিন বিস্তারিত ।

Sharing Is Caring:

Leave a Comment