সূরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত (কুরআনের দ্বিতীয় অধ্যায়) হল:
“এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা, তাই তাদের কাছে যেও না। যারা আল্লাহর নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করে তারা জালেম।” (সূরা বাকারা, আয়াত 229)
“সুতরাং, ভবিষ্যতে আপনি কিছু করবেন এমন দাবি করবেন না এবং মিথ্যার সাক্ষী হওয়ার জন্য আল্লাহকে ডাকবেন না। প্রকৃতপক্ষে, যে ব্যক্তি আল্লাহকে মিথ্যার সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য ডাকে সে পাপী।” (সূরা বাকারা, আয়াত 225)
এই আয়াতগুলো বিশ্বাসীদেরকে আল্লাহর নির্ধারিত সীমার মধ্যে থাকার জন্য এবং তাদের কাজ ও কথায় সত্যবাদী হওয়ার জন্য একটি অনুস্মারক। প্রথম আয়াতটি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমার নিকটবর্তী হওয়া বা অতিক্রম করার বিরুদ্ধে সতর্ক করে এবং দ্বিতীয় আয়াতটি মিথ্যা দাবি করা বা মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার বিরুদ্ধে সতর্ক করে। উভয় শ্লোকই অন্যদের সাথে আচরণে সততা এবং সততার গুরুত্বের উপর জোর দেয়।
সূরা বাকারা পবিত্র কুরআনের সব থেকে দীর্ঘতম সূরা।এই সুরায় মোট ২৮৬টি আয়াত রয়েছে। পবিত্র কুরআনে ১১৪ টি সূরা রয়েছে। এই সূরা গুলোকে ২ ভাগে ভাগ করা হয়েছে।১। মাক্কী সূরা ২। মাদানী সূরা। মাক্কী সূরা ৮৬ টি এবং মাদানী সূরা ২৮ টি।
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) মদিনায় হিজরত করার পরে যে সূরা গুলো অবতীর্ন হয়েছে সে সূরা গুলোকে মাদানী সূরা বলে। সূরা বাকারা মদিনায় অবতীর্ন হয়েছে। সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত হলো ২৮৫ ও ২৮৬এই দুই আয়াত অনেক ফজিলত ও তাৎপর্যপূর্ণ আয়াত।
হজরত ইবনে আব্বাস (রা) হতে বর্ণিত , একদিন জিবরাইল (আ.) নবীজির (স.) কাছে বসা ছিলেন। হঠাৎ প্রচণ্ড একটি শব্দ শোনা গেলো। জিবরাইল (আ.) নিজের মাথা উঁচু করে বললেন, এটা আকাশের সেই দরজা খোলার শব্দ, যা আজকের আগে খোলা হয়নি।
অতঃপর ওই দরজা দিয়ে একজন ফেরেশতা পৃথিবীতে নেমে আসলেন, যিনি আগে কখনও পৃথিবীতে আসেননি। তিনি নবীজির কাছে এসে সালাম দিয়ে বললেন, ‘দুটি নুর বা আলোর সুসংবাদ গ্রহণ করুন, যা আপনার আগে অন্য কোনো নবীকে প্রদান করা হয়নি। ১. সুরা ফাতিহা ও ২. সুরা বাকারার শেষাংশ। এর একটি অক্ষরও যদি পড়েন, তবে তার মধ্যকার প্রার্থিত বিষয় আপনাকে প্রদান করা হবে।’ (সহিহ মুসলিম: ৮০৬)
সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত
আরবি উচ্চারণ: ২৮৫। اٰمَنَ الرَّسُوۡلُ بِمَاۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡهِ مِنۡ رَّبِّهٖ وَ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ ؕ کُلٌّ اٰمَنَ بِاللّٰهِ وَ مَلٰٓئِکَتِهٖ وَ کُتُبِهٖ وَ رُسُلِهٖ ۟ لَا نُفَرِّقُ بَیۡنَ اَحَدٍ مِّنۡ رُّسُلِهٖ ۟ وَ قَالُوۡا سَمِعۡنَا وَ اَطَعۡنَا ٭۫ غُفۡرَانَکَ رَبَّنَا وَ اِلَیۡکَ الۡمَصِیۡرُ
২৮৬। لَا یُکَلِّفُ اللّٰهُ نَفۡسًا اِلَّا وُسۡعَهَا ؕ لَهَا مَا کَسَبَتۡ وَ عَلَیۡهَا مَا اکۡتَسَبَتۡ ؕ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذۡنَاۤ اِنۡ نَّسِیۡنَاۤ اَوۡ اَخۡطَاۡنَا ۚ رَبَّنَا وَ لَا تَحۡمِلۡ عَلَیۡنَاۤ اِصۡرًا کَمَا حَمَلۡتَهٗ عَلَی الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِنَا ۚ رَبَّنَا وَ لَا تُحَمِّلۡنَا مَا لَا طَاقَۃَ لَنَا بِهٖ ۚ وَ اعۡفُ عَنَّا ٝ وَ اغۡفِرۡ لَنَا ٝ وَ ارۡحَمۡنَا ٝ اَنۡتَ مَوۡلٰىنَا فَانۡصُرۡنَا عَلَی الۡقَوۡمِ الۡکٰفِرِیۡنَ
বাংলা উচ্চারণ: ২৮৫। আমানুর-রাসুলু বিমা উংজিলা ইলাইহি মির রাব্বিহি ওয়াল মু’মিনুন। কুল্লুন আমানা বিল্লাহি ওয়া মালা-ইকাতিহি ওয়া কুতুবিহি ওয়া রুসুলিহি, লা নুফার-রিকু বাইনা আহা’দিম-মির রুসুলিহি। ওয়া ক্বালু সামি’না, ওয়া আত্বা’না, গুফরা নাকা, রাব্বানা ওয়া ইলাইকাল মাসির।
২৮৬। লা ইউ কাল্লিফুল্লাহু নাফসান ইল্লা উস-আ’হা। লাহা মা কাসাবাত ওয়া আ’লাইহা মাক তাসাবাত। রব্বানা লা-তু আখজিনা-ইন্না সিনা- আও আখত্বা’না। রাব্বানা ওয়ালা তাহ’মিল আ’লাইনা ইসরান কামা হা’মালতাহু আ’লাল্লাজিনা মিন ক্বাবলিনা। রব্বানা ওয়ালা তুহা’ম্মিলনা মা-লা ত্বাকাতালানা বিহ। ওয়াআ’ফু আ’ন্না, ওয়াগ ফিরলানা, ওয়ার হা’মনা। আংতা মাওলানা, ফানছুরনা আ’লাল ক্বাওমিল কাফিরিন।
অর্থ:২৮৫। রাসুল তার কাছে যা আল্লাহ নাজিল করেছেন, তার উপর ঈমান এনেছেন এবং মুমিনগণও। প্রত্যেকেই ঈমান এনেছে আল্লাহর ওপর, তার ফেরেশতাগণ, তার কিতাবসমূহ এবং তার রাসূলগণের উপর। আমরা তাঁর রাসূলগণের কারো মধ্যে তারতম্য করি না। আর তারা বলে—আমরা শুনেছি ও মেনে নিয়েছি। হে আমাদের রব! আপনার ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং আপনার দিকেই প্রত্যাবর্তনস্থল।
২৮৬। আল্লাহ কারো উপর এমন কোনো দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না, যা তার সাধ্যাতীত। সে ভালো যা উপার্জন করে, তার প্রতিফল তারই, আর মন্দ যা কামাই করে, তার প্রতিফল তার উপরই বার্তায়। হে আমাদের রব! যদি আমরা বিস্মৃত হই অথবা ভুল করি তবে আপনি আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না। হে আমাদের রব! আমাদের পূর্ববর্তীগণের ওপর যেমন বোঝা চাপিয়ে দিয়েছিলেন, আমাদের ওপর তেমন বোঝা চাপিয়ে দেবেন না। হে আমাদের রব! আপনি আমাদেরকে এমন কিছু বহন করাবেন না, যার সামর্থ আমাদের নেই। আর আপনি আমাদের পাপ মোচন করুন, আমাদের ক্ষমা করুন, আমাদের প্রতি দয়া করুন, আপনিই আমাদের অভিভাবক। অতএব কাফের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন।
সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াতের ফজিলত
সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াতের অনেক ফজিলত রয়েছে। যে ঘরে সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত তেলাওয়াত করা হয় না সে ঘরে শয়তান অবস্থান করে।
ঘুমানোর পূর্বে সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পাঠ করলে তাহাজ্জুদ নামাজের সমান সওয়াব পাওয়া যায়।
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন , ‘যে ব্যক্তি রাতে এ দুটি আয়াত পাঠ করবে তার জন্য এটাই যথেষ্ট।’ এর ব্যাখ্যায় কেউ বলেন, এর অর্থ রাতের নামাজ, কেউ বলেন শয়তান থেকে মুক্তি, কেউ বলেন বিপদ থেকে মুক্তি, কেউ বলেন, মানুষ ও জ্বীনের অনিষ্ট থেকে মুক্তি।