জান্নাত হলো চির সুখের স্থান। জান্নাত আরবি শব্দ। এর অর্থ উদ্যান বা বাগান। জান্নাতের সৌন্দর্য এমন হবে যা কেও কোনো দিন কল্পনাও করেনি। মহান আল্লাহ তায়ালা জান্নাতে তার মুমিন বান্দাদের জন্য অনেক নিয়ামত দিয়ে জান্নাত তৈরী করে রেখেছেন।
হাদিস শরীফে বলা হয়েছে , মহানবী (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য এমন সব নিয়ামত প্রস্তুত করে রেখেছি, যা কোনো চক্ষু দেখেনি, কোনো কান শোনেনি এবং কোনো মানুষের মনে এ সম্পর্কে কোনো ধারণাও জন্মেনি। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৯৯৪)
জান্নাত সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন ,‘পক্ষান্তরে মুত্তাকি (আল্লাহভীরু) লোকেরা থাকবে— বাগান ও ঝরনার পাদদেশে। এবং তাদেরকে বলা হবে এখানে তোমরা শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে প্রবেশ করো। তাদের মনে যে সামান্য পরিমাণ মনোমালিন্য থাকে তা আমি বের করে দেবো। তারা পরস্পর ভাই-ভাইয়ে মিলিত হয়ে মুখোমুখি হয়ে বসবে। সেখানে তাদের পরিশ্রমও করতে হবে না এবং তারা সেখান থেকে বহিষ্কৃতও হবে না।’ (সুরা আল-হিজর, আয়াত : ৪৫-৪৮)
যে ব্যক্তি সবশেষে জান্নাতে প্রবেশ করবে
হাদিস শরীফে বলা হয়েছে ,মহানবী (সা.) বলেছেন, আমার ৭০ হাজার উম্মত একসঙ্গে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাদের চেহারা হবে পূর্ণিমার চাঁদের মতো উজ্জ্বল। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৯৮৯)
কিছু লোক জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করার পরে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাদের পাপের জন্য তারা সরাসরি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। তারা হামাগুড়ি দিয়ে জাহান্নাম থেকে বের হবে।
ইব্ন মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে রয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সর্বশেষ জান্নাতে প্রবেশ করবে এমন ব্যক্তি— যে একবার চলবে, একবার হোঁচট খাবে; একবার আগুন তাকে ঝলসে দেবে। যখন সে তা অতিক্রম করবে তার দিকে ফিরে তাকাবে। অতঃপর বলবে- বরকতময় সে সত্তা! যিনি আমাকে তোমার থেকে নাজাত দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ আমাকে এমন বস্তু দান করেছেন— যা পূর্বাপর কাউকে দান করেননি।
অতঃপর তার জন্য একটি গাছ প্রকাশ করা হবে, সে বলবে, ‘হে আমার রব! আমাকে এ গাছের নিকটবর্তী করুন, যেন তার ছায়া গ্রহণ করতে পারি ও তার পানি পান করতে পারি।
আল্লাহ তাআলা বলবেন, হে আদম সন্তান! যদি আমি তোমাকে এটা দান করি— হয়তো (আবারও) অন্য কিছু তলব করবে। সে বলবে- না, হে আমার রব।
এসময় সে ওয়াদা দেবে যে, এ ছাড়া কিছু তলব করবে না। তখন আল্লাহ তাকে ছাড় দেবেন, কারণ সে এমন কিছু দেখবে যার ওপর তার ধৈর্যধারণ করা সম্ভব হবে না। তাকে তার নিকটবর্তী করবেন, ফলে সে তার ছায়া গ্রহণ করবে ও তার পানি পান করবে। অতঃপর তার জন্য অপর গাছ প্রকাশ করা হবে, যা পূর্বের তুলনায় অধিক সুন্দর। সে বলবে- হে আমার রব, আমাকে এর নিকটবর্তী করুন, যেন তার পানি পান করতে পারি ও তার ছায়া গ্রহণ করতে পারি, এ ছাড়া কিছু চাইব না।
তিনি বলবেন, হে আদমসন্তান তুমি কি আমাকে ওয়াদা দাওনি অন্য কিছু চাইবে না? সে বলবে, আমি যদি তোমাকে এর নিকটবর্তী করি হয়তো (আবারও) অন্য কিছু চাইবে। ফলে সে তাকে ওয়াদা দেবে যে, অন্য কিছু চাইবে না, তার রবতাকে ছাড় দেবেন। কারণ সে এমন কিছু দেখবে যার ওপর তার ধৈর্য নেই। অতঃপর তাকে তার নিকটবর্তী করবেন, সে তার ছায়া গ্রহণ করবে ও তার পানি পান করবে।
কিছুক্ষণ পর জান্নাতের দরজার কাছে আগের দুটি গাছের চেয়ে আরো সুন্দর একটি গাছ দেখতে পাবে।
সে বলবে, হে আল্লাহ! আমাকে এই গাছের কাছে নিয়ে যান। যাতে আমি এর ছায়ায় আশ্রয় নিতে পারি। এবং পানি পান করতে পারি।
তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, হে আদমের সন্তান, তুমি কি আমার সঙ্গে ওয়াদা করোনি, এর পর থেকে আমার কাছে আর কিছু চাইবে না? সে বলবে, হ্যাঁ, হে রব! এটাই শেষ। এরপর আর কোনো কিছু চাইব না। এইবলে আল্লাহর সঙ্গে সে অঙ্গীকার করবে । আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রার্থনা কবুল করে তাকে গাছের কাছে পৌঁছে দেবেন।
জান্নাতের দরজার কাছে আসার পর সে জান্নাতবাসীর আওয়াজ শুনতে পাবে। সে বলবে, হে রব, আমাকে এখানে প্রবেশ করিয়ে দিন। তখন তাকে আল্লাহ বলবেন, যাও জান্নাতে প্রবেশ করো।
সে বলবে, এখানে আমি কিভাবে থাকব? মানুষ তো সব স্থান দখল করে আছে।
তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, হে আদমের সন্তান, তোমাকে কী দিলে তুমি সন্তুষ্ট হবে? দুনিয়ার কোনো বাদশার মতো হলে তুমি সন্তুষ্ট হবে? সে বলবে, হ্যাঁ, হে রব, আমি সন্তুষ্ট হব। তখন আল্লাহ বলবেন, তোমাকে এর চেয়ে বেশি, এর চেয়ে বেশি, এর চেয়ে বেশি, এর চেয়ে বেশি দিলাম।
পঞ্চমবারে সে বলে উঠবে, হে রব, আমি সন্তুষ্ট। আল্লাহ তাআলা বলবেন, এগুলোর সঙ্গে তোমাকে আরো দশ গুণ বাড়িয়ে দিলাম। তোমার চোখ ও মনের সব কামনা-বাসনা পূরণ করো।
অন্য হাদিস শরীফে বলা হয়েছে ,হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন ,আল্লাহ তাআলা বলবেন “তুমি যে পরিমাণ ইচ্ছা করেছো তা এবং দুনিয়ার দশগুণ জায়গা তোমাকে দেয়া হল”। একথা শুনে সে বলবে, “আপনি আমার সাথে ঠাট্টা করছেন? অথচ আপনি হলেন সর্ব শক্তিমান”। বর্ণনাকারী ইবনে মাসঊদ রাযিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, “এ সময় আমি রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এমনভাবে হাসতে দেখেছি যে, তাঁর মাড়ির দাঁত পর্যন্ত প্রকাশ হয়ে পড়েছে’ (সহীহ মুসলিম )