মুসলিমদের শ্রেষ্ঠ ইবাদাত হলো নামাজ। প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হয়। এই ৫ ওয়াক্ত নামাজ হলো ফরজ যা অবশ্যই পালন করতে হবে। না হলে গুনাহগার হবে। এই ৫ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পাশাপাশি আরো অনেক নফল নামাজ রয়েছে। যার ফজিলত অনেক বেশি।
মুসলিমদের নফল ইবাদাত করার কয়েকটি শ্রেষ্ঠ রাত রয়েছে। এই রাতে ইবাদাত করলে অনেক বেশি ফজিলত পাওয়া যায়। ইবাদাত পালন করার শ্রেষ্ঠ রাত গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি রাত হলো মেরাজ এর রাত। শবে মেরাজ এর রাট হলো মুসলিমদের জন্য একটি অতি পবিত্র রাত।
পবিত্র রজব মাসের ২৭ তারিখ রাত হলো শবে মেরাজ এর রাত। শবে মেরাজ কথাটি আরবি থেকে এসেছে। শবে শব্দের অর্থ হলো রাত আর মেরাজ শব্দের অর্থ হলো ঊর্ধ্ব গমন। শবে মেরাজ শব্দের অর্থ হলো ‘ঊর্ধ্ব গমনের রাত’
এ রাতে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম হযরত জিব্রাঈল (আ.) এর সাথে পবিত্র কাবা হতে ভূ-মধ্যসাগরের পূর্ব তীর ফিলিস্তিনে অবস্থিত পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাস হয়ে সপ্তাকাশের উপর সিদরাতুল মুনতাহা হয়ে সত্তর হাজার নূরের পর্দা পেরিয়ে আরশে আজিমে মহান আল্লাহ তাআলার দিদার লাভ করেন এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের হুকুম নিয়ে দুনিয়াতে প্রত্যাবর্তন করেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর জীবনের সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনা মেরাজ। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ (স) ছাড়া অন্য কোনো নবী এই পরম সৌভাগ্য লাভ করতে পারেননি। আর এ কারণেই তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ নবী।
শবে মেরাজ নামাজের নিয়ম
শবে মেরাজ নামাজের আলাদা কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। শ্রেষ্ঠ রাত গুলোতে যেভাবে নফল নামাজ আদায় করা হয় ঠিক তেমনি শবে মেরাজ এর নফল নামাজ আদায় করতে হয়। শবে মেরাজ নামাজের কোনো নির্দিষ্ট রাকাত সংখ্যা নেই। ইশার নামাজ আদায় করার পরে বিতর নামাজ আদায় করার আগে শবে মেরাজ এর নামাজ আদায় করতে হয়।
অনেকেই মনে করে শবে মেরাজ এ ১২ রাকাত নফল নামাজ আদায় করতে হয়। নামাজে সূরা ফাতিহা তেলাওয়াত করার পরে সূরা ইখলাস তেলাওয়াত করতে হয়। এটা ঠিক নয়। অন্যান্য নফল নামাজ যেভাবে আদায় করা হয় সেভাবেই শবে মেরাজ এর নফল নামাজ আদায় করতে হয়।
১২ রাকাতের কম ও বেশি আদায় করা যায়। এর জন্য কোনো নির্দিষ্ট সূরা নেই। যেকোনো সূরা মিলিয়ে পাঠ করা যায়। আখেরি বৈঠকে আত্তাহিয়াতু ,দরূদ শরীফ ,দোয়া মাসুরা পাঠ করে সালাম ফিরাতে হয়।
যেহেতু শবে মেরাজ এর রাত অতি পবিত্র রাত। তাই এই রাতে নফল ইবাদাতের পাশাপাশি বেশি বেশি দোয়া ,জিকির ,দান – সদকা করা যেতে পারে। এতে অনেক ফজিলত পাওয়া যায়। কিন্তু এটার জন্য নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই যে এটা অবশ্যই করতেই হবে।
শবে মেরাজ নামাজের নিয়ম হলো
দুই রাকাত করে নফল নামাজের নিয়ত করতে হবে ,প্রতি চার রাকাত নামাজ আদায় করে মোনাজাত করতে হবে। যার যত ইচ্ছা তত রাকাত নামাজ আদায় করতে পারেন।
শবে মেরাজ নামাজের নিয়ত
যেকোনো নামাজ আদায়করতে হলে নিয়ত করতে হয়। নিয়ত করা মূলত হলো ইচ্ছা পোষণ করা। যেকোনো নামাজেই নিয়ত না করলে নামাজ হয় না।আপনি যে নামাজ পড়বেন এবং এর জন্য ইচ্ছা পোষণ করেছেন, এটিই হচ্ছে মূলত নিয়ত। নিয়ত আরবি ও বাংলা উভয় ভাবেই করা যায়।
শবে মেরাজ নামাজের নিয়ত আরবি উচ্চারণ
নাওয়াইতুআন উছাল্লিয়া লিল্লাহে তা’আলা রাক’আতায় ছালাতি লাইলাতিল মে’রাজ মুতাওইয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।
যদি এই নিয়ত মুখস্থ করতে অসুবিধা হয় তাহলে বাংলায় ও নিয়ত করতে পারেন।
শবে মেরাজ নামাজের নিয়ত বাংলায়
যেমনঃ আমি কেবলা মুখি হয়ে মে’রাজ এর দুই রাক’আত নফল নামাজ আল্লাহ্ কে রাজি ও খুশি করার জন্য আদায় করিতেছি। আল্লাহু আকবার
শবে মেরাজ এর রোজা
শবে মেরাজ এর রোজা কয়টি ও কত তারিখে রাখতে হয় এরকম কোনো কথা হাদিসে উল্লেখ নেই। ঈদ এ মিলাদুন্নবী এবিং প্রতি মাসে তিনটি করে রোজা রাখা হয়। এ সকল রোজা মূলত নফল রোজা। চন্দ্র মাসের ১৪ বা ১৫ তারিখ রোজা হলো বিশেষ ফজিলত পূর্ণ রোজা। বেশি সওয়াব পাওয়া যায় সেহেতু রজব মাসের রোজা হিসেবে আপনারা নফল রোজা রাখতে পারেন।
কিন্তু শবে মেরাজকে উপলক্ষ করে কোন রোজা রাখা যাবে না। তাই আপনারা সবাই মেরাজকে উল্লেখ করে শবে মেরাজের রোজা রাখতে পারবেন না তবে মাস হিসেবে রোজা রাখতে পারেন। এই সকল রোজা সমূহ নফল ইবাদত হিসেবে গণ্য করা হবে।