আমরা রিজিকের সন্ধানে দিশেহারা হয়ে যাই। আমরা তায়ালাকে ভুলে ,তার আদেশ অমান্য করে,তার ইবাদতের সময় ভুলে অর্থ উপার্জনের জন্য ব্যস্ত থাকি।
আমরা অনেকেই ভুলে গেছি যে আমরা যে রিজিকের পিছনে দৌড়াদৌড়ি করি তার একমাত্র মালিক হচ্ছে মহান আল্লাহ তায়ালা ।মহান আল্লাহ তায়ালার একটি নাম আরেকটি নাম হল ইয়া রাজ্জাকু ।অর্থ আল্লাহ রিজিকদাতা ।
আমরা ভুলে গেছি রিজিকের পিছনে না দৌরে আল্লাহর কাছে রিজিক বৃদ্ধির জন্য শুকরিয়া আদায় করতে হবে ।আল্লাহর রহমত পাওয়ার জন্য আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে হবে ।
পবিত্র কুরআন মজিদে বলা হয়েছে ,নিশ্চয়ই আমার রব তার বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা রিজিক প্রশস্ত করেন এবং সংকুচিত করেন ।আর তোমরা যা কিছু আল্লাহর জন্য ব্যয় করো ,তিনি তার বিনিময় দিবেন এবং তিনিই শ্রেষ্ঠ রিজিকদাতা ।(সুরা ঃ সাবা ,আয়াত নংঃ ৩৯)
রিজিক বৃদ্ধি করতে চাইলে আল্লাহর ইবাদতকে প্রাধান্য দিতে হবে। রিজিক বৃদ্ধির জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করতে হবে।
হজরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত ,হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন ,মহান আল্লাহ বলেন ,হে আদম সন্তান ! আমার ইবাদাতের জন্য তুমি ঝামেলামুক্ত হও ,আমি তোমার অন্তরকে প্রাচুর্য দিয়ে ভরে দেব এবং তোমার দারিদ্রতা ঘুচিয়ে দেব। আর যদি তা না করো ,তবে তোমার হাত ব্যস্ততায় ভরে দেব এবং তোমার অভাব দূর করে দেব না। (তিরমিযী)
রিজিক বৃদ্ধি করার জন্য কিছু আমল রয়েছে। এই আমল গুলো মেনে চললে অভাব -অনটন দূর হবে এবং রিজিক বৃদ্ধি পাবে।
রিজিক বৃদ্ধির কিছু আমল
১। তওবা বা ইস্তেগফার
রিজিক বৃদ্ধির জন্য সব থেকে ভালো আমল হলো ক্ষমা প্রার্থনা করা। যারা বেশি বেশি ইস্তেগফার পড়বে তাদের জন্য রিজিকের দরজা উন্মুক্ত হয়ে যাবে।
সুরা নুহ-এ আল্লাহ তাআলা তার অনুগত বান্দাদের রিজিকে বরকত লাভের জন্য সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা দান করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতঃপর বলেছি, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো।
নিশ্চয় তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন এবং তিনি তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দ্বারা সমৃদ্ধ করবেন এবং তোমাদের জন্য উদ্যান স্থাপন করবেন এবং প্রবাহিত করবেন নদীনালা।’ (সুরা : নুহ , আয়াত : ১০-১২)
ইস্তেগফার বাংলা উচ্চারণ
আসতাগফিরুল্লাহাল আজিম আল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম ওয়া আতুবু ইলাইহি।
ইস্তেগফার বাংলা অনুবাদ
‘আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। যিনি ছাড়া ইবাদতের উপযুক্ত কোনো উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী। আমি তাঁর কাছেই তওবা করছি।
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন ,যে ব্যক্তি এই দোয়া পাঠ করবেন আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দিবেন,সে যদি জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করার মতো অপরাধী হয়। ‘(তিরমিজি ,আবু দাউদ ,মিশকাত )
২। রিজিক বৃদ্ধির তাসবীহ আমল
রিজিক বৃদ্ধির জন্য একটি তাসবীহ আমল রয়েছে। এ আমলটি প্রতিদিন সুবহে সাদিকের সময়ে ১০০ বার পাঠ করলে আয়ে বরকত পাওয়া যাবে ।তাসবিহটি হল:
‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম ,আস্তাগফিরুল্লাহ ‘
৩ । তাহাজ্জুদের নামাজ
তাহাজ্জুদের নামাজ পরে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করলে আল্লাহ তায়ালা বান্দার দোয়া কবুল করেন ।তাহাজ্জুদের নামাজ পরা হয় শেষ রাতে ।ওই সময় আল্লাহ তায়ালা নিচের আসমানে অবস্থান করেন ।ওই সময় যদি বান্দা কিছু চায় তখন আল্লাহ তায়ালা বান্দার আশা পুরুন করেন ।
৪ ।ঘরে রহমতের ফেরেশতা আসার ব্যবস্থা করা
ঘরে ৩ টি বস্তু থাকলে ঘরে রহমতের ফেরেশতা আসেনা ।সেগুল হল ১ ।নাপাক লোক ২ ।প্রানির ছবি ৩ ।কুকুর (বুখারি ,হাদিস নং ঃ ৫৪১২)
যে ঘরে কুকুর ও ছবি থাকে সে ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করে না ।
৫ । নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত করা
নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত করলে রিজিক বৃদ্ধি পাবে ।প্রতিদিন মাগ্রিবের পর সুরা ওয়াকিয়া পাঠ করা ।মহানবি হজরত মুহাম্মাদ (সা) বলেছেন ,যে ব্যক্তি সুরা ওয়াকিয়া পাঠ করবে সে কখন ক্ষুদার কস্ত ভোগ করবে না ।
৬ । তাকওয়ার ওপর অটল থাকা
আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস এবং তাকে ভয় করলে তিনি বান্দার প্রতি বরকত বা কল্যাণ দান করেন। সুতরাং শিরক, কুফর ও নেফাক থেকে নিজেদের ঈমানকে হেফাজত করতে হবে।
সব হারাম থেকে বেঁচে থাকতে হবে। আল্লাহকে সব বিষয়ে বেশি বেশি ভয় করতে হবে। তবেই আল্লাহ তাআলা ওই বান্দার জন্য আসমানি ও জমিনের সব রিজিকে বরকতের দুয়ার খুলে দেবেন।
আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা অর্জন করে নিজ কর্মে নিয়োজিত থাকতে হবে, আমরা পবিত্র কোরআনের সুরা তালাকের ২ ও ৩ নম্বর আয়াতের মাধ্যমে জানতে পারি। ‘আর যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরি করে দেন।
এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দেবেন, যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তার উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেনই। নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।’
৭ ।আত্মীয়ের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখা
আত্মীয় স্বজনদের সাথে সম্পর্ক ভালো রাখলে আল্লাহ তায়ালা খুশি হন এবং রিজিক বৃদ্ধি করে দেন। হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লা।ম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কামনা করে যে, তার রিজিক বাড়াতে চায় বা প্রশস্ত করতে চায়; তার হায়াত বা আয়ুকে দীর্ঘ করতে সে যেন আত্মীয়-স্বজন, পরিবারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখে।’ (বুখারি ও মুসলিম) আত্মীয়দের পাশাপাশি প্রতিবেশী ও গরিব অসহায় এবং আল্লাহর রাস্তায় দানের মাধ্যমে রিজিক বৃদ্ধি পায়।
৮। বেশি বেশি দরূদ পাঠ করা
মহানবী (সা) বলেছেন ,যদি তুমি বেশি বেশি দরূদ পাঠ কর তাহলে তা তোমার সকল সমস্যার সমাধানে এবং অভাব অনটন দূর করতে যথেষ্ট হবে।
৯। দান সদকা করা
বেশি বেশি দেন সদকা করার মাধ্যমে রিজিক বৃদ্ধি পায়। মহান আল্লাহ তায়ালা কুরআন শরীফে বলেছেন , নিশ্চয়ই আমার রব তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা রিজিক প্রশস্ত করেন এবং সঙ্কুচিত করেন। আর তোমরা যা কিছু আল্লাহর জন্য ব্যয় কর তিনি তার বিনিময় দেবেন এবং তিনিই উত্তম রিজিকতা।’ (সুরা সাবা : আয়াত ৩৯)
১০। বার বার হজ্জ্ব ও ওমরাহ করা
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ওমরাহ করে; ওমরাহ তার গোনাহ, তার অভাব অনেক দূরে পাঠিয়ে দেয়।’ (তিরমিজি)
১১। বিবাহ করা
বিবাহের মাধ্যমে মহান আল্লাহ রিজিক বৃদ্ধি করে দেন। যারা অবিবাহিত তারা নেক নিয়তে বিয়ে করলে আল্লাহ তায়ালা তাদের অভাব দূর করে দেবেন।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিত নারী-পুরুষ ও সত্কর্মশীল দাসদাসীদের বিয়ে দাও। তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও মহাজ্ঞানী।’( সুরা নূর, আয়াত-৩২)।
১২। আল্লাহর কাছে বেশি বেশি প্রার্থনা করা
আল্লাহর কাছে বেশি বেশি প্রার্থনা করলে আল্লাহ তায়ালা বান্দার মনের ইচ্ছা পুরুন করে দেন। পবিত্র কুরআন মজীদে বলা হয়েছে ,‘তোমাদের প্রতিপালক বলেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। যারা অহংকারে আমার উপাসনায় বিমুখ, ওরা লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ (সুরা গাফির/মুমিনুন : আয়াত ৬০)
১৩। অসহায় ও দুর্বলদের প্রতি সদয় হওয়া
অসহায়দের প্রতি সদয় আচরন করলে রিজিক বৃদ্ধি পায়। মহানবী হজরত মুহাম্মদ(সা) বলেছেন ,’তোমাদের মধ্যে থাকা দুর্বলদের কারণে কেবল তোমাদের সাহায্য করা হয় এবং রিজিক প্রদান করা হয়। (বুখারী ,হাদিস নং ২৮৯৬)
অসাহয়ের প্রতি দান ও সদাচরণে এ তাগিদ দিয়েছেন প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ‘দান করার কিছু যদি না থাকে তবে একটি খেজুরের অংশ দিয়ে হলেও দান করার মাধ্যমে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার চেষ্টা কর।’
১৪। কোনো কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা
কোনো কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলে শুরু করলে আল্লাহ তায়ালা সব কাজেই বরকত দান করবেন। কেউ যদি খাবার খাওয়ার আগে বিসমিল্লাহ বলে শুরু করে তাহলে সেই খাবারে শয়তান ভাগ নিতে পারে না।
অনুরূপভাবে কেউ যদি ঘরে প্রবেশ করার সময় বিসমিল্লাহ বলে তখনও শয়তান তার সঙ্গে বাসায় ঢুকতে পারে না। এভাবে বান্দা যখন সব কাজ বিসমিল্লাহ বলে শুরু করে, তখন শয়তান সব কাজ থেকে মাহরুম হয়।
১৫। সকালবেলা কাজ শুরু করা
সকালবেলার কাজে আল্লাহ তায়ালা বরকত দান করেন। হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন।,আমার উম্মতের জন্য সকালবেলার সময়টাতে বরকত দেয়া হয়েছে।
সুতরাং কেউ যদি সকালের সময়টিতে ঘুমিয়ে থাকে তবে কিভাবে বরকত আসবে। এ কারণেই দিনের শুরুতে মহান আল্লাহর নাম নিয়ে কাজ শুরু করার মাধ্যমে বরকত ও কল্যাণ করা জরুরি।
১৬। আল্লাহর ওপর ভরসা করা
যে মুমিন ব্যক্তি আল্লাহর ওপর বেশি ভরসা করবে আল্লাহ তায়ালা ততবেশি তাকে সাহায্য করবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- ‘আল্লাহর প্রতি যেরকম ভরসা বা আস্থা রাখা দরকার, তোমরা যদি সেই মাপের আস্থা রাখতে পার, তাহলে আল্লাহ তাআলা পাখিকে যেভাবে রিজিক দেন তোমাদেরও সেভাবে রিজিক দেবেন।’
এ ছাড়া আরো কিছু আমল আছে যে গুলো করলে রিজিক বৃদ্ধি পাবে। তা হলো : ১। সালামের ব্যাপক প্রচলন করা। ২ আল্লাহর জন্য হিজরত করা। ৩। ঘরের অভাব অনটন বাহিরের লোকের কাছে না বলা। ৪। আল্লাহর নিয়ামতে শোকরিয়া আদায় করা। ৫। সম্পদ লোভহীন ভাবে অর্জন করা।