কিছু কিছু মানুষ নেক আমল করেও জান্নাতে যেতে পারবে না। আল্লাহ তায়ালা পছন্দ করে না এমন কাজ করলে জান্নাতে যেতে পারবে না। মহান আল্লাহ তায়ালা জান্নাত তাদের জন্য হারাম করে দিয়েছেন। এরা জান্নাতের স্বাদ কখনো পাবে না।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘৩ শ্রেণীর লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে না। তারা হলো- ‘পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, দাইয়ূস এবং নেশাকারী ।’ (সহিহ জামে)
১। অবাধ্য সন্তান
যে সন্তান পিতা মাতার কথা শোনে না। পিতা মাতাকে খেদমত করে না ,পিতা মাতাকে গালি গালাজ করে ,তাদের কে কষ্ট দেয়। এরকম সন্তান কখনো জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।সে যতই নামাজ কালাম পড়ুক অরে দান সদগা করুক সে জান্নাতে যেতে পারবে না। হাদিসে বলা হয়েছে ,যে সন্তানের ওপর পিতা -মাতা অসন্তুষ্ট সে সন্তানের জন্য জান্নাত হারাম।
আল্লাহকে খুশি করতে হলে আগে পিতা মাতাকে খুশি করতে হবে।আল্লাহ এবং রাসূল (সাঃ ) এর নির্দেশ মানার পরেই পিতা মাতার নির্দেশ মানতে হবে। হাদিসে বলা হয়েছে ,মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ ) বলেছেন ,পিতা মাতার অবাধ্য সন্তান জান্নাতে প্রবেশ করবে না।
২। নেশাকারী
নেশা গ্রস্থ মানুষ ,মাদক দ্রব্য পান করে এরকম মানুষ কখন জান্নাতে জেতে পারবে না ।তারা যে ইবাদত বন্দেগি করে তাও আল্লাহ তায়ালা কবুল করবে না । যে ব্যক্তি একবার নেশা করে ওই ব্যক্তির ৪০ দিনের ইবাদত নষ্ট হয়ে যায়। ইসলামে নেশাকে হারাম করা হয়েছে। তাছাড়া নামাজের সময় মুখে দুর্গন্ধ থাকলে নামাজ হয় না।
৩। দাইয়্যুস ব্যক্তি
প্রথমে আমরা দাইয়্যুস সম্পর্কে জেনে নিই।দাইয়্যুস কাকে বলা হয় ? দাইয়্যুস হলো ওই ব্যক্তি ,যে তার পরিবারের সদস্যদেরকে পর্দার মধ্যে রাখে না। পরিবারের লোকজন বেপর্দায় চলাফেরা করে ,বেহায়াপনা করে। তারপরেও ওই ব্যক্তি পরিবারের সদস্যদেরকে কোনো রকম বাধা দেয় নি। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ ) বলেছেন ,দাইয়্যুস হলো ওই ব্যক্তি ,যে তার পরিবারের অশ্লিনতা ও কুকর্মকে মেনে নেয় (মুসনাদেয়াহমদ,নাসাঈ )
পরিবারের কর্তা হিসেবে বেহায়াপনা বন্ধ করতে পারেনি।ওই ব্যক্তি হলো দাইয়্যুস। যে বেপর্দায় চলে সেও দাইয়্যুস। পরিবারের লোকদের কোনো রকম সমস্যা হলে যেমন পরিবারের কর্তার দায়ভার নিতে হয় তেমনি পরিবারের লোকেরা বেপর্দায় চললে সে দায়ভার পরিবারের কর্তা হিসেবে তাকেই নিতে হবে।
দাইয়্যুস ব্যক্তি যতই ইবাদত বন্দেগী করুক আর যতই দান -সাদগা করুক সে কখনো জান্নাতে যেতে পারবে না। পরিবারের কর্তা হিসেবে তাকেও এ শাস্তি ভোগ করতে হবে ,অরে ওই পরিবারের যে বেপর্দায় চলবে তাকেও এ শাস্তি ভোগ করতে হবে। জান্নাত তাদের জন্য হারাম হয়ে যাবে। দাইয়্যুস ব্যক্তি নারী অথবা পুরুষ যে কেও হতে পারে।
৪। হারাম মাল ভক্ষণ কারি
হারাম উপার্জনের টাকায় শরীর বৃদ্ধি পেয়েছে ওই দেহ কখনো জান্নাতে প্রবেশ করবে না।সে যতই ভালো কাজ করুক না কেন সে কখনো জান্নাতে যেতে পারবে না। যে ব্যক্তি সুদ ঘুষ অর্থাৎ হারাম উপার্জনের টাকায় জীবিকা নির্বাহ করে জাহান্নামের আগুনই তার জন্য প্রাপ্য (মিশকাত )
৫। আত্নীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী
আত্নীয়তার সম্পর্ক যে ছিন্ন করে এরকম ব্যক্তি কখনো জান্নাতে যেতে পারবে না। এ সম্পর্কে মহানবী হজরত মুকাম্মাদ (সাঃ ) বলেছেন ,আত্নীয়তা ছিন্নকারী ব্যক্তি কখনো জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (মুসলিম )
৬। যে ব্যক্তি প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়
যারা প্রতিবেশীদের প্রতি সদয় হয় না, প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয় , তার কোনো কাজে বা কোথায় প্রতিবেশী কষ্ট পায় তারা কখনো জানতে যাবে না। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ ) বলেছেন,যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদে থাকে না সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। (মুসলিম )
৭। অশ্লীন ভাষা কথা বলে যে
যে ব্যক্তি গালি গালাজ করে ,কথায় কথায় আজে বাজে মন্তব্য করে ,উগ্র মেজাজি এরকম ব্যক্তি জান্নাতে যেতে পারবে না।
৮। বিশ্বাস ঘাতককারী শাসক
ওই সব শাসকেরা কখনো জান্নাতে যেতে পারবে না যারা তাদের প্রজাদেরকে অথবা জনগণকে ধোকা দেয় ,জনগনের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে সে জান্নাতে যেতে পারবে না।
হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ ) বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা জেক জনগণের শাসনকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছেন,সে যদি জনগনের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে এবং ওই অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবে (মুসলিম)
৯। যে অন্যের সম্পদ আত্বস্বাদ করে
যে ব্যক্তি অন্যের সম্পদকে নিজের সম্পদ বলে দাবি করে। অন্যের সম্পদ জোর করে,ঢোকা দিয়ে অথবা প্রতারণা করে ভোগ করে এরকম মানুষ জান্নাতে যাবে না।
১০। উপকার করে যে ব্যক্তি খোটা দেয়
হজরত মুহাম্মদ (সাঃ ) বলেছেন ,যে ব্যক্তি উপকার করে খোটা দেয় ওই ব্যক্তি কখনো জান্নাতে যেতে পারবে না। কারো উপকার করে তা অন্যকে বলে বেড়ানো যাবে না। এটা বললে ওই উপকারের জন্য সওয়াবের থেকে বেশি গুনাহগার হবেন।
১১। চোগলখোর ব্যক্তি
যে ব্যক্তি একজনের কথা অন্য জনের কাছে বলে এরকম ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না
হজরত মুহাম্মদ (সাঃ ) বলেছেন ,কেয়ামতের দিন সব চেয়ে খারাপ লোকদের দলভুক্ত হিসেবে ওই ব্যক্তিকে দেখতে পাবে যে এক জনের কাছে এক কথা আর আরেক জনের কাছে অন্য কথা নিয়ে হাজির হতো। মুসলিম)
১২। অন্যের পিতাকে যে নিজের পিতা বলে পরিচয় দেয়
যে ব্যক্তি নিজের পিতাকে নিজের পিতা না বলে অন্যের পিতাকে নিজের পিত বলে দাবি করে এরকম ব্যক্তি জান্নাতে যেতে পারবে না।
১৩। অহংকারকারী
অহংকারকারী ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ ) বলেছেন ,যার অন্তরে বিন্দু পরিমান অহংকার আছে ওই ব্যক্তি কখনো জান্নাতে যাবে না। (মুসলিম)
১৪। আল্লাহকে অবিশ্বাস করা
জান্নাত লাভের প্রধান শর্ত আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ ) বলেছেন ,ঈমানদার ব্যতীত কেউ জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (বুখারী ও মুসলিম )
১৫। যে নারী অকারণে স্বামীর কাছে তালাক চায়
যে নারী কথায় কথায় তার স্বামীর কাছে তালাক চায় ,স্বামীর সাথে অকারণে ঝগড়া ঝাটি করে এরকম নারী জান্নাতে যাবে না। স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক নষ্ট হলে সব থেকে শয়তান বেশি খুশি হয়।
১৬। ওয়ারিশকে বঞ্চিত কারী
ওয়ারিশকে বঞ্চিতকারী ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না
১৭। লোক দেখানো আমলকারী
যে ব্যক্তি লোককে দেখানোর জন্য আমল করে ,দান করে এরকম ব্যক্তির নেক আমলের থেকে গুনাহগার বেশি হবে। এরকম ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না
১৮। আত্নহত্যাকারী
আত্নহত্যাকারী ব্যক্তিও জান্নাতে যেতে পারবে ন
১৯। জ্যোতিষ ব্যক্তি
গণক বা জ্যোতিষ ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না। কেননা মানুষের ভাগ্য শুধু আল্লাহ তায়ালাই নির্ধারণ করে কোনো মানুষ তা করতে পারবে না। গণক ব্যক্তি ওটাই করে। নিজেকে আল্লাহর সাথে তুলনা করা হয়। যা কবিরা গুনাহ ,যে গুনাহের কোনো ক্ষমা হয় না।
২০। ঋণগ্রস্থ ব্যক্তি
হাদিসে বলা হয়েছে ,রাসূলুল্লাহ (সাঃ ) বলেছেন : ঋণ ছাড়া শহীদের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (মুসলিম)