ইসলাম ৫ টি স্তম্ভের ওপর নির্মিত। সেগুলো হলো : ১। কালেমা ২। নামাজ ৩। রোজা ৪। হজ্জ্ব ৫। যাকাত। এই ৫ টি স্তম্ভের মধ্যে নামাজ অন্যতম স্তম্ভ। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ফরজ করে দিয়েছেন আল্লাহ তায়ালা। কিন্তু মন গড়া ভাবে নামাজ পড়লে নামাজ কবুল হবে না বরং আরো গুনাহ হবে। হজরত মুহাম্মদ (সাঃ ) যে ভাবে নামাজ আদায় করতে বলছে সে ভাবে নামাজ আদায় করতে হবে।
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ ) এর দেখানো পথে নামাজ না পড়লে ,ওই নামাজ কোনো কোনো ব্যক্তিকে জাহান্নামে নিয়ে যেতে পারে। তিন শ্রেণীর লোকেরা নামাজ পরেও জাহান্নামে যাবে। নিম্নে এই তিন শ্রেণীর লোক সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো :
১। যারা নামাজে অলসতা করে
যারা নামাজে অলসতা করে সঠিক সময়ে নামাজ পরে না ,মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন তাদের নামাজ কবুল করে না। যারা নামাজ থেকে উদাসীন অর্থাৎ নামাজে যারা রুকু সিজদা ,ওঠা বসা ,কেরাত ,দোয়া ,তাসবীহ যথাযথ ভাবে পাঠ করে না। মহান আল্লাহ তায়ালা তাদের নামাজ কবুল করে না। পরকালে তাদের জন্য অশেষ শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।
যারা আজান শোনার পরেও নামাজে দাঁড়ায় না ,অলসতা করে ,নামাজে দাঁড়ালেও মনোযোগ দিয়ে নামাজ পরে না ,নামাজে দাঁড়িয়েও পার্থিব জগতের ধ্যান- ধারণা নিয়ে চিন্তা করে আল্লাহ তায়ালা তাদের নামাজ কবুল করবে না। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে ,’অতঃপর দুর্ভোগ ওই সব মুসুল্লির জন্য ,যারা নামাজ সম্পর্কে উদাসীন। ‘(সূরা: মাউন ,আয়াত : ৪ -৫ )
২। যারা দায়সারা ভাবে নামাজ পরে
যারা নামাজের বিধি বিধান গুলো মেনে যথাযথ নিয়মে নামাজ আদায় করে না ,দায়সারা ভাবে নামাজ আদায় করে আল্লাহ তায়ালা ওই সব ব্যক্তির নামাজ কবুল করে না।
নামাজের রুকু, সিজদা ,তাকবীর সঠিক নিয়মে দিতে হবে,তা না হলে ওই নামাজে সওয়াবের থেকে বেশি গুনাহ হয়ে থাকে। যার পরিনাম হলো জাহান্নাম। জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তি ভোগ করতে হবে ,একটু ভুলের জন্য।
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ ) বলেছেন ,মানুষের মধ্যে সব চেয়ে বড় চোর হলো ওই ব্যক্তি যে নামাজে চুরি করে। সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন ,হে আল্লাহর রাসূল !নামাজ কিভাবে চুরি করে ? মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ ) উত্তর দিলেন ,সে নামাজে রুকু ও সিজদা পূর্ন করে না। (মুসনাদে আহমদ ,হাদিস : ২২৬৯৫)
রাসূলুল্লাহ (সাঃ ) এর ভাষায় সব থেকে বড় চোর হচ্ছে ওই ব্যক্তি যে নামাজে চুরি করে। মানুষের ধন সম্পদ ,টাকা পয়সা চুরি করা ,এগুলোকে সামান্য চুরি বলা হয়। কিন্তু যে ব্যক্তি নামাজ চুরি করে সে সব থেকে বড় চোর। সে ব্যক্তি নিজের মহা মূল্যবান সম্পদ চুরি করছে।
আবু হুরায়রা (রাঃ ) বলেন ,হজরত মুহাম্মদ (সাঃ ) মসজিদে প্রবেশ করলেন। তখন এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে নামাজ আদায় করে হজরত মুহাম্মদ (সাঃ ) কে সালাম দিলেন। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ ) সালামের জবাব দিয়ে বললেন ,যাও তুমি পুনরায় নামাজ আদায় করো।
কেননা তুমি সঠিক নিয়মে নামাজ আদায় করো নি। এভাবে লোকটি তিন বার নামাজ আদায় করল। রাসূল (সাঃ ) তাকে তিন বারই ফিরিয়ে দিলেন। তখন লোকটি বলল ,হে আল্লাহর রাসূল ! আমি এর চাইতে আর ভালো নামাজ আদায় করতে পারি না। আপনি আমাকে নামাজ শিখিয়ে দিন। !
অতঃপর হজরত মুহাম্মদ (সাঃ ) বললেন ,যখন তুমি নামাজে দাঁড়াবে তখন তাকবীর দিবে। তারপর কুরআন থেকে যা পাঠ করা তোমার কাছে সহীহ মনে হবে ,তা পাঠ করবে। তারপর ধীরস্থির ভাবে রুকু করবে।
অতঃপর সোজা হয়ে দাঁড়াবে। তারপর ধীরস্থির ভাবে সিজদা করবে। অতঃপর মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে বসবে। আর প্রত্যেক নামাজ এভাবে আদায় করবে। (বুখারী ,হাদিস :৭৫৭ )
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ ) বলেছেন ,’হে মুসলিমরা !ওই ব্যক্তির নামাজ হয় না ;যে ব্যক্তি রুকু ও সিজদায় নিজেদের পিঠ সোজা করে না। ‘(মুসনাদে আহমদ ,ইবনে মাজাহ )
৩। যারা লোক দেখানো নামাজ পরে
অনেকেই আছে যারা লোক দেখানো নামাজ আদায় করে । কোনো পুত্র বধূ তার শশুর -শাশুড়ির ভয়ে নামাজ আদায় করে । সেখানে আল্লাহর ভয় থাকে না ,আল্লাহর দেয়া শাস্তির ভয় পায় না। এরকম লোকের নামাজ আল্লাহ তায়ালা কবুল করে না।
আবার কেও লোকে কি ভাববে এটা ভেবে নামাজ আদায় করে। এরকম লোকের নামাজ ও আল্লাহ তায়ালা কবুল করবে না। যারা লোক দেখানো নামাজ পরে আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে মুনাফিক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। মুনাফিকরা লোক দেখানো নামাজ পরে। আর মুনাফিকদের স্থান হবে জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে।
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন ,’নিশ্চয় মুনাফিকরা আল্লাহকে ঢোকা দেয় ,আর তিনিও তাদের ধোকায় ফেলেন। যখন ওরা নামাজে দাঁড়ায় ,তখন অলস ভাবে দাঁড়ায় -লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে। আর তারা আল্লাহকে অল্পই স্মরণ করে। ‘(সূরা : নিসা ,আয়াত : ১৪২ )
মহান আল্লাহ তায়ালা লোক দেখানো ইবাদতকারীকে পছন্দ করে না। হাদিসে এসেছে ,মহান আল্লাহ বলেন ,’আমি অংশীবাদীতা থেকে সব অংশীদারের তুলনায় বেশি মুখাপেক্ষীহীন। যে ব্যক্তি কোনো আমল করে এবং তাতে অন্যকে আমার সাথে শরিক করে ,আমি তাকে ও তার আমলকে বর্জন করি। ‘(মুসলিম ,হাদিস নং : ২৯৮৫)