Buy Now


যে কারণে ঘরে রহমতের ফেরেশতা আসে না

ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য আমরা  অনেকেই বিভিন্ন ধরনের ছবি এবং শোপিস  ব্যবহার করে থাকি। এসব জিনিস ব্যবহারের কারণে ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি হয় কিন্তু এমন কিছু ছবি আছে যার কারণে ঘরে ফেরেশতা আসে না।

আমরা সবাই ঘর-বাড়ি, দোকান ও অফিস ইত্যাদিতে রহমত বরকত আসার জন্য দোয়া করি এবং অন্য নেককার মুমিনদের দ্বারা দোয়া করিয়ে থাকি, কিন্তু আমরা অনেকে নিজেরাই রহমত ও বরকত আসার পথ বন্ধ করে রেখেছি।

 হাদিসের ভাষ্যমতে তিনটি জিনিস আছে যেগুলো ঘরে থাকলে ওই ঘরে ফেরেশতা আসে না। সেগুলো হলো : 

 ঘরে কুকুর ও ছবি রাখলে 

ঘরে কুকুর ও প্রাণীর ছবি থাকলে ওই ঘরে আল্লাহর ফেরেশতা প্রবেশ করে না। পাহারাদার হিসেবে কুকুর পালন করা যাবে কিন্তু ওটার থাকার জন্য আলাদা ব্যবস্থা করে দিতে হবে। অনেকেই কুকুর ভালোবেসে পালন করে থাকে এটা শরীয়তের বিরোধিতা করা হয়। এভাবে কুকুর লালন করা নাজায়েয।

আবার অনেকেই যেকোনো প্রাণীর ছবি অথবা কোনো মানুষের ছবি ঘরে টাঙিয়ে রাখেন। এসব সবই ঘরে রাখলে ঘরে রহমতের ফেরেশতা আসে না। তবে কোনো প্রাণী ব্যতীত অন্য ছবি রাখা যাবে। একান্ত প্রয়োজন হলে ছবি উঠানো যাবে কিন্তু তা ঘরে ঝুলিয়ে রাখা যাবে না। 

হাদীস শরীফে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন ,  اشد العذاب يوم القيامة المصورون         অর্থাৎ কিয়ামতের দিন ছবি ও ঠানে ওয়ালার কঠিন থেকে কঠিনতম আযাব হবে।

যে ঘরে কুকুর ও প্রাণীর ছবি থাকে ওই ঘরে নামাজ , রোজা ,জিকির তাসবীহ কোনো রকম ইবাদাত করলে তা কবুল হবে না। তার কারণ ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করে না ,আর ফেরেশতা ঘরে না আসলে কোনো কিছুই কবুল হবে না। 

মৃত্যুর সময় কোনো ব্যক্তির ঘরে এগুলো  থাকলে তখন ওই ঘরে রহমতের ফেরেশতা আসে না ,আসে গজবের ফেরেশতা। ওই ব্যক্তিকে টানতে টানতে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। 

নবী করিম (সা.)-এর সহধর্মিণী আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একটি বালিশ বা গদি কিনে এনেছিলাম, যার মধ্যে ছবি ছিল। যখন রাসুলুল্লাহ (সা.) সেই ছবিটি দেখলেন, তিনি দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে গেলেন; ভেতরে প্রবেশ করলেন না। 

আমি বুঝতে পারলাম যে তাঁর চোখে এটা অত্যন্ত অপছন্দনীয় ব্যাপার। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আল্লাহর কাছে তাওবা করছি এবং তাঁর রাসুলের কাছে ফিরে আসছি। আমি কী অন্যায় করেছি? তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, এ গদি কিসের জন্য?

 আমি বললাম, এটা আপনার জন্য খরিদ করে এনেছি, যাতে আপনি বসতে পারেন এবং হেলান দিতে পারেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, এই ছবি নির্মাতাকে কিয়ামতের দিন শাস্তি দেওয়া হবে এবং বলা হবে, যা তুমি সৃষ্টি করেছ তার প্রাণ দাও এবং তিনি আরো বলেন, যে ঘরে প্রাণীর ছবি থাকে, সে ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করে না। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫১৮১)

আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জিবরাঈল (আ.) আমার কাছে এসে বলেন, গত রাতে আমি আপনার কাছে এসেছিলাম, কিন্তু আমি প্রবেশ করিনি। কারণ ঘরের দরজায় ছবি ছিল। ঘরের মধ্যে ছিল ছবিযুক্ত পর্দা এবং ঘরের ভেতরে ছিল কুকুর। সুতরাং আপনি ঘরে ঝুলানো ছবির মাথা কেটে দেওয়ার আদেশ করুন, তাহলে তা গাছের আকৃতিতে পরিণত হবে। 

আর পর্দাটি কেটে দুটি বালিশের ভেতরের কাপড় বানাতে আদেশ করুন এবং কুকুরটিকে বের করে দেওয়ার নির্দেশ দিন। রাসুলুল্লাহ (সা.) উপদেশমতো কাজ করলেন। কুকুরটি ছিল হাসান বা হুসাইনের এবং তা তাদের খাটের নিচে শুয়ে ছিল, তিনি সেটাকেও বের করে দেওয়ার আদেশ দেন। ফলে তা বের করে দেওয়া হলো। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪১৫৮)

হাদিস শরীফে বলা হয়েছে ,যে ঘরে কুকুর কিংবা প্রাণীর ছবি থাকে সে ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না। (বুখারী ,হাদিস নং : ৫৯৪৯)

অন্য বর্ণনায় আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নিষিদ্ধ ছবি হলো, প্রাণীর মাথা ও চেহারাবিশিষ্ট ছবি, মাথাবিহীন ছবি নিষিদ্ধ নয়। (শরহু মাআনিল আসার, হাদিস : ৬৯৪৭)

ঘরে জুনুবী থাকলে 

জুনুবী হলো সহবাস তথা স্বামী-স্ত্রীর মেলামেশা বা স্বপ্নদোষ তথা স্বপ্নে সহবাস করার পর বাস্তবে বীর্যপাত হলে তাকে জুনুবী বলে।চাই সে পুরুষ হোক কিংবা মহিলা।

জুনুবী ব্যক্তির ওপর গোসল ফরজ। এমন ব্যক্তি যদি অলসতা করে গোসল না করে ঘরে থাকে তাহলে ওই ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করে না।  আর নারীরা এমনভাবে থাকা সেখানে তাদের গায়ে কোনো কাপড় থাকে না। সতর উম্মুক্ত থাকলে এমন অবস্থায় রহমতের ফেরেস্তা ঘরে ডুকতে পারে না।

যে ঘরে পেশাব পায়খানা রাখা হয় 

যে ঘরে পেশাব পায়খাড়া রাখা হয় ওই ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) হতে বর্ণিত ,প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন ,ঘরের মাঝে পেশাব জমিয়ে রাখা উচিত নয়। যে ঘরে পেশাব জমানো থাকে সেই ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না। 

যে ঘরে বাদ্য যন্ত্র থাকে 

যে ঘরে বডি যন্ত্র থাকে সে ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না। বিখ্যাত তাবেয়ী হজরত নাফে (রা) থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত ,তিনি বলেন , চলার পথে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা) বাঁশির আওয়াজ শুনলেন ,সাথে সাথে তিনি দুই কানে আঙ্গুল দিলেন। 

কিছুদূর গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন ,হে নাফে ! এখনো কি আওয়াজ শুনছ ? আমি বল্লাল হ্যাঁ। তারপর আমি যখন বললাম ,এখন আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না তখন তিনি কান থেকে আঙ্গুল সরালেন এবং বললেন ,একদা রাসূল (সা) চলার পথে বাঁশির আওয়াজ শুনে এমনই করেছিলেন। (মুসনাদে আহমদ ,হাদিস নং : ৪৫৩৫ ,সুনানে আবু দাউদ ,হাদিস নং : ৪৯২৪)

যে ঘরে ঘন্টি থাকে 

যে ঘরে ঘন্টি থাকে ওই ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না। পৰ মহল্লায় পনি বিক্রির জন্য যে ঘন্টি ব্যবহার করে সেগুলো ঘরে রাখলেও ফেরেশতা প্রবেশ করে না। 

একদিন হজরত আয়েশা (রা) এর নিকট বাজনাদার নুপুর পরে এক বালিকা আসলে আয়েশা (রা) তাকে বলেন ,খবরদার তা কেটে না ফেলা পর্যন্ত আমার ঘরে প্রবেশ করবে না। তারপর তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ,যে ঘরে ঘন্টি থাকে সে ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না। (সুনানে আবু দাউদ ,হাদিস নং : ৪২৩১) 

Sharing Is Caring:

Leave a Comment