কালিমা বা ঈমানের পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ ইবাদাত হলো নামাজ। নামাজকে বেহেশতের চাবি কাঠি বলা হয়। নামাজের বিষয়ে কুরআনে ও হাদিস শরীফে সবচেয়ে বেশি আলোচনা করা হয়েছে যা অন্য কোনো বিষয় নিয়ে আসেনি।
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা ৮২ বার নামাজের কথা উল্লেখ করেছেন। নামাজের এত গুরুত্ব থাকার পরেও আল্লাহভীরু ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো ওপরে এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা কঠিন হয়ে পরে।
অনেকেই নামাজে অলসতা করে। নামাজ সময়মতো আদায় করে না। অলসতা কর্মবিমুখতা ও হীনমন্যতা তৈরী করে অলসতা ব্যক্তি ও জাতির উন্নতির অন্তরায়।
সাহাবি হজরত সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলো, তারা কারা যাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি? তিনি বললেন, ‘যারা নামাজের নির্দিষ্ট সময় পার করে দিয়ে নামাজ আদায় করে।’
নামাজে অলসতা ও অবহেলা করলে এর ভয়ানক শাস্তি ভোগ করতে হবে। নামাজে অলসতা সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন,ওই সব নামাজিদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি যারা নামাজ থেকে উদাসীন। (সূরা: মাউন ,আয়াত নং: ৪-৫)
হাদিস শরিফে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন তোমাদের কেউ নিদ্রা যায়, তখন তার গ্রীবাদেশে শয়তান তিনটি করে গাঁট বেঁধে দেয়; প্রত্যেক গাঁটে সে এই বলে মন্ত্র পড়ে যে তোমার সামনে রয়েছে দীর্ঘ রাত, অতএব তুমি ঘুমাও।
অতঃপর যদি সে জেগে ওঠে আল্লাহর জিকির করে, তাহলে একটি গাঁট খুলে যায়। তারপর যদি অজু করে, তবে তার আর একটি গাঁট খুলে যায়। তারপর যদি নামাজ পড়ে, তাহলে সমস্ত গাঁট খুলে যায়। আর তার প্রভাত হয় স্ফুর্তি ও ভালো মনে। নচেৎ সে সকালে ওঠে কলুষিত মনে ও অলসতা নিয়ে। (বুখারি, হাদিস : ১১৪২)
সময়মতো নামাজ আদায় করা অন্যতম শ্রেষ্ঠ আমল। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম, আল্লাহর নিকট কোন আমল সবচেয়ে বেশি পছন্দনীয়? তিনি বললেন, সময়মতো নামাজ আদায় করা। নামাজে অলসতা করা মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য। মুনাফিক ব্যক্তিরা নামাজে অলসতা করে বা ইচ্ছাকৃতভাবে দেরি করে নামাজ আদায় করে।
মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন ,‘অবশ্যই মুনাফেকরা প্রতারণা করছে আল্লাহর সঙ্গে অথচ তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতারিত করে। বস্তুত তারা যখন নামাজে দাঁড়ায় তখন দাঁড়ায়, একান্ত অলসভঙ্গিতে লোক দেখানোর জন্য। আর তারা আল্লাহকে অল্পই স্মরণ করে।’ (সূরা : নিসা,আয়াত নং : ১৪২)
হাদিস শরীফে বলা হয়েছে ,আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত ,হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন , মুনাফিক ব্যক্তিদের ওপর ফজর ও ঈশা নামাজের থাকে কষ্টের কোনো নামাজ নেই। তারা যদি এই দুই ওয়াক্ত নামাজের প্রতিদানে কি রয়েছে তা জানত তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও নামাজে উপস্থিত হত। (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)
নামাজে অলসতা দূর করার কিছু উপায় বলা হলো
১। যথাসময়ে নামাজ আদায়ের গুরুত্ব ও মর্যাদার কথা স্মরণ করা।
২। নামাজে অবহেলার ভয়াবহতার কতা স্মরণ করা।
৩। বেশি বেশি মৃত্যুর কথা স্মরণ করা। কেননা যে কোনো সময় আমাদের মৃত্যু হতে পারে।
৪। অলসতা দূর করার জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট বেশি বেশি দোয়া করা।
৫। যথা সময়ে নামাজ আদায় করার জন্য দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং তা বাস্তবায়ন করার জপণ্য মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে সাহায্য চাওয়া।
৬। আল্লাহ তায়ালার কাছে তওবা করা এবং বেশি বেশি ইস্তেগফার পাঠ করা।
৭।যে বিষয়গুলো নামাজে অলসতা তৈরী করে সে বিষয়গুলো থেকে দূরে থাকা।
৮। অতিরিক্ত ঘুম ও খাওয়া মনকে অলস এবং শরীরকে স্থূল করে দেয়। সুতরাং এ দু’টি বিষয় যেন অতিরিক্ত না হয়, সে দিকে সতর্ক থাকা। বরং পরিমিত পরিমাণ খাওয়া ও পরিমিত ঘুম, হালকা ব্যায়ামের অভ্যাস মানুষকে সচল রাখে এবং অলসতা ও স্থবিরতা দূর করে। এগুলো মেনে চলা।
৯। সবসময় ওযু অবস্থায় থাকার চেষ্টা করুন। ওযু ভেঙ্গে গেলে পূণরায় ওযু করে নিন। তাহলে এটি সময় হওয়ার সাথে সাথে নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে ইনশাআল্লাহ।
১০। নামাজে বিলম্ব হলে নিজেকে ধিক্কার দিন এবং ভবিষ্যতে যেন আর এমনটি না হয় সে জন্য মনকে প্রস্তুত করুন।
১১। ফজরের নামাজের প্রতি গুরুত্ব দিন। কারণ, অলসতার কারণে ফজরের নামাজ না পড়তে পারলে— এটাই হবে সারাদিনের আমলহীনতা, গুনাহমুখিতা ও অলসতার সূচনা। তাই অলসতা থেকে বাঁচতে প্রতিটি দিন শুরু করুন ফজর নামাজের মাধ্যমে।
১২। নেককার মানুষের সঙ্গ নেওয়া। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন , হে ঈমানদাররা ,আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো। (সূরা:তাওবা ,আয়াত নং: ১১৯)
অলসতা দূর করার দোয়া
অলসতা ও উদাসীনতা থেকে মুক্তির জন্য বেশি বেশি দোয়া ও তাসবীহ পাঠ করুন। মহানবি হজরত মুহাম্মদ (সা) চিন্তা ও পেরেশানির সময় দোয়া আমল করতেন। হাদিস শরীফে বর্ণনা করা হয়েছে ,আনাস (রা) হতে বর্ণিত ,হজরত মুহাম্মদ (সা) চিন্তাযুক্ত অবস্থায় নিম্নের এই দোয়া পাঠ করতেন। দোয়াটি হলো :
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আউযুবিকা মিনাল আজযি ওয়াল-কাসালি, ওয়া আউযুবিকা মিনাল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া আউযুবিকা মিন দ্বালা‘য়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজাল।
অর্থ: হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে।