যে তিন শ্রেণীর ব্যক্তিকে আঘাত করলে আল্লাহর আরশ কেঁপে ওঠে

প্রথমত আগে জেনে  নিই আরশ কি কখনো কেঁপে উঠতে পারে ? এটা কতটুকু সত্য ?আরশ আল্লাহ তায়ালার একটি সৃষ্টি। এটি কেঁপে উঠতে পারে। এতে আশ্চর্য হবার  কিছু নেই। হাদিস দ্বারা পরিষ্কার প্রমান পাওয়া যায়। 

এক হাদিসে এসেছে ,হজরত জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ ) থেকে বর্ণিত ,রাসূল (সাঃ ) বলেছেন ,সা ‘দ বিন মুযাজের মৃত্যু তে আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠেছে। (সহীহ বুখারী হাদিস নাম্বার ৩৮০৩,৩৫৯২)

সুতরাং এ কথাটি ভিত্তিহীন কোনো কথা নয়। কোনো কারণে আরশ কেঁপে উঠতে পারে। তবে এখানে আরশ কেঁপে উঠা বলতে আল্লাহ খুব নারাজ হন বোঝানো হতে পারে। 

তিন ব্যক্তিকে আঘাত করলে আল্লাহর আরশ কেঁপে ওঠে। এই তিন শ্রেণীর মানুষকে কখনো আঘাত করবেন না। যদি আঘাত করেন তাহলে আপনার ধ্বংস নির্ধারিত হয়ে যাবে। 

এই তিন শ্রেণীর মানুষ হলো : 

  1. অবলা নারীকে আঘাত করা 
  2. প্রতিবন্ধীদের অবহেলা ও অবজ্ঞা করা 
  3. পাগল কে অবহেলা ও অবজ্ঞা করা 

১।  অবলা নারীকে আঘাত করা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা যা বলেন 

অবলা নারীকে আঘাত করলে আল্লাহর আরশ কেপে উঠে। আইয়ামে জাহেলিয়ার যুগে যখন নারীদের সাথে নিষ্ঠূর আচরণ করা হতো তখন আল্লাহ তাল নারাজ হয়ে অনেক গজব নাজিল করেছিল। 

তখন সমাজে নারীদের কোনো সহায় ছিল না ,তারা কেবল ভোগের সামগ্রী ছিল। পুরুষেরা নারীদের সাথে পশুর ন্যায় আচরণ করত। এমনকি কন্যা সন্তান জন্ম নিলে তাকে জীবন্ত কবর দেয়া হতো। এইসব শিশুর গগনবিদারী আর্তনাদ নিষ্ঠূর পিতার হৃদয়ে বিন্দু পরিমান দোয়া ও সহানুভূতি উদ্রেক হতো না। 

তখন নারীদের দাসী হিসেবে বিক্রি করে দেয়া হতো। আর  ক্রয় কৃত নারীরা মনিবের ভোগের সামগ্রী রূপে ব্যবহৃত হতো। সব রকম অন্যায় অবিচার নারীদের  মুখ বুজে সহ্য করতে হতো। কোনো প্রতিবাদ করতে পারতো না। 

একটু ভুল হলেই তাদেরকে চাবুক দ্বারা আঘাত করা হতো। চাবুকের আঘাতে তাদের শরীরের চামড়া ফেটে রক্ত বের হতো। এসব অত্যাচার একজন অবলা নারীকে সয্য করতে হতো নির্ধিদায়। 

নারীদের সাথে এরকম অন্যায় অবিচার দেখে আল্লাহ তায়ালা হজরত মুহাম্মদ (সাঃ ) কে প্রেরণ করলেন। মহানবী হজরত মুহাম্মদ আসার সঙ্গে সঙ্গে নারীদের মান মর্যাদা বেড়ে যায়। হজরত মুহাম্মদ (সাঃ ) ইসলামে নারীর অবদানকে স্বীকৃত দিয়েছেন। 

মহান আল্লাহ বলেন ,তোমরা দারিদ্রের ভয়ে সন্তানকে হত্যা করো না। (সূরা আনআম )তিনি আরো বলেন ,কিয়ামতের দিন জীবন্ত কন্যাদের জিজ্ঞাসা করা হবে ,কি অপরাধে তাদের হত্যা করা হয়েছে। (সূরা তাকভীর )

ইসলাম নারীকে অত্যাচার ,অপমান ,লাঞ্চনা থেকে রক্ষা করে তাকে মায়ের মর্যাদা দিয়েছে। হাদিস শরীফে বলা হয়েছে -মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। 

নবী করিম (সাঃ ) বলেছেন ,যার তিনটি কন্যা বা তিনটি বোন আছে আর সে তাদের আদর ,সোহাগ ও উত্তম শিক্ষা দিয়ে সুপাত্রে বিয়ে দিয়েছে ,তার জন্য বেহেশত অবধারিত। ( তিরমিযী ২য় খন্ড )

এভাবেই ইসলাম নারীকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তাই পারিবারিক কোনো ঝামেলা হলে  বা ঝগড়া- ঝাটি হলে নারীদের গায়ে আঘাত করা যাবে না। মনে রাখতে হবে আমাদের প্রিয় নবী কখনো তার স্ত্রীর গায়ে হাত তুলতেন না। ইসলামে নারীদের অধিকার পুরুষের সমতুল্য নয় বরং অনেক অগ্রগামী। 

পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে -পুরুষের ওপর নারীর তেমন অধিকার রয়েছে ,যেমন নারীদের ওপর পুরুষের অধিকার রয়েছে। (সূরা বাকারাহ ২২৮)

 ২।   প্রতিবন্ধীদের অবহেলা ও অবজ্ঞার চোখে দেখলে

 প্রতিবন্ধীদের অ্বহেলা ও অবজ্ঞা করলে আল্লাহ তাআলা অনেক নারাজ হন । ইসলাম সকল শ্রেণীর মানুষের অধিকারের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা  দিয়েছেন।  প্রতিবন্ধীদের অবহেলার চোখে দেখে ,তাদের মনে রাখা দরকার বিভিন্ন দুর্ঘটনা ও অসুস্থতার কারণে এক জন সুষ্ঠ সবল মানুষ যে কোনো সময় প্রতিবন্ধী হয়ে যেতে পারে। 

তাই আমাদের উচিত প্রতিবন্ধীদের দিকে সহমর্মিতার হাত বাড়ানো ইসলাম প্রতিবন্ধীদের প্রতি সচেতন হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। হজরত মুহাম্মদ (সাঃ ) সমাজের সব মানুষকে সমান চোখে দেখতেন।

যার প্রমান হজরত বেলাল (রাঃ ) ও হজরত উম্মে মাকতুম (রাঃ )হজরত বেলাল (রাঃ ) বাক প্রতিবন্ধী ছিলেন। তবুও হজরত মুহাম্মদ (সাঃ ) তাকে মসজিদে নববীর মুয়াজ্জিন হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। হজরত উম্মে মাকতুম (রাঃ ) দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছিলেন মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ ) তাকে মদিনার অস্থায়ী শাসনকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন।

৩।  পাগলকে আঘাত করলে 

আল্লাহ তায়ালা পাগলকে আঘাত করলে নারাজ হন। ইসলামে পাপ পূরণের হিসেবে তিন ধরণের ব্যক্তিকে ছাড় দেওয়া হবে তার মধ্যে পাগল অন্যতম। 

অসহায় নারী ,পাগল ও প্রতিবন্ধীদের আঘাত করলে যেমন আল্লাহর আরশ কেঁপে ওঠে তেমনি তাদের সাহায্য করে আল্লাহ তায়ালা খুশি হন। তাদের প্রতি দয়া  প্রদর্শন করলে দুনিয়া ও পরকালের মুক্তিও সুনিশ্চিত। 

প্রতিবন্ধী ,পাগল ও অসহায় নারী সমাজেরই একটা অংশ। তাদের বাদ  দিয়ে সুন্দর সুন্দর সমাজ কল্পনা করা যায় না। মহানবী হজররত মুহাম্মদ (সাঃ ) তাদের প্রতি ভালোবাসা ও সহানুভূতি শীল হওয়ার কথা বলেছেন। 

হাদিসে বলা হয়েছে ,মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ ) বলেছেন ,তোমরা ক্ষুধার্তকে খাবার দাও ,অসুস্থদের খোঁজ নাও এবং বন্দিদের মুক্ত করে দাও। (বুখারী )

Sharing Is Caring:

Leave a Comment