যে সন্ধ্যায় পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ ওঠে সেই রাত হতে চাদের শেষ রাত পর্যন্ত প্রতিদিন এশারের ফরজ ও সুন্নত নামাজের পরে এবং বিতর নামাজের আগে
২০ রাকাত নামাজ আদায় করতে হয় এটি তারাবিহের নামাজ নামে অভিহিত । তারাবির নামাজ পরে সুন্নতে মুয়াক্কাদা । বিনা কারনে তারাবিহের নামাজ না পরলে গুনাহ হবে ।
হজরত মুহাম্মাদ (সা) বলেছেন , মহান আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য পবিত্র রমজান মাসে দিনে রোজা রাখা এবং রাতে দারিয়ে তারাবির এর নামাজ আদায় করা সুন্নত করেছেন ।
যে ব্যক্তি ইমান ও সওয়াব লাভের আসায় তারাবির নামাজ আদায় করে তার সমস্ত ছগিরা গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে ।( নাসাঈ শরিফ)
অনেক লোক মনে করে থাকে রোজা না রাখলে তারাবির নামাজ আদায় করা যাবে না । এটা তাদের ভুল ধারনা । রোজা এক রকম ইবাদত আর তারাবির নামাজ আর এক রকম ইবাদত ।রোজাকে মহান আল্লাহ তায়ালা ফরজ করেছেন ।আর তারাবির এর নামাজ হল সুন্নতে মুয়াক্কাদা ।
রোজা এবং তারাবির নামাজ একটি অপরটির জন্য শর্ত নয় । প্রত্যেকটির জন্য আলাদা আলাদা সওয়াব পাওয়া যাবে । তারাবির নামাজের মধ্যে এক খতম কুরআন পাঠ করা সুন্নত । যত বেশি খতম করা যাবে ততগুন বেশি সওয়াব পাওয়া যাবে ।
রমজান মাসে পুরুষেরা তারাবির নামাজ জামায়াতের সাথে অথবা একাকী পরতে পারবে ।তবে জামায়াতের সাথে তারাবির এর নামাজ আদায় করলে বেশি সওয়াব পাওয়া যাবে । আর মহিলারা তারাবির নামাজ নিজ গৃহে একাকী আদায় করবে ।
তারাবির নামাজ এশার নামাজের পূর্বে আদায় করা যাবে না ।যদি কোন ব্যক্তি এশার নামাজ ও তারাবির নামাজ আদায় করার পরে তার মনে হয় যে তার এশার নামাজ ভুল হয়ছে সে আবার এশার নামাজ আদায় করবে ।তাহলে তাকে পুনরায় এশার ও তারাবির এর নামাজ আদায় করতে হবে।
তারাবির নামাজের নিয়ম
তারাবির এর নামাজ দুই রাকাত করে ১০ সালামে ২০রাকাত নামাজ আদায় করতে হয় । তারাবির এর নামাজ সুন্নত নামাজের নিয়মেই আদায় করতে হয় । তারাবির নামাজের নিয়ত করে অন্যান্য নামাজের মতই আদায় করতে হয় । প্রতি দুই রাকাত এবং চার রাকাত নামাজ আদায় করার পরে দোয়া পাঠ করতে হয় ।
তারাবির নামাজের নিয়ত
نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّىَ للهِ تَعَالَى رَكْعَتَى صَلَوةِ التَّرَاوِيْحِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اللهُ اَكْبَرْ
তারাবির নামাজের আরবি উচ্চারনঃ
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা, রাকাআতাই সালাতিত তারাবি সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তায়ালা, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি, আল্লাহু আকবার।
তারাবির নামাজের বাংলা উচ্চারনঃ
নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকয়াতাই ছালাতিত তারাবির সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি তায়ালা , মুতাওয়াজ্জিহান ইলাজিহাতিল
কা’বাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার ।
তারাবির নামাজের বাংলা অর্থঃ
আমি কেবলামুখি হয়ে আল্লাহর ওয়াস্তে তারাবিহের দুই রাকাত সুন্নত নামাজের নিয়ত করলাম ।
প্রতি দুই রাকাত পরে যে দোয়া পাঠ করতে হয়
বাংলা উচ্চারনঃ
হা – যা – মিন ফাদলি রাব্বি , ইয়া কারিমাল মা’রুফি ইয়া কাদিমাল ইহসান ,আহছিন ইলাইনা বি-ইহ সানিকাল কাদিম,ছাব্বিত কুলুবানা আ’লা ত্বায়া তিকা বিরাহ
মাতিকা ইয়া আর হামার রাহিমিন।
অর্থঃ
তারাবির নামাজ আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ মাত্র ।হে শ্রেষ্ঠ দাতা ! হে সর্ব দয়াময় ! তোমার অনুগ্রহের সহিত আমাদের প্রতি সদয় হও এবং আমাদের অন্তরকে
তোমার উপাসনার উপর স্থায়ী রাখ । হে খোদা ! তুমি সর্বাপেক্ষা দয়ালু ।
চার রাকাত পরে যে দোয়া পাঠ করতে হয়
বাংলা উচ্চারনঃ
সুবহা -না যিলমুলকি ওয়াল মালাকুতি ,সুবহানা যিল ইযযাতি ওয়াল আ’যমাতি ওয়াল হাইবাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কিবরিয়ায়ি ওয়াল জাবারুত , সুবহানাল মালিকিল
হাইয়্যিল্লাজি লা- ইয়ানা – মু ওয়ালা ইয়ামুতু আবাদান আবাদা,সুব্বুহুন হুদ্দুসুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালা – ইকাতি ওয়াররুহ।
অর্থঃ
আকাশ ও পৃথিবীর প্রভু অতি পবিত্র । সম্ভ্রম মহত্ত্ব ,ভীতি ক্ষমতা ,গৌরব ও প্রতাপের মালিক পবিত্র । চিরঞ্জীব ,চির জাগ্রত ও চির অমর প্রভু তিনি পবিত্র । আমাদের
ফেরেশতাগণের ও জিবরাঈলের প্রতিপালক অতি পবিত্র ও মহামহিম।
প্রতি চার রাকাত পর অথবা বিশ রাকাত পর যে দোয়া পাঠ করে মোনাজাত করতে হয়
বাংলা উচ্চারনঃ
আল্লাহুম্মা ইন্না নাস’আলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউ’জুবিকা মিনান্নারি ,ইয়া খালিকাল জান্নাতি ওয়ান্নার , বিরাহ মাতিকা ইয়া আযিযু ইয়া গাফফারু , ইয়া কারিমু ইয়া সাত্তারু,
ইয়া রাহিমু ইয়া জাব্বারু ইয়া খালিকু ইয়া বাররু ,আল্লাহুম্মা আজিরনা মিনান্নারি ;ইয়া মুজিরু,ইয়া মুজিরু,ইয়া মুজিরু ,বিরাহ মাতিকা ইয়া আর হামার রাহিমিন।
অর্থঃ
হে আল্লাহ ! আমরা তোমার নিকট বেহেশত প্রার্থনা করি এবং দোযখ হতে তোমার আশ্রয় চাহিতেছি ।হে বেহেশত ও দোযখের সৃষ্টিকর্তা ! তোমারই কৃপা দ্বারা ,হে সর্বজয়ী !
হে অতি ক্ষমাশীল !হে মহান দয়ালু ! হে বৃহৎ দোষ – আচ্ছাদানকারী !হে কৃপাময় ! হে মহৎ শক্তিধর ! হে মহান সৃষ্টিকর্তা ! হে উপকারি ! হে আল্লাহ ! আমাদের দোযখ
হতে রক্ষা কর ।হে মুক্তিদাতা ! হে ত্রাণকর্তা ! হে রক্ষাকারী ! হে সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু ! তোমারই আপন অনুগ্রহে আমাদের জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষা কর ।