জামায়াতের সালাত আদায়ের সময় যে ভুল গুলো হয়

নামাজ ইসলামের প্রধান ইবাদাত। মানাজের কথা পবিত্র কুরআন শরীফে ৮২ বার উল্লেখ করা হয়েছে। অন্য কোনো কিছু এত বার বলা হয়নি। একজন মুসলিম ব্যক্তির প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা ফরজ। জামায়াতে সালাত আদায়

মহিলারা বাড়িতে একাকী নামাজ আদায় করবে আর পুরুষগণ মসজিদে জামায়াতের সাথে নামাজ আদায় করবে। জামায়াতে নামাজ আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। একজন সুস্থ সবল ব্যক্ত যদি অকারণে জামায়াতে সাথে নামাজ আদায় না করে তাহলে সে অনেক বড় গুনাহের কাজ করে। 

কোনো কারণ ছাড়া জামাত ছেড়ে দেওয়া গুনাহের কাজ। একাকী নামাজের চেয়ে জামাতে নামাজের ফজিলত অনেক বেশি। 

হাদিস শরীফে বলা হয়েছে ,হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন ,‘জামাতে নামাজ পড়লে একাকী নামাজের তুলনায় সাতাশগুণ বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। (সহিহ্ বুখারি, হাদিস : ৬১৯)

জামায়াতে নামাজ আদায়ের সময় অনেকেই জেনে বা না জেনে কিছু ভুল করে থাকেন। আজকে আমরা ভুলগুলো জানব এবং তা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করব।

১। তাড়াহুড়ো করে ওযু করা 

 

ওযু আস্তে আস্তে সঠিক ভাবে করতে হবে। ওযুর ফরজ ৪ টি ,মুখমণ্ডল ধৌত করা, উভয় হাত কনুইসহ ধোঁয়া, মাথার এক-চতুর্থাংশ মাসেহ করা এবং উভয় পা টাখনুসহ ধোয়া। এগুলো সঠিকভাবে আদায় করতে হবে। হাত-পা, মুখমণ্ডলের নির্দিষ্ট স্থানে পানি পৌঁছাতে হবে। 

কোনো জায়গায় চুল পরিমান জায়গা শুকনো থাকলে ওযু হবে না। ওযুর সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন সব অঙ্গের ওপর কমপক্ষে দুই ফোটা পানি পরে। অনেকে সামান্য পানি নিয়ে তেলের মতো মাসেহ করে। 

যেমন অনেকে হাতের তালুতে পানি নিয়ে সামনের দিকে গড়িয়ে দেয় আর পিছনের দিকে ভ্র্যা হাত দিয়ে মাসেহ করে নেয় এভাবে ওযু সম্পন্ন হবে না। তাই তাড়াহুড়ো করে ওযু করা যাবে না। ওযু শেষে কালেমা শাহাদাত পাঠ করতে হবে। 

হাদিস শরীফে বলা হয়েছে ,মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অজু শেষে কালেমা শাহাদাত পাঠ করবে তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হয়। সে ইচ্ছা করলে এর যে কোনো দরজা দিয়ে (জান্নাতে) প্রবেশ করতে পারবে।’ (মুসলিম শরিফ)

 

২। জামায়াতের জন্য দৌড়ে যাওয়া 

তাকবিরে উলা পাওয়া কিংবা রাকাত ছুটে না যাওয়ার জন্য অনেকেই তাড়াহুড়ো করেন এবং দৌড়ে আসেন। এভাবে দৌড়ে আসতে হাদিসে নিষেধ করা হয়েছে। নামাজ আল্লাহর দরবারে হাজিরা দেওয়ার নাম। তাই মহান আল্লাহর সামনে প্রশান্ত চিত্তে নামাজ আদায় করাই ইসলামের শিক্ষা।

রাসুল (সা.) বলেন, নামাজের ইকামত শুনলে জামাআতে  শামিল হও। অবশ্যই ধীরে-সুস্থে যাও। তাড়াহুড়ো করো না। জামাতের যতটুকু পাও ইমামের সঙ্গে পড়ো, বাকিটা একাকী পূর্ণ করে নাও।’ (সহিহ্ বুখারি, হাদিস : ৬৩৬)

 

৩। কাতার আঁকাবাঁকা হওয়া 

জামায়াতে নামাজ পড়ার সময় কাতার সোজা করে দাঁড়াতে হবে। কাতার সোজা করা জামায়াতে নামাজ পড়ার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সোজা কাতার মুসলিম ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের প্রতীক। 

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) কাতার সোজা করে দাঁড়াতে বলেছেন। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, তোমরা অবশ্যই তোমাদের কাতার সোজা করে দাঁড়াবে। অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও মতভিন্নতা সৃষ্টি করে দেবেন। (সহিহ্ বুখারি, হাদিস : ৭১৭)

 

৪। কাতারে জায়গা ফাঁকা রাখা 

জামায়াতে নামাজ আদায়ের সময় জায়গা ফাঁকা রাখা উচিত নয়।  দুজন মুসল্লির মাঝখানে ফাঁকা জায়গা থাকলে সেখানে শয়তান প্রবেশ করে।তাই কাতারে জায়গা ফাঁকা না রেখে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াতে হবে। 

হাদিস শরীফে বলা হয়েছে ,‘কাতার সোজা করো। কাঁধে কাঁধ রেখে দাঁড়াও। ফাঁকফোকর বন্ধ করো। তোমাদের ভাইদের জন্য হাত নরম করো এবং শয়তানের জন্য জায়গা ছেড়ে দিয়ো না। যে ব্যক্তি কাতার মিলিয়ে নেয় আল্লাহ তাকে তার রহমতে আগলে নেন। আর যে কাতার বিচ্ছিন্ন করে আল্লাহ তাকে তার রহমত থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেন।’ (আবুদাউদ, হাদিস : ৬৬৬) 

 

৫। কাতার পূর্ন না করে নতুন কাতার করা 

জন্মের কাতারে জায়গা থাকার পরেও অনেকে নতুন করে কাতার শুরু করেন যার কারণে সামনের কাতার অপূর্ন থাকে। এটা জামায়াতের নামাজ আদায়ের আরেকটি ভুল। সামনের কাতার যতক্ষণ পূর্ন না হয় ততক্ষন নতুন কাতার করা যাবে না। 

হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন ,‘সামনের কাতার আগে পূরণ করো। তারপর পেছনের কাতার। কোনো অপূর্ণতা থাকলে সেটা যেন সর্বশেষ কাতারেই থাকে।’ (আবুদাউদ, হাদিস : ৪৭১)

অন্য হাদিসে রাসূল (সা) আরো বলেছেন , ‘যে ব্যক্তি কাতার মিলিত করে আল্লাহ তার সঙ্গে সম্পর্ক জুড়ে দেন, আর যে ব্যক্তি কাতার বিচ্ছিন্ন করে আল্লাহ তার সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করেন।’ (নাসাঈ)

 

৬। মানুষ ডিঙ্গিয়ে সামনের কাতারে যাওয়া 

 

সামনের কাতারে নামাজ আদায় করলে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। এ কারণে সামনের কাতারে জায়গা না থাকা সত্ত্বেও চাপাচাপি করে বসে। যার কারণে অন্য জনের নামাজ আদায় করতে কষ্ট হয়। এভাবে নামাজ আদায় হয় না। 

 

৭। রুকু না পেলে পরের রাকাতের জন্য অপেক্ষা করা 

অনেকে দেরি করে মসজিদে আসার ফলে নামাজ শুরু হয়ে যায়। নামাজের রুকু না পেলে পরের রাকাত শুরু করার জন্য অপেক্ষা করে। এটা ভুল ধারণা।  যে অবস্থাতেই ইমামকে পাওয়া যাবে, সে অবস্থা থেকেই জামায়াতে  শামিল হতে হবে। ইমাম সেজদায় থাকলে মুসল্লিও সেজদায় চলে যাবেন। 

রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, জামাতের যতটুকু পাও ইমামের সঙ্গে পড়ো, বাকিটা একাকী পূর্ণ করে নাও।’ (সহিহ্ বুখারি, হাদিস : ৬৩৬) 

 

৮। ইমামের আগে রুকু – সেজদা করা 

 

অনেকে ইমামের আগে রুকু ও সেজদায় চলে যান এটা মারাত্মক ভুল। ভুলে ইমামের আগে রুকু সেজদা করলে কিছু হবে না কিন্তু ইচ্ছাকৃত ভাবে এমনটা করলে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে। 

হাদিস শরীফে বলা হয়েছে , রাসুল (সা.) বলেন, ‘ইমামের আগে মাথা উঠিয়ে নেওয়া ব্যক্তি কি ভয় পায় না যে, আল্লাহ চাইলে তার মাথাকে গাধার মাথায় রূপান্তরিত করতে পারেন অথবা তাকে গাধার আকৃতি দান করতে পারেন!’ (সহিহ্ বুখারি, হাদিস : ৬৯১)

 

৯। লোকমা না দেওয়া (জামায়াতে সালাত আদায়)

 

 ইমামের কোনো ভুল হয়ে গেলে লোকমা দেওয়া এবং তাকে ভুলের জন্য সংকেত দেওয়া জরুরি। আল্লাহু আকবার নয়, বরং সুবহানাল্লাহ বলেই লোকমা দেওয়া বিধেয়।

১০। এক সালাম ফেরানোর পরই মাসবুকের দাঁড়িয়ে যাওয়া 

যখন ইমাম সাহেব সালাম ফেরাবেন, তখন মাসবুক ব্যক্তি সালাম না ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে যাবেন এবং ছুটে যাওয়া রাকাতগুলো আদায় করবেন। অনেকে ইমাম সাহেব এক সালাম ফেরানোর পর দ্বিতীয় সালাম শুরু করার সময়ই দাঁড়িয়ে যান, এটি অনুচিত। নিয়ম হলো, ইমাম সাহেব ডানে-বামে উভয় দিকে সালাম ফেরানো শেষ করার পর একটু অপেক্ষা করে মাসবুক ব্যক্তি দাঁড়াবে। এর আগে নয়। (ফাতাওয়ায়ে শামি, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৪৮)

 

সূরা মুযযাম্মিল ফজিলত অর্থসহ বাংলা উচ্চারণ

Sharing Is Caring:

Leave a Comment