জান্নাতের হুর দেখতে কেমন হবে এবং কারা পাবে ?
জান্নাত হলো চির সুখের স্থান। জান্নাত আরবি শব্দ। এর অর্থ উদ্যান বা বাগান। মহান আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক মুমিন ব্যক্তির জন্য তৈরী করে রেখেছেন চির সুখের স্থান জান্নাত। জান্নাতের হুর দেখতে কেমন হবে ?
হাদিস শরীফে বলা হয়েছে , মহানবী (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য এমন সব নিয়ামত প্রস্তুত করে রেখেছি, যা কোনো চক্ষু দেখেনি, কোনো কান শোনেনি এবং কোনো মানুষের মনে এ সম্পর্কে কোনো ধারণাও জন্মেনি। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৯৯৪)
যারা দুনিয়াতে মহান আল্লাহর ইবাদাত ব্ন্দেগী করবে ,ভালো কাজ করবে ,নেক আমল করবে ,সৎ পথে চলবে ,মহান আল্লাহ তায়ালা ও তার নবী রাসূলের কথা মেনে চলবে ,যার মিজানের পাল্লা ভারী হবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে।
হাদিস শরীফে বলা হয়েছে ,মহানবী (সা.) বলেছেন, আমার ৭০ হাজার উম্মত একসঙ্গে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাদের চেহারা হবে পূর্ণিমার চাঁদের মতো উজ্জ্বল। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৯৮৯)
তারা জান্নাতের তাদের সময় কাটানোর জন্য সঙ্গী পাবে। সংগী হিসেবে জান্নাতের ৭০ টি করে হুর পাবে।হুর আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো অতিশয় সুন্দরী।
হাদিস শরীফে বলা হয়েছে , রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জান্নাতে মুমিনদের জন্য মোতির গাঁথুনি করা একটি তাঁবু আছে। এর উচ্চতা ৩০ মাইল। এর প্রত্যেক কোণে মুমিনদের জন্য এমন নারীরা থাকবে যাদের কেউ দেখেনি। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৯৯৩)
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘হে নবী! যারা ঈমান আনে এবং সত্কর্ম করে, তাদের সুখবর দিন, তাদের জন্য রয়েছে এমন জান্নাত, যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবহমান থাকবে। যখনই তাদের ফলমূল খেতে দেওয়া হবে, তারা বলবে, এরূপ ফলই তো আগে আমাদের দেওয়া হতো। তাদের বাহ্যিক দৃষ্টিতে একই ধরনের ফলমূল দেওয়া হবে (তবে স্বাদ হবে ভিন্ন)। আর সেখানে তাদের জন্য রয়েছে পবিত্র সঙ্গী। তারা সেখানে অনন্তকাল বসবাস করবে।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৫)
জান্নাতে থাকবে চারটি নহর —একটি পানির, একটি মধুর, একটি দুধের এবং একটি শরাবের।
কুরআন শরীফে কত বার হুরের কথা বলা হয়েছে
জান্নাতি নারীদের কুরআনের ভাষায় হুর বলা হয়। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন শরীফের ৪ টি সুরে হুরের কথা বলেছেন। সেগুলো হলো :
প্রথমত, সুরা দোখানের ৫৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আমি তাদের আনতলোচনা স্ত্রী দেব।’
দ্বিতীয়ত, সুরা তুরের ২০ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তারা সারিবদ্ধ সিংহাসনে হেলান দিয়ে বসবে। আমি তাদের আনতলোচনা হুরদের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করে দেব।’
তৃতীয়ত, সুরা আর রাহমানের ৭২ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘জান্নাতিদের জন্য রয়েছে তাঁবুতে অবস্থানকারিণী হুরগণ।’
চতুর্থত, সুরা ওয়াকেয়ার ২২ থেকে ৩৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তথায় (জান্নাতে থাকবে) আনতনয়না হুরগণ, যারা আবরণে রক্ষিত মোতির মতো। তারা যা কিছু করত তার পুরস্কারস্বরূপ। তারা জান্নাতে অবান্তর ও কোনো পাপবাক্য শুনবে না, শুনবে সালাম আর সালাম (শান্তি, শান্তি)। যারা ডান দিকের দল, কত ভাগ্যবান ডান দিকের দল।
তারা থাকবে এমন উদ্যানে, যেখানে আছে কাঁটাবিহীন কুলবৃক্ষ এবং কাঁদি কাঁদি কলা এবং দীর্ঘ ছায়ায় আর সদা প্রবাহিত পানি ও প্রচুর ফলমূল, যা শেষ হওয়ার নয় এবং নিষিদ্ধও নয়। আর থাকবে সমুন্নত শয্যায়। আমি জান্নাতি হুরদের বিশেষরূপে সৃষ্টি করেছি। তাদের করেছি চিরকুমারী, কামিনী, সমবয়স্কা।’
হুরদের দেখতে কেমন হবে
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন ,জান্নাতি রমনীদের চার রঙের সৃষ্টি করা হবে। তা হলো : সাদা ,হলদে ,সবুজ ও লাল।
তাদের দেহ জাফরান, মৃগনাভি, আম্বর ও কাফুর দ্বারা সৃষ্টি। তাদের চুল লবঙ্গ দ্বারা সৃষ্টি। পা থেকে হাঁটু পর্যন্ত সুগন্ধি জাফরানের দ্বারা সৃষ্টি। হাঁটু থেকে নাভি পর্যন্ত মৃগনাভির দ্বারা তৈরি, নাভি থেকে ঘাড় পর্যন্ত আম্বরের তৈরি, ঘাড় থেকে মাথা পর্যন্ত কাফুরের তৈরি। তাদের গাল হবে গোলাপ ও আপেলের মতো লালমিশ্রিত সাদা বর্ণের। গলায় পরানো থাকবে মণি-মুক্তার অলংকার।
যদি একজন রমণী পৃথিবীতে সামান্য থুতু নিক্ষেপ করত, তাহলে সমগ্র পৃথিবী সুঘ্রাণে মুখরিত হয়ে যেত। তাদের বক্ষের মধ্যে আল্লাহর নাম ও স্বামীর নাম লেখা থাকবে। প্রত্যেকের হাতে ১০টি করে স্বর্ণের কাঁকন থাকবে। প্রত্যেক আঙুলে থাকবে মুক্তার আংটি এবং উভয় চরণে থাকবে জহরতের নূপুর।
জান্নাতের হুর হবে চিরকুমারী ,কম বয়সের যুবতী নারী। তাদের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে প্রবাহিত থাকবে নবযৌবনের স্বর্গীয় সুধা। একবার তাদের দিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে পুনরায় তাকালে তাদের সৌন্দর্য ৭০ গুণ বেড়ে যাবে। মাংস ও পোশাকের ভেতরে আচ্ছাদিত হাড়ের মগজসমূহ বাইরে থেকে দেখা যাবে।
হুরদের দেখতে কেমন হবে
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ জান্নাতীদের শরীরে কোন লোম থাকবে না, দাড়ি–গোঁফ থাকবে না এবং চোখে সুরমা লাগানো থাকবে। কখনো তাদের যৌবন শেষ হবে না, জামাও পুরনো হবে না।জান্নাতি হুরের মাথার একটি ওড়নার মূল্য দুনিয়া ও তার মধ্যবর্তী সব বস্তু থেকেও বেশি হবে।
তাদের চেহারা সূর্যের মতো উজ্জ্বল চকচকে হবে। তারা যখন হাসবে, তখন তাদের মুখমণ্ডল থেকে বিজলির মতো আলোর চমক বের হতে থাকবে। জান্নাতবাসী তাদের চেহারায় নিজের চেহারা দেখতে পাবে। যেমন আয়নায় নিজের ছবি দেখতে পাওয়া যায়।
জান্নাতের হুর গণ কখনো রোগাক্রান্ত হবে না। তারা কখনো অপবিত্র হবে না,। তাদের চিরুনি হবে সোনার চিরুনি। তাদের গায়ের গন্ধ হবে কস্তুরির মতো সুগন্ধি। জান্নাতের হুরগণ এক জায়গায় সমবেত হয়ে উচ্চ আওয়াজে এমন সুন্দর সুরে গান গাইবে, সৃষ্টজীব অনুরূপ সুর কখনো শুনতে পায়নি।
জান্নাতের রুমসমূহে যখন তারা ঘুরাফেরা করবে, তখন তাদের আলোতে রুমগুলো আলোময় হয়ে যাবে। জান্নাতের অধিবাসী নারী-পুরুষগণ হবে একই বয়সের পরিপূর্ণ যুবক-যুবতী। তাদের চোখের রং হবে পরিষ্কার সাদার মাঝে কাকের কালো চোখের মতো কালো বর্ণের। তাদের শরীরের কোমলতা হবে বৃক্ষের কচি শাখা-পাতার ন্যায় নরম ও কোমল।
জান্নাতীদের দেখতে কেমন হবে । জান্নাতি নারী ও পুরুষ কি পাবে ?