মহান রব্বুল আলামিন একজন সুস্থ ও প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের ওপর দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন। কিন্তু এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ব্যতীত আরো নামাজ রয়েছে ,যেগুলোকে নফল নামাজ বলা হয়। এই নামাজ গুলো বিশেষ বিশেষ কারণে পড়া হয়। এই নামাজগুলোর মধ্যে একটি নামাজ হলো চাশত বা সালাতুত দোহা নামাজ।
চাশত নামাজ বা সালাতুত দোহা নামাজের কথা আমরা অনেকেই শুনেছি। কিন্তু এই নামাজ কিভাবে আদায় করতে হয় তা আমাদের অনেকের জানা নেই। যার কারণে আমরা অনেকেই এই নামাজ আদায় করতে পারি না।
এই ওয়েবসাইডে চাশত নামাজ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে আশা করি আপনাদের চাশত নামাজ সম্পর্কে আর কিছু অজানা থাকবে না এবং নিয়মিত আদায় করতে পারবেন।
চাশত নামাজ
চাশত নামাজকে ‘সালাতুত দোহা’ বলা হয়ে থাকে। দোহা শব্দের অর্থ প্রভাত সূর্যের ঔজ্জ্বল্য। যা সূর্য স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে শুরু হয়।
নফল নামাজগুলোর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ নামাজ হলো চাশত নামাজ বা সালাতুত দোহা নামাজ। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) নিয়মিত এই নামাজ আদায় করতেন। আমাদের উচিত মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) এর দেখানো পথ অনুসরণ করা। তাহলে মৃত্যুর পরে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) এর শাফায়াত অর্জন করা যাবে।
হাদিস শরীফে বলা হয়েছে ,আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত ,তিনি বলেন ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে তিনটি বিষয়ে অসিয়ত করেছেন – যা আমি মৃত্যু পর্যন্ত কখনো ছাড়বো না। ১. প্রতি মাসের তিন রোজা, ২. চাশতের নামাজ (সালাতুদ্ দুহা), ৩. এবং ঘুমাতে যাওয়ার আগে বিতর নামাজ আদায় করা।’ – (বুখারী, হাদিস : ১১২৪; মুসলিম, হাদিস : ৭২১)
অন্য হাদিসে বুরাইদা (রা) হতে বর্ণিত ,হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেন ,মানুষের শরীরে ৩৬০টি জোড় রয়েছে। অতএব, মানুষের কর্তব্য হলো প্রত্যেক জোড়ের জন্য একটি করে সদাকা করা।
সাহাবায়ে কেরাম (রা) বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! কার শক্তি আছে এই কাজ করার? তিনি (সা.) বললেন, ‘মসজিদে কোথাও কারোর থুতু দেখলে তা ঢেকে দাও অথবা রাস্তায় কোনো ক্ষতিকারক কিছু দেখলে সরিয়ে দাও। তবে এমন কিছু না পেলে, চাশতের দুই রাকাত নামাজই এর জন্য যথেষ্ট।’ (আবু দাউদ, হাদীস : ৫২২২)
চাশত নামাজের সময়
সূর্য উদয়ের পর ইশরাক নামাজ আদায়ের পর থেকে শুরু করে দ্বিপ্রহরের আগে পর্যন্ত এই নামাজ পড়া যায়। অর্থাৎ সূর্য যখন এক মিটার পরিমান উপরে উঠে যায় তখন থেকে দ্বিপ্রহরের আগ পর্যন্ত এই নামাজ আদায় করা যায়।
আরবরা বলত, ‘চাশতের নামাজের সর্বোত্তম সময় হলো- সূর্যোদয়ের পর উটের বাচ্চা যখন গরম অনুভব করে; সে সময়টি হলো চাশতের নামাজের সময়। হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন ,‘চাশতের নামাজ পড়া হবে যখন সূর্যের তাপ প্রখর হয়।’ (সহীহ্ মুসলিম, হাদীস : ৭৪৮)
চাশত নামাজ কত রাকাত
চাশত নামাজ কমপক্ষে ২ রাকাত পড়তে হয়। এর কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই। যার যার সাধ্যমত ৪,৮,১০ , ১২ রাকাত আদায় করতে পারে।
হাদিস শরীফে বলা হয়েছে , মক্কা বিজয়ের দিন দুপুরের পূর্বে আল্লাহ্র রাসূল (সা.) আলী (রা.) এর বোন উম্মে হানী (রা.) এর গৃহে খুবই সংক্ষিপ্তভাবে ৮ রাকাত পড়েছিলেন। সংক্ষিপ্তভাবে পড়লেও রুকু এবং সিজদায় তিনি পূর্ণ ধীরস্থিরতা বজায় রেখেছিলেন এবং প্রতি দুই রাকাত অন্তর সালাম ফিরিয়ে ছিলেন। (বুখারী, হাদীস : ২০৭)
হাদিস শরীফে বলা হয়েছে , রাসূলুল্লাহ (সা.) আবু যর (রা.)-কে বলেছেন,‘তুমি যদি চাশতের নামাজ দুই রাকাত পড়ো, তাহলে তোমাকে গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে না। আর যদি চার রাকাত পড়ো, তাহলে তুমি নেককার মধ্যে গণ্য হবে।
আর যদি আট রাকাত পড়ো, তবে সফলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। আর যদি দশ রাকাত পড়ো তাহলে কেয়ামত দিবসে তোমার কোনো গুনাহ থাকবে না। আর যদি বারো রাকাত পড়ো, তাহলে আল্লাহ তোমার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি তৈরি করবেন।’ (সুনানে কুবরা লিল-বাইহাকী, পৃষ্ঠা : ৩/৪৮)
চাশত নামাজের নিয়ত
বাংলা উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকয়াতাই ছালাতিদ্দোহা রাসূলিল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কে’বাতিশ শারিফাতি ‘আল্লাহু আকবার’
অর্থ :আমি কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে দুই রাকাত চাশত নামাজ আদায়ের নিয়ত করলাম ‘আল্লাহু আকবার’
চাশত নামাজের নিয়ম
চাশত নামাজ অন্য যেকোনো দুই রাকাত নফল বা সুন্নত নামাজ আদায়ের মতোই। সূরা ফাতিহা পাঠ করার পরে অন্য যেকোনো সূরা মিলিয়ে পড়তে হবে। শেষ বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু, দরুদ শরীফ ও দোয়ায়ে মাছূরা পড়ে সালাম ফিরাতে হবে।
চাশত নামাজের ফজিলত
হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন ,চাশত নামাজ আর দারিদ্র একত্র হতে পারে না। অর্থাৎ যে ব্যক্তি নিয়মিতভাবে চাশত এর নামাজ পরে তার আর্থিক অভাব অনটন থাকতে পারে না ,রিজিক বৃদ্ধি হয়। চাশতের নামাজ আদায় করলে সমুদ্রের ফেনা সমান গুনাহ হলে মাফ হয়ে যাবে। (তিরমিযী শরীফ)
ইমাম হযরত আবু মুসা আশয়ারী (রাঃ) হতে বর্ণনা হয়েছে যে, হযরত (সাঃ) বলেছেন যে ব্যক্তি চাশতের চার রাকাত নামাজ আদায় করবে তার জন্য মহান আল্লাহ তাআলা বেহেশত একটি ঘর নির্মাণ করবেন।