কবর জিয়ারতের দোয়া করা ইবাদাতের মধ্যে পরে। কারণ কবর জিয়ারত করলে মৃত্যুর কথা স্মরণ হয় এবং আখিরাতের প্রতি উৎসাহ পাওয়া যায়। মিতা মাতার মৃত্যুর পরে কবর জিয়ারত করা সন্তানের ওপর একটি দাবি। কবর জিয়ারত করলে মৃত্যু ব্যক্তি শান্তি পে এবং যিয়ারতকারী আধ্যাত্মিক উন্নতি হয়।
হজরত মুহাম্মদ (সা) নিজে অনেক কবরস্থানে দাঁড়িয়ে মৃত্যু ব্যক্তির জন্য দোয়া করেছেন। এজন্য কবর জিয়ারত করা সুন্নত। কারণ মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) যে কাজ গুলো করেছেন এবং যে কথা গুলো বলেছেন সব কিছু সুন্নত বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রথমে কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করা হয়েছিল। কিন্তু পরে জিয়ারত করতে আদেশ দেয়া হয়েছে। রাসূল (সা.) বলেন, আমি তোমাদের আগে কবর জিয়ারতে নিষেধ করেছিলাম; এখন থেকে কবর জিয়ারত কর। কেননা তা দুনিয়া বিমুখতা এনে দেয় এবং আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৫৭১)।
হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন ,তোমরা কুরআন পাঠ দ্বারা মৃত ব্যক্তিদের কবর আলোকিত করে রাখ। এতে বুঝা যায় মৃত্যু ব্যক্তির উদ্দেশ্যে কুরআন তেলাওয়াত করা অন্ধকার কবরের বাতিসরূপ।
হাদিস শরীফে বলা হয়েছে ,মৃত্যু ব্যক্তিকর দাফন করে লোকজন এই পরিমান দূরে আসলেই তাকে কবরে জীবিত করে দেওয়া হয়। মৃত্যু ব্যক্তি কবরে থেকে মানুষের পায়ের শব্দ শুনতে পায়। তাই মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) অনেক কবর জিয়ারত করেছেন। (মুসলিম)
কবর জিয়ারতের দোয়া :
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনার কবরবাসীর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এই দোয়া পাঠ করেন
আরবি উচ্চারণ :
السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ يَا أَهْلَ الْقُبُورِ يَغْفِرُ اللَّهُ لَنَا وَلَكُمْ أَنْتُمْ سَلَفُنَا وَنَحْنُ بِالأَثَرِ
বাংলা উচ্চারণ :
আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর; ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়ালাকুম, আনতুম সালাফুনা ওয়া নাহনু বিল আ-সার।
অর্থ :হে কবরবাসী! তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহ আমাদের ও তোমাদের ক্ষমা করুন, তোমরা আমাদের আগে কবরে গিয়েছ এবং আমরা পরে আসছি। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১০৫৩)
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, একবার রাসুল (সা.) একটি কবর জিয়ারতে গিয়ে বলেন
কবর জিয়ারতের দোয়া আরবি উচ্চারণ :
السَّلامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤمِنينَ وإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لاحِقُونَ
কবর জিয়ারতের দোয়া বাংলা বাংলা উচ্চারণ :
আসসালামু আলাইকুম দারা ক্বাওমিম মুমিনিন ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লা-হিকুন।
কবর জিয়ারতের দোয়া বাংলা অর্থ :
মুমিন এই ঘরবাসীদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। ইনশাআল্লাহ আমরা আপনাদের সঙ্গে মিলিত হবো। (সহিহ মুসলিম : ২৪৯)
কবর জিয়ারতের নিয়ম :
কবরের কাছে যাওয়ার পরে সর্বপ্রথম কবর জিয়ারতের দোয়া পড়তে হবে। তারপর দরূদ শরীফ ,সূরা ইখলাস ,সূরা ফাতিহা ,সূরা ইয়াসিন ,আয়াতুল কুরসি ও অন্য যে সব সূরা সহজ মনে হয় সেগুলো পরতে হবে। তারপর কবরবাসীর মাগফিরাতের জন্য দোয়া করতে হবে।
হাদিস শরীফে বলা হয়েছে ,যে ব্যক্তি কোনো কবরস্থানে নিয়ে সূরা ইখলাস ১১ বার পাঠ করে কবরবাসীর জন্য বকশিস করে দেয় তাহলে ওই কবরে জোট জন মৃত্যু ব্যক্তি আছে ,সে ততটি সওয়াব পাবে।
হজরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত ,যে ব্যক্তি কোনো কবরস্থানে গিয়ে আহবার সূরা ফাতিহা ,সূরা ইখলাস ও ‘আল্হা কুমুত তাকাসুর’ পাঠ করে মহান আল্লাহর নিকট এটা বলে ,হে আল্লাহ ! আমি তোমার পবিত্র কালাম হতে যা কিছু পাঠ করলাম তার সওয়াব এই কবরস্থানের সকল নর ও নারীর ওপর বকশিস করে দিলাম। তাহলে কিয়ামতের দিন ওই মৃত্যু ব্যক্তিগম পাঠকারীর জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে। (দায়লামী)
হজরত আনাস (রা) হতে বর্ণিত ,যদি কোনো ব্যক্তি কবরস্থানে গিয়ে সূরা ইয়াসিন পাঠ করে তাহলে সেই কবরস্থানের কোনো কবরবাসীর শাস্তি হতে থাকলে সূরা ইয়াসিনের রহমতে তার শাস্তি রোহিত করে দেওয়া হবে এবং যে ব্যক্তি পাঠ করছে তার আমলনামায় ওই কবরস্থানের মুর্দার সমান সংখ্যক নাকি দেয়া হবে।
কবর জিয়ারতের জন্য জুমআর দিন উত্তম। হাদিস শরীফে বলা হয়েছে ,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতি জুমআয় তার মা-বাবা বা তাদের একজনের কবর জিয়ারত করবে, তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে এবং মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহারকারীদের মধ্যে গণ্য করা হবে।’ (আল মুজামুল আউসাত)
কবর জিয়ারতের সতর্কতা :
কবরের কাছে গিয়ে এমন কিছু করা যাবে না যেগুলো শিরকের আওতায় পরে। যেমন কবরবাসীর কাছে কোনো কিছু কামনা করা ,কবরের মাটি ছুঁয়ে সালাম করা বা সিজদা করা ,কবরে মানত করা ,কবরে বাতি দেয়া।
রাতের বেলা কবর জিয়ারত বা কবরে বসে কুরআন তেলাওয়াত করতে হিলে আলোর প্রয়োজন সেজন্য কবরে বাতি দেয়া যাবে। অন্য উদ্দেশ্যে কবরে বাতি দেয়া যাবে না। মৃত্যু ব্যক্তির নিজ আমলে যদি কবর আলোকিত না হয় তাহলে বাহিরের বাতির আলোতে তা হবে না।
ইবনে আব্বাস (রা) হতে বর্ণিত ,হজরত মুহাম্মদ (সা) ওই সব লোকদের ওপর লানত বর্ষণ করেছেন যারা কবরে বাতি দেয়। (তিরমিযী ,আবু দাউদ ,নাসাঈ )
তাই কবরে বাতি দেয়ার জন্য টাকা ব্যয় না করে সেই টাকা দিয়ে গরিব মিসকীনকে দেন করে বা অন্য কোনো নেক কাজে ব্যয় করে মৃত্যু ব্যক্তির রুহের উদ্দেশ্যে বকশিস করে দিলে মৃত্যু ব্যক্তি শান্তি পাবে।
কবরে ফুল দেয়া। কবরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য কবরে ফুল দেয়া যাবে না। ফুল দেয়া যাবে যদি এই নিয়ত করে যে ফুলের পাপড়ি গুলো যত সময় তাজা থাকবে ততটা সময় আল্লাহর তাসবীহ ও জিকির করবে তার বরকতে মৃত ব্যক্তির কবরের আজাব কম হবে।
মেয়েদের কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করা হয়েছে। হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারী কবর জিয়ারতকারী ও তার ওপর মসজিদ নির্মাণকারীদের এবং তাতে বাতি জ্বালানো ব্যক্তিদের অভিশাপ দিয়েছেন।’ (আবু দাউদ)