পৃথিবীর সব থেকে মধুর ধ্বনি হলো আজান।আজানের মাধ্যমে সকল মুমিন মুসলিম ব্যক্তিদের নামাজের জন্য আহ্বান করা হয়। আজানের ব্যাপারে ইসলাম অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। প্রতিদিন ৫ বার আমরা এই মধুর ধ্বনি অর্থাৎ আজান শুনতে পাই।
প্রতি নামাজের আগে আজান দেয়া সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। হাদিস শরীফে হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন,যখন নামাজের সময় হবে তখন তোমাদের মধ্যে একজন যেন তোমাদের জন্য আজান দেয়। আর যে বয়সে বড় সে যেন ইমামতি করে। (বুখারী ও মুসলিম)
হজরত উকবা ইবনে আমের (রা) হতে বর্ণিত ,হটিনি বলেছেন ,হজরত মুহাম্মদ (সা) কে বলতে শুনেছি ,আল্লাহ তায়ালা ওই মেষের রাখালকে দেখে আশ্চর্য হন যে পাহাড়ের চূড়ায় একটি টিলার ওপর নামাজের জন্য আজান দে ও নামাজ পরে। এ দৃশ্য দেখে এল্লাহ তায়ালা বলেন ,তোমরা আমার এই বান্দার দিকে চেয়ে দেখ ,সে আজান দেয় ,নামাজ পরে ,আল্লাহকে দেখে ভয় করে। আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম। (নাসায়ী)
আজানের মাধ্যমে সকল মুমিন মুসলিম ব্যক্তিদের নামাজের ওয়াক্ত হয়েছে বলে বুঝানো হয়েছে। আজানের মাধ্যমে যারা গাফেল তাদেরকে সজাগ করে দেয়া হয় এবং যারা ভুলে যায় তাদেরকে স্মরণ করে দেয়া হয়। আজান প্রথম হিজরীতে শরীয়তভুক্ত হয়েছে।
আজানের অনেক ফজিলত রয়েছে। হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন ,আজানের আওয়াজ যাদের কাছেই পৌঁছাবে ,হোক যে মানুষ ,জ্বীন অথবা অন্য কোনো জিনিস। সে কিয়ামতের ময়দানে মুয়াজ্জিনের পক্ষে সাক্ষ্য দেবে। (বুখারী)
আজানের সময় করণীয় কাজ
আজান শোনা ও আজানের উত্তর দেয়া সুন্নত। যারা আজান শুনবেন, তারা মৌখিকভাবে জবাব দেবেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘যখন তোমরা আজান শুনবে, তখন জবাবে মুয়াজ্জিনের মতো তোমরাও তা বলবে।’ (বুখারি, হাদিস: ৬১১)
আজানের উত্তর :
আজানের উত্তর দেয়ার পদ্ধতি হলো মুয়াজ্জিন প্রত্যেকটি বাক্য বলে থামার পর শ্রোতা ওই বাক্যটি নিজেও অনুরূপভাবে বলবে। কিন্তু মুয়াজ্জিন ‘হাইয়্যা আলাস সালাহ’ ও ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ বলার সময় শ্রোতা ‘লা হাওলা ওয়া লা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ বলবে। এটাই বিশুদ্ধ অভিমত। (মুসলিম, হাদিস : ৩৮৫)
তবে কোনো কোনো বর্ণনায় ‘হাইয়্যা আলাস সালাহ’ ও ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ বলার সময়ও মুয়াজ্জিনের অনুরূপ বলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। (কিতাবুদ দোয়া, তাবারানি, হাদিস : ৪৫৮)
যারা আজানের জবাব দেবে না:
নামাজ আদায়কারী, পানাহার অবস্থায়, ইস্তিঞ্জাকারী, স্ত্রী সহবাসে লিপ্ত, মহিলাদের ঋতুকালীন ইত্যাদি সময়। তবে অনেক আলেমের মতে আজানের পরক্ষণেই যদি উল্লিখিত কাজ থেকে অবসর হয়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে আজানের জবাব দিয়ে দেওয়া উত্তম।
কোরআন তিলাওয়াতকারী তিলাওয়াত সাময়িক বন্ধ রেখে আজানের জবাব দেওয়া উত্তম। রেডিও টেলিভিশন এ সরাসরি আজান সম্প্রচার হলে তার জবাব দেয়াও সুন্নত তবে রেকর্ডিং হলে জবাব দেয়া সুন্নত নয়।
আজানের পরে দোয়া ও দরূদ পাঠ করা।
আজানের পর দরুদ শরিফ ও দোয়া পাঠ করা সুন্নত। আজানের পরে দোয়া করলে আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন। হাদিস শরিফে এর ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি আজানের পর ‘আল্লাহুম্মা রাব্বা হাজিহিদ…’ এ দোয়াটি পাঠ করবে, তার জন্য আখিরাতে আমার সুপারিশ অবধারিত।’ (বুখারি, হাদিস : ৬১৪)
আজানের দোয়া
اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَةِ آتِ سَيّدِنَا مُحَمَّدَاً الْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامَاً مَحْمُودَاً الَّذِي وَعَدْتَهُ وَارْزُقْنَا شَفَا عَتَهُ يَوْمَ الْقِيَامَتِه إِنَّكَ لَا تُخْلِفُ الْمِيعَادَ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা রাব্বাহাযিহিদ দাওয়াতিত্তাম্মাহ ওয়া সালাতি ক্বায়িমা, আতি সায়্যিদিনা মুহাম্মাদানিল ওয়াসিলাতা ওয়াল ফাদিলা ওয়াদ্দারাজাতার রাফিয়াহ, ওয়াব আসহু মাক্কামাম্মাহমুদানিল্লাযি ওয়া আত্তাহ, ওয়ার যুক্বনা শাফা’আতাহু ইয়াওমাল ক্বিয়া-মাহ ইন্নাকা লা তুখলিফুল মিয়াদ।’
আজানের সময় বর্জনীয় কাজ
আজানে ‘আল্লাহু আকবার’-এর জবাবে কেউ কেউ ‘জাল্লা জালালুহু’ পড়ে থাকেন। অথচ এটার কোনো নিয়ম নেই। বরং এটি সুন্নাহপরিপন্থী
আজানের সময় জবাব দেওয়ার সময় অনেকে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ’-এর জবাবে ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলে থাকে। এটিও শরিয়ত কর্তৃক অনুমোদিত নয়। কেননা এ সময় দরুদ পড়ার কোনো নির্দেশ নেই।দরূদ আজান শেষে পড়তে হবে।
আজানের সময় মুয়াজ্জিন ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ’ বলার সময় অনেকেই বৃদ্ধাঙ্গুলে চুমু খেয়ে থাকেন। এরপর চোখে-মুখে আঙ্গুল মুছেন। কেউ কেউ আবার সঙ্গে ‘কুররাত আইনি’ দোয়াও পড়ে থাকেন। অথচ শরিয়তে এর কোনো প্রমাণ-ভিত্তি নেই। সুতরাং এটিও বর্জন করা জরুরি।
ইসলামী ফিকহের বিভিন্ন কিতাবের বর্ণনামতে, ফজরের আজানে ‘আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম’-এর জবাবে ‘সাদাকতা ও বারারতা’ পড়বে। কিন্তু হাদিস ও সুন্নাহে এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না।
তাই বিশুদ্ধ মতানুসারে এর জবাবেও মুয়াজ্জিনের অনুরূপ ‘আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম’ বলাই উত্তম। কেননা হাদিস শরিফে এসেছে, আজানের জবাবে তোমরাও মুয়াজ্জিনের অনুরূপ বলবে।
আজানের সময় চুপ থাকা সুন্নত। এ সময় দুনিয়াবী কথা বা কাজ করা যাবে না।