আজান শব্দের অর্থ আহ্ববান বা ডাকা। মহান আল্লাহ তায়ালা দৈনিক ৫ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। প্রতি ওয়াকর জামাজের পূর্বে আজান দেয়া হয়। আমরা দৈনিক ৫ বার আজান শুনতে পাই। প্রতি ওয়াক্ত নামাজের পূর্বে আজান দেয়া হলো সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। আজানের দোয়া ও জবাব দেয়ার সঠিক নিয়ম
পৃথিবীর সবচেয়ে সুমধুর ধ্বনির নাম আজান—এটি মুসলিম-অমুসলিম-নির্বিশেষে কোটি মানুষের উপলব্ধি। ইসলামে আজানের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। আজান শুনে আজানের জবাব দেওয়ারও রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। আজান শ্রবণকারীরও মৌখিকভাবে আজানের উত্তর দেওয়া সুন্নত।
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যখন তোমরা আজান শুনবে, এর জবাবে মুয়াজ্জিনের অনুরূপ তোমরাও বলবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬১১)
আজান দেয়া ও শোনার সময় দুনিয়াবী কোনো কথা বলা যাবে না। আজানের সময় দুনিয়ার কোনো কথা বললে ৪০ বছরের নেকি নষ্ট হয়ে যায়।
যে কোনো অবস্থায় আজান দেয়া শুনলে আজানের জবাব দেয়া ও আজান শেষে দোয়া পড়া উত্তম। জুমার দিনে আজান শোনার পরে কোনো কাজ করা হারাম। নামাজ ,খুৎবা ,হায়েজ – নেফাজ ,ছোহবত করা ,পেশাব পায়খানা ও খাবার খাওয়ার সময় আজানের জবাব দেয়া অনাবশ্যক। কুরআন তেলাওয়াতকারী তেলাওয়াত সাময়িক বন্ধ রেখে আজানের জবাব দেওয়া উত্তম। আজান ও একামতের সময় মুছল্লীগন বসে থাকবে ,দাঁড়িয়ে থাকা মাকরূহ।
রাসুল (সা) বলেছেন, তোমরা যখন মুওয়াজ্জিনকে আযান দিতে শুন, তখন সে যা বলে তোমরা তাই বল। অতঃপর আমার উপর দুরূদ পাঠ কর। কেননা, যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরূদ পাঠ করে আল্লাহ তা’আলা এর বিনিময়ে তার উপর দশবার রহমাত বর্ষণ করেন।
অতঃপর আমার জন্যে আল্লাহর কাছে ওয়াসীলাহ প্রার্থনা কর। কেননা, ‘ওয়াসীলাহ’ জান্নাতের একটি সম্মানজনক স্থান। এটা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে একজনকেই দেয়া হবে। আমি আশা করি, আমিই হব সে বান্দা। যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে আমার জন্যে ওয়াসীলাহ প্রার্থনা করবে তার জন্যে (আমার) শাফাআত ওয়াজিব হয়ে যাবে। (সহীহ মুসলিম হাদিস নং ৭৩৫)
রাসুল (সা) আমাদেরকে ওসিলাহ প্রার্থনা করতে যে দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন তা আযানের দোয়া নামে পরিচিত। তাই আমাদের উচিত আজান মনোযোগ সহকারে শোনা ,জবাব দেয়া এবং আজানের দোয়া পড়া।
আজানের উচ্চারণ ও অর্থ
প্রথমে দুই দমে চার বার বলতে হবে
আল্লাহু আকবার ,আল্লাহু আকবার
অর্থ : আল্লাহ মহান ,আল্লাহ মহান
তারপর দুইবার বলতে হবে
আশহাদু আল লা – ইলাহা ইল্লাল্লাহ
অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিতেছি যে ,আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই।
পুনরায় দুইবার বলতে হবে ,
আশহাদু আনা মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ
অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিতেছি যে ,মোহাম্মদ (সা) আল্লাহর প্রেরিত রাসূল।
তারপর ডানদিকে মুখ ফিরিয়ে দুইবার বলতে হবে
হাইয়্যা আলাচ্ছালা
অর্থ: নামাজের জন্য প্রস্তুত হও।
তারপর বাং দিয়ে মুখ ফিরিয়ে বলতে হবে
হাইয়্যা আলাল ফালাহ
অর্থ: শুভ কাজের জন্য প্রস্তুত হয়
তারপর দুইবার বলতে হবে (শুধু ফজর নামাজে )
আচ্ছালাতু খাইরুম মিনান্নাউম
অর্থ: ঘুম হতে নামাজ উত্তম
তারপর দুই বার একমত বলবে
ক্বাদক্বা – মাতিচ্ছালাহ
অর্থ:বাস্তবিক নামাজ আরম্ভ হয়েছে
তারপর দুইবার বলতে হবে
আল্লাহু আকবার ,আল্লাহু আকবার
অর্থ:আল্লাহ মহান। আল্লাহ মহান
শেষে একবার বলতে হবে
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ
অর্থ: আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই।
আজানের জবাব
হজরত উমর ইবনে খাত্তাব (রা) হতে বর্ণিত ,তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুওয়ায্যিন যখন “আল্ল-হু আকবার, আল্ল-হু আকবার” বলে তখন তোমাদের কোন ব্যক্তি আন্তরিকতার সাথে তার জবাবে বলেঃ “আল্লহু আকবার, আল্ল-হু আকবার”।
যখন মুওয়ায্যিন বলেঃ “আশহাদু আল লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ” এর জবাবে সেও বলেঃ “আশহাদু আল লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ”। অতঃপর মুওয়ায্যিন বলেঃ আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান রসূলুল্লা-হ” এর জবাবে সে বলেঃ “আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান রসূলুল্ল-হ্’। অতঃপর মুওয়ায্যিন বলেঃ “হাইয়্যা ‘আলাস সলা-হ্” এর জবাবে সে বলেঃ “লা-হাওলা ওয়ালা-কুও্ওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ”।
অতঃপর মুওয়ায্যিন বলেঃ “হাইয়্যা ‘আলাল ফালা-হ্” এর জবাবে সে বলেঃ ““লা-হাওলা ওয়ালা-কুও্ওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ”। অতঃপর মুওয়ায্যিন বলেঃ “আল্ল-হু আকবার, আল্ল-হু আকবার”এর জবাবে সে বলেঃ “আল্ল-হু আকবর, আল্ল-হু আকবার”। অতঃপর মুওয়ায্যিন বলেঃ “লা-ইলা-হা ইল্লাল-হ” এর জবাবে সে বলেঃ “লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ”। আর ফজরের নামাজের আজানের সময় ‘আচ্ছালাতু খাইরুম মিনান্নাউম’ এর জবাবে বলতে হবে ‘ছাদ্দাক্তা ওয়া বারারতা’অর্থ: সত্য এবং ভালোই বলেছ।
হাদিস শরীফে বলা হয়েছে ,যে ব্যক্তি স্যান শুনে তার জবাব দিবে এবং দোয়া পর্বে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্ট হয়ে তাকে বেহেশতে স্থান দিবেন। (তিরমিযী)
আজানের দোয়া
আজান এর জবাব দেয়ার পরে নিম্নের দোয়াটি পড়তে হবে
আরবি উচ্চারণ
اللّهُمَّ رَبَّ هذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَةِ اۤتِ مُحَمَّدَانِ الْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُودَانِ الَّذِي وَعَدْتَه
বাংলা উচ্চারণ
আল্ল-হুম্মা রব্বা হা-যিহিদ দা’ওয়াতিত তা-ম্মাতি ওয়াস্ সলা-তিল ক্ব-য়িমাতি আ-তি মুহাম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়াল ফাযী-লাহ, ওয়াব’আস্হু মাক্বা-মাম মাহমূদা-নিল্লাযী ওয়া’আদ্তাহ্।
অর্থ:
হে আল্লাহ! এ পরিপূর্ণ আহবান ও প্রতিষ্ঠিত সালাতের প্রভু! তুমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে দান করো ওয়াসীলা; সুমহান মর্যাদা ও প্রশংসিত স্থানে পৌঁছাও তাঁকে (মাক্বামে মাহমূদে), যার ওয়াদা তুমি তাঁকে দিয়েছ।
আজানের ওপর একটি দোয়া
আরবি উচ্চারণ
أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلهَ اِلَّا اللّهُ وَحْدَه لَا شَرِيْكَ لَه وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُه وَرَسُولُه رَضِيتُ بِاللهِ رَبًّا وَبِمُحَمَّدٍ رَسُولًا وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا
বাংলা উচ্চারণ
আশ্হাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু লা-শারীকা লাহু ওয়া আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহূ ওয়া রসূলুহূ, রাযিতু বিল্লা-হি রব্বাওঁ ওয়াবি মুহাম্মাদিন রসূলান ওয়াবিল ইসলা-মি দীনান।
অর্থ:
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি এক তাঁর কোন শারীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর বান্দা ও রসূল, আমি আল্লাহকে রব, দ্বীন হিসেবে ইসলাম, রসূল হিসেবে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জানি ও মানি এবং এর উপর আমি সন্তুষ্ট।