কেউ মারা গেলে যা করতে হবে বা আমাদের করণীয় কি ?

কেউ মারা গেলে আমাদের করণীয় কি ?

যার জীবন আছে তার মৃত্যু নিশ্চিত। পৃথিবীতে কেউ চিরদিন বেঁচে থাকতে পারে না। নির্ধারিত সময়ে মৃত্যু আসবেই। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন ,প্রত্যেক প্রাণীকেই একদিন মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। (সূরা আনকাবুত ,আয়াত নং : ৫৭) কেউ মারা গেলে আমাদের করণীয় কি ?

কারো মৃত্যু সংবাদ শোনা  মাত্র ‘ইস্তিরজা’ পাঠ করতে হবে। ইস্তিরজা হলো “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন “ যার বাংলা অর্থ হলো আমরা তো আল্লাহরই এবং আর নিশ্চয় আমরা তার দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী। 

আর মৃত ব্যক্তির পাশে থাকলে মৃত্যুর সাথে সাথে তার হাত পা সোজা করে দিতে হবে। তারপর চোখ মুখ বন্ধ করে দিতে হবে। তার পাশে বসে কুরআন তেলাওয়াত করতে হবে। হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন ,তোমরা লাশের নিকটে সূরা ইয়াসিন তেলাওয়াত করো

গোসল দেওয়ার আগে মৃত ব্যক্তির পাশে উচ্চৈঃস্বরে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করা মাকরুহ। (আবদুর রাজ্জাক : ৩/৩৮৬)

এছাড়াও কেউ মৃত্যুবরণ করলে, চওড়া পট্টি দিয়ে তার চোয়াল বেঁধে দেওয়া মুস্তাহাব (ব্যক্তিবিশেষের ক্ষেত্রে প্রয়োজ্য) এবং তার চোখ বন্ধ করে দেওয়া। (মুসলিম, হাদিস : ১৫২৮)

মৃত ব্যক্তির হাতদ্বয় সিনার ওপর রাখবে না, বরং তার দুই পাশেই রাখতে হবে। (সুনানে কুবরা, হাদি : ৬৮৪৯, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ৩/২৪১)

মৃত্যু ব্যক্তিকে খাটিয়ার ওপর শুইয়ে সম্পূর্ণ শরীর চাদর দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। তারপর যত দ্রুত সম্ভব কাফন – দাফনের ব্যবস্থা করতে হবে। 

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন ,নাপাকি বের হওয়ার পূর্বেই তাড়াতাড়ি মুর্দাকে দাফন করিয়া ফেলিবে। 

মৃত্যুর খবর প্রচার করা এবং অনতিবিলম্বে কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করা মুস্তাহাব। (বুখারি, হাদিস : ১১৬৮, আবু দাউদ, হাদিস : ২৮৪৭)

চোখ বন্ধ করার সময় যে দোয়া পাঠ করতে হয় 

মৃত ব্যক্তির চোখ বন্ধ করার সময় একটি দোয়া পড়তে হয়। দোয়াটি হলো: 

আরবি :

باسم الله، وعلى ملة رسول الله صلى الله عليه وسلم، اللهم يسر عليه أمره، وسهل عليه ما بعده، وأسعده بلقائك، واجعل ما خرج إليه خيرًا مما خرج منه.

বাংলা উচ্চারণ :

 বিসমিল্লাহি ওয়া আলা মিল্লাতি রাসুলিল্লাহ, আল্লাহুম্মা ইয়াসসির আলাইহি আমরাহু ওয়া সাহহিল আলাইহি মা-বাদাহু, ওয়াস আদহু বি-লিকাইকা, ওয়াজআল মা খারাজা ইলাইহি মিনমা খারাজা মিনহু।

অর্থ : 

আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিয়ে আসা দ্বিন অনুযায়ী। হে আল্লাহ! তার বিষয়াদি সহজ করে দিন এবং পরের বিষয়গুলোও তার জন্য সহজ করে দিন। আপনার সঙ্গে সাক্ষাতের সৌভাগ্য তাকে দান করুন। তার কাছে আগন্তুক বস্তুগুলোকে প্রস্থানকৃত বস্তু থেকে উত্তম করে দিন। (তিরমিজি, হাদিস : ৯৬৭)

কারও মৃত্যুর পর আরও যে আমল করবেন

মৃত্যুর মাধ্যমে দুনিয়ার কাজকর্মের সাথে আমল ও বন্ধ হয়ে যায়। কেউ মারা গেলে দুনিয়ার জীবিত লোকেরা তাদের আত্মার মাগফেরাত ও শান্তি কামনা করে বেশ কিছু কাজ অব্যাহত রাখতে পারেন। হাদিসে এসেছে ,মৃত্যুর পরে দুই ধরনের আমল অব্যাহত থাকে। তা হলো : 

১। মৃত ব্যক্তির এমন আমল, যা তার জন্য সদকায়ে জারিয়া হতে পারে।

২। আর এমন আমল, যা মৃত ব্যক্তির জন্য জীবিত নিকটাত্মীয়রা করে থাকেন।

সদকায়ে জারিয়া 

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেছেন, ‘মানুষ যখন মারা যায়, তখন তার সমস্ত আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি আমলের দরজা বন্ধ হয় না।তা হলো : 

১। সদকায়ে জারিয়া

২। যদি কেউ এমন সন্তান রেখে যায়, যে সন্তান বাবা-মায়ের জন্য দোয়া করবে

৩।  এমন দীনি শিক্ষা রেখে যায়, যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হতে থাকে। (মুসলিম শরিফ)

মৃত ব্যক্তির জন্য জীবিত আপনজনদের দোয়া 

দুনিয়ায় জীবিত অবস্থানকারী আপনজন যদি কোনো মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করে তাহলে সেই দোয়ার সওয়াব সেই মৃত ব্যক্তি পেয়ে থাকে। তাই আমাদের উচিত মৃত ব্যক্তিদের জন্য বেশি বেশি দোয়া করা। 

পবিত্র কুরআনে নির্দেশ দেয়া হয়েছে ,মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন ,‘হে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে এবং আমাদের আগে যারা ঈমান এনেছেন, তাদেরকে ক্ষমা কর। আর ঈমানদারদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে কোনো বিদ্বেষ রেখ না।’

পিতা মাতার জন্য দোয়া করা 

কোনো পিতা মাতা মারা যাওয়ার পরে যদি তার সন্তান তাদের  জন্য দোয়া করে তাহলে তারা সে সওয়াব পাবে। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলে দিয়েছেন ,পিতা মাতার জন্য সন্তানেরা কোন দোয়া পড়বে। 

দোয়াটি হলো : 

আরবি : 

رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا

উচ্চারণ : 

‘রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা।‘ (সুরা বনি-ইসরাইল : আয়াত ২৪)

অর্থ : 

‘হে আমাদের পালনকর্তা! তাদের উভয়ের প্রতি রহম করুন; যেমনিভাবে তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।’

দান – সদকা  করা 

মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে যদি দুনিয়াতে অবস্থানকারী কেউ দান সদকা করে তাহলে তার সওয়াব মৃত ব্যক্তি পাবে। হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, এক সাহাবি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার মা হঠাৎ মারা যান। 

মৃত্যুকালে তিনি কোনো ওসিয়ত করে যেতে পারেননি। আমার ধারণা তিনি যদি কথা বলার সুযোগ পেতেন, তাহলে দান সদকা করতেন। আমি তার পক্ষ থেকে দান-সদকা করলে কি তিনি এর সওয়াব পাবেন? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই পাবেন। (বুখারি ও মুসলিম)

কুরবানী করা 

মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানী করা যাবে। দুনিয়াতে অবস্থানকারী কেউ যদি মৃত ব্যক্তিদের নিয়ত করে কুরবানী করে তাহলে তার সওয়াব তারা পেয়ে যাবে। 

 

আসমানী কিতাব কয়টি ও কি কি ?

 

 

 

Sharing Is Caring:

Leave a Comment