রোজা রেখে যেসব কাজ করা যাবে না / যে কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে

রমজান মাস হলো সিয়াম সাধনার মাস। রমজান মাসে রোজা রাখা প্রত্যেক মুসলিমদের ওপর ফরজ। ফরজ ইবাদাত ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দিলে কবিরা গুনাহ হয়। রোজা মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন সব জাতির ওপরই ফরজ করেছিলেন। 

রোজা রাখার কিছু নিয়ম রয়েছে।এমন  কিছু কাজ রয়েছে যেগুলো করলে রোজা ভেঙে যাবে। কোন কোন কাজ করলে রোজা হবে না তা আমরা অনেকেই জানি না। আশা করি যারা জানেন না তারা এখন থেকে তাদের উত্তর পেয়ে যাবেন। 

যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা না করে তাহলে ওই ব্যক্তির জন্য রোজার কাজ বা কাফ্ফারা আদায় করতে হবে। রোজার কাফ্ফারা হলো একটি রোজার জন্য একটানা ৬০ টি রোজা রাখতে হবে। এই ৬০ দিনের মধ্যে একদিন বাদ পড়লে বা ভেঙ্গে ফেললে পুনরায় আবার ৬০ টি রোজা রাখতে হবে। 

যদি কেও মনে করে একাধারে ৬০ টি রোজা রাখা সম্ভব নয় বা ৬০ টি রোজা একাধারে রাখলে অসুস্থ হয়ে পরবে সেক্ষেত্রে অন্য কাফ্ফারা আদায় করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কাফ্ফারা হলো ৬০ জন মিসকীনকে একবেলা পরিপূর্ণভাবে খাবার খাওয়াতে হবে। তাহলে রোজার কাফ্ফারা আদায় হবে। 

রমজান মাসে রোজা পালন করলে যে ফজিলত পাওয়া যায় ,রোজার কাফ্ফারা আদায় করলে সে ফজিলত পাওয়া যায় না। তাই ইচ্ছাকৃত ভাবে রোজা ভাঙ্গা যাবে না। 

মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন ,‘তোমরা সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত পানাহার করো, অতঃপর রাত আসার আগ পর্যন্ত রোজা পালন করো। মসজিদে যখন তোমরা এতেকাফ অবস্থায় থাকবে, তখন নারীসম্ভোগ থেকে বিরত থাকবে।’(সূরা : বাকারা ,আয়াত নং : ১৮৭)

এছাড়া আরো কিছু বিষয় আছে যেগুলো হতে বিরত থাকতে হবে। না হলে রোজা পূরণ হবে না। সেগুলো হলো : 

দৃষ্টি সংযত রাখতে হবে 

আমাদের দৃষ্টি সংযত রাখতে হবে। চলাফেরার সময় কারো দিকে কুদৃষ্টি দেয়া হতে বিরত থাকতে হবে। শুধু চলাফেরায় নয় টিভি – সিনেমা ,পত্রিকায় কোনো অশালীন কিছু দেখা হতে বিরত থাকতে হবে। 

অনেকে রোজা রেখে অবসর সময়ে নাটক সিনেমা ,মোবাইল ফোন  দেখে সময় কাটায় এভাবে পূর্ণভাবে রোজা হবে না। এভাবে শুধু উপোস থাকা হবে। তাই এসব থেকে বিরত থাকতে হবে। 

হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন ,শয়তানের তীরসমূহের মধ্যে মানুষের দৃষ্টি শক্তিও একটি। যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে এ তীর বিদ্ধ হওয়া থেকে মুক্ত থাকতে প্রচেষ্টা করে, আল্লাহ তার হৃদয়ে ঈমানের এমন এক দৃষ্টি শক্তি দান করেন, যাতে সেই ব্যীক্ত মজা ও স্বাদ অনুভব করতে পারে।

জবান হেফাজত করতে হবে 

রোজা রেখে কারো ব্যাপারে কোনো অশালীন কথাবার্তা ঝগড়া – ঝাটি করা যাবে না। কারো ব্যাপারে কোনো অশালীন কথাবলাকে গীবত বা পরনিন্দা বলা হয়। যা কবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। পবিত্র কুরআন শরীফে গীবতকারীকে মৃত ভাইয়ের  গোশত খাওয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা লাভে গিবত সম্পর্কে জানতে চাইল তিনি বলেন, ‘কোনো ব্যক্তির পেছনে এমন কোনো কথা বলা, যা তার সামনে বললে সে ব্যক্তি নারাজ হয়।’

হাদিস শরীফে বলা হয়েছে ,যে ব্যক্তি রোজা অবস্থায় মিথ্যাচার ও মন্দ কাজ ত্যাগ করেননি তার পানাহার ত্যাগে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। (সহীহ বুখারী ১/২৫৫,হাদিস নং : ১৯০৩)

হাদিস শরীফে আরো বলা হয়েছে ,রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন রোজা রাখে তখন সে যেন অশালীন কথাবার্তা না বলে ও হৈচৈ না করে।’ ( বুখারি, হাদিস : ১৯০৪)

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) আরো বলেছেন ,রোজা অবস্থায় তোমাদের কেউ যেন অশ্লীন কথা না বলে এবং হট্টগোলে লিপ্ত না হয়। যদি কেউ তার সাথে গালাগালি বা মারামারি করতে চায় তাহলে সে অনুরূপ আচরণ না করে বলবে ,আমি রোজাদার। 

মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন ,‘তোমরা একে অন্যের দোষ-ত্রুটি অন্বেষণ কোরো না এবং পরস্পর গিবত কোরো না। তোমাদের মধ্যে কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করতে পছন্দ করবে? বস্তুত তোমরা তা ঘৃণাই করে থাকো। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।’ (সূরা : হুজুরাত, আয়াত : ১২)

কানের হেফাজত করতে হবে 

আমরা কান দিয়ে ভালো মন্দ সকল কিছু শুনতে পাই। রোজা রেখে গান – বাজনা শোনা – গীবত বা পরনিন্দা ,অশ্লীন কথা-বার্তা শোনা থেকে বিরত থাকতে হবে। 

অন্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ হেফাজত করতে হবে 

রোজা রেখে অন্যান্য অঙ্গ  প্রত্যঙ্গ হেফাজত করে রাখতে হবে। হাত -পা দিয়ে কোনো কিছু চুরি বা কারো কোনো অন্যায় করা যাবে না। 

সেহরি ও ইফতারে হারাম খাবার থেকে বিরত থাকা 

সেহরি ও ইফতারে ব্যবহৃত সকল খাবার – দাবার পবিত্র হতে হবে অর্থাৎ সৎ পথে উপার্জিত অর্থের মাধ্যমে হতে হবে। অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ দিয়ে খাবা খেয়ে রোজা রাখলে ও ইফতার করলে সওয়াব পাওয়া যাবে না। 

হাদিস শরীফে বলা হয়েছে , মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘ওই গোশত (দেহ) জান্নাতে যাবে না, যা হারাম (খাবার) থেকে উৎপন্ন। জাহান্নামই এর উপযোগী।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নম্বর : ১৭২৩, তিরমিজি, হাদিস নম্বর : ৬১৪)

মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন ,‘হে ঈমানদাররা, তোমাদের আমি যেসব পবিত্র রিজিক দিয়েছি, তা থেকে আহার করো। পাশাপাশি আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করো, যদি তোমরা শুধু তাঁরই ইবাদত করে  থাকো।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৭২)।

রোজার সকল দোয়া এবং সময় 

Sharing Is Caring:

Leave a Comment

Ads Blocker Image Powered by Code Help Pro

Ads Blocker Detected!!!

We have detected that you are using extensions to block ads. Please support us by disabling these ads blocker.

Powered By
100% Free SEO Tools - Tool Kits PRO

সকল প্রকার ইসলামিক
বই । Video | Mp3