রোজার নিয়ম বাংলা রোজার দোয়া । রোজা সম্পর্কে আলোচনা 

রমজান মাস হলো রহমত ,মাগফেরাত ও নাজাতের মাস। এই রমজান মাস অনেক মর্যাদাপূর্ণ। একজন মুসলিমের জীবনে এই রমজান মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক। ইসলাম ৫ টি স্তম্ভের ওপর নির্মিত। এর মধ্যে রোজা হলো তৃতীয়। রোজা ফারসি শব্দ। রোজার আরবি শব্দ হলো সাওম। সাওম এর অর্থ হলো বিরত থাকা,সংযত থাকা । 

সুবহে সাদিক থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল ধরনের পানাহার ও পাপাচার  থেকে বিরত থাকা কে রোজা বা সাওম বলে। 

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন ,হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর,যেন তোমরা মুত্তাকী হতে পারো।( সূরা:  বাকারা ,আয়াত ঃ ১৮৩)

রমজান  মাসের  চাঁদ উঠলেই প্রত্যেক সুস্থ ছেলে মেয়েদের অপর রোজা  ফরজ করা হয়েছে ।মেয়েদের হায়েজ -নেফাসের সময় রোজা  রাখা যাবে না ।আল্লাহ তায়ালা ওই সময় মেয়েদেরকে রোজা রাখতে মাফ করে  ্দিয়েছেন। ।তখন রোজা না রাখলে কোন গুনাহ হবে না ।

কিন্তু ওই রোজা গুলো পরে করে দিতে  হবে।  মেয়েদের হায়েজ-নেফাসের সময় নামাজ রোজা কিছুই করা যাবে না ।রোজা পরে করে দিতে হবে কিন্তু নামাজ পরে কাযা  পড়তে হবে না। ওই সময়ের জন্য আল্লাহ তায়ালা মাফ করে দিয়েছেন। 

ওই সময়ের নামাজের হিসাব আল্লাহ তায়ালা নিবে না। কিন্তু কোন  কারণ ছাড়া যদি মুসলিম ব্যক্তি একটি রোজাও ইচ্ছাকৃত ভাবে পরিত্যাগ করে তাহলে সে গুনাহগার হয়ে যাবে। আর আমরা সবাই জানি মৃত্যু পরে গুনাহগার ব্যক্তির  স্থান হবে জাহান্নামে। 

ওই রোজার পরিবর্তে যদি আজীবন রোজা রাখে তাও ওই রমজান মাসের রোজার  সওয়াবের সমান হবে না। এই রোজার ক্ষতি পুরুন আদায় হবে না। 

হাদিস শরীফে বলা হয়েছে ,হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) হতে বর্ণিত ,যে ব্যক্তি অসুস্থতা ও সফর ব্যতীত  ইচ্ছাকৃত ভাবে  রমজান মাসের একটি রোজা ভঙ্গ করবে ,সে আজীবন সেই রোজার ক্ষতিপূরুন আদায় করতে পারবে না। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা ,হাদিস নং : ৯৮৯৩ ,মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ,হাদিস নং : ৭৪৭৬,সহীহ বুখারী : ৪/১৬০)

হজরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত ,হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন,যখন তোমরা (রমজানের) চাদ দেখবে ,তখন থেকে রোজা রাখবে আর যখন(শাওয়ালের) চাদ দেখবে তখন থেকে রোজা বন্দ করবে। আকাশ যদি মেঘাচ্ছন্ন থাকে তবে ত্রিশ দিন রোজা রাখবে। (সহীহ বুখারী : ১৯০৯ ,সহীহ মুসলিম : ১০৮০(১৭ -১৮ )

রোজার ফজিলত 

সব নেক আমলের সওয়াব এবং প্রতিদান রয়েছে। কিন্তু সব নেক আমলের মধ্যে রোজা হলো অন্যতম। কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, বান্দা সব কাজ করে তার নিজের জন্য, কিন্তু রোজা করে আমার জন্য ,আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব। (সহিহ বুখারি ,হাদিস নং ঃ ১৯০৪)

আল্লাহ তায়ালা রোজাদার কে যে প্রতিদান দিবে তা ওজন করা হবে না বিনা হিসেবেই তাকে দিবে ।হজরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত হজরত মুহাম্মাদ (সা) বলেছেন ,

মানুষের প্রত্যেক আমলের প্রতিদান বৃদ্ধি করা হয়। একটি নেকীর সওয়াব দশ গুণ থেকে সাতাশ গুণ পর্যন্ত। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, কিন্তু রোযা আলাদা। কেননা তা একমাত্র আমার জন্য এবং আমি নিজেই এর বিনিময় প্রদান করব।

 বান্দা একমাত্র আমার জন্য নিজের প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং পানাহার পরিত্যাগ করেছে।-(সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১১৫১ (১৬৪); মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৯৭১৪; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৮৯৮৭; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ১৬৩৮ )

রোজাদার ব্যক্তিকে আল্লাহ তায়াল জান্নাতে নিয়ে যাবেন ,জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দেবে ।হজরত সাহল ইবনে সা’দ হতে বর্ণিত ,হজরত মুহাম্মাদ (সা) বলেছেন ,

জান্নাতে রোযাদার ব্যক্তিদের জন্য একটি বিশেষ দরজা আছে, যার নাম রাইয়ান। রোযাদারগণ ছাড়া অন্য কেউ এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। যখন সর্বশেষ রোযাদার ব্যক্তি তাতে প্রবেশ করবে, তখন সেই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে।

 যে ব্যক্তি ঐ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে, সে (জান্নাতের পানীয়) পান করবে। আর যে পান করবে, সে কখনো পিপাসার্ত হবে না।(মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২২৮৪২; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হাদীস : ১৯০২; সুনানে তিরমিযী, হাদীস : ৭৬৫; সুনানে নাসায়ী, হাদীস : ২৫৪৪)

আল্লাহ তায়ালা রোজা সকল ব্যক্তির ওপর ফরজ করেছেন ,কিন্তু তারাবিহ র নামাজকে সুন্নত করেছেন ।যে ব্যক্তি রমজান মাসে রোজা রাখবে আল্লাহ তায়ালা তার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিবেন ।

আল্লাহ তায়ালা রোজাদার ব্যক্তি দোয়া কবুল করেন ।রোজা রেখে কোন ব্যক্তি আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে আল্লাহ তায়াল তাকে নিরাশ করেন না ।তার দোয়া কবুল করেন ।আল্লাহ তায়ালা তিন ব্যক্তি দোয়া কখন ফিরিয়ে দেয় না ।তাদের দোয়া  কবুল করেন ।তারা হল ঃ

১ ।ন্যায় পরায়ন শাসকের দোয়া 

২ ।রোজাদার ব্যক্তির ইফতারের সময় দোয়া 

৩ ।মজলুমের দোয়া 

রোজাদার ব্যক্তি মৃত্যুর পরে সিদ্দিকীন ও শহীদের দলভুক্ত থাকবে। এ প্রসঙ্গে হজরত আমর ইবনে মুররা আলজুহানী (রা) হতে বর্ণিত ,এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে এসে বললো,

ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি যদি একথার সাক্ষ্য দিই যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই এবং অবশ্যই আপনি আল্লাহর রাসূল, আর আমি যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করি, যাকাত প্রদান করি, রমযান মাসের সিয়াম ও কিয়াম (তারাবীহসহ অন্যান্য নফল) আদায় করি তাহলে আমি কাদের দলভুক্ত হব?

 তিনি বললেন, সিদ্দীকীন ও শহীদগণের দলভুক্ত হবে।-মুসনাদে বাযযার, হাদীস : ২৫, সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২২১২, সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৩৪২৯ রোজা রাখতে হলে আগে আমাদের রোজার নিয়ত জানতে হবে ।রোজার নিয়ত করা ফরজ। নিয়ত না করলে রোজা হবে না। অন্তরের দৃঢ় সংকল্পকে নিয়ত বলা হয়। 

অনেকেই রোজার নিয়ত মুখে উচ্চারণ করে বলে কিন্তু অন্তরে বিশ্বাস করে না আবার অনেকেই মুখেও বলে না অন্তরেও বিশ্বাস করে না কিন্তু রোজা রাখে। এদের কারো রোজা হবে না। 

রাত বাকি থাকতেই রোজার নিয়ত করতে হবে এবং ইফতারের সময় ও দোয়া পরে রোজা ভঙ্গ করতে হবে। 

হজরত হাফসা (রা) হতে বর্ণিত ,হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন ,যে ব্যক্তি ফজরের আগে রোজা রাখার নিয়ত করবে না তার রোজা পূর্ণাঙ্গ হবে না। (সুনানে আবু দাউদ )

রোজার নিয়ত আরবি 

نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضَا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم

রোজার নিয়ত বাংলা উচ্চারণ 

 নাওয়াইতু আন আছুম্মা গাদাম মিন শাহরি রমাজানাল মুবারাকি ফারদাল্লাকা, ইয়া আল্লাহু ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম।

রোজার নিয়ত অর্থ 

 হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানের তোমার পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ (নিয়্যত) করলাম। অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে (আমার রোযা তথা পানাহার থেকে বিরত থাকাকে) কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।

ইফতারের দোয়া আরবি 

اَللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَ عَلَى رِزْقِكَ وَ اَفْطَرْتُ بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّاحِيْمِيْن

ইফতারের দোয়া বাংলা উচ্চারণ 

 আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিযক্বিকা ওয়া আফতারতু বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।

ইফতারের দোয়া অর্থ 

 হে আল্লাহ! আমি তোমারই সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমারই দেয়া রিযিক্বের মাধ্যমে ইফতার করছি।

 

ইফতার করার পরে আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করে দোয়া পড়তে হবে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) নিজে এ দোয়া পাঠ করতেন। তাই আমাদের ও উচিত মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) এর পথ অনুসরণ করা। 

ইফতারের পরে আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করে যে দোয়া পাঠ করতে হবে 

ইফতারের পরে শোকরিয়া আদায়ের দোয়া আরবি 

ذَهَبَ الظَّمَاءُ وَابْتَلَتِ الْعُرُوْقُ وَ ثَبَتَ الْأَجْرُ اِنْ شَاءَ اللهُ

বাংলা উচ্চারণ 

 ‘জাহাবাজ জামাউ; ওয়াবতালাতিল উ’রুকু; ওয়া ছাবাতাল আঝরূ ইনশাআল্লাহ।’

অর্থ 

 ‘ (ইফতারের মাধ্যমে) পিপাসা দূর হলো, শিরা-উপসিরা সিক্ত হলো এবং যদি আল্লাহ চান সাওয়াবও স্থির হলো ‘ (আবু দাউদ, মিশকাত)

Sharing Is Caring:

Leave a Comment