প্রত্যেক জাতির জন্য অনেক ধরনের উৎসব রয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন জাতির জন্য রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন উৎসব। মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হলো ঈদ। প্রতি বছর দুইটি ঈদ পালন করা হয়ে থাকে। সেগুলো হলো ঈদ উল ফিতর ও ঈদ উল আয্হা।
হাদিস শরীফে বলা হয়েছে ,মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন ,প্রত্যেক জাতিরই খুশির দিন থাকে ,আর আমাদের খুশির দিন হলো ঈদুল ফিতরের দিন। (বোখারী ,মুসলিম )
রমজান মাসে পুরো এক মাস ব্যাপী রোজা রাখার পরে শাওয়াল মাসের প্রথম দিন ঈদ উল ফিতর পালন করা হয়। আরেকটি ঈদ হলো ঈদ উল আয্হা বা কুরবানির ঈদ প্রতি বছর জিলহাজ্ব মাসের ১০ তারিখে পালন করা হয়।
ঈদের দিন মুসলমানগণ আনন্দের পাশা পাশি ইবাদাতের মাধ্যমে অনেক সওয়াব হাসিল করে থাকে। ঈদের নামাজ খোলা জায়গায় আদায় করতে হবে। খোলা জায়গায় ঈদের নামাজ আদায় করা সুন্নত। তবে খোলা জায়গার ব্যবস্থা না থাকলে বা কোনো ধরণের অসুবিধা থাকলে মসজিদে বা বাড়িতে ঈদের নামাজ আদায় করা যাবে।
ঈদের নামাজ যেখানেই আদায় করুক না কেন জামাতের সাথে আদায় করতে হবে। জামাত ছাড়া ঈদের নামাজ হয় না। ঈদের নামাজের প্রধান শর্ত হলো জামায়াতের সাথে নামাজ আদায় করা ও খুৎবা দেওয়া। ঈদের নামাজ পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের আদায় করার নিয়ম রয়েছে।
মহিলারা যেভাবে ঈদের নামাজ আদায় করবেন
মুসলিম নারীরা ঈদগাহে অংশগ্রহণ করে নামাজ আদায় করতে পারবেন। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) মহিলাদের জামায়াতের সাথে পর্দার মাধ্যমে ঈদের নামাজ আদায় করতে বলেছেন। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) মহিলাদেরকে ঈদের নামাজ পড়ার আদেশ দিয়েছেন।
হাদিস শরীফে বলা হয়েছে ,হজরত মুহাম্মদ (সা) অবিবাহিত নারী ,প্রাপ্তবয়স্ক কুমারী মেয়ে ,অন্তপুরবাসিনী তরুণী এবং ঋতুবতী নারীদেরকে ঈদগাহে নিয়ে যেতে বলেছে। তবে ঋতুবতী নারীদেরকে নামাজের জায়গা থেকে দূরে থাকতে বলেছেন। শুধু দোয়ার শরিক হতে বলেছেন। (তিরমিযী,সহীহ বুখারী)
মহিলাদের ঈদের নামাজ সুন্নত নাকি ওয়াজিব
পুরুষদের জন্য ঈদের নামাজ আদায় করা ওয়াজিব। কিন্তু মেয়েদের জন্য ঈদের নামাজ আদায় করা সুন্নত। মহিলাদের ঈদের নামাজ আদায় করা বাধ্যতামূলক নয়।
অনেকে বলেন মহিলাদের ঈদের নামাজ আদায় করা নফল। তবে মহিলারা ঈদের নামাজের জন্য ঈদগাহে অংশগ্রহণ করলে অবশ্যই পর্দার সাথে অংশগ্রহণ করতে হবে না হলে সওয়াবের পরিবর্তে গুনাহ হবে।
ঈদের নামাজের নিয়ম
ঈদের নামাজ দুই রাকাত। এই দুই রাকাত নামাজ ৬ তাকবীরে আদায় করতে হবে। দুই ঈদের নামাজের নিয়ম একই শুধু নিয়ত ভিন্ন।
প্রথম রাকাত
১। নিয়ত করে তাকবীরে তাহরীমা ‘আল্লাহু আকবার ‘বলে উভয় হাত বাঁধতে হবে।
২। তারপর ছানা পড়তে হবে।
ছানা উচ্চারণ:’সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়াতাআলা যাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।
৩। তারপর অতিরিক্ত ৩ তাকবীর দেয়া। এক তাকবীর থেকে আরেক তাকবীরের মধ্যে ৩ তাসবীহ পরিমান সময় বিরত থাকা।
৪। প্রথম ও দ্বিতীয় তাকবীরে উভয় হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠিয়ে তা ছেড়ে দেয়া। তৃতীয় তাকবীরে উভয় হাত তাকবীরে তাহরীমার মতো বাঁধতে হবে।
৫। ‘বিসমিল্লাহ ‘সহ সূরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে তারপর যেকোনো সূরা মিলিয়ে পাঠ করতে হবে।
৬। তারপর অন্য নামাজের মতো রুকু ও সেজদা করে প্রথম রাকাত নামাজ শেষ করা।
দ্বিতীয় রাকাত
১। ‘বিসমিল্লাহ ‘ সহ সূরা ফাতিহা পাঠ করে তারপরে যেকোনো সূরা মিলিয়ে পড়া।
২। সুরা মিলানোর পর অতিরিক্ত ৩ তাকবির দেওয়া।
৩। প্রথম ও দ্বিতীয় তাকবিরে উভয় হাত উঠিয়ে তা ছেড়ে দেওয়া।তৃতীয় তাকবির দিয়ে উভয় হাত তাকবিরে তাহরিমার মতো বেঁধে নিতে হয়।
৪। এরপর রুকুর তাকবির দিয়ে রুকুতে যাওয়া।
৫। সেজদা আদায় করে
৬। বৈঠকে বসা; তাশাহহুদ, দরূদ, দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে নামাজ সম্পন্ন করা।
৭। নামাজের সালাম ফেরানোর পরে তাকবীর পড়া।
তাকবীর হলো :
উচ্চারণ : ‘আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবর ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’
নামাজ শেষ করে ইমাম সাহেব মেম্বারে উঠে দুইটি খুৎবা দিবেন।
ঈদ উল ফিতর নামাজের নিয়ত
نَوَيْتُ أنْ أصَلِّي للهِ تَعَالىَ رَكْعَتَيْنِ صَلَاةِ الْعِيْدِ الْفِطْرِ مَعَ سِتِّ التَكْبِيْرَاتِ وَاجِبُ اللهِ تَعَالَى اِقْتَضَيْتُ بِهَذَا الْاِمَامِ مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اللهُ اَكْبَرْ
বাংলা উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রাকাআতাইন সালাতিল ইদিল ফিতরি মাআ সিত্তাতিত তাকবিরাতি ওয়াঝিবুল্লাহি তাআলা ইকতাদাইতু বিহাজাল ইমামি মুতাওয়াঝঝিহান ইলা ঝিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি ‘আল্লাহু আকবার’
অর্থ:আমি ঈদুল ফিতরের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ অতিরিক্ত ৬ তাকবিরের সঙ্গে এই ইমামের পেছনে কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর জন্য আদায় করছি- আল্লাহু আকবার
ঈদ উল আজহা নামাজের নিয়ত
نويت ان اصلي لله تعالي ركعتي صلاة العيد الاضحى مع ستة تكبيرات واجب الله تعالى اقتديت بهذا الامام متوجها الى جهة الكعبة الشريفة الله اكبر
বাংলা উচ্চরণ :
‘নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা আলা রাকয়াতাই ছালাতি ঈদিল আযহা মাআ ছিত্তাতি তাকবীরাতি ওয়াজিবুল্লাহি তা আলা ইক্বতাদাইতু বিহাজাল ইমামি মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।