সদকায়ে জারিয়া কি এবং সদকায়ে জারিয়ার ফজিলত

সদকায়ে জারিয়া কি ? সদকায়ে জারিয়া মূলত আরবি শব্দ। সদকা শব্দের অর্থ দান করা আর জারিয়া শব্দের অর্থ প্রবাহমান ,সদাস্থায়ী প্রভৃতি।সাদকায়ে জারিয়া হচ্ছে এমন একটি আমল; যার প্রাপ্তি ততদিন থাকে; যতদিন ওই আমলের অস্তিত্ব থাকে এবং মানুষ সে আমল বা কাজ দ্বারা উপকার পেয়ে থাকে।

 মৃত্যু এমন এক কঠিন জগত। যেখানে যাবার পর আর কোন আমলের সুযোগ নেই। সুযোগ নেই, নেই ভুলগুলো শুধরে এবং আমল বাড়িয়ে হাশরের ময়দানে মুক্তির ব্যবস্থা করা।

মৃত্যুর মাধ্যমে দুনিয়ার কাজকর্মের সাথে আমল ও বন্ধ হয়ে যায়। কেউ মারা গেলে দুনিয়ার জীবিত লোকেরা তাদের আত্মার মাগফেরাত ও শান্তি কামনা করে বেশ কিছু কাজ অব্যাহত রাখতে পারেন। হাদিসে এসেছে ,মৃত্যুর পরে দুই ধরনের আমল অব্যাহত থাকে। তা হলো : 

১। মৃত ব্যক্তির এমন আমল, যা তার জন্য সদকায়ে জারিয়া হতে পারে।

২। আর এমন আমল, যা মৃত ব্যক্তির জন্য জীবিত নিকটাত্মীয়রা করে থাকেন। 

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেছেন, ‘মানুষ যখন মারা যায়, তখন তার সমস্ত আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি আমলের দরজা বন্ধ হয় না।তা হলো : 

১। সদকায়ে জারিয়া

২। যদি কেউ এমন সন্তান রেখে যায়, যে সন্তান বাবা-মায়ের জন্য দোয়া করবে

৩।  এমন দীনি শিক্ষা রেখে যায়, যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হতে থাকে। (মুসলিম শরিফ)

দুনিয়াতে মানুষ যেমন বিভিন্ন পেশায় নির্দিষ্ট মেয়াদে চাকরি করে অবসর গ্রহণ করলে পেনশন হিসেবে কিছু টাকা পরবর্তী সময় সুন্দরভাবে কাটানোর জন্য। বৃদ্ধ বয়সে যেন ভালোভাবে চলতে পারে। তেমনি 

 আমাদের দৈনন্দিন জীবনে, ওঠা-বসা, চলাফেরা, লেনদেন, বিভিন্ন কাজে-কর্মে অনেক ভুল-ত্রুটি হয়ে থাকে।

এর থেকে তওবা না করে মারা গেলে নেকির পাল্লা হালকা হয়ে বান্দা বিপদে পড়তে পারে। তাইতো আল্লাহ বান্দার দুরবস্থা দূর করার জন্য মৃত্যুর পরও নেকি অর্জনের ব্যবস্থা করে রেখেছেন। হাদিসে বর্ণিত, তিনটি কাজের যেকোনো একটি করে গেলে বান্দা কবরে থেকে  নেকি পেতেই থাকবে।

সদকায়ে জারিয়া কিছু আমল 

সদকা মাত্রই সওয়াবের কাজ। সদকা দুই ধরনের হয়ে থাকে। স্থায়ী এবং অস্থায়ী। সদকায়ে জারিয়ার কিছু উদাহরণ হলো যেমন, মসজিদ নির্মাণ করা, মকতব-মাদরাসা প্রতিষ্ঠা, দ্বীনী পাঠাগার ও দ্বীনী কিতাবের ব্যবস্থা করা, লোকদের খাবার দেয়া। 

ঈদগাহ বানানো, কবরস্থান করা, যে কোনো দ্বীনী কাজের জন্য জমি ওয়াফ্ক করে যাওয়া, এতীম ও অসহায় লোকদের বাসস্থান ও উপার্জনের ব্যবস্থা করা, রাস্তা ও পুল নির্মাণ করা, পানির ব্যবস্থা করা, ফলদার বৃক্ষ রোপণ করা, সরাইখানা তৈরি করা, সীমান্ত পাহারা দেওয়াসহ চলমান ভালো কার্যাবলী, যেগুলো থেকে মানুষ সর্বদা উপকৃত হতে পারে।

সাদকায়ে জারিয়া সম্পর্কে রাসুলুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন- ‘এমন কিছু  কাজ রয়েছে; যা বান্দার মৃত্যুর পরও কবরে থাকা অবস্থাতেও তার জন্য সওয়াব জমা করতে থাকবে। তাহলো-

মসজিদ নির্মাণ বা দান :

 কেউ মসজিদ নির্মাণ করলে বাম মসজিদের কাজে দান করলে, সে মসজিদে দানকারীর সাদকায়ে জারিয়ার উপলক্ষ্যহয়ে যাবে। মানুষ যতদিন এ মসজিদে নামাজ পড়বে; ইবাদত-বন্দেগি করবে, ততদিন মসজিদ নির্মাণকারী ব্যক্তিআর আমলনামায় এর সাওয়াব পৌঁছতে থাকবে। এটিও সাদকায়ে জারিয়া। শুধু মসজিদই নয়, মক্তব, মাদরাসা, বিশ্রামাঘার, মুসাফিরখানা ,হাসপাতাল ,এতিমখানা ইত্যাদিও হতে পারে।

 কুরআন বিতরণ করা :

 মানুষের পড়া বা অধ্যয়ন করার জন্য কুরআনের কপি, কুরআনের তাফসির কিংবা কুরআনের দারস সাদকায়ে জারিয়া হিসেবে কাজ করবে। যতদিন এর উপকার দুনিয়াতে চলমান থাকবে। কুরআনের সুরার আমল ও ফজিলত সম্পর্কিত বই বিতরণ, হাদিসের আমল বিতরণ, হালাল-হারামসহ জনকল্যাণমূলক বইও হতে পারে।

রাস্তাঘাট নির্মাণ:

 রাস্তাঘাট নির্মাণ একটি জনকল্যাণ কাজ। যত দিন পর্যন্ত এই রাস্তা দিয়ে যত মানুষ, পশু-পাখি, জীবজন্তু চলাচল করবে, তত দিন পর্যন্ত নির্মাতার আমলনামায় এর সওয়াব পৌঁছতে থাকবে।

খাল খনন করা : 

যেই খাল খননের ফলে মানুষ উপকৃত হয়। যতদিন এ খাল থেকে মানুষ উপকার পাবে ততদিন মানুষ কবরে থেকেও সাদকায়ে জারিয়ার সাওয়াব পেতে থাকবে। খাল বা পুকুর খনন করে তাতে পানি সরবরাহের মাধ্যমেও মানুষের উপকার করা যেতে পারে।

কূপ খনন বা গভীর নলকুপ স্থাপন করা :

 মানুষের পাণীয় ও কৃষ্টি জমিতে সেচের জন্য কুপ কিংবা গভীর-অগভীর নলকুপ স্থাপন করাও সাদকায়ে জারিয়ার অন্তর্ভূক্ত। যদি তা থেকে সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়ে থাকে। যতদিন এর অস্তিত্ব বা কার্যকারীতা থাকবে ততদিন মানুষ সাদকায়ে জারিয়ার হিসেবে সাওয়াব পেতে থাকবে। কূপ খননের সুযোগ না থাকলে, গভীর নলকুপ, পানির ফিল্টার ইত্যাদিও স্থাপন করা যেতে পারে।

বৃক্ষরোপণ:

 যত দিন পর্যন্ত মানুষ, পশু-পাখি এই গাছের ফল খাবে, ছায়ার নিচে বসে শরীর জুড়াবে, তত দিন রোপণকারী সওয়াব পাবে।

যেসব পাপ নীরবে নেক আমল নষ্ট করে দেয়

Sharing Is Caring:

Leave a Comment