শাবান মাসের ফজিলত এই মাসের করণীয় আমল

শাবান হলো হিজরী বর্ষের অষ্টম মাস। বাংলা ও ইংরেজিতে যেমন ১২ মাসের নাম রয়েছে। তেমনি হিজরীতেও ১২ মাসের নাম রয়েছে। হিজরী ১২ মাসের ভিন্ন ভিন্ন ফজিলত রয়েছে। হিজরী ১২ মাসের মধ্যে একটি মাস হলো শাবান মাস। 

আরবিতে এ মাসের পূর্ণ নাম হলো ‘আশ শাবানুল মুআজজম’ অর্থ মহান শাবান মাস। শাবান’ শব্দের অর্থ দূরে ও কাছে, মিলন ও বিচ্ছেদ এবং সংশোধন বা সুশৃঙ্খলা ও ফ্যাসাদ বা বিশৃঙ্খলা। শাবানের আরেকটি অর্থ হলো মধ্যবর্তী সুস্পষ্ট। 

মিরাজের রাতে সকল মুসলিমদের ওপর ৫ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার পর থেকে কিবলা ছিল  বায়তুল মুকাদ্দাস। বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করতে হতো। আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা) সব সময় চাইতেন মুসলমানদের কিবলা হোক কাবাঘর। 

এজন্য মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) নামাজের দাঁড়িয়ে আকুল প্রার্থনা করতেন। আকাশের দিকে তাকিয়ে বার বার বলতেন। ১৬ মাস পরে বায়তুল মুকাদ্দাসের পরিবর্তে কাবা ঘর কিবলা হিসেবে ঘোষিত হয় এই পবিত্র শাবান মাসে। 

এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে একটি আয়াতে বলা হয়েছে ,‘বারবার আপনার আকাশের দিকে মুখমণ্ডল আবর্তন আমি অবশ্যই লক্ষ করি। সুতরাং কিবলার দিকে আপনাকে প্রত্যাবর্তন করে দেব, যাতে আপনি সন্তুষ্ট হন। অতএব আপনি মসজিদুল হারামের (কাবাঘর) দিকে চেহারা ঘোরান। তোমরা যেখানেই থাকো না কেন, ওই (কাবা) দিকেই মুখ ফেরাও।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৪৪)

এই শাবান মাসেই মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিনের নিকট বান্দার আমলনামা পেশ করা হয়। বান্দার সকল ভালো মন্দের হিসাব করা হয়। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) রমজানের পরে শাবান মাসে সব থেকে বেশি ইবাদাত বন্দেগী করতেন নফল রোজা রাখতেন। 

শাবান মাস হলো রমজানের প্রস্তুতির মাস। শাবান মাসে ইবাদাত ও আমলগুলো ভালোভাবে করলে রমজানে সহজ হবে। রোজা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। রোজা রাখা অবস্থায় যদি কোনো ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেন তাহলে সে জান্নাতে যাবে। 

 হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে জানা যায়, ‘নবীজি (সা.) শাবান মাসের চেয়ে অধিক রোজা অন্য মাসে পালন করতেন না। তিনি প্রায় পুরো মাসই রোজা পালন করতেন; এবং বলতেন, তোমরা সাধ্য অনুযায়ী আমল করে নাও। কেননা আল্লাহ তায়ালা প্রতিদান বা সওয়াব দিতে বিরক্ত হন না যতক্ষণ না তোমরা ইবাদত করতে বিরক্ত হও।’ (বুখারি ,হাদিস নং  : ১৯৭০)। 

রমজানের সম্মানে শাবান মাসের আগমন হয়। হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত- ‘নবীজি (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো, রমজানের পর কোন রোজা সর্বোত্তম? তখন তিনি বললেন, রমজানের সম্মানার্থে শাবান মাসে রোজা পালন করা। আরও জিজ্ঞাসা করা হলো, কোন সদকা সর্বোত্তম? তখন তিনি বললেন, রমজানে সদকা করা।’ (তিরমিজি : ৬৬৩)।

রাসুল (সা.) রজব ও শাবান মাসব্যাপী বেশি বেশি বরকত হাসিলের দোয়া করতেন। রমজান মাসে ইবাদত করার সুযোগ ভিক্ষা চাইতেন। তিনি এ দোয়া বেশি বেশি পড়তেন।

 দোয়াটি হলো :

– اَللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِىْ شَعْبَانَ وَ بَلِّغْنَا رَمَضَان

উচ্চারণ :  ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজবা ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগনা রমাদান’।

 অর্থ : ‘হে আল্লাহ! রজব মাস ও শাবান মাস আমাদের জন্য বরকতময় করুন; রমজান আমাদের নসিব করুন।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৫৯)

আরো একটি দোয়া  হলো 

– اَللَّهُمَّ بَلِّغْنَا رَمْضَان وَبَارِكْ لَنَا فِيْهِ وَأعِنَا عَلَى صِيَامِهِ وَقِيَامِهِ

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা বাল্লিগনা রামাদান ওয়া আইন্না আলা সিয়ামিহি ওয়া ক্বিয়ামিহি।’

অর্থ হে আল্লাহ! আমাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন এবং রমজানে (দিনের বেলায়) রোজা পালন এবং (রাতের জেগে) নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুন।’

শাবান মাসের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ  হলো মধ্যবর্তী রাত। অর্থাৎ ১৪ তারিখ দিবাগত রাত। ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে পবিত্র লাইলাতু বরাত অর্থাৎ শবে বরাত পালন করা হয়ে থাকে। সব শব্দটি ফার্সি। এর অর্থ হলো রাত। আর বারাআত শব্দটি হলো আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো মুক্তি। 

 জাহান্নাম থেকে মুক্তির রাত হলো ‘শবে বরাত’ এর রাত । শবে বরাতকে হাদিসের পরিভাষায় ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ বলা হয়।

এই রাতে মহান আল্লাহ তায়ালা বান্দার সকল ভালো মন্দ কাজের হিসাব করে থাকে। এই রাতে মহান আল্লাহ তায়ালা অসংখ্য বান্দাকে ক্ষমা করে দিয়ে থাকেন। এই রাতে মহান আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর আসমানে নেমে আসেন। বান্দার যাবতীয় প্রয়োজন পুরুন করে থাকে। 

হাদিস শরীফে বলা হয়েছে ,‘রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যখন শাবান মাসের অর্ধেকের রজনি আসে, তখন তোমরা রাতে নামাজ পড়ো, দিনের বেলা রোজা রাখো। নিশ্চয় আল্লাহ এ রাতে সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর আসমানে এসে বলেন, আমার কাছে কোনো গুনাহ ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। কোনো রিজিকপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে রিজিক দেব। কোনো বিপদগ্রস্ত মুক্তি পেতে চায় কি? আমি তাকে মুক্তি দেব। আছে কি এমন, আছে কি তেমন? এমন বলতে থাকেন ফজর পর্যন্ত।’ (ইবনে মাজা ,হাদিস নং : ১৩৮৮)

আল্লাহ তায়ালা শবে বরাতে অসংখ্য বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। উদাহরণ হিসেবে মোহাম্মদ (সা.) বকরির পশমের চেয়ে বেশি বান্দাকে এই রাতে ক্ষমা করার কথা বলেছেন। 

হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, এক রাতে রাসুল (সা.)-কে না পেয়ে খুঁজতে বের হলাম। জান্নাতুল বাকিতে গিয়ে তাকে দেখতে পেলাম। তিনি বললেন, কী ব্যাপার আয়েশা? তোমার কী মনে হয়, আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল তোমার ওপর কোনো অবিচার করবেন? হজরত আয়েশা (রা.) বললেন, আমার ধারণা হয়েছিল আপনি অন্য কোনো স্ত্রীর ঘরে গিয়েছেন। রাসুল (সা.) তখন বললেন, যখন শাবান মাসের অর্ধেকের রাত আসে, আল্লাহ পৃথিবীর আসমানে নেমে আসেন। তারপর বনু কালব গোত্রের বকরির পশমের চেয়ে বেশিসংখ্যক বান্দাকে ক্ষমা করে দেন।’ (তিরমিজি,হাদিস নং  : ৭৩৯)

Sharing Is Caring:

Leave a Comment