আল্লাহ তায়ালা মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদতের জন্য। সকল ইবাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ইবাদত হচ্ছে সালাত। যা পবিত্রতা ব্যতীত অর্জন করা সম্ভব নয়। তাই পবিত্রতার গুরুত্ব অপরিসীম। আর এই পবিত্রতার মাধ্যম হচ্ছে অযু।
অজুর ফজিলত
অযু শব্দের অর্থ পবিত্রতা। অজুর মাধ্যমে পাপ মোচন হয় ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ ) বলেছেন যদি কোনো ব্যক্তি দিনে পাঁচ বার গোসল করে তাহলে তার শরীরে কোনো ময়লা থাকবে না।
তেমনি দিনে পাঁচ বার অযু করলে মনে কোনো রকম ময়লা থাকে না। মন পবিত্র হয়ে যায়।রাসূল (সাঃ ) আরো বলেছেন ,কোনো মোমিন বান্দা যখন অজু করে ,তখন মুখ ধৌত করার সময় পানির সঙ্গে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সঙ্গে তার ওইসব গুনাহ বের হয়ে যায় , যার দিকে দুই চোখের দৃষ্টি পড়েছিল।
যখন দুই হাত ধৌত করে তখন পানির সঙ্গে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সঙ্গে ওইসব গুনাহ বের হয়ে যায় ,যেগুলো তার দুই হাত সম্পাদন করেছিল।
আবার যখন দুই পা ধৌত করে ,তখন পানির সঙ্গে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সঙ্গে ওইসব গুনাহ বের হয়ে যায় ,যেগুলোর দিকে তার দুই পা অগ্রসর হয়েছিল। ফলে অজু শেষে ওই বান্দা তার সমুদয় গুনাহ থেকে সম্পূর্ণ ভাবে মুক্ত হয়ে যায়। (মুসলিম :৪৭০ )
হযরত উছমান ইবনে আফ্ফান (রাঃ )বলেন যে ,হযরত মুহাম্মদ (সাঃ ) ইরশাদ করেছেন ,যে ব্যক্তি ওযু করে এবং উত্তম রূপে ওযু করে ,তার গোনাহ সমূহ তার শরীর থেকে বের হয়ে যায় এমনকি তার নখের নিচ্ থেকেও বের হয়ে যায়। (মুসলিম )
কেয়ামতের দিন অজুর চিহ্ন দ্বারা উম্মতে মুহাম্মাদিকে অন্যসব উম্মত থেকে পৃথক করা হবে। রাসূল (সাঃ )বলেন ,কেয়ামতের দিন আমার উম্মতকে এমন অবস্থায় আহ্বান করা হবে যে,অজুর প্রভাবে তাদের হাত -পা ও মুখ -মন্ডল উজ্জ্বল থাকবে। তাই তোমাদের মধ্যে এ উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে নিতে পারে ,সে যেন তা করে। (বোখারী :১৩৬)
অজুর গুরুত্ব
অজু হচ্ছে নামাজের চাবি। হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ(রাঃ )থেকে বর্ণিত তিনি বলেন ,রাসূল (সাঃ ) বলেছেন :বেহেশতের চাবি হচ্ছে নামাজ ,আর নামাজের চাবি হচ্ছে অজু। (সহীহ তিরমিযী হাদিস নং -৪,মুসনাদে আহমদ হাদিস নং ১৪৬৬২ ,মিশকাত হাদিস নং ২৯৪ )
অজু ব্যতীত নামাজ কবুল হবে না হযরত আবু মালীহ তার পিতা উসামা (রাঃ ) থেকে বর্ণনা করেন রাসূল (সাঃ ) বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা পবিত্রতা ব্যতীত নামাজ কবুল করবেন না এবং অবৈধ সম্পদের সাদকাও কবুল করবেন না। (সুনানে নাসাঈ হাদিস নং ০৬ )
অজু ছাড়া নামাজ সহীহ হবে না। হযরত উমর (রাঃ ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল (সাঃ ) বলেছেন ,যার আমানত ঠিক নাই তার পরিপূর্ন ঈমান নেই। যার অজু নেই তার নামাজ আদায় হয় নাই। আর যে ব্যক্তি নামাজ পরে না তার কোনো দ্বীন নাই। অরে দ্বীনের মধ্যে নামাজের মর্তবা এমন যেমন মাথা ব্যাতিত কোনো মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না ,তেমনি নামাজ ব্যতীত দ্বীন ও টিকে থাকতে পারে না। (তাবারানী ,তারগীব -১:২৪৬ )
অজু করার দুটো পদ্ধতি রয়েছে।
- ফরজ পদ্ধতি
- সুন্নাহ পদ্ধতি
ফরজ পদ্ধতি
অজুর ফরজ ৪ টি। যথা :
- সমস্ত মুখ মন্ডল ধৌত করা।
- উভয় হাতের কনুই এর উপর পর্যন্ত ধৌত করা।
- মাথার চার্ ভাগের এক ভাগ মাসেহ করা।
- দুই পায়ের গিরার উপর পর্যন্ত ধৌত করা।
অজুর সুন্নাত
- অজুর নিয়ত করা
- “বিসমিল্লাহ “ বলে অজু আরম্ভ করা। রাসূলুল্লাহ (সাঃ ) বলেছেন , যে ব্যক্তি অজু করার পূর্বে বিসমিল্লাহ বলে না তার অজু হয় না। (তিরমিযী :২৫,ইবনে মাজাহ :৩৯৯ )
- হাতের কব্জি তিন বার ধৌত করা
- গড়গড়াসহ তিন বার কুলি করা
- বাম হাত দিয়ে তিনবার নাকে পানি দিবে ও তিন বার নাক থেকে পানি ঝেড়ে ফেলে দিবে।
- মুখমন্ডল তিন বার ধৌত করা।
- উভয় হাতের কনুই পর্যন্ত তিন বার ধৌত করা
- নতুন পানি দিয়ে মাথা ও কান মাসেহ করা। হাত ধোয়ার পর হাতের তালুতে লেগে থাকা অবশিষ্ট পানি দিয়ে না।
- দুই পা টাকনু পর্যন্ত ধৌত করা
- এক অঙ্গ শুকাইতে না শুকাইতে অন্য অঙ্গ ধৌত করা অথার্ৎ তাড়াতাড়ি ধোয়া।
অজু সম্পর্কে আরো কিছু মাসয়ালা
অজুর মোস্তাহাব
- ডান দিক হতে অজু আরম্ভ করা
- ঘাড় মাসেহ করা
- উঁচু স্থানে বসিয়া অজু করা
৪। প্রত্যেক অঙ্গ তিন বার ধৌত করা। হাতে আংটি থাকলে তাহার ভিতরের দিকে পানি প্রবেশ করাতে হবে। অজু করার সময় সাংসারিক কথা বলা যাবে না।
অজুর মাকরূহ
- মুখ ধোয়ার সময় জোরে মুখে পানি নিক্ষেপ করা
- তিনের অধিক বার কোনো স্থান ধৌত করা
- অকারণে বাং হাতে নাকে পানি দেয়া।
অজু ভঙ্গের কারণ
- পায়খানা ও পেশাবের পথ দিয়ে কিছু বের হওয়া
- শরীরের ক্ষত স্থান থেকে রক্ত ,পুঁজ বা পানি গড়িয়ে পড়া
- মুখ ভোরে বমি করা
- থুথুর সাথে রক্তের ভাগ সমান কিংবা বেশি হওয়া
- চিৎ বা কাত হয়ে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে যাওয়া
- পাগল ,মাতাল কিংবা অচেতন হলে
- নামাজের মধ্যে উচ্চ স্বরে হাসলে
অজুর নিয়ত
বিসমিল্লাহিল আলিয়্যিল আজিম। আল হামদুলিল্লাহি আলা দ্বীনিল ইসলাম। আল ইসলামু হাক্কু ওয়াল কুফরু বাতিল। আল ইসলামু নুরু ওয়াল কুফরু জুলমাহ।
অজুর নিয়তের অর্থ
মহান ও পরাক্রান্ত আল্লাহ তায়ালার নামে আরম্ভ করছি। আমি দ্বীন ইসলামের উপর আছি। তাই আল্লাহর জন্য যাবতীয় প্রশংসা। নিশ্চয় ইসলাম সত্য ও কুফুর বাতিল এবং ইসলাম আলো ও কুফুর অন্ধকার।
অজুর ভিতরের দোয়া
আল্লাহুম্মাগফিরলী জাম্বী ওয়া ওয়াসসিলি ফি দারি ওয়া বারিকলি ফি রিজকী।
এর অর্থ
হে আল্লাহ আমার গুনাহ ক্ষমা করে দাও ,আমার বাসস্থানকে প্রশস্ত করে দাও এবং আমার রিজিকে বরকত দান করো। অজু শেষে আরেকটি দোয়া আছে। হাদিস শরীফে আছে এই দোয়াটি পড়লে জান্নাতের ৮ টি দরজা খুলে দেয়া হয়। দোয়াটি উপরের দিকে তাকিয়ে পড়তে হবে। দোয়া টি হচ্ছে কালেমা শাহাদত.
কালেমা শাহাদাত
أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّٰهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ وأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ
কালেমা শাহাদাত এর বাংলা অনুবাদ
আশ্হাদু আল-লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহু-লা-শারীকালাহু ওয়া আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদান আ’বদুহু ওয়া রাসূলুহু।
কালেমা শাহাদাত এর অর্থ
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নাই। তিনি এক, অদ্বিতীয় এবং আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ তার বান্দা ও প্রেরিত রাসুল।