সাহু সিজদা কি এবং সাহু সিজদা কখন দিতে হয়

আমরা অনেকেই সাহু সেজদা কি ?সাহু সেজদা কখন ও কি কারণে দিতে হয় তা জানা নেই। অথচ প্রতিটি মুসলিম ব্যক্তিদের এটা জানা প্রয়োজন। নারী ও পুরুষ উভয়েরই জানা প্রয়োজন। কেননা সাহু সেজদা সম্পর্কে নারী ও পুরুষের কোনো প্রার্থক্য নেই। একই ভাবে সাহু সেজদা দিতে হয়। আজকে আমরা সাহু সেজদা সম্পর্কে জানব। 

সাহু সেজদা কি ?

সাহু সেজদা অর্থ ভুলের সেজদা। নামাজের মধ্যে যে সমস্ত কাজ ওয়াজিব তার কোনো একটি বা একাধিক ভুলক্রমে বাদ পড়লে তার জন্য নামাজের শেষ বৈঠকে অতিরিক্ত দুইটি সেজদা করতে হয় একে সাহু সেজদা বলে। 

কিন্তু নামাজে কোনো ফরজ বাদ পরে তাহলে সাহু সেজদা দিলে হবে না ,পুনরায় নামাজ আদায় করতে হবে। জামায়াতে নামাজ পড়ার সময় যদি এমাম সাহু সেজদা দেয় তাহলে সবাইকে দিতে হবে। 

সাহু সেজদা যেভাবে দিতে হয় 

সাহু সেজদা করার সঠিক পদ্ধতি হলো নামাজের শেষ বৈঠকে তাশাহুদ বা আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করে শুধু ডান দিকে সালাম ফিরিয়ে  দুইটি সেজদা দিতে হবে। দুই সেজদার মাঝখানে অবশ্যই ১ তাসবীহ পরিমান সময় সোজা হয়ে বসতে হবে। 

তারপর আবার তাশাহুদ বা আত্তাহিয়াতু ,দরূদ শরীফ ,দোয়া মাসুরা পাঠ করে নামাজ শেষ করতে হবে। আর যদি তাশাহুদ পাঠ করার পরে সাহু সেজদা করতে মনে না থাকে এবং সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করে থাকে তাহলে সে যদি নামাজের স্থানে বসে থাকে এবং কোনো রকম কথা না বলে মুখ কেবলার দিক করে থাকে তখন ও সাহু সেজদা করা যাবে। 

কিন্তু যদি তখন সাহু সেজদার কথা মনে না থাকে তাহলে নামাজ হবে না। পুনরায় নামাজ আদায় করতে হবে। 

আবদুল্লাহ্ ইবনু বুহায়নাহ্ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোনো এক নামাজে আল্লাহর রাসুল (সা.) দু্ই রাকাত আদায় করে— না বসে দাঁড়িয়ে গেলেন। মুসল্লিরাও তার সঙ্গে দাঁড়িয়ে গেলেন। 

যখন তার সালাত সমাপ্ত করার সময় হলো এবং আমরা তার সালাম ফেরানোর অপেক্ষা করছিলাম, তখন তিনি সালাম ফেরানোর আগে তাকবির বলে বসে বসেই দুইটি সিজদা করলেন। অতঃপর সালাম ফেরালেন। (বুখারি, হাদিস : ৮২৯; মুসলিম, ৫/১৯, হাদিস : ৫৭০; আহমাদ, হাদিস : ২২৯৮১)

যে কারণে সাহু সেজদা দিতে হয় 

১।  সুন্নত ও নফল নামাজে সূরা মিলাতে ভুলে গেলে সাহু সেজদা দিতে হয়। 

২। ফরজ নামাজের প্রথম দুই রাকাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করা ওয়াজিব। প্রথম দুই রাকাতে সূরা ফাতিহা বাদ পড়লে সাহু সেজদা দিতে হবে। 

৩। ফরজ নামাজে প্রথম ২ রাকাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করার পরে অন্য সূরা মিলিয়ে পড়া ওয়াজিব। যদি ভুলক্রমে অন্য সূরা না পড়া হয় তাহলে সাহু সেজদা দিতে হবে। 

৪।  সূরা ফাতিহা পাঠ করার পরে কোন সূরা পাঠ করবে এটা ভেবে  ৩ তাসবীহ পরিমান সময় নষ্ট করলে সাহু সেজদা দিতে হবে। 

৫।  ভুল করে যে কোনো রাকাতে ২ রুকু ৩ সিজদা দিলে সাহু সেজদা দিতে হবে।  

৬। শেষ বৈঠকে তাশাহুদ ও দরূদ শরীফ পাঠ করার পরে নামাজ কত রাকাত পড়া হলো তা নিয়ে চিন্তা করে ৩ তাসবিহ পরিমান সময় নষ্ট হলে সাহু সেজদা দিতে হবে। 

৭।  তাশাহুদ পড়তে বসে ভুলক্রমে সূরা ফাতিহা বা অন্য কিছু পাঠ করলে সাহু সেজদা দিতে হবে। 

৮। তিন ও চার্ রাকাত বিশিষ্ট নামাজে ২ রাকাতের পরে বসতে ভুলে গেলে ৩য় রাকাতের জন্য অর্ধেকের কম দাঁড়িয়ে যাওয়ার পরে মনে হয় তাহলে বসে তাশাহুদ পাঠ  করবে। তখন সাহু সেজদা দিতে হবে না। 

কিন্তু যদি অর্ধেকের বেশি দাঁড়িয়ে যায় তাহলে না বসে অবশিষ্ট নামাজ শেষ করে সাহু সেজদা দিতে হবে। 

৯। জোহর ও ইশার ৪র্থ রাকাতে বসতে মনে নেই ,৫ম রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে গেছেন তখন মনে হবার সাথে সাথে বসে তাশাহুদ ,দরূদ শরীফ ,দোয়া মাসুরা পাঠ করে নামাজ শেষ করতে হবে। তখন সাহু সেজদা দিতে হবে না। 

আর যদি দাঁড়িয়ে সূরা ফাতিহা পাঠ করার পরে মনে হয় তখন বসবেন ,কিন্তু তখন সাহু সেজদা দিতে হবে। 

আর যদি রুকু করার পরে মনে হয় তাহলে আরো ২ রাকাত আদায় করে মোট ৬ রাকাত আদায় করতে হবে। তখন পরের ২ রাকাত নফল নামাজ হিসেবে আদায় করা হবে। 

আসরের নামাজে এরকম ভুল হলে ৬ রাকাত ই আদায় করবেন ,কিন্তু ওই ৬ রাকাতই নফল নামাজ হিসেবে আদায় হবে কেননা আসরের নামাজে নফল নামাজ নেই। তখন পুনরায় আসরের নামাজ আদায় করতে হবে। 

১০।  একই নামাজে সাহু সেজদা করার একাধিক কারণ পাওয়া গেলেও একটি সাহু সেজদা করতে হবে।  

১১।  যেখানে সশব্দে সূরা কেরাত পড়ার হুকুম সেখানে নীরবে পড়লে আবার যেখানে নীরবে পড়ার হুকুম সেখানে সশব্দে পড়লে সাহু সেজদা দিতে হবে। 

১২।  বিতর নামাজে দোয়া কুনুত বাদ পড়লে বা দোয়া কুনুতের পরিবর্তে অন্য কিছু পরে ফেললে সাহু সেজদা দিতে হবে। আর যদি দোয়া কুনুতের পরিবর্তে অন্য কিছু পরে ফেলে এবং মনে হবার সাথে সাথে দোয়া কুনুত পরে তাহলে সাহু সেজদা দিতে হবে না। 

১৩।  দুই ঈদের অতিরিক্ত তাকবীরগুলো ভুলক্রমে আদায় না করলে সাহু সেজদা দিতে হবে। তবে ঈদের জামায়াত খুব বড় হলে সাহু সেজদা করতে গেলে তার অনুসরণ করতে মুক্তাদিরা আরো ভুল করবে এমনকি নামাজ নষ্ট হওয়ার মতো কাজ করতে পারে তাহলে সাহু সেজদা করতে হবে না। এই হুকুম শুধু বড় জামায়াতের জন্য। 

১৪।  ভুলক্রমে ওয়াজিব বাদ পড়লে সাহু সেজদা করলে সেই ভুল সংশোধন হয় কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়াজিব বাদ দিলে সাহু সেজদা দিলে সংশোধন হয় না। সেই নামাজ পুনরায় আদায় করতে হয়। 

Sharing Is Caring:

Leave a Comment