যে কারণে রিজিকে বরকত কমে যায়

যে কারণে রিজিকে বরকত কমে যায়

রিজিক মহান আল্লাহ তায়ালার এক বিশেষ নিয়ামত। ইবাদাত কবুলের অন্যতম শর্ত হলো হালাল রিজিক। রিজিকে বরকত হলে মহান আল্লাহ তায়ালা ওই ব্যক্তির দোয়া কবুল করেন। 

অনেকের আয় রোজগার ভালো হওয়া সত্ত্বেও সংসারে অভাব দূর হয় না। দিনরাত পরিশ্রম করেও সুখী হতে পারে না। বরকত অর্জন করতে হয় বিভিন্ন আমলের মাধ্যমে। মহান আল্লাহ তায়ালা বরকত দিলে অল্প আয়ে অনেক হয়ে যায় আর বরকত না দিলে অনেক উপার্জন করেও সুখী হওয়া যায় না।

 তারা জানে না যে সম্পদ অধিকারীদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কারণেও সম্পদের বরকত দূরীভূত হয়ে যায়। নিম্নে জীবিকা থেকে বরকত দূরীভূত হওয়ার কিছু কারণ উল্লেখ করা হলো 

 

১। পাপাচার ( রিজিকে বরকত কমে যায় )

গোনাহের কারণে যেমন মানুষের অনেক ধরনের  আজাব  হয়, তেমনি জীবিকার বরকত দূরীভূত হয়ে যায়। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন , ‘যদি সেসব জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত ও তাকওয়া অবলম্বন করত তাহলে আমি তাদের জন্য আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর বরকত (কল্যাণ ও প্রাচুর্য) উন্মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু তারা প্রত্যাখ্যান করেছিল, সুতরাং তাদের কৃতকর্মের জন্য তাদের শাস্তি দিয়েছি।’ (সূরা: আরাফ আয়াত নং : ৯৬)

 

২। প্রতারণা ও ধোঁকা 

মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করলে এবং তাদের ধোঁকা দিলে সম্পদের বরকত কমে যায়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘ক্রেতা-বিক্রেতা যতক্ষণ পরস্পর বিচ্ছিন্ন না হয়, ততক্ষণ তাদের এখতিয়ার থাকবে (ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন করা বা বাতিল করা)। যদি তারা সত্য বলে এবং (পণ্যের) অবস্থা ব্যক্ত করে, তাহলে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত হবে। আর যদি মিথ্যা বলে এবং (পণ্যের) দোষ গোপন করে তাহলে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ের বরকত মুছে ফেলা হয়।’ (বুখারি, হাদিস : ২০৭৯)

 

৩। অধিক কসম খাওয়া 

মানুষ নিজের কথাকে অন্যের কাছে বিশ্বস্ত করে তোলার জন্য কসম খেয়ে থাকে।  মিথ্যা কসম খাওয়া বড় ধরনের পাপ, যার কারণে সম্পদের বরকত চলে যায়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা ক্রয়-বিক্রয়ে অধিক কসম করা থেকে সাবধান থেকো। কেননা নিশ্চয়ই তাতে  বিক্রি বেশি হয় কিন্তু পরে বরকত কমে যায় ।’ (মুসলিম, মিশকাত, হাদিস : ২৭৯৩)

 

৪।  নিয়ামতে শুকরিয়া আদায় না করা 

মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের অনেক নিয়ামত দিয়েছেন। এসব নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে হবে। শুকরিয়া আদায় না করলে বরকত কমে যায়। 

মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন ,‘যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করো, তা হলে আমি অবশ্যই তোমাদের বেশি বেশি করে দেব। আর যদি অকৃতজ্ঞ হও, তাহলে (মনে রেখো) নিশ্চয়ই আমার শাস্তি অত্যন্ত কঠোর।’ (সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ৭)

 

৫। রিজিকের ওপর  সন্তুষ্ট থাকা 

মহান আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের রিজিক দেন। এই রিজিকের ওপর সন্তুষ্ট থাকলে জীবিকায় বরকত হয়। অরে এই রিজিকের ওপর সন্তুষ্ট না থাকলে বরকত হয় না। 

হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন , ‘আল্লাহ বান্দাকে প্রদত্ত জিনিসের মাধ্যমে পরীক্ষা করে থাকেন। আল্লাহ তার জন্য যা নির্ধারণ করেছেন, তাতে যদি সে সন্তুষ্ট থাকে, তাহলে আল্লাহ তাতে বরকত দান করেন এবং তাকে বৃদ্ধি করে দেন। আর যদি সন্তুষ্ট না থাকে তাহলে তাতে বরকত দেন না।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২০২৭৯)

 

৬।  অপচয় করা বা বেহিসেবি খরচ করা 

বাজে কাজে ব্যয় করা মানুষের একটি খারাপ স্বভাব। এর ফলে মানুষ নানা রকম পাপকাজে জড়িয়ে পরে। ইসলামে এজন্য অধিকহারে ব্যয় করা নিষিদ্ধ করেছেন। 

মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন , ‘তোমরা খাও ও পান করো। কিন্তু অপচয় কোরো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৩১)

অন্য আরেকটি আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন ,আর তোমাদের অর্থ সম্পদ অপ্রোজনীয় কাজে খরচ করবে না। জেনে রাখ ,যারা অপব্যয় করে তারা তো শয়তানের ভাই ,আর শয়তান তো নিজ প্রতিপালকের প্রতি ঘোর অকৃতজ্ঞ। (সূরা বনি ইসরাইল ,আয়াত : ২৬- ২৭)

 

৭।  অন্যায় পথে অর্থ উপার্জন করা (রিজিকে বরকত কমে যায় )

অন্যায় পথে বা হারাম উপায়ে যত  টাকা উপার্জন করা হোক না কেন সেই টাকায় বরকত হয় না। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন ,‘যে ব্যক্তি সংগত পন্থায় সম্পদ অর্জন করে তাকে বরকত দান করা হয়। আর যে ব্যক্তি অসংগত পন্থায় সম্পদ অর্জন করে সে এমন ব্যক্তির মতো যে আহার করে, কিন্তু তৃপ্ত হয় না।’ (মুসলিম, হাদিস : ১০৫২)

 

৮।  জাকাত না দেওয়া 

জাকাত আদায় করা সকল মুসলিম ব্যক্তির জন্য ফরজ। অনেকেই জানার পরেও তা আদায় করে না। ফলে তার রিজিকে বরকত কমে যায়। পরকালেও এর জন্য কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হয়। 

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন , ‘যখন কোনো জাতি জাকাত আদায় করে না তখন আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। যদি ভূপৃষ্ঠে চতুষ্পদ জন্তু ও নির্বাক প্রাণী না থাকত তাহলে আর কখনো বৃষ্টিপাত হতো না।’ (ইবনে মাজাহ ,হাদিস : ৪০১৯)

 

৯।  অপরিচ্ছন্নতা 

বাড়িতে বরকত না আসার অন্যতম কারণ হলো অপরিচ্ছন্নতা। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন ,পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। (সহীহ মুসলিম ,হাদিস : ২২৩)

পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। যেমন মহিলাদের হায়েজ-নেফাজের পরে ফরজ গোসল করা আবশ্যক হয়ে থাকে। কিন্তু অনেকেই অলসতা ও অজ্ঞতার কারণে  ফরজ গোসলে অনাগ্রহ করে থাকে। যার ফলে সে নারী অপবিত্র থেকে যায়। এতে তার নামাজ রোজা কোনোটাই হবে না। 

আবার অনেকে দেখা যায় নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার পরেও গোপনাঙ্গের লোম পরিষ্কার করে না। হজরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত ,হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন ,গোফ ছোট রাখা ,নখ কাঁটা ,বগলের লোম এবং নাভির নিচের লোম পরিষ্কার করা আমাদের সময় নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। আমরা তা পরিষ্কার করতে ৪০ দিনের বেশি সময় না করি। (বুখারী :৫৮৮৯,মুসলিম:২৫৮)

 

১০।  হায়েজ অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করা 

হায়েজ অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করলে বরকত কমে যায়। এটি পবিত্র কুরআনে ও হাদিসে সরাসরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই কাজ করলে আল্লাহ তায়ালার রহমত থেকে বঞ্চিত হয়ে যাবে। আল্লাহ তায়ালা সে ব্যক্তির ওপর থেকে বরকত উঠিয়ে নেন। (সূরা বাকারা ,আয়াত : ২২২)

আল্লাহ তায়ালা হায়েজ অবস্থায় স্ত্রীর সাথে সহবাস করতে নিষেধ করেছেন ,যতক্ষন না সে ফরজ গোসল করে পবিত্র না হয়। 

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন ,যে ব্যক্তি হায়েজ অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করবে ,সে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট কুরআনকে অস্বীকার কারী হিসেবে গণ্য হবে। (জামে তিরমিযী : ১৩,ইবনে মাজাহ : ৬৩৯)

১১।  সকালে সূর্য ওঠার পরেও শুয়ে থাকা 

ফজরের নামাজের পরে ঘুমালে জীবিকার বরকত কমে যায়। দিনের শুরুটা ঘুমে কেটে যাওয়ার কারণে দিনটা ছোট হয়ে যায়। কাজের সময় কমে যায় 

ফজর নামাজ আদায় করে ,কুরআন তেলাওয়াত করে ও ইশরাক নামাজ আদায় করে দিন শুরু করলে মহান আল্লাহ তায়ালা সারা দিনের জন্য সেই বান্দার বিশেষ দায়িত্ত্ব গ্রহণ করেন। যার কারণে দিনটি হয়ে ওঠে বরকতময়। 

হজরত সাখর আল – গামিদি (রা) হতে বর্ণিত ,হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন ,হে আল্লাহ ! আপনি  ভোরের বরকত দান করুন। তিনি কোনো যুদ্ধে তার বাহিনীকে কোথাও পাঠালে দিনের প্রথমভাগেই পাঠাতেন। 

হজরত সাখর আল – গামিদি (রা) হতে বর্ণিত ,হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন ,হে আল্লাহ ! আপনি  আমার উম্মতকে ভোরের বরকত দান করুন। তিনি কোনো যুদ্ধে তার বাহিনীকে কোথাও পাঠালে দিনের প্রথমভাগেই পাঠাতেন। 

 

১২।  বাড়িতে  মেহমান আসলে নারাজ হওয়া।

হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন ,বাড়িতে মেহমান আসলে আমি অনেক আনন্দ অনুভব করি। তিনি আরো বলেন ,যাদের বাড়িতে মেহমান নেই তাদের কোনো আনন্দ নেই। 

হাদিস শরীফে বলা হয়েছে ,মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন ,যে ব্যক্তি চায় তার বরকত বৃদ্ধি করা হোক ,সে যেন তার আত্ত্বীয়দের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখে। 

অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে ,হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন ,যে ব্যক্তি উত্তম ভাবে মেহমানদারী করে না তার মাঝে কোনো কল্যাণ নেই। (মুসনাদে আহমদ ,হাদিস : ১৭৪১৯)

তাই মেহমান আসলে যে ব্যক্তি নারাজ হয় তার বাড়িতে কখনো বরকত আসে না ,বাড়ি থেকে আস্তে আস্তে বরকত কমে যায় এবং হায়াতের বরকত কমে যায়। 

যে স্বভাব গুলোর কারণে মানুষের পতন হয়

 

 

Sharing Is Caring:

Leave a Comment