যে ব্যক্তিদের যাকাত দিতে হবে | জাকাত যাকে দেবেন, যেভাবে দেবেন

যাকাত ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ । যাকাত আরবি শব্দ । যাকাত শব্দের অর্থ পবিত্রতা , পরিচ্ছন্নতা , শুদ্ধিকরণ। শরিয়তের পরিভাষায়
নিজের ধন সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ গরিব মিসকিন ও অভাবগ্রস্ত লোকদের দান করাকে যাকাত বলা হয় ।

মহান আল্লাহ তায়ালার দেয়া ধন সম্পদ হতে তার বান্দার কল্যানে ব্যয় করে তাহলে মহান আল্লাহ তায়ালা খুশি হন এবং তার ধন সম্পদ
পবিত্র হয় ।আর যে ব্যক্তি ব্যয় করে না অর্থাৎ যাকাত দেয় না তার ধন সম্পদ অপবিত্র থেকে যায় । এরকম ব্যক্তিকে ইসলামি জামায়াতের
সদস্য বিবেচনা করা যায় না ।

যাদের যাকাত দিতে হবে

মহান আল্লাহ তায়ালা কোন কোন ব্যক্তিকে যাকাত দিতে হবে এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে বলেছেন । মহান আল্লাহ তায়ালা ৮ শ্রেণীর মানুষকে
যাকাত দিতে বলেছেন । তারা হলঃ

১ । গরিব লোকদের

যে ব্যক্তিদের ধন সম্পদ কিছু আছে কিন্তু তা জাবতিয় প্রয়োজন মিটানোর জন্য যথেষ্ট নয় । তারা লজ্জার জন্য কারো কাছে কিছু চাইতে পারে
না এরুপ ব্যক্তিদের গরিব বলা হয় । মহান আল্লাহ তায়ালা এমন ব্যক্তিদের যাকাত দিতে বলেছেন ।

২ । মিসকিনদের

যে সব ব্যক্তি গরিব লোকের চেয়েও খারাপ অর্থাৎ ধন সম্পদ কিছুই নেই অন্য মানুষের ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করে এবং বহু কষ্টে দুই
বেলার খাবার জুটাতে পারে না এরুপ ব্যক্তিদের মিসকিন বলা হয় । এদের যাকাত দিতে হবে ।

৩ । যাকাত বিভাগের কর্মচারি বৃন্দ

যে ব্যক্তিগন ইসলামি হুকুম মত জনসাধারণের নিকট হতে যাকাত আদায় করার জন্য কর্মচারি হিসেবে নিযুক্ত থাকে তাদের বেতন জাকাতের তহবিল
থেকেই দিতে হবে ।

৪ । নও মুসলিমদের

নও মুসলিম বলতে অন্য ধর্মের মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেছে তাদের বুঝায় । যে ব্যক্তিগন তাদের পূর্বপুরুষদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে ইসলাম
ধর্মের শামিল হয়েছে । যার কারনে বেকার সমস্যা ও আর্থিক অভাব অনটনের সম্মুখীন হয়েছে এমন অবস্থায় তাদের সাহায্য করা মুসলমানদের
কর্তব্য ।

নও মুসলিম ব্যক্তিদের সাহায্য করলে তারা ইসলামের প্রতি গভির আস্থাবান হবে । নও মুসলিম ব্যক্তি ধনি হলেও তাকে যাকাত দেয়া উচিত ।

হাদিস শরিফে বর্ণনা করা হয়েছে , হুনাইনের যুদ্ধে জয়লাভ করার পরে হজরত মুহাম্মাদ (সা) নও মুসলিম ব্যক্তিদেরকে এত পরিমান গনিমতের
মাল দান করেছিলেন প্রত্যেকেই ১০০ করে উট পেয়েছিল।

মদিনার আনছারগনের মধ্যে থেকে কিছু লোক এ বিষয়ে অভিযোগ করলে ,হজরত মুহাম্মাদ (সা) বলেন , তারা সম্প্রতি ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেছে
আমি তাদের খুশি করতে চাই । ( বুখারি শরিফ)

৫ । গোলাম ও বন্দীর মুক্তির জন্য

যে গোলাম ব্যক্তি তার মনিবের নিকট চুক্তি করেছে একটি নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ দিলে সে দাসত্বকৃত হতে মুক্তি পাবে ঐ ব্যক্তিদের দাসত্বমুক্ত করার
জন্য যাকাত দেয়া যাবে ।

আর যে ব্যক্তিগন টাকা দিতে অক্ষম বলে বন্দি হয়ে পরেছে তাদের জাকাতের টাকা দিয়ে মুক্ত করা যাবে ।

৬ । ঋনগ্রস্ত লোক

যে সব ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত কিন্তু ঋন পরিশোধ করতে অক্ষম অর্থাৎ ঋন পরিশোধ করার সামর্থ ও সম্বল কিছুই নাই এরকম ব্যক্তিদের ঋণমুক্ত করার জন্য
যাকাত দেয়া যাবে ।

৭ । আল্লাহর রাস্তায়

আল্লাহর রাস্তায় অর্থাৎ আল্লাহর নির্দেশিত কাজের জন্য যাকাত দেয়া যাবে । মুসলমানদের সমস্ত কাজই আল্লাহর রাস্তা বলে বিবেচিত হয় কিন্তু এখানে
জিহাদকে বুঝানো হয়েছে । অর্থাৎ আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারি ব্যক্তিদের যাকাত দিয়ে সাহায্য করা যাবে ।

যে সব গরিব ব্যক্তি অর্থের অভাবে পড়াশোনা করতে পারছে না তাদের যাকাত দেয়া যাবে । কেননা ওটাও আল্লাহর রাস্তায় খরচ বলে বিবেচিত হয়।

৮ । মুসাফির ব্যক্তি

মুসাফির বলতে নিজ এলাকা হতে অন্য এলাকায় প্রবেশকৃত ব্যক্তি বুঝায় । মুসাফির ব্যক্তি নিজ বাড়িতে যত সম্পদশালী হোক না কেন মুসাফির অবস্থায়
অভাবগ্রস্ত ও অর্থশূন্য হয়ে পরলে তাকে যাকাত দিয়ে সাহায্য করা যাবে ।

কোন হাজী ব্যক্তি হজ্জের পরে তাকার অভাবে নিজ দেশে ফিরে আসতে পারছে না তাদেরকেও জাকাতের অর্থ দেয়া যাবে ।

Sharing Is Caring:

Leave a Comment