যে পাপের শাস্তি দুনিয়াতে হয় । আল্লাহ তাআলা কিছু পাপের শাস্তি দুনিয়াতেই দিয়ে থাকেন

আমরা দৈনন্দিন জীবনে চলতে ফিরতে ইচ্ছায় অনিচ্ছায় অনেক রকম গুনাহ করে থাকি।গুনাহ দুই ধরনের হয়। কবিরা গুনাহ ও ছগীরা গুনাহ। কেউ কেউ কবিরা গুনাহ করে থাকে আবার কেউ কেউ ছগীরা গুনাহ করে থাকে।  কেউ নিষ্পাপ থাকতে পারে না। কোনো পাপই ছোট নয়। 

কেবলমাত্র ফেরেশতা ও নবী রাসূলরাই গুনাহমুক্ত নিষ্পাপ থাকতে পারে। অনেকেই গুনাহ করেছে এটা  বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হয়ে মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিনের নিকট তওবা প্রার্থনা করে থাকে। আবার অনেকেই পাপ কাজ করছে জেনেও অনুতপ্ত হয় না ,আল্লাহ তায়ালার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে না। 

পাপ করা থেকে বড় অপরাধ হলো পাপ করার পর তা থেকে তওবা না করা, ফিরে না আসা, অনুতপ্ত না হওয়া এবং বারবার পাপ করা। মহান আল্লাহ তায়ালা ক্ষমাশীল। কোনো পাপী বান্দা  যদি তার পাপ বুঝতে পেরে আল্লাহ তায়ালার নিকট ক্ষমা চায় তাহলে আল্লাহ টাকার ক্ষমা করে দেন। 

আর যারা ক্ষমা চায় না তাদের পেপার শাস্তি দিয়ে থাকেন।  আল্লাহ তাআলা কোনো কোনো পাপের শাস্তি দুনিয়ায়ও দিয়ে থাকেন। আবার কোনো কোনো পাপের শাস্তি দিতে পরকালের জন্য বিলম্ব করেন। আর শাস্তি ধরন নানা রকম হয়ে থাকে। কারও অসুস্থতার মাধ্যমে, কাউকে অসহায়ত্বের মাধ্যমে, কারও আবার ঈমান হরণের মাধ্যমে তাকে শাস্তি দেওয়া হয়।

মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন ,‘আমি অবশ্যই তাদের গুরু শাস্তির পূর্বে লঘু শাস্তি আস্বাদন করাব, যাতে তারা ফিরে আসে।’ -(সুরা সিজদা :২১)

যে পাপের  শাস্তি আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতেই দিয়ে থাকেন

১। অঙ্গীকার পূর্ণ করা 

অঙ্গীকার হলো কোনো কিছু  প্রতিশ্রুতি করা। কোনো কিছু অঙ্গীকার করলে তা অবশ্যই পূর্ণ করতে হবে। অঙ্গীকার পূর্ণ করা মুমিনের অন্যতম গুণ।অঙ্গীকার করে তা পূর্ণ না করলে কবিরা গুনাহ হয়। 

হাদিস শরীফে বলা হয়েছে ,আমি বিচার দিবসে তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে বাদী হব। ১. যে ব্যক্তি অঙ্গীকার করে ভঙ্গ করে, ২. যে ব্যক্তি কোনো স্বাধীন ব্যক্তিকে বিক্রি করে তার মূল্য ভোগ করে এবং ৩. যে ব্যক্তি কোনো কর্মচারী নিয়োগ করে তার কাছ থেকে পূর্ণ কাজ আদায় করে, কিন্তু তার পারিশ্রমিক প্রদান করে না’ (সহিহ বুখারি)।

অঙ্গীকার সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে অনেকগুলো আয়াত নাজিল করেছেন।  বলেছেন , ‘আর অঙ্গীকার পূর্ণ করো। অবশ্যই অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল ,আয়াত নং  : ৩৪)।

অন্য আয়াতে বলেছেন ,‘হে মুমিনরা! তোমরা অঙ্গীকারগুলো পূর্ণ করো।’ (সুরা : মায়েদা। আয়াত নং  : ১)।

২। ব্যভিচার করা 

ব্যভিচারের শাস্তি অনেক ভয়াবহ। ব্যভিচারে লিপ্ত মানুষ সম্পূর্ণ ঈমানহারা হয়ে যায়। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন , ‘তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তীও হয়ো না। কারণ তা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ।’ (সুরা বনি ইসরাঈল : ৩২)

হাদিস শরীফে বলা হয়েছে ,‘কোনো মানুষ যখন ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তখন তার ভেতর থেকে ঈমান বেরিয়ে যায় এবং এটি তার মাথার ওপর মেঘখণ্ডের মতো ভাসতে থাকে। অতঃপর সে যখন তাওবা করে, তখন ঈমান আবার তার কাছে ফিরে আসে।’ (আবু দাউদ। হাদিস নং  : ৪৬৯০)

মহান আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেন ,‘(অবিবাহিত) ব্যভিচারী পুরুষ ও ব্যভিচারিণী নারী উভয়কে ১০০ করে বেত্রাঘাত করো।’ (সুরা : আন নূর : ২)। আর বিবাহিত হলে তাদের শাস্তি হলো, কোমর পর্যন্ত মাটির নিচে পুঁতে পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করা। 

৩। ওজনে কম দেয়া 

ওজনে কম দেয়া মারাত্বক অপরাধ।  পরিমাপ ও ওজনে কম দেওয়া করিরা গুনাহ। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘যারা মাপে কম দেয়, তাদের জন্য দুর্ভোগ, যারা লোকের কাছ থেকে যখন মেপে নেয়, তখন পূর্ণ মাত্রায় নেয়, আর যখন লোকদের মেপে দেয় কিংবা ওজন করে দেয়, তখন কম করে দেয়।’(সূরা : মুতাফফিফিন ,আয়াত নং : ১-৩)

 আরো ইরশাদ করেন, মেপে দেওয়ার সময় পূর্ণ মাপে দেবে এবং সঠিক দাঁড়িপাল্লায় ওজন করবে। এটা উত্তম, এর পরিণাম শুভ (সুরা : বনি ইসরাঈল ,আয়াত নং  : ৩৫)। 

৪। মা বাবার অবাধ্য হওয়া 

বাবা মা হলো সন্তানের জন্য জান্নাত ও জাহান্নাম। যে ব্যক্তি বাবা মাকে  খুশি রাখতে পারবে তার প্রতি আল্লাহ তায়ালা খুশি হয়ে থাকে। আর যে ব্যক্তি মা বাবার সঙ্গে খারাপ আচরণ করবে, দুনিয়ায়ই তার জন্য জাহান্নাম। মৃত্যুর আগে অবশ্যই সে ব্যক্তি মা বাবার অবাধ্যতার শাস্তি ভোগ করবে।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক! ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক! ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক! জিজ্ঞাসা করা হলো, কোন ব্যক্তি ইয়া রাসুলুল্লাহ? উত্তরে নবীজি বললেন, যে তার বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে পেল অথবা তাদের একজনকে পেল কিন্তু তাদের খেদমত করে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না।’ (মুসলিম : ২/৩১৪)

৫। কারও প্রতি অন্যায় ও জুলুম করা 

অন্যায় ও জুলুম করা মারাত্বক অপরাধ। যার শাস্তি আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতেই দিয়ে থাকেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুসলমান ভাইয়ের প্রতি মানসম্মান বা অন্য কোনো বিষয়ে জুলুম করে, তবে সে যেন তার কাছ থেকে সেদিন আসার আগে আজই মাফ করিয়ে নেয়, যেদিন তার কাছে দেরহাম ও দিনার কিছুই থাকবে না। 

সেদিন তার কাছে যদি কোনো আমল থাকে, তবে তার জুলুম পরিমাণ নেকি নিয়ে নেওয়া হবে। আর তার কাছে নেকিও না থাকলে মজলুম ব্যক্তির গুনাহগুলো তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে।’ (মেশকাত ,হাদিস নং  : ৪৮৯৯)। 

৬। কুরআন অনুযায়ী বিচার না করা 

কুরআন অনুযায়ী বিচার করতে হবে। একপাক্ষিক বিচার করা যাবে না। এর কারণে শাস্তি ভোগ করতে হবে।  কোরআনবর্জিত বিচারকার্য করা মুনাফেকি। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান অনুযায়ী যারা বিচার করে না তারা কাফির।’ (সুরা : মায়েদা ,আয়াত নং  : ৪৪)।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘কোনো জাতির মধ্যে আত্মসাৎ বৃদ্ধি পেলে সে জাতির লোকদের অন্তরে ভয়ের সঞ্চার করা হয়। কোনো জাতির মধ্যে ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়লে সেখানে মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পায়। কোনো সম্প্রদায়ের লোকেরা পরিমাপ ও ওজনে কম দিলে তাদের রিজিক সংকুচিত করা হয়।

 কোনো জাতির লোকেরা অন্যায়ভাবে বিচার-ফয়সালা করলে তাদের মধ্যে রক্তপাত বিস্তৃতি লাভ করে। কোনো জাতি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলে আল্লাহ তাদের ওপর শত্রুদল চাপিয়ে দেন।’ (মুয়াত্তা মালেক ,হাদিস নং  : ১৩২৩)। 

Sharing Is Caring:

Leave a Comment