ফরজ নামাজের পর যে আমল করতে হয় | Fojor Namajer Por Amol

ফরজ নামাজের সালাম ফিরিয়ে এই দোয়া গুলো আমল করুন তাহলে ইনশাআল্লাহ কেয়ামতের দিন হাসতে হাসতে জান্নাতে
প্রবেশ করতে পারবেন । ফরজ নামাজ শেষে হজরত মুহাম্মাদ (সা) কখন জামায়াতবদ্ধ ভাবে মুনাজাত করেননি ।
হাদিস শরিফে বলা হয়েছে ,ফরজ নামাজ শেষে হজরত মুহাম্মাদ (সা) অসংখ্য দোয়া পাঠ করতেন ।

হজরত মুহাম্মাদ (সা) ইমাম অবস্থায় নামাজের সালাম ফেরানর পরে কিবলার দিক থেকে ঘুরে মুক্তাদিদের দিকে ঘুরে বসতেন ।
(সহিহ বুখারি ,হাদিস নংঃ ৮৪৫) ।ফরজ নামাজের পর বিভিন্ন আমল ও জিকির করা মুস্তাহাব ।হজরত মুহাম্মাদ (সা) ফরজ
নামাজ শেষে জিকির ও বিভিন্ন দোয়া পাঠ করতেন ।

ফরজ নামাজ শেষে নামাজের জায়গা ত্যাগ না করে বসে বসে জিকির ও আমল করলে দুনিয়া ও আখিরাতের জীবন সুন্দর হয় ।
হজরত মুহাম্মাদ (সা) কে জিজ্ঞাসা করা হল ,কোন সময় দোয়া করলে দোয়া কবুল হয় ? হজরত মুহাম্মাদ (সা) ইরশাদ করে
বললেন ,গভীর রাতের দোয়া আর ফরজ নামাজ শেষের দোয়া ।

হজরত মুহাম্মাদ (সা) ফরজ নামাজ শেষে অনেক দোয়া ও জিকির করতেন ।আমাদের মহানবি হজরত মুহাম্মাদ (সা) এর পথ
অনুসরণ করা উচিত ।তাহলে নেকির পাল্লা ভারি হবে এবং কেয়ামতের দিন মহানবি হজরত মুহাম্মাদ (সা) এর সাফায়াত লাভ
করা যাবে ।

ফরজ নামাজের সালাম ফিরিয়ে মহানবি হজরত মুহাম্মাদ (সা) যে দোয়া গুলো পাঠ করতেন

১ । ইস্তেগফার 

হজরত সাওবান (রা) হতে বর্ণিত ,হজরত মুহাম্মাদ (সা) ফরজ নামাজ শেষে ৩ বার ইস্তেগফার পাঠ করতেন ।
আরবিঃ

উচ্চারনঃ আস্তাগফিরুল্লাহ
অর্থঃ আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই (সহিহ মুসলিম ,হাদিস নংঃ ১২২২)

২ । দ্বিতীয় দোয়াটি হল

আরবিঃ

বাংলা উচ্চারনঃ আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম , ওয়া মিনকাস সালাম ,তাবারকতা ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম ।(১ বার)

অর্থঃ হে আল্লাহ ! তুমি শান্তিময় এবং তোমার হতেই শান্তি উৎসারিত হয় ।তুমি বরকতময় হে মহান ও সম্মানের অধিকারি ।
(মুসলিম শরিফ ,হাদিস নংঃ ১২২১)

৩ । প্রত্যেক ওয়াক্ত নামাজের পরে

সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার , আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার ,আল্লাহু আকবার ৩৪ বার পাঠ করতেন ।অথবা সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার
আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার ,আল্লাহু আকবার ৩৩ বার এর পর এক বার নিম্নের এই দোয়াটি পাঠ করতেন ।

আরবিঃ

عن أبي أيوب رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «مَنْ قَالَ: لَا إلَهَ إلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ، وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ عَشْرَ مَرَّاتٍ كَانَ كَمَنْ أَعْتَقَ أَرْبَعَةَ أَنْفُسٍ مِنْ وَلَدِ إسْمَاعِيلَ

বাংলা উচ্চারনঃ
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু । লাহুল মুল্কু ।ওয়ালাহুল হামদু ।ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির ।

অর্থঃ
আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই । তিনি একক । তার কোন শরিক নেই ।সার্বভৌমত্বের মালিক তিনি । সকল প্রশংসা তার ।
তিনি সবকিছুর ওপর সামর্থ্যবান ।( মুসলিম ,হাদিস নংঃ ১২৪০)

হজরত মুহাম্মাদ (সা) বলেছেন ,কোন ব্যক্তি সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার , আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার ,আল্লাহু আকবার ৩৩ বার এবং
এই দোয়া টি ১ বার পরে ১০০ বার পূর্ণ করে তাহলে তার সমস্ত ছগিরা গুনাহ মহান আল্লাহ তায়ালা মাফ করে দিবেন । যদিও
তা সমুদ্রের ফেনা পরিমান হয় । ( সহিহ মুসলিম , হাদিস নংঃ ১৩৮০)

৪ । আয়াতুল কুরসি পাঠ

আরবিঃ

اَللهُ لآ إِلهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ، لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَّلاَ نَوْمٌ، لَهُ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْأَرْضِ، مَنْ ذَا الَّذِىْ يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ، يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيْطُوْنَ بِشَيْئٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَآءَ، وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ، وَلاَ يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَ هُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ-

বাংলা উচ্চারনঃ

আল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম। লা তা’খুযুহু সিনাতুঁ ওয়ালা নাঊম। লাহূ মা ফিস্ সামা-ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ্বি। মান যাল্লাযী ইয়াশফাউ’ ই’ন্দাহূ ইল্লা বিইজনিহি। ইয়া’লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খালফাহুম, ওয়ালা ইউহিতূনা বিশাইয়্যিম্ মিন ‘ইলমিহি ইল্লা বিমা শা-আ’ ওয়াসিআ’ কুরসিইয়্যুহুস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ্বি, ওয়ালা ইয়াউ’দুহূ হিফযুহুমা ওয়া হুওয়াল ‘আলিইয়্যুল আ’জিম। (সূরা আল-বাক্বারা আয়াত-২৫৫)।

অর্থঃ

হজরত মুহাম্মাদ (সা) বলেছেন ,যে ব্যক্তি ফরজ নামাজের পরে আয়াতুল কুরসি পাঠ করে তাহলে তাকে জান্নাতে যাওয়া থেকে মৃত্যু
ব্যতীত কোন কিছুই বাধা দিয়ে পারবে না ।(মুসলিম , নাসাঈ)

ঘুমানোর আগে পাঠ করে ঘুমালে সকাল পর্যন্ত একজন ফেরেশতা পাহাদার হিসেবে নিযুক্ত থাকে যাতে শয়তান তার নিকটবর্তী হতে না
পারে ।(সহিহ বুখারি)

৫ । ফজর ও মাগরিব নামাজের সালাম ফিরিয়ে নিম্নের দোয়াটি ৭ বার পাঠ করতেন ।

বাংলা উচ্চারনঃ আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান্নার ।

অর্থঃ হে আল্লাহ ! আমাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিন ।

মহানবি হজরত মুহাম্মাদ (সা) বলেছেন ফজর ও মাগরিব নামাজের পরে কারো সাথে কথা না বলে উক্ত দোয়াটি ৭ বার পাঠ করলে তার
জন্য জাহান্নাম হতে মুক্তি লিখে দেওয়া হবে ।( মিশকাতুল মাসাবিহ)

৬ ।ফজর ও মাগরিবের নামাজের পরে সুরা ইখলাস ৩ বার , সুরা ফালাক ৩ বার ,সুরা নাস ৩ বার অন্যান্য ফরজ নামাজে তিনটি সুরা ১ বার
করে পাঠ করতেন ।

সুরা ইখলাস

قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ – اللَّهُ الصَّمَدُ – لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ – وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ

উচ্চারণ :

কুল হুয়াল্লাহু আহাদ। আল্লাহুচ্চামাদ। লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইউলাদ। ওয়া লাম ইয়াকুল্লাহু কুফুয়ান আহাদ।’ (মাখরাজসহ বিশুদ্ধ উচ্চারণ শিখে নেয়া জরুরি )

অর্থঃ

(হে রাসুল! আপনি) বলুন, তিনিই আল্লাহ, একক। আল্লাহ অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি। আর তার সমতুল্য কেউ নেই।’ (সুরা ইখলাস)

সুরা ফালাক 

قُلْ أَعُوذُ بِرَ‌بِّ الْفَلَقِ
কুল্ আ‘ঊযু বিরব্বিল্ ফালাক্বি
বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি প্রভাতের পালনকর্তার,
مِن شَرِّ‌ مَا خَلَقَ
মিন্ শার রিমা-খলাক্ব
তিনি যা সৃষ্টি করেছেন, তার অনিষ্ট থেকে,
وَمِن شَرِّ‌ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ
অমিন্ শাররি গ-সিক্বিন্ ইযা-অক্বাব্
অন্ধকার রাত্রির অনিষ্ট থেকে, যখন তা সমাগত হয়,
وَمِن شَرِّ‌ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ
অমিন্ শাররি ন্নাফ্ফা-ছা-তি ফিল্ ‘উক্বদ্
গ্রন্থিতে ফুঁৎকার দিয়ে জাদুকারিনীদের অনিষ্ট থেকে
وَمِن شَرِّ‌ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ
অমিন্ শাররি হা-সিদিন্ ইযা-হাসাদ্
এবং হিংসুকের অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে ।

 

সুরা নাস 

قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ ﴿١
ক্বুল আউযু বিরাব্বিন নাস।
বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি মানুষের পালনকর্তার।
SAY: “I SEEK refuge with the Lord of men

مَلِكِ النَّاسِ ﴿٢
মালিকিন্নাস
মানুষের মালিকের
The King of men

إِلَـٰهِ النَّاسِ ﴿٣
ইলাহিন্নাস।
মানুষের মা’ বুদের
The God of men

مِن شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ ﴿٤
মিন শাররীল ওয়াস ওয়াসিল খান্নাস।
তার অনিষ্ট থেকে, যে কুমন্ত্রণা দেয় ও আত্মগোপন করে
From the evil of him who breathes temptations into the minds of men

الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ ﴿٥
আল্লাযি ইউওয়াস ইসু ফী সুদুরিন্নাস।
যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে
Who suggests evil thoughts to the hearts of men

مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ ﴿٦
মিনাল জিন্নাতি ওয়ান নাস।
জিনের অথবা মানুষের মধ্যে থেকে
From among the jinns and men.

৭ । দরুদ শরিফ

দরুদ শরিফ ফজর ও মাগরিব নামাজ পরে ১০ বার করে পাঠ করলে কেয়ামতের দিন বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মাদ (সা) এর শাফায়াত লাভ করা যাবে ।

দরুদ শরিফ আরবি উচ্চারনঃ

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিউওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা ‘আলা ইবরাহীমা ওয়া আলা আ-লি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিউওয়া ‘আলা আলি মুহাম্মাদিন, কামা বা-রাকতা ‘আলা ইব্রাহীমা ওয়া ‘আলা আ-লি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্ মাজীদ)

 

অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি (আপনার নিকটস্থ উচ্চসভায়) মুহাম্মাদকে সম্মানের সাথে স্মরণ করুন এবং তাঁর পরিবার-পরিজনকে, যেমন আপনি সম্মানের সাথে স্মরণ করেছেন ইবরাহীমকে ও তাঁর পরিবার-পরিজনদেরকে। নিশ্চয় আপনি অত্যন্ত প্রশংসিত ও মহামহিমান্বিত। হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবার পরিজনের ওপর বরকত নাযিল করুন যেমন আপনি বরকত নাযিল করেছিলেন ইবরাহীম ও তাঁর পরিবার-পরিজনের ওপর। নিশ্চয় আপনি অত্যন্ত প্রশংসিত ও মহামহিমান্বিত
Sharing Is Caring:

Leave a Comment