তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ত ,সময় ,নিয়ম এবং ফজিলত

তাহাজ্জুদ আরবি শব্দ। তাহাজ্জুদ শব্দের অর্থ কষ্ট -ক্লেশ ,শ্রম -পরিশ্রম। রাত্রিকালীন নামাজকে তাহাজ্জুদ নামাজ বলা হয়। সাধারণভাবে এর অর্থ এভাবে বলা যায় যে ,কিছুসময় নিদ্রা যাওয়ার পর যে নামাজ পড়া হয় তাকেই তাহাজ্জুদের নামাজ বলা হয়। 

আবার এভাবেও বলা যায় ,সন্ধ্যা রাতে ঘুমিয়ে মধ্যরাতের পর শয্যা ত্যাগ করে যে নামাজ পড়া হয় তাই তাহাজ্জুদ নামাজ। তাই তাহাজ্জুদের আগে ঘুমান এবং ঘুম থেকে উঠে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া উত্তম। 

আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) নিজেও তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তেন এবং সাহাবীদেরকে পড়ার জন্য উৎসাহ দিতেন।  ফরজ নামাজের পরে উত্তম নামাজ হলো তাহাজ্জুদের নামাজ।তাহাজ্জুদের নামাজ হলো নফল নামাজ।  রমজান মাসে নফল নামাজের সওয়াব ফরজ নামাজের সমান হয়। ফরজ নামাজের সওয়াব ৭০ গুন্। 

হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ ) বর্ণনা করেন ,হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন ,ফরজ নামাজের পর সব নফল নামাজের মধ্যে শ্রেষ্ঠ্য নামাজ হলো তাহাজুদ্দের নামাজ। (মুসলিম ,তিরমিজি ,নাসাঈ )

সূরা বনী ইসরাইলের ৭৯ নং আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন ,রাত্রির কিছু অংশ কোরআন পাঠ সহ জাগ্রত থাকুন। এটা আপনার জন্য অতিরিক্ত।  হয়ত বা আপনার পালনকর্তা আপনাকে মোকামে মাহমুদে  পৌঁছাবেন। 

অনেকেই মনে করেন একবার তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া শুরু করলে অরে বাদ  দেয়া যায় না। এই ভয়ে অনেকেই তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে না। এগুলো ভুল ধারণা। মহানবী (সাঃ) এসব কিছুই বলেন নাই। তবে তাহাজ্জুদ নামাজ নিয়মিত আদায় করতে পারলে তা অতি উত্তম। তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার সময় কারো ঘুমের যেন ব্যাঘাত না ঘটে এবং প্রচার মানসিকতা যেন না থাকে , এ বিষয়ে সতর্ক ও যত্নশীল থাকতে হবে। 

তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার সময় 

তাহাজ্জুদের নামাজ রাতের তৃতীয়াংশে পড়া উত্তম। তাহাজ্জুদ নামাজের মূল সময় সাধারণত রাত  ২ টার  পর থেকে ফজরের আজানের আগে পর্যন্ত।

 তবে ঘুম থেকে জাগার সম্ভাবনা না থাকলে কিংবা কোনো সমস্যার কারণে যদি শেষ রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে অসুবিধা হয় ,তাহলে ইশার সালাতের পর দুই রাকাত সুন্নত ও বিতর নামাজের আগে পড়ার জায়েজ আছে। কিন্তু পরিপূর্ন পর্যাদা পেতে রাত  ২ টার  পরে তাহাজ্জুদ নামাজ পরে উত্তম। 

তাহাজ্জুদ নামাজের রাকাত সংখ্যা 

তাহাজ্জুদ নামাজ সর্ব নিম্ন ২ রাকাত। সর্বোচ্চ ১২ রাকাত। আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) ৮ রাকাত তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তেন এবং এর পর ৩ রাকাত বিতরের নামাজ পরে মোট ১১ রাকাত পুরুন করতেন। তাই আমাদের ও ৮ রাকাত তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া উত্তম। 

তাছাড়া তাহাজ্জুদের নামাজ ২ রাকাত ,৪ রাকাত ,১২ রাকাত ও পড়া যায়। তাহাজ্জুদের নামাজ ২ রাকাতের নিয়ত করে পড়তে হয়। হাদিস শরীফে বলা হয়েছে ,তাহাজ্জুদের নামাজ বিতরসহ ১৩ ,১১ ,৯ ,৭ রাকাত ও পড়া যায়। (বুখারী ,মুসলিম। মেশকাত ,পৃষ্ঠা নং ১০৬ )

নিয়ত বাংলা উচ্চারণ ছবি

নিয়ত আরবি উচ্চারণ

نَوَيْتُ اَنْ اسَلَى رَكَعَتِى التَّهَجُّدَ

নিয়ত বাংলা উচ্চারণ 

নাওয়াইতু আনউসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকআতাই সালাতিত্তাহাজ্জুূদী মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।

নিয়ত অর্থ 

আমি কেবলা মুখী হয়ে দুই রাকাত তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করছি। আল্লাহু আকবার।

তাহাজ্জুদ নামাজ পরার নিয়ম  

আমাদের প্রিয় নবি হজরত মুহাম্মাদ (সা) ২ রাকাত করে মোট ৮ রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন ।তাহাজ্জুদের  নামাজ যে কোন সুরা দিয়েই পরা যায় ।কিন্তু হজরত মুহাম্মাদ (সা) লম্বা কেরাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন । তাই আমাদের ও লম্বা কেরাতে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা উচিত ।

তাহাজ্জুদের নামাজ জেভাবে পরতে হয় ঃ

১ । তাকবিরে তাহরিমা ‘আল্লাহু আকবার ‘বলে নিয়ত বাধা ।

২ । ছানা পরা 

৩ । সুরা ফাতেহা পরা 

৪ । লম্বা কেরাতের সুরা পরা ।কারন হজরত মুহাম্মাদ (সা) লম্বা কেরাতের সুরা পরতেন ।তাই আমাদের ও উচিত হজরত মুহাম্মাদ (সা) এর পথ অনুসরন করা ।তার পর রুকু সেজদা আদায় করা ।আভাবে দ্বিতীয় রাকাত আদায় করে তাশাহুদ ,দরুদ ,দোয়া মাছুরা পরে সালাম ফেরানো ।এভাবে সম্পূর্ণ নামাজ আদায় করা ।

তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত

ফরজ নামাজের পর সুন্নত ও নফল নামাজের মধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত সব থেকে বেশি। (আহমাদ ,মেশকাত ,পৃষ্ঠা নং ১১০)

হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর ওপর ৫ ওয়াক্ত নামাজ ফজন হওয়ার আগে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কুরআনের বিভিন্ন সূরায় তাহাজ্জুদ নামাজ সম্পর্কে তাগিদ দেয়া হয়েছে। যারা বিনা হিসেবে জান্নাতে যেতে পারবেন ,তাদের মধ্যে এক শ্রেণীর মানুষ হলো যারা মনোযোগ সহকারে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করবে। তাহাজ্জুদের নামাজ পরে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে কিছু চাইলে ,আল্লাহ তায়ালা তার বান্দার মনের সকল আশা পুরুন করে দেন। 

এ সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) বলেন ,আমাদের প্রভু পরওয়ারদিগার তাবারাকা প্রত্যেক রাত্রে দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন যখন রাতের এক তৃতীয়াংশ বাকি থাকে। 

অতঃপর তিনি বলেন ,তোমাদের কে আমাকে ডাকবে !আমি তার ডাকে সারা দেব। কে আমার কাছে কিছু চাইবে আমি তাকে তা দেব ,কে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। (মুসলিম ,মেশকাত ,পৃষ্ঠা নং ১০৯ )

রাসূল (সাঃ) বলেছেন ,কোনো স্বামী যদি ঘুম থেকে জেগে তাহাজ্জুদের নামাজ পরে এবং তার স্ত্রীকেও যদি জাগিয়ে তোলে নামাজ পড়ার জন্য এমনকি সে যদি না জাগে ,তবে তার মুখে পানি ছিটিয়ে দেয়  তাহলে তার প্রতি আল্লাহ রহমত বর্ষণ করবে। 

অনুরূপ কোনো স্ত্রী যদি ঘুম থেকে জেগে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করে এবং তার স্বামীকেও জাগিয়ে তোলে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার জন্য এমনকি সে যদি না জাগে তাহলে তার মুখে পানি ছিটিয়ে দেয় তাহলে আল্লাহ তার প্রতি রহমত বর্ষণ করেন। (আবু দাউদ ,নাসাঈ ,মেশকাত ,পৃষ্ঠা নং : ১০৯ ) 

তাছাড়াও কেও যদি তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার জন্য ডাকার নির্দেশ বা অনুমতি দেয় ,তাহলে তাকে তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য ডেকে তোলা যাবে। অনুমতি না দিলে ডাকা যাবে না। 

হজরত আলী (রাঃ) বলেছেন ,যারা রাট জেগে তাহাজ্জুদ পড়েছেন ,তারাই আধ্যাত্নিক জগতে আল্লাহর নৈকট্য লাভে ঊর্ধ্বারোহন করেছেন। (দিওয়ানে আলী ,নাহজুল বালাগা )

Sharing Is Caring:

Leave a Comment