ইসলামের দৃষ্টিতে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্ব ও কর্তব্য

ইসলামে স্বামী তার স্ত্রীর শারীরিক ও আর্থিক সুস্থতার জন্য দায়ী। এর মধ্যে তাকে উপযুক্ত থাকার জায়গা, খাবার, পোশাক এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করা অন্তর্ভুক্ত। স্বামীর কাছ থেকেও আশা করা হয় যে তিনি তার স্ত্রীকে মানসিক ও আধ্যাত্মিকভাবে রক্ষা করবেন এবং যত্ন করবেন এবং তাকে ভালবাসা, দয়া এবং সম্মান দেখাবেন।

  1. এই দায়িত্বগুলি ছাড়াও, স্বামী তার স্ত্রীর বৈবাহিক অধিকারগুলিও পূরণ করবে বলে আশা করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে:
  2. ইসলামে যা গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত তার সীমার মধ্যে তার শারীরিক চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষার ব্যবস্থা করা।
  3. তার সাথে সদয় এবং সম্মানের সাথে আচরণ করা এবং তার প্রতি কঠোর বা আপত্তিজনক না হওয়া।
  4. তাকে তার নিজের সম্পত্তি এবং আর্থিক সম্পদ ধরে রাখার অনুমতি দেওয়া।
  5. তাকে অবাধে তার ধর্ম পালন করার অনুমতি দেওয়া।
  6. গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তার সাথে পরামর্শ করা এবং তার মতামতকে মূল্যায়ন করা।
    সর্বদা তার মর্যাদা এবং সম্মান বজায় রাখা।
  7. এটা লক্ষ করা গুরুত্বপূর্ণ যে স্বামী এবং স্ত্রী বিবাহের অংশীদার হিসাবে একসাথে কাজ করবে এবং একে অপরের প্রতি তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করবে বলে আশা করা হয়।
  8. ইসলামে, বিবাহকে পারস্পরিক ভালবাসা, সম্মান এবং বোঝাপড়ার উপর ভিত্তি করে একটি অংশীদারিত্ব হিসাবে দেখা হয় এবং একটি শক্তিশালী এবং সফল সম্পর্ক গড়ে তুলতে উভয় স্বামী-স্ত্রীর ভূমিকা রয়েছে।

স্বামী ও স্ত্রী একে ওপরের পরিপূরক। একজন অন্য জনকে ছাড়া কতে পারে না। মহান আল্লাহ তায়ালা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়াকে ইসলামে ফরজ ঘোষণা করেছেন। যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ভাবে বিয়ে করবে না সে একটি ফরজ কাজ থেকে বিরত থাকলো। 

ফরজ কাজ তরফ করা বা না করা কবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। এর জন্য কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। মহান আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টিগত ভাবেই স্বামী – স্ত্রী েকে ওপরের সহায়ক ও পরিপূরক হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। 

এ প্রসঙ্গে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) হাদিস শরীফে বলেছেন ,নারীরা পুরুষের অর্ধাংশ। (সুনানে আবু দাউদ)

হজরত ওমর (রা) বলেছেন ,স্ত্রী স্বামীর পক্ষে দোজখের বেড়া স্বরূপ। কারণ স্ত্রী থাকলে যিনাকাজে হতে দূরে থাকা যায়। স্ত্রী স্বামীর পাহারাদার। কারণ স্বামী দূরে কোথাও গেলে স্ত্রী তার ধন সম্পদ হেফাজত করে। 

মূলত স্ত্রী হলো সহধর্মিনী ও অর্ধাঙ্গিনী। স্ত্রীদের সাথে খারাপ আচরণ করা যাবে না। তাদেরকে সম্মানের বখে দেখতে হবে ,তাদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা যাবে না ,হেয় চোখে দেখা যাবে না। 

মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন,‘তোমরা তাদের (স্ত্রীদের) সঙ্গে উত্তম আচরণ করো। আর যদি তাকে তোমার অপছন্দও হয়, তবুও তুমি যা অপছন্দ করছ হয়তো আল্লাহ তাতে সীমাহীন কল্যাণ দিয়ে দেবেন।’ (সুরা নিসা,আয়াত নং  : ১৯)

স্ত্রীর সাথে স্বামীর করণীয় বিষয় 

সুখকর দাম্পত্য জীবন, সুশৃঙ্খল পরিবার, পরার্থপরতায় ঋদ্ধ ও সমৃদ্ধ স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন অটুট রাখার স্বার্থে ইসলাম জীবন সঙ্গী-স্বামীর ওপর কতিপয় অধিকার আরোপ করেছে। এর কয়েকটি হলো

১।  মোহরানা পরিশোধ। স্ত্রীর দেনমোহর পরিশোধ করা স্বামীর ওপর ফরজ। এক সাথে মোহরানা পরিশোধ করা সম্ভব করা না হলে ধীরে ধীরে তা পরিশোধ করতে হবে। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, ‘তোমরা প্রফুল্লচিত্তে স্ত্রীদের মোহরানা দিয়ে দাও।(’ সুরা আন নিসা,আয়াত সংখ্যা  : ৪)

২। বাসস্থান ও ভরণ পোষণ। স্ত্রীর জন্য নিরাপদ বাসস্থান ও ভরণ পোষণের ব্যবস্থা করা স্বামীর দায়িত্ব। স্বামীর সাধ্য ও স্ত্রীর চাহিদার ভিত্তিতে ভরণ পোষণের চাহিদা কম বেশি হতে পারে 

মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন , ‘বিত্তশালী স্বীয় বিত্তানুযায়ী ব্যয় করবে। আর যে সীমিত সম্পদের মালিক সে আল্লাহ প্রদত্ত সীমিত সম্পদ হতেই ব্যয় করবে। আল্লাহ যাকে যে পরিমাণ দিয়েছেন, তার চেয়ে বেশি ব্যয় করার আদেশ কাউকে প্রদান করেন না।’ (সুরা তালাক,আয়াত নং  : ৭)

৩।  স্ত্রীকে সময় দেয়া এবং তাদের সাথে পরামর্শ করা স্বামীর দায়িত্ব। অবসর সময়ে স্ত্রীর সাথে বসে গল্প করা তার মনের কথা জানা স্বামীর দায়িত্ব। আয়েশা (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) যখন (ফজরের সুন্নত) সালাত আদায় করতেন, তখন আমি জাগ্রত হলে তিনি আমার সঙ্গে কথা বলতেন। অন্যথায় তিনি শয্যাগ্রহণ করতেন এবং ফজরের সালাতের জন্য মুয়াজ্জিন না ডাকা পর্যন্ত শুয়ে থাকতেন। (বুখারি, হাদিস : ১১৬১)

স্বামী ও স্ত্রী দিজনের মাধ্যমে একটি সুখী পরিবার গড়ে ওঠে। পরিবারের কোনো কাজে তার সাথে পরামর্শ করা এবং সঠিক হলে তা মূল্যায়ন করা উচিত। 

মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন ,আর জরুরি বিষয় গুলো তাদের সাথে পরামর্শ কর। (সূরা আলে ইমরানা ,আয়াত সংখ্যা : ১৫৯)

৪।  স্ত্রী অসুস্থ হলে তাকে সেবা করা তার কাজে সাহায্য করা স্বামীর দায়িত্ব।  হজরত  ওমর (রা.) বলেন, ওসমান (রা.) বদর যুদ্ধে অনুপস্থিত ছিলেন। কেননা তাঁর স্ত্রী আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর কন্যা অসুস্থ ছিলেন। তখন নবী করিম (সা.) তাঁকে বলেন, বদর যুদ্ধে যোগদানকারীর সমপরিমাণ সওয়াব ও (গনিমতের) অংশ তুমি পাবে। (বুখারি, হাদিস : ৩১৩০)

৫।  স্ত্রীর প্রতি খারাপ ব্যবহার করা যাবে না। স্বামীর উচিত স্ত্রীর ভুল গুলো ক্ষমা করা এবং ধৈর্য ধারণ করা।

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন যে, ‘তোমরা নারীদের ব্যাপারে কল্যাণকামী হও। কারণ, তারা পাঁজরের হাড় দ্বারা সৃষ্ট। পাঁজরের ওপরের হাড়টি সবচেয়ে বেশি বাঁকা। (যে হাড় দিয়ে নারীদের সৃষ্টি করা হয়েছে) তুমি একে সোজা করতে চাইলে, ভেঙে ফেলবে। আবার এ অবস্থায় রেখে দিলে, বাঁকা হয়েই থাকবে। তাই তোমরা তাদের কল্যাণকামী হও এবং তাদের ব্যাপারে সৎ উপদেশ গ্রহণ কর।’ সহিহ্ (বোখারি)

৬। স্ত্রীর অধিকারের প্রতি সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার পরও যদি স্ত্রী বেপরোয়া হয় তবে প্রয়োজনে স্ত্রীকে প্রথমে বারবার সতর্ক করা। এরপর ইসলামের নির্দেশনা অনুসারে হালকা শাসন করা। তবে ইসলামি শরীয়ত যতটুকু অনুমতি দিয়েছে তার চেয়ে বেশি শাসন না করা। সর্বোপরি প্রয়োজনে পারস্পরিক সমযোতার মাধ্যমে আলাদা হয়ে যাওয়া।

৭।  স্ত্রীকে নিয়ে মাঝে মাঝে স্ত্রীর নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত করতে যাওয়া। স্বামী যদি একান্তই সময় না পায় তবে অন্তত স্ত্রীকে তার আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের সুযোগ করে দেওয়া।তাদের সাথে খারাপ আচরণ না করা। 

৮।  স্ত্রীকে দ্বীনি মাসয়ালা মাসায়েল সম্পর্কে শিক্ষা দিতে হবে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার তাগিদ দিতে হবে। স্বামী যদি তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করে তাহলে স্ত্রীকে ডেকে তুলে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতে হবে। এতে অনেক সওয়াব পাওয়া যাবে। 

৯। স্ত্রীকে পর্দার মধ্যে রাখতে হবে। কোনো পর পুরুষের সামনে যেতে দিবে না। স্ত্রীকে যদি পর্দার মধ্যে না রাখতে পারে তাহলে ওই স্বামীকে দাইয়ূস হিসেবে অভিহিত করা হবে। দাইয়ুস ব্যক্তি মৃত্যুর পরে  জাহান্নামের কঠিন সাজা ভোগ করবে। 

১০।  একাধিক স্ত্রী থাকলে সবসময় সবার মাঝে সমতা রক্ষার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।

Sharing Is Caring:

Leave a Comment

Ads Blocker Image Powered by Code Help Pro

Ads Blocker Detected!!!

We have detected that you are using extensions to block ads. Please support us by disabling these ads blocker.

Powered By
100% Free SEO Tools - Tool Kits PRO

সকল প্রকার ইসলামিক
বই । Video | Mp3