কুরআনুল কারীমে ১১৪ টি সূরা আছে। সূরা ফাতিহা পবিত্র কুরআনের প্রথম সূরা। সূরা ফাতিহাকে ফাতিহাতুল কুরআন বা কুরআনের শুরু বলে অভিহিত করা হয়।
সূরা ফাতিহাকে সূরাতুল হামদ ,উম্মুল কুরআন ,সূরাতুল রুকইয়াহ ,আসসাবাউল মাছানি ,ওয়াকিয়াহ ,সূরাতুল কাফিয়্যাহ ,সূরাতুল কানয ,সুরাতুশ শিফা,কুরআনুল আজিম ও সূরাতুল আসাস নামেও অভিহিত করা হয়।
এ সূরার ৩০ টি নাম পবিত্র কুরআন ও বিভিন্ন হাদীছে ছহিহ ও মুরসাল সূত্রে বর্ণিত হয়েছে।
সূরা ফাতিহার বিশেষত্ব
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ ) নবুয়ত প্রাপ্তির শুরুর দিকেই সূরা ফাতিহা এক সঙ্গে নাজিল হয়। নামাজের জন্য এ সূরাটি পড়া বাধ্যতামূলক। সূরা ফাতিহা ছাড়া নামাজ হয় না।
প্রত্যেক নামাজে সূরা ফাতিহা বার বার পাঠ করা হয় বলে এ সূরাকে সূরাতুস সালাত (নামাজের সূরা ) ও বলা হয়। এ সূরার ৭টি আয়াতের প্রথম ৪টি আয়াতে আল্লাহর প্রশংসা এবং শেষ তিনটি আয়াতে বান্দার প্রার্থনার কথা বর্ণনা করা হয়েছে।
এই সূরা এবং সূরা বাকারার শেষ তিনটি আয়াত হল আল্লাহর পক্ষ হতে প্রেরিত বিশেষ নূর যা ইতিপূর্বে কোনো নবী কে দেয়া হয়নি।
সূরা ফাতিহার ফযীলত ও আমল
সূরা ফাতিহার ফজিলতের কথা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। সূরা ফাতিহাকে রাসূল (সাঃ ) সমগ্র রোগের মহৌষধ বলেছেন।
১। হযরত জাফর সাদেক (রাঃ ) বর্ণনা করেন ,সূরা ফাতিহা ৪০ বার পাঠ করে পানির ওপর দম করে কোনো জ্বরে আক্রান্ত লোকের মুখ মন্ডলে ছিঁটিয়ে দিলে ,এর বরকতে জ্বর দূরীভূত হয়ে যাবে,ওই ব্যক্তি নিঃসন্তান থাকলে সন্তান হবে ,বেকার থাকলে চাকরি হবে ,ঋণ থাকলে ঋণ পরিশোধের উপায় বের হবে ,সম্পদহীন থাকলে সম্পদ হবে ও বিপদাপন্ন হলে উদ্ধার পেয়ে যাবে।
২। ফজর নামাজের সুন্নত ও ফরজ নামাজের মধ্যবর্তী সময়ে ৪১ বার এ সূরা পাঠ করে চোখে ফুঁ দিলে চোখের ব্যথা দূর হয়।
৩। শেষ রাতে এ সূরা ৪১ বার তেলাওয়াত করলে আল্লাহ তায়ালা রিজিক বাড়িয়ে দেন।
৪। এ সূরা ৪০দিন নিয়মিত তেলাওয়াত করে পানিতে ফুঁ দিয়ে অসুস্থ ব্যক্তিকে পান করালে আল্লাহ তায়ালা অসুস্থতা দূর করে দেবেন। কেউ কেউ এ সূরাটি গোলাপ। জাফরান এবং কস্তুরী দিয়ে চিনির রেকাবিতে লিখে তা পানি দ্বারা ধুয়ে ৪০ দিন পান করালে ও রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন।
৫। যে ব্যক্তি ফজর নামাজ পর ৩০ বার ,যোহর নামাজ পর ১৫ বার ,আসর নামাজ পর ২০ বার ,মাগরিব নামাজ পর ২৫ বার ও এশা নামাজ পর ১০ বার সূরা ফাতিহা বিসমিল্লাহ সহ পাঠ করবে ,আল্লাহ তায়ালা তার রুজি -রোজগারে বরকত দিবেন ,তার সম্মান বৃদ্ধি করে দিবেন ,তার সকল আশা পুরুন করে দিবেন এবং তার দোয়া কবুল করবেন।
৬। কোনো ফলের গাছে ফল না ধরলে সূরা ফাতিহা লিখে পানি দ্বারা ধৌত করে সে পানি গাছে ছিটিয়ে দিলে ইনশা আল্লাহ সে গাছে শীঘ্রই ফল ধরবে।
৭। দাঁতের ব্যথা ,পেটের ব্যথা ,মাথা ব্যথার জন্য ৭ বার এ সূরা পাঠ করে দম করলেই আল্লাহ তায়ালা এসব ব্যথা দূর করে দেন।
কুরআন শরীফের একটি হরফ পাঠ করলে ১০টি নেকি পাওয়া যায় সূরা ফাতিহায় ১২৫ টি হরফ আছে। তাহলে এ সূরা পাঠ করলে ১২৫০টি নাকি পাওয়া যাবে।
সূরা ফাতিহার
ٱلْحَمْدُ لِلَّٰهِ رَبِّ ٱلْعَالَمِينَ
ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ
مَالِكِ يَوْمِ ٱلدِّينِ
إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ
ٱهْدِنَا ٱلصِّرَاطَ ٱلْمُسْتَقِيمَ
صِرَاطَ ٱلَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ
غَيۡرِ ٱلْمَغْضُوبِ عَلَيۡهِمۡ وَلَا اَ۬لضَّآلِّينَ ص
সূরা ফাতিহার বাংলা অনুবাদ
আলহামদুলিল্লা-হি রাব্বিল আ-লামীন।
আর রাহমা-নির রাহীম।
মা-লিকি ইয়াওমিদ্দীন।
ইয়্যা-কা না’বুদু ওয়া ইয়্যা-কানাছতা’ঈন।
ইহদিনাসসিরা-তাল মুছতাকীম।
সিরা-তাল্লাযীনা আন’আম তা’আলাইহিম।
গাইরিল মাগদূ বি’আলাইহীম ওয়ালাদ্দাল্লীন। (আমিন )
সূরা ফাতিহার অর্থ
সমস্ত প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যে।
অনন্ত দয়াময়, অতীব দয়ালু।
প্রতিফল দিবসের মালিক।
আমরা শুধু আপনারই দাসত্ব করি এবং শুধু আপনারই নিকট সাহায্য কামনা করি।
আমাদের সরল পথনির্দেশ দান করুন।
তাদের পথে, যাদের আপনি অনুগ্রহ করেছেন।
এবং তাদের পথে নয় যারা আপনার ক্রোধের শিকার ও পথভ্রষ্ট । ( কবুল করুন )