সূরা ওয়াকিয়াহ এর বিষয়বস্তু ও ফজিলত

সূরা আল-ওয়াকিয়াহ শব্দের অর্থ নিশ্চিত ঘটনা।পবিত্র কুরআন শরীফে ১১৪ টি সূরা রয়েছে। তার মধ্যে  সূরা ওয়াকিয়াহ পবিত্র কুরআনের ৫৬ তম সূরা। সূরা ওয়াকিয়াহ এর আয়াত সংখ্যা ৯৬ এবং রুকু ৩ টি। এই সূরাটি পবিত্র মক্কা নগরীতে অবতীর্ন হয়েছে। 

সূরা আল ওয়াকিয়াহ এর বিষয়বস্তু 

এ সূরার বিষয়বস্তু হচ্ছে, আখেরাত, তাওহীদ ও কুরআন সম্পর্কে মক্কার কাফেরদের সন্দেহ-সংশয়ের প্রতিবাদ। এক দিন যে কিয়ামত হবে, পৃথিবী ও নভোমণ্ডলের সমস্ত ব্যবস্থা ধ্বংস ও লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবে। তারপর সমস্ত মৃত মানুষকে পুনরায় জীবিত করে তাদের হিসেব নিকেশ নেয়া হবে ।

 এবং সৎকর্মশীল মানুষদেরকে জান্নাতের বাগানসমূহে রাখা হবে। আর গোনাহগারদেরকে দোযখে নিক্ষেপ করা হবে-এসব কথাকে তারা সর্বাধিক অবিশ্বাস্য বলে মনে করতো। তারা বলতোঃ এসব কল্পনা মাত্র। এসব বাস্তবে সংঘটিত হওয়া অসম্ভব। 

এর জবাবে আল্লাহ বলেছেনঃ এ ঘটনা প্রকৃতই যখন সংঘটিত হবে তখন এসব মিথ্যা কথকদের কেউ-ই বলবে না যে, তা সংঘটিত হয়নি তার আগমন রুখে দেয়ার কিংবা তার বাস্তাবতাকে অবাস্তব বানিয়ে দেয়ার সাধ্যও কারো হবে না। 

সে সময় সমস্ত মানুষ অনিবার্যরূপে তিনটি শ্রেনীতে বিভক্ত হয়ে যাবে। 

১।  সাবেকীন বা অগ্রগামীদের শ্রেনী। 

২।  সালেহীন বা সাধারণ নেককারদের শ্রেণী।

 ৩।  সেই সব মানুষ যারা আখেরাতকে অস্বীকার করতো এবং আমৃত্য কুফরী, শিরক ও কবীরা গোনাহর ওপর অবিচল ছিল। 

এ তিনটি শ্রেণীর সাথে যে আচরণ করা হবে ৭ থেকে ৫৬ আয়াত পর্যন্ত তা সবিস্তরে বর্ণনা করা হয়েছে।এরপর ৫৭ থেকে ৭৪ আয়াত পর্যন্ত তাওহীদ ও আখেরাতের ইসলামের এ দুটি মৌলিক আকীদার সত্যতা সম্পর্কে পরপর যুক্তি-প্রমাণ পেশ করা হয়েছে।এ দুটি বিষয়কেই কাফেররা অস্বীকার করে আসছিল । 

তারপর ৭৫ থেকে ৮২ আয়াত পর্যন্ত কুরআন সম্পর্কে তাদের নানা রকম সন্দেহ-সংশয় নিরসন করা হয়েছে। তাদের মধ্যে এ উপলব্ধি সৃষ্টিও চেষ্টা করা হয়েছে যে, হতভাগারা তোমাদের কাছে যে এক বিরাট নিয়ামত এসেছে। অথচ এ নিয়ামতের সাথে তোমাদের আচরণ হলো, তোমরা তা প্রত্যাখ্যান করছো এবং তা থেকে উপকৃত হওয়ার পরিবর্তে তার প্রতি কোন ভ্রুক্ষেপই করছো না। 

সর্বশেষ মানুষকে বলা হয়েছে, তুমি যতই গর্ব ও অংহাকর করো না কেন, এবং নিজের স্বেচ্ছাচারিতার অহমিকায় বাস্তব সম্পর্কে যতই অন্ধ হয়ে থাক না কেন, মৃত্যুর মুহূর্তটি তোমার চোখ খুলে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। 

 

সূরা ওয়াকিয়াহ ফজিলত 

হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন ,সূরা ওয়াকিয়াহ হলো প্রাচুর্যের সূরা। যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সূরা ওয়াকিয়াহ পাঠ করবে সে কখনো ক্ষুদার্থ হবে না এবং অভাব গ্রস্ত হবে না। প্রতি জুমার রাতে এ সূরা একবার করে তেলাওয়াত করলে দারিদ্রতা দূর হয়ে যাবে। 

এ সূরা পাঠ করলে কখনো দারিদ্রতা গ্রাস করতে পারবে না। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা)  হতে বর্ণিত ,তিনি বলেন ,হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন ,যে ব্যক্তি প্রতিদিন রাতে সূরা ওয়াকিয়াহ পাঠ করবে তাকে দারিদ্রতা স্পর্শ করতে পারবে না। হজরত ইবনে মাসউদ (রা) তার মেয়েদের প্রতি রাতে  পাঠ করার আদেশ দিতেন। (বায়হাকী : শুআবুল ঈমান – ২৪৯৮)

হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) মৃত্যুর আগে বলেন, ‘তাদের (ইবনে মাসউদের সন্তানদের) জন্য আমি সূরা ওয়াকিয়াহ রেখে গেলাম। ’

ওয়াকিয়াহ এর একটি আয়াতে মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন নক্ষত্রসমূহের শপথ করেছেন। নক্ষত্রসমূহ রাতে উদয় হয়। তাই এ সূরা রাতে পাঠ করলে অনেক বেশি সওয়াব হয়। 

হজরত ইবনে আব্বাস (রা) হতে বর্ণিত ,তিনি বলেন এ সূরা কোনো গর্ভবতী নারীর শরীরে বেঁধে দিলে সহজে সন্তান প্রসব হয়। 

 

কোরআন ও হাদিসের আলোকে রিজিক বৃদ্ধির আমল ও দোয়া

 

Sharing Is Caring:

Leave a Comment