সূরা ইখলাস কোন সময় এবং কত বার পাঠ করলে সাথে সাথে ফল পাওয়া যায় এবং মনের সকল আশা আল্লাহ তায়ালা পুরুন করে দেন এ বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
এ সূরা টি অবতীর্ণ সম্পর্কে অনেক বর্ণনা আছে। অনেক গুলো ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ সূরা টি নাজিল হয়েছে। লোকেরা যখন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ ) এর নিকট আল্লাহ তায়ালার বংশ পরিচয় ,আল্লাহ তায়ালা নূর ,মাটি কিংবা আগুন কিসের তৈরী তা জানতে চেয়েছেন তখনই আল্লাহর তরফ হতে এ সূরা পাঠ করে শোনানোর নির্দেশ হয়েছে। এই সূরাটিতে মহান রব্বুল আলামীনের পরিচয় সম্পর্কে বলা হয়েছে।
সূরা ইখলাস আরবী উচ্চারণ।
قُلْ هُوَ ٱللَّهُ أَحَدٌ
ٱللَّهُ ٱلصَّمَدُ
لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ
وَلَمْ يَكُن لَّهُۥ كُفُوًا أَحَدٌۢ
সূরা ইখলাস বাংলা উচ্চারণ।
সূরা ইখলাসের বাংলা উচ্চারণ দেওয়া হয়েছে।
কুল হুওয়াল্লা-হু আহাদ।
আল্লা-হুসসামাদ।
লাম ইয়ালিদ ওয়ালাম ইঊলাদ।
ওয়া লাম ইয়াকুল্লাহূকুফুওয়ান আহাদ।
সূরা ইখলাস এর বাংলা অর্থ।
সূরা ইখলাস এর বাংলা অর্থ দেওয়া হয়েছে।
বলুন, তিনি আল্লাহ, এক,
আল্লাহ অমুখাপেক্ষী,
তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি
এবং তার সমতুল্য কেউ নেই।
সূরা ইখলাস এর ফযীলত
সূরা ইখলাসের ফযীলত বর্ণনা করতে গিয়ে বলা হয়েছে ,এ সূরাটি পবিত্র কুরআনের তৃতীয়াংশ।এ সূরা ৩
বার পাঠ করলে সমস্ত কুরআন শরীফ খতম করার সওয়াব পাওয়া যায়।
এক সাহাবী এই সূরাটি প্রতি দুই রাকাত নামাজের মধ্যে এক বার করে পড়তেন ,সাহাবারা এটা জানতে পেরে রাসূল (সাঃ ) এর কাছে অভিযোগ দায়ের করলেন এবং আল্লাহর রাসূল ওই সাহাবীকে জিজ্ঞাসা করলেন ,তুমি কি সত্যি প্রতি রাকাতে সূরা পড়তে থাকো ?
উত্তরে সে সাহাবী বললেন ,জি হ্যাঁ ইয়া রাসূলুল্লাহ ,আমি প্রতি দুই রাকাত নামাজের মধ্যে একবার করে সূরা ইখলাস পাঠ করি।
তখন আল্লাহর রাসূল (সাঃ ) জিজ্ঞাসা করেন ,সেটা কেন ?তখন সাহাবী উত্তর দিয়ে বললেন ,ইয়া রাসূলুল্লাহ আমার পড়তে অনেক ভালো লাগে। কারণ এই সূরায় আমার মহান রাব্বুল আলামিনের পরিচয় রয়েছে। আমি যত পড়ি তত শান্তি পাই। আল্লাহর রাসূল সাথে সাথে বললেন ,এই ব্যক্তি মৃত্যুর পর সরাসরি জান্নাতে যাবে।
এ সূরা বিসমিল্লাহ সহ ১হাজার বার লিখে সঙ্গে রাখলে ,যে কোনো বিপদ হতে উদ্ধার লাভ করবে। কঠিন বিপদের সময় এ সূরা পাঠ করতে থাকলে আল্লাহর গজব হতে নিরাপদে থাকবে।
হাদিস দ্বারা এই কথাটি প্রমাণিত হয়েছে যে সূরা ইখলাস কত বেশি পরিমানে ফযীলতপূর্ণ সূরা এবং এর গুরুত্ত্ব কত বেশি। এই সূরাটির মধ্যে আল্লাহ তায়ালার অস্তিত্ব এবং সততার সবচেয়ে সুন্দর ব্যাখ্যা রয়েছে।
হাদিস শরীফে এসেছে ,জনৈক ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল (সাঃ ) এর কাছে গিয়ে বললেন আমি সূরা ইখলাসকে ভালোবাসি। তখন রাসূল (সাঃ ) বললেন ,এই সূরাকে ভালোবাসার কারণে তুমি জান্নাতে যেতে পারবে। মুসনাদে আহমদ শরীফে এই হাদিস টি রয়েছে।
আবু দাউদ ,তিরমিযী এবং নাসায়ী শরীফে রয়েছে ,আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ ) বলেছেন যে ব্যক্তি সকাল ও সন্ধ্যায় সূরা ইখলাস ,সূরা নাস এবং সূরা ফালাক পাঠ করবে আল্লাহ তায়ালা তাকে সকল বিপদ আপদ ও বালা মুছীবত হতে রক্ষা করবে।
রাসূল (সাঃ ) ঘুমানোর আগে সূরা ইখলাস ,সূরা নাস এবং সূরা ফালাক পড়ে দুই হাত মুবারকে ফু দিয়ে পুরো শরীর এবং মাথা মাসেহ করতেন। এই হাদীসটি বুখারী ,আবু দাউদ এবং তিরমিযী শরীফে আছে।
সূরা ইখলাসের আমল
শুক্রবার আসর নামাজের পর থেকে মাগরিব নামাজের আগ পর্যন্ত এ সময় সূরা ইখলাস ৩ বার ,৫ বার অথবা ১০ বার পাঠ করবেন। পাঠ করার সময় আপনার সে চাওয়া পাওয়া গুলো আপনার স্মরণে রাখবেন।
মানে এই সূরাটির আমল আপনি কেন করছেন ,কোন আশা নিয়ে কোন উদ্দেশ্য নিয়ে ,সে বিষয়টি আপনি মাথায় রাখবেন এবং দিল থেকে সূরাটি তেলোয়াত করবেন অরে মনে মনে রব্বুল আলামিনের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করবেন। হযরত মুহাম্মদ (সা)বলেছেন ,যে ব্যক্তি সূরা ইখলাস ১০বার পাঠ করবে আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জান্নাতে একটি মহল তৈরী করেছেন
হজরত আলী (রাঃ )বলেছেন এই সূরা টি সূর্য উদয় হওয়ার আগে ৪ বার পাঠ করে আল্লাহর কাছে দোয়া করবে ইনশা আল্লাহ তার যতই প্রয়োজন হবে সব প্রয়োজন পুরুন করবে। প্রতিদিন সূরা ইখলাস ওযু সহকারে ২০০ বার করে পাঠ করলে ৯ টি উপকারিতা আছে।
১। আল্লাহ তায়ালা ৩০০ গজবের দরজা বন্ধ করে দেন।
২আল্লাহ তায়ালা ৩০০ রহমতের দরজা খুলে দেন।
৩। তার জন্য ৩০০ রিজিকের দরজা খুলে দিবেন।
৪। আল্লাহ এই সূরা পাঠকারীকে অফুরন্ত জ্ঞান দান করবেন।
৫। ৬৬ বার কুরআন পড়ার সওয়াব হাসিল হবে।
৬। আল্লাহ তায়ালা ৫০বছরের গুনাহ মাফ করবেন।
৭। জান্নাতে মহল দান করবেন। প্রতিটি মহলের ৭০ হাজার দরজা হবে।
৮। ২০০০ রাকাত নফল পড়ার সওয়াব হবে।
৯। যখন মৃত্যু বরণ করবে তার জানাযায় ফেরেশতা নাজিল হবে।