ইসলামিক ১২ মাসের মধ্যে একটি মাস হলো রমজান মাস । এই রমজান মাসের ফজিলত অনেক বেশি। রমজান মাসে দীর্ঘ ১ মাস সিয়াম সাধনার পরে মুসলিমদের সব থেকে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ উল ফিতর অনুষ্ঠিত হয়। রমজানের শেষে শাওয়াল মাসে প্রথম দিন ঈদ উল ফিতর উদযাপন করা হয়।
ঈদের নামাজ পড়ার আগেই সদকাতুল ফিতরা আদায় করতে হবে। রমজান মাসে রোজা রাখা যেমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত তেমনি রমজানের রোজা শেষ হওয়ার আগে সদকাতুল ফিতরা দেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। মহান আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশেই মুমিন মুসলমান ফিতরা আদায় করে থাকেন।
ফিতরা আরবি শব্দ।যা যাকাতুল ফিতর বা সাদকাতুল ফিতর নাম পরিচিত। সদগা শব্দের অর্থ দান করা আর ফিতর শব্দের অর্থ হলো রোজা সমাপন করা। সদকাতুল ফিতর শব্দের অর্থ হলো রোজা শেষে ঈদুল ফিতরের দিনে সকালবেলায় শোকরিয়া ও আনন্দস্বরূপ যে নির্ধারিত সদকা আদায় করা হয়।
সদকাতুল ফিতরের মাধ্যমে রমজান মাসের রোজার ত্রুটি বিচ্যুতি গুলো মার্জনা করা হয়। ধনি গরিব সকলে যেন মিলেমিশে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে সেজন্য ইসলাম সাদকাতুল ফিতর দেওয়ার ব্যবস্থা করে রেখেছেন।
সাদকাতুল ফিতর কি
ফিতরা আরবি শব্দ।যা যাকাতুল ফিতর বা সাদকাতুল ফিতর নাম পরিচিত। সদগা শব্দের অর্থ দান করা আর ফিতর শব্দের অর্থ হলো রোজা সমাপন করা। সদকাতুল ফিতর শব্দের অর্থ হলো রোজা শেষে ঈদুল ফিতরের দিনে সকালবেলায় শোকরিয়া ও আনন্দস্বরূপ যে নির্ধারিত সদকা আদায় করা হয়।
সাদকাতুল ফিতরা হলো ঐ সব খাদ্যবস্তু দান করা যা দ্বারা সিয়াম পালনকারী তাদের সাওম ভঙ্গ করতেন। সোজা কথায় ফিতরা হলো এমন খাদ্যসামগ্রী দান করা যা দ্বারা গরিব দুঃখীরা ইদের দিনে খেয়ে খুশি হয়। আর এই দান প্রতিটি সাওম পালনকারীকেই প্রদান করতে হবে।
সাদকাতুল ফিতরা কেন দিতে হবে
সম্পদের পবিত্রতার জন্য যেমন প্রতিবছর জাকাত দিতে হয় তেমনি রমজান মাসের সিয়াম সাধনার পবিত্রতার জন্য সাদকাতুল ফিতর দিতে হবে। সদকাতুল ফিতরের মাধ্যমে রমজান মাসের রোজার ত্রুটি বিচ্যুতি গুলো মার্জনা করা হয়
সাদকায়ে ফিতরা আদায়ের সময়
ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। সাদকাতুল ফিতর আদায়ের ফজিলতপূর্ণ সময় হলো ইদের দিন সূর্যোদয়ের পর থেকে ইদের সালাতের পূর্ব পর্যন্ত।অর্থাৎ ঈদের দিন ফিতরা আদায় করা সর্বোত্তম। ঈদের দু একদিন পূর্বেও ফিতরা আদায় করা জায়েয।
যদি কেও ঈদের নামাজের আগে ফাত্রা আদায় করতে না পারে তাহলে ঈদের পরেও আদায় করতে পারবে। কিন্তু আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা) সব সময় ঈদের নামাজের আগে ফিতরা আদায় করতেন। কারণ গরিব ও অসহায় মানুষ যেন এই টাকা দিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে।
ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে, “যে ব্যক্তি নামাজের আগে তা আদায় করে দেবে তবে তার সদকা গ্রহণযোগ্য হবে, আর যে নামাজের পর আদায় করবে তার সদকা সাধারণ দান বলে গণ্য হবে (আবু দাউদ)”।
যারা ফিতরা দিবেন
ফিতরা সকল মুসলিম ব্যক্তির ঈদের দিন ও রাতে নিজের এবং পরিবারের আহারের প্রয়োজনের থেকে বেশি খাদ্য থাকে তাদেরকে ফিতরা আদায় করতে হবে। সামর্থ্যবান নারী-পুরুষ, শিশু, কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ সব স্বাধীন, পরাধীন এমনকি হিজড়া সম্প্রদারে ওপরই ফিতরা আদায় করা আবশ্যক।
বালেগ সন্তান যদি পাগল হয় তবে পিতার পক্ষ থেকে তা আদায় করা ওয়াজিব ৷ঈদের নামাজের আগে মুহূর্তেও যদি কোনো বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হয় তাহলে তার জন্য ফিতরা আদায় করতে হবে।
কাকে ফিতরা দিতে হবে
জাকাত যাদেরকে দেয়া হয় তাদেরকেই ফিতরা দিতে হবে। জাকাত সাধারণত ৮ শ্রেণীর লোককে দেওয়া হয়। মিসকিনদের , গরিব, দুঃস্থ, অসহায়, অভাবগ্রস্থকেই ,ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিদের ফিতরা প্রদান করা যাবে।
তবে জাকাত ও ফিতরা একই শ্রেণীর লোককে দেওয়া হলেও জাকাত ও ফিতরার মধ্যে অনেক প্রার্থক্য রয়েছে। ফিতরা এমন ব্যক্তির উপরও ওয়াজিব যার বাড়িতে সামান্য কিছু খাবার আছে মাত্র। কিন্তু জাকাত কেবল তার উপর ফরজ যার নিসাব পরিমাণ অর্থ- সম্পদ রয়েছে। জাকাত বাৎসরিক জমাকৃত ধন-সম্পদের কারণে দিতে হয়।আর ফিতরা সাওমের ত্রুটি বিচ্যুতির কারণে দিতে হয়।
ফিতরা আদায়ের নিয়ম
সাদকাতুল ফিতরা হলো ঐ সব খাদ্যবস্তু দান করা যা দ্বারা সিয়াম পালনকারী তাদের সাওম ভঙ্গ করতেন।
হাদিস অনুযায়ী সাধারণত ৫ টি জিনিস দ্বারা ফিতরা আদায় করা যায়। সেগুলো হলো গম ,খেজুর ,পনির ,কিসমিস ,জব। এই ৫ টি জিনিস দ্বারাই মুহাম্মদ (সা) এর সময়ে ফাত্রা আদায় করা হত।
এই ৫ টি জিনিস এক পরিমাপে আদায় করা যাবে না। গম অর্ধ সা আর বাকি ৪ টি এক সা পরিমাপে আদায় করতে হবে। এই জিনিস গুলোর যেকোনো একটি দিয়ে ফিতরা আদায় করা যাবে।
আমরা বর্তমান সময়ে খাদ্যের পরিবর্তে টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় করে থাকি। সেক্ষেত্রে খাদ্যের পরিমানের হিসাব করে যে টাকা হয় সে টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় করা যাবে। তবে খাদ্য দ্বারা ফিতরা আদায় করা শ্রেষ্ঠ।
ফিতরা আদায়ের ফজিলত
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাদাকাতুল ফিতরকে অপরিহার্য করেছেন, অনর্থক অশালীন কথা ও কাজে রোজার যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণের জন্য এবং নিঃস্ব লোকের আহার যোগানোর জন্য।’ (আবু দাউদ)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একজন ঘোষকের মাধ্যমে পবিত্র নগরী মক্কার পথে পথে এ ঘোষণা দেওয়ালেন যে- জেনে রেখো! প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, গোলাম-স্বাধীন, ছোট-বড় সকলের ওপর সাদাক্বায়ে ফিতর অপরিহার্য। (তাহলো)- দুই মুদ (আধা সা) গম কিংবা এক সা অন্য খাদ্যবস্তু।’ (তিরমিজি)
হজরত জারির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, রামজানের রোজা সাদকাতুল ফিতর আদায় করার আগ পর্যন্ত আসমান-জমিনের মাঝে ঝুলন্ত থাকে।’ (তারগিব ওয়াত তারহিব)