শবে বরাত বা লাইলাতুল বরাত হলো সমস্ত মুসলিম জাতির একটি অতি পবিত্র দিন। মুসলমানগণ এই রাতকে অনেক ফজিলতপূর্ণ মনে করে। আরবিতে শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে শবে বরাত বা লাইলাতুল বরাতে রাত বলা হয়।
এই রাতে সমস্ত মুসলিম জাতি রাত জেগে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে নফল ইবাদাত ও কুরআন তেলাওয়াত ,জিকির করে থাকে। হাদিস অনুসারে শবে বরাতের রাত হলো দোয়া কবুল ,ক্ষমা প্রার্থনা ও আল্লাহর কাছে চাওয়ার রাত।
হজরত আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন, যখন মধ্য শাবানের রাত আসে তখন তোমরা এ রাতে দাঁড়িয়ে সালাত পড় এবং এর দিনে রোজা রাখ।
কেননা এ দিন সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর আল্লাহ পৃথিবীর নিকটতম আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, কে আছো আমার নিকট ক্ষমাপ্রার্থী, আমি তাকে ক্ষমা করবো। কে আছো রিযিকপ্রার্থী আমি তাকে রিযিক দান করবো। কে আছো রোগমুক্তি প্রার্থনাকারী, আমি তাকে নিরাময় দান করবো। কে আছ এই প্রার্থনাকারী। ফজরের সময় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তিনি এভাবে আহবান করেন।(ইবনে মাজাহ: ১৩৮৪ ,বায়হাকী : ৩৮২৩)
হজরত ওমর (রা) হতে বর্ণিত ,তিনি বলেন ,৫টি বিশেষ রাত আছে ,যে রাতে বান্দার কোনো দোয়া ফেরত দেয়া হয় না। তাই এই রাত গুলোকে দোয়া কবুলের রাত বলা হয়।
দোয়া কবুলের রাত গুলো হলো:
১। জুমার রাতের দোয়া।
২। রজব মাসের প্রথম রাতের দোয়া
৩। শবে বরাত বা লাইলাতুল বরাত রাতের দোয়া
৪। ঈদুল ফিতর অর্থাৎ রোজার ঈদের রাতের দোয়া।
৫। ঈদুল আজহা অর্থাৎ কুরবানী ঈদের রাতের দোয়া।
আমরা সবাই এই রাতে ইবাদাত বন্দেগী করবো ,দোয়া প্রার্থনা করব ,মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবো।
শবে বরাতের নামাজ কত রাকাত
শবে বরাতের নামাজের কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখ করা নেই। শবে বরাতের নামাজ মূলত নফল নামাজ। যার যার সাধ্য অনুযায়ী এই নামাজ আদায় করতে পারবে।
শবে বরাত নামাজের নিয়ত
নিয়ত মানে ইচ্ছা পোষণ করা। আমরা অনেকেই শবে বরাত নামাজের নিয়ত আরবিতে জানি আবার অনেকের অজানা। অনেকে আরবিতে নিয়ত করতে পারে না। তারা বাংলায় ও নিয়ত করতে পারবে। সবার সুবিধার্তে আরবি ও বাংলা নিয়ত নিম্নে তুলে ধরলাম।
শবে বরাতের নামাজের নিয়ত আরবিতে উচ্চারণঃ
নাওয়াইতুআন্ উছল্লিয়া লিল্লা-হি তাআ-লা- রাকআতাই ছালা-তি লাইলাতিল বারা-তিন্ -নাফলি, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা-জিহাতিল্ কাবাতিশ্ শারীফাতি আল্লা-হু আকবার।
শবে বরাত নামাজের নিয়ত বাংলা উচ্চারণ :আমি কিবলামূখী হয়ে শবে বরাতের দুই রাকাত নফল নামাজ/ সালাত আদায়ের নিয়ত করলাম, আল্লাহু আকবর।
শবে বরাত নামাজের নিয়ম
শবে বরাতের নামাজের কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। অন্য সব নফল নামাজের মতো করে এ নামাজ আদায় করতে হবে।
ইশার নামাজ আদায় করে বিতর নামাজের পূর্বে শবে বরাতের নামাজ আদায় করতে হয়। ইশার নামাজের পর থেকে সুবহে কাযেব পর্যন্ত এই নামাজের সময় থাকে। অনেকেই সূরা ফাতিহা পাঠ করার পরে সূরা ইখলাস ৩,৫, ৭ পাঠ করে থাকে এগুলো সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং মনগড়া।
সূরা ফাতিহা পাঠ করার পরে যেকোনো সূরা মিলিয়ে পড়া যাবে।দুই বা চার রাকাত নামাজ পড়ার পর কিছু সময় দোয়া-দরুদ, তাসবি-তাহলিল পড়া, জিকির করা, কোরআন তেলাওয়াত করা। এরপর আবার নামাজে দাঁড়ানো। নামাজের পর আবার জিকির-আজকার, কোরআন তেলাওয়াত, তাওবা-ইস্তেগফার করা, দীনি আলোচনা শোনা, কোরআন-হাদিসের ব্যাখ্যা পড়া ইত্যাদি।
শবে বরাতের রাতে পাঠ করার বিভিন্ন দোয়া
শবে বরাত নামাজ আদায় করে মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট এই দোয়া গুলো করতে পারেন। হাদিস শরীফে ও উল্লেখ করা হয়েছে।
শবে বরাত দোয়া বাংলা উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মাগফিরলি জামবি, ওয়া ওয়াসসি’লি ফি দারি, ওয়া বারিক লি রিজকি।
শবে বরাতের দোয়া এর অর্থঃ
হে আল্লাহ! আমার গোনাহ মাফ করে দাও। আমার জন্য আমার বাসস্থান প্রশস্ত করে দাও। এবং আমার রিজিকে বরকত দিয়ে দাও।(নাসাঈ) শবে বরাতের আরো একটি দোয়া হলো
উচ্চারণ :
রাব্বি আওঝি’নি আন আশকুরা নি’মাতাকাল্লাতি আনআমতা আলাইয়্যা ওয়া আলা ওয়ালিদাইয়্যা ওয়া আন আ’মালা সালেহাং তারদাহু ওয়া আদখিলনি বিরাহমাতিকা ফি ইবাদিকাস সালিহিন।’ (সুরা নামল : আয়াত ১৯)
পবিত্র হাদিস শরীফে বলা হয়েছে , শাবান মাসের ১৪ তারিখে সূর্যাস্তের সময় নিম্নের এই দোয়া ৪০বার পাঠ করলে ৪০ বছরের ছগীরা গুনাহ মাফ হয়ে যায়। দোয়াটি হলো:
আরবি উচ্চারণ:
লা – হাওলা ওয়া কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ
অর্থ: আল্লাহ তায়ালার সাহায্য ছাড়া পাপ হতে বাঁচার ও সৎ কাজ করার কারো কোনো উপায় ও শক্তি নাই।
শবে বরাত নামাজের ফজিলত
হজরত আয়েশা (রা) হয়ে বর্ণিত ,তিনি বলেন এ রাতে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) মদিনার কবরস্থান ‘জান্নাতুল বাকি’ তে এসে মৃতদের জন্য দোয়া ও ইস্তেগফার করতেন। তিনি আরো বলেন ,নবীজি (সা) তাকে বলেছেন ,এ রাতে বনি কালবের ভেড়া বকরীর পশমের সংখ্যার পরিমানের চেয়েও বেশি সংখ্যক গুনাহকে আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করে দেন। (তিরমিযী শরীফ ,হাদিস শরীফ: ৭৩৯)