বারটি মাসের মধ্যে সবথেকে ফজিলত পূর্ন মাস হলো রমজান মাস। সিয়াম সাধনার মাস হলো রমজান মাস। মহান আল্লাহ তায়ালা এই রমজান মাসে একটি বিশেষ রাত রেখেছেন ,ওই রাতের ইবাদাত হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম।
এই বিশেষ রাতের নাম হলো লাইলাতুল কদর বা শবে কদর। হাদিস শরীফে বর্ণনা করা হয়েছে ,যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াব হাসিলের উদ্দেশ্যে কদরের রাতে ইবাদাত করে তার অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।
এই রাতে সমস্ত মুসলিম জাতি মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সারা রাত জেগে নফল নামাজ ,কুরআন তেলাওয়াত ও জিকির করে অতীতের গুনাহের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকে।
শবে কদর শব্দটি ফারসি শব্দ। শবে কদরের আরবি শব্দ হলো লাইলাতুল কদর। সব শব্দের অর্থ হলো রাত আবার আরবি শব্দ লাইলাতুল শব্দের অর্থও হলো রাত। আর কদর শব্দের অর্থ হলো মর্যাদা ,সম্মান ভাগ্য ইত্যাদি।
লাইলাতুল কদর নামাজ পড়ার নিয়ম
লাইলাতুল কদরের নামাজ মূলত নফল নামাজ এবং নফল নামাজের নিয়মে আদায় করতে হয় । এই নামাজ দুই রাকাত করে আদায় করতে হয়। লাইলাতুল কদর নামাজে সূরা ফাতিহা পাঠ করার পরে সূরা ইখলাস ,সূরা কদর ,সূরা তাকাছুর ,আয়াতুল কুরছি মিলিয়ে পড়া অধিক সওয়াবের কাজ।
কারো যদি ওপরে উল্লিখিত সূরাগুলো জানা না থাকে তাহলে সূরা ফাতিহার পাঠ করার পরে সূরা ইখলাস ৩ বার এবং সূরা কদর ১ বার পাঠ করতে পারবে।
হাদিস শরীফে বলা হয়েছে ,মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন ,যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরের রাতে নফল নামাজ আদায় করবে এবং তার প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করার পরে সূরা ইখলাস ৩ বার এবং সূরা কদর ১ বার পাঠ করে নামাজ শেষে সিজদায় গিয়ে নিম্নের দোয়াটি কিছু সময় পাঠ করে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে কিছু প্রার্থনা করে তা আল্লাহ তায়ালা পুরুন করে দেয়।
দোয়াটি হলো :
সুব্হানাল্লাহি ওয়ালহাম্দু লিল্লাহি ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।
তাও যদি না পারে তাহলে সূরা ফাতিহা পাঠ করার পরে যেকোনো সূরা পাঠ করতে পারে। এই ভাবে কমপক্ষে ১২ রাকাত নামাজ আদায় করা উত্তম। এর বেশি আদায় করা যায়। যত বেশি আদায় করা যাবে তত বেশি সওয়াব পাওয়া যাবে।
লাইলাতুল কদর নামাজের নিয়ত
উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন্ উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা’য়ালা রাকআতাই সালাতিল লাইলাতিল কাদ্রি নফ্লে মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি- আল্লাহু আকবর।
অর্থ : আমি কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর (সন্তুষ্টির) জন্য শবে কদরের দুই রাকআত নফল নামাজ পড়ার নিয়ত করলাম- আল্লাহু আকবর।
লাইলাতুল কদর রাতে কিছু জিকির ও দোয়া
জিকির ও দোয়া পাঠ করলে মহান আল্লাহ তায়ালা অনেক খুশি হয়। হাদিস শরীফে দোয়া ও জিকিরের ফজিলতের কথা বলা হয়েছে। দরূদ ও ইস্তেগফার মহান আল্লাহর কাছে খুবই প্রিয়। এই রাতে দরূদ ও ইস্তেগফার পাঠ করা যেতে পারে।
আরো যে দোয়া পাঠ করতে হবে
হাদিস শরীফে বলা হয়েছে ,হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা) হতে বর্ণিত ,তিনি হজরত মুহাম্মদ (সা) কে জিজ্ঞাসা করলেন ,ইয়া রাসূলুল্লাহ ! লাইলাতুল কদরের রাতে কোন দোয়াটি পাঠ করা উচিত ?মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) তাকে নিম্নের দোয়াটি পাঠ করতে বললেন।
দোয়াটি হলো : আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি।
অর্থ : হে আল্লাহ ! আপনি ক্ষমাশীল এবং ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। তাই আমাকে ক্ষমা করুন। (সুনানে ইবনে মাজাহ )
এছাড়া এই রাতে সালাতুল তাওবা ,সালাতুল হাজত ও সালাতুল তাসবীহ নামাজ আদায় করা যায়।
রমজান মাসের কত তারিখ লাইলাতুল কদরের রাত ?
হাদিস শরীফে বলা হয়েছে রমজান মাসের শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদরের রাত। রমজান মাসের ২৭ তারিখ রাতকেই লাইলাতুল কদরের রাত হিসেবে মনে করে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) শেষ ১০ দিনের বিজোড় রাতকে লাইলাতুল কদরের রাত হিসেবে ভাবতেন।
হাদিস শরীফে বলা হয়েছে , হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা) হতে বর্ণিত ,তিনি বলেন হজরত মুহাম্মদ (সা) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন এবং বলতেন তোমরা রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান কর। (সহীহ বুখারী )
লাইলাতুল কদরের ফজিলত
সমস্ত মুসলিম জাতির জন্য লাইলাতুল কদরের রাত হলো শ্রেষ্ঠ রাত। এই রাত অনেক ফজিলতপূর্ণ। এই রাতে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র “আল কুরআন “ নাজিল করেছেন।
লাইলাতুল কদর নিয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন শরীফে একটি পূর্ণাঙ্গ সূরা নাজিল করেছেন। সূরাটি হলো “আল – কদর “
হাদিস শরীফে বলা হয়েছে , লাইলাতুল কদরের রাতে জিবরাঈল (আ ) ও অন্যান্য ফেরেশতাগণ সাথে যমীনে নেমে আসেন এবং প্রত্যেক ঐ বান্দাহর জন্যে রহমত ও মাগফেরাতের দোয়া করেন যে দাঁড়িয়ে বসে আল্লাহর ইয়াদ ও ইবাদাতে মশগুল থাকে। (বায়হাকী)