রমজান মাস হলো আরবি ১২ মাসের মধ্যে ৯ম মাস। রমজান মাস হলো সিয়াম সাধনা ও দোয়া কবুলের মাস। এই রমজান মাস অন্যসব মাসের তুলনায় অনেক বেশি ফজিলতপূর্ণ মাস। এই মাসেই মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিনের পবিত্র কুরআন শরীফ লাওহে মাহফুজ হতে প্রথম আসমানে এসেছিলো একসঙ্গে।
এই মাসে ইবাদাত বন্দেগী করলে অনেক বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। রমজান মাসে নফল ইবাদাত ফরজ ইবাদাতের সমতুল্য। রমজান মাসে ইবাদাত বন্দেগী করলে অন্য মাসের তুলনায় ৭০গুন্ সওয়াব বেশি পাওয়া যায়।
রমজান মাসে মহান আল্লাহ তায়ালা বান্দার প্রতি অনেক বেশি রহমত নাজিল করেছেন। রমজান মাস হলো রহমত ,মাগফেরাত ও নাজাতের মাস। রমজান মাসের প্রথম ১০ দিকে বলা হয় রহমতের দিন। দ্বিতীয় ১০ দিনকে বলা হয় মাগফিরাতের দিন। শেষের ১০ দিনকে বলা হয় নাজাতের দিন।
রমজান মাসের ফজিলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ,‘‘রমাদান- বরকতময় মাস তোমাদের দুয়ারে উপস্থিত হয়েছে। পুরো মাস রোযা পালন আল্লাহ তোমাদের জন্য ফরয করেছেন। এ মাসে জান্নাতের দরজা উন্মুক্ত করে দেয়া হয়, বন্ধ করে দেয়া হয় জাহান্নামের দরজাগুলো। দুষ্ট শয়তানদের এ মাসে শৃংখলাবদ্ধ করে দেয়া হয়। এ মাসে আল্লাহ কর্তৃক একটি রাত প্রদত্ত হয়েছে, যা হাজার মাস থেকে উত্তম। যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হল, সে বঞ্চিত হল মহা কল্যাণ হতে)’ (সুনান আত-তিরমিযি: ৬৮৩)
হজরত মুহাম্মদ (সা) রমজান মাসজুড়ে বিভিন্ন দোয়া ,তাসবীহ ও ইস্তেগফার পাঠ করে রমজান অতিবাহিত করতো। আমাদের উচিত আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা) এর পথ অনুসরণ করা। যার ফলে আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতের জীবনে অনেক কল্যাণ বয়ে আনবে।
হজরত সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘শাবান মাসের শেষ দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের উদ্দেশ্য বক্তব্য দেন যে, ‘হে লোক সকল! অবশ্যই তোমাদের সামনে মহান মাস, বরকতময় মাস উপস্থিত। এ মাসে তোমরা ৪টি কাজ বেশি বেশি আদায় কর। এর মধ্যে দু’টি কাজ আল্লাহর জন্য আর দু’টি কাজ তোমাদের নিজেদের জন্য।
চারটি কাজ হলো তাসবীহ পাঠ করা ,ইস্তেগফার অর্থাৎ ক্ষমা প্রার্থনা করা ,জান্নাত লাভের আশা করা ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার আশা করা। প্রথম দুটি হলো মহান আল্লাহকে খুশি করার উদ্দেশ্যে পাঠ করা আর পরের দুটি হলো নিজের জন্য।
৪টি ফজিলত পূর্ণ দোয়া
১। তাসবীহ পাঠ করা
উচ্চারণ : – لَا اِلَهَ اِلَّا الله
বাংলা উচ্চারণ : ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’
অর্থ : আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই।
২। ইস্তেগফার পাঠ করা
ইস্তেগফার অর্থ হলো ক্ষমা প্রার্থনা করা। আমরা বুঝে না বুঝে অনেক রকম পাপ কাজ করে থাকি। পরে বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হয়ে মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকি। তখন মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের ক্ষমা করে দেন। ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ তায়ালা অনেক খুশি হয়।
ইস্তেগফার পথ করে মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকি। হাদিস শরীফে অনেকগুলো ইস্তেগফার দেয়া আছে। এর যেকোনো একটি পাঠ করলেই হবে। নিম্নে ইস্তেগফারগুলো দেয়া হলো :
(ক ) ইস্তেগফার
– اَسْتَغْفِرُوا اللهَ العَظِيْم اِنَّ اللهَ غَفُوْرُ الرَّحِيْم
উচ্চারণ : আসতাগফিরুল্লাহাল আজিম ইন্নাল্লাহা গাফুরুর রাহিম।
অর্থ : মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু।
(খ ) ইস্তেগফার
– اَسْتَغْفِرُوا اللهَ العَظِيْم اّللَّذِى لَا اِلَهَ اِلَّا هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ وَ اَتُوْبُ اِلَيْهِ
উচ্চারণ : আসতাগফিরুল্লাহাল আজিম আল্লাজি লা ইলাহা ইল্লাহুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলাইহি।
অর্থ : মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি এক ব্যতিত কোনো ইলাহ নেই। তিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী এবং তার দিকেই আমরা ফিরে যাবো।’
(গ) ইস্তেগফার
– رَبِّ اغْفِرْ لِي وَتُبْ عَلَيَّ إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ
উচ্চারণ : রাব্বিগফিরলি ওয়া তুব্ আলাইয়্যা ইন্নাকা আংতাত তাওয়াবুর রাহিম।’
অর্থ : হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা করে দিন, আমার তাওবা কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি অতিশয় তাওবাকবুলকারী, দয়াবান।’
(ঘ ) ইস্তেগফার
– اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্বতানি; ওয়া আনা আ’বদুকা ওয়া আনা আ’লা আ’হদিকা ওয়া ওয়া’দিকা মাসতাত্বা’তু, আউজুবিকা মিন শাররি মা সানা’তু আবুউলাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়া; ওয়া আবুউ বিজামবি ফাগফিরলি ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক, তুমি ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোনো উপাস্য নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমার বান্দা। আমি আমার সাধ্যমত তোমার প্রতিশ্রুতিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ রয়েছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্টতা থেকে তোমার নিকট আশ্রয় চাই। আমার ওপর তোমার অনুগ্রহকে স্বীকার করছি এবং আমার পাপও স্বীকার করছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। নিশ্চয়ই তুমি ব্যতিত কোনো ক্ষমাকারী নেই।’
৩। জান্নাত লাভের দোয়া
– اَللَّهُمَّ اَدْخِلْنَا الْجَنَّةَ وَ اَجْرِنَا مِنَ النَّارِ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আদখিলনাল জান্নাতা ওয়া আঝিরনা মিনান নার।’
অর্থ : হে আল্লাহ! আমাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাও এবং জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দাও।’
– اَللهُمَّ انَّ نَسْئَلُكَ الْجَنَّةَ وَ نَعُوْذُبِكَ مِنَ النَّارِ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউজুবিকা মিনান নার।’
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনার কাছে জান্নাত চাই এবং জাহান্নামের আগুন থেকে আশ্রয় চাই।’
সকাল ও সন্ধ্যায় ৩ বার করে পড়তে হবে।
৪। জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের দোয়া
اللَّهُمَّ أَجِرْنِي مِنَ النَّارِ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আঝিরনি মিনান নার।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমাকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর।’
সকাল ও সন্ধ্যায় ৭ বার করে পাঠ করতে হবে।