রমজান মাসের আমল কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল 

আরবি ১২ মাসের মধ্যে নবম মাস হলো রমজান মাস। রমজান মাসের ফজিলত অন্য মাসের তুলনায় অনেক বেশি।রমজান মাস হলো ইবাদাত বন্দেগী ও আমলের মাস।  রমজান মাসে ইবাদাত বন্দেগী করলে অন্য মাসের তুলনায় ৭০গুন্ সওয়াব বেশি পাওয়া যায়। 

রমজান  মাসের ফজিলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ,‘‘রমাদান- বরকতময় মাস তোমাদের দুয়ারে উপস্থিত হয়েছে। পুরো মাস রোযা পালন আল্লাহ তোমাদের জন্য ফরয করেছেন। এ মাসে জান্নাতের দরজা উন্মুক্ত করে দেয়া হয়, বন্ধ করে দেয়া হয় জাহান্নামের দরজাগুলো। দুষ্ট শয়তানদের এ মাসে শৃংখলাবদ্ধ করে দেয়া হয়। এ মাসে আল্লাহ কর্তৃক একটি রাত প্রদত্ত হয়েছে, যা হাজার মাস থেকে উত্তম। যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হল, সে বঞ্চিত হল মহা কল্যাণ হতে)’ (সুনান আত-তিরমিযি: ৬৮৩)

অন্য এক হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- যে আল্লাহর রাস্তায় একদিন রোযা রাখবে আল্লাহ তা‘আলা সেই দিনের পরিবর্তে তার চেহারাকে জাহান্নাম থেকে সত্তর বছরের দূরত্বে সরিয়ে দিবেন।’ (বুখারি :২৮৪০)

এই পবিত্র রমজান মাসেই মহান আল্লাহ তায়ালার পবিত্র কালাম কুরআন শরীফ লাওহে মাহফুজ হতে প্রথম আকাশে একসাথে অবতীর্ণ হয়েছে। এই পবিত্র রমজান মাসেই হাজার মাস হতে উত্তম রাত শবে কদরের রাত রয়েছে। 

পবিত্র কুরআন শরীফে বলা হয়েছে ,‘‘রমাদান মাস, যার মধ্যে কুরআন নাযিল করা হয়েছে লোকদের পথ প্রদর্শক এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট বর্ণনারূপে এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে’’ (সূরা আলবাকারাহ ,আয়াত নং : ১৮৫)

এ মাসে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল রয়েছে, যেগুলো পালন করার মাধ্যমে আমরা জান্নাতে যেতে পারি, জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেতে পারি। নিম্নে রমজান মাসের আমল সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

গুরুত্বপূর্ণ রমজান মাসের আমল গুলো হলো 

১। রোজা রাখা 

ইসলাম ৫ টি স্তম্ভের ওপর নির্মিত। তারমধ্যে রোজা হলো ৩য় স্তম্ভ। প্রত্যেক সুস্থ -সবল মুসলিম নর নারীর ওপর মহান আল্লাহ তায়ালা রোজা ফরজ করেছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা যে কাজগুলো ফরজ করেছেন তারমধ্যে একটি ফরজ কাজ বাদ দিলে কবিরা গুনাহ হয়। ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা না রাখলে কবিরা গুনাহ হবে। রমজান মাসের প্রধান আমল হলো রোজা রাখা। 

মহিলাদের হায়েজ -নেফাসের সময় রোজা রাখতে হবে না। ওই সময় রোজা না রাখলে মহান আল্লাহ তায়ালা কোনো গুনাহ লিখবে না। হায়েজ – নেফাসের সময় মহিলাদের নামাজ ও রোজা না রাখার কথা বলা হয়েছে। পরবর্তীতে জেরুজা গুলো বাদ পড়েছে সেগুলো করে দিতে হবে। কিন্তু ওই সময়ে যে কয় ওয়াক্ত নামাজ বাদ পড়েছে না আর পড়তে হবে না।

 রোজা সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন মজীদে বলেছেন , হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরজ করা হয়েছিলো। নিঃসন্দেহে তোমরা (এ রোজার মাধ্যমে) মুত্তাকি (খোদাভীরু) হতে পারবে। (সুরা বাকারা ,আয়াত নং : ১৮৩)

রোজা পালনের ফজিলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ইখলাস নিয়ে অর্থাৎ একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে সন্তুষ্টি করার জন্য রমাদানে সিয়াম পালন করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে’’ (সহীহ বুখারী : ২০১৪)

২।  সালাত আদায় করা 

সালাত আদায় করা 

রমজান মাসে রোজা পালনের সাথে সাথে সালাত আদায় করতে হবে। রোজা পালনের সাথে সাথে সময় মত সালাত  আদায় করার মাধ্যমে জান্নাতে যাওয়ার পথ সুগম হয়। কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে: ‘নিশ্চয় সালাত মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ে ফরয।’ (সূরা নিসা ,আয়াত নং : ১০৩)

৩। বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করা 

কুরআন পড়া

রমজান মাসে পবিত্র কুরআন শরীফ নাজিল হয়েছে। এ মাসের অন্যতম আমল হলো সহীহ ভাবে কুরআন তেলাওয়াত করা। হাদিস শরীফে বলা হয়েছে ,হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন , ‘‘যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ পাঠ করে, তাকে একটি নেকি প্রদান করা হয়।

প্রতিটি নেকি দশটি নেকির সমান। আমি বলি না যে, আলিফ-লাম-মীম একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম একটি হরফ’’ (সুনান আত-তিরমিযী: ২৯১০)

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: ‘‘রমজান  ব্যতীত অন্য কোনো রাত্রিতে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পূর্ণ কুরআন তিলাওয়াত করতে, কিংবা ভোর অবধি সালাতে কাটিয়ে দিতে অথবা পূর্ণ মাস রোযা পালন করে কাটিয়ে দিতে দেখি নি’’ (সহীহ মুসলিম : ১৭৭৩)

৪। সালাতুত তাহাজ্জুদ পড়া

 রমজান মাস ছাড়াও সালাতুত তাহাজ্জুদ পড়ার মধ্যে বিরাট সাওয়াব এবং মর্যাদা রয়েছে। রমজানের কারণে আরো বেশি ফজিলত রয়েছে। যেহেতু সাহরী খাওয়ার জন্য উঠতে হয় সেজন্য রমজান  মাসে সালাতুত তাহাজ্জুদ আদায় করার বিশেষ সুযোগও রয়েছে। 

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘ফরয সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হল রাতের সালাত অর্থাৎ তাহাজ্জুদের সালাত’’ (সহীহ মুসলিম : ২৮১২)

৫। বেশি বেশি দান সদকা করা 

দান সদকা করা 

এ মাসে বেশি বেশি দান-সদকা করার জন্য চেষ্টা করতে হবে। এতিম, বিধবা ও গরিব মিসকিনদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া ও বেশি বেশি দান খয়রাত করা। হিসাব করে এ মাসে জাকাত দেওয়া উত্তম। কেননা আল্লাহর রাসুল (সা.) এ মাসে বেশি বেশি দান খয়রাত করতেন।

 আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, ‘আল্লাহর রাসুল (সা.) ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল। আর রমজানে তার এ দানশীলতা আরও বেড়ে যেত।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯০২)

৬। উত্তম চরিত্র গঠনের অনুশীলন করা 

চরিত্র গঠনের অনুশীলন

রমজান মাস হলো নিজেকে সৎচরিত্রবান হিসেবে গঠনের মাস। রমজান মাসে এমন ভাবে চলতে হবে যার কারণে অন্য মাসে  যেন ঐভাবেই চলতে পারি। কাজেই এ সময় আমাদের সুন্দর চরিত্র গঠনের অনুশীলন করতে হবে।

হাদিস শরীফে বলা হয়েছে ,আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন , ‘তোমাদের মধ্যে কেউ যদি রোযা রাখে, সে যেন তখন অশ্লীল কাজ ও শোরগোল থেকে বিরত থাকে। রোজা রাখা অবস্থায় কেউ যদি তার সাথে গালাগালি ও মারামারি করতে আসে সে যেন বলে, আমি রোজাদার।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১১৫১)

৭। ইতিকাফ করা রমজান মাসের আমল

ইফতারের-দোয়া

ইতিকাফ অর্থ অবস্থান করা। অর্থাৎ অন্য মানুষদের থেকে পৃথক হয়ে সালাত, সিয়াম, কোরআন তিলাওয়াত, দোয়া, ইস্তিগফার ও অন্যান্য ইবাদাতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার সান্নিধ্যে একাকী কিছু সময় যাপন করা। প্রত্যেক রমাদানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাদানের শেষ দশ দিন নিজে এবং তাঁর সাহাবীগণ ই‘তিকাফ করতেন।

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত: ‘‘প্রত্যেক রমাযানেই তিনি শেষ দশ দিন ই‘তিকাফ করতেন। কিন্তু জীবনের শেষ রমযানে তিনি ইতিকাফ করেছিলেন বিশ দিন’’ । দশ দিন ই‘তেকাফ করা সুন্নাত। [সহীহ আলবুখারী : ২০৪৪]

৮। দাওয়াতে দ্বীনের কাজ করা 

রমজান মাস হচ্ছে দ্বীনের দাওয়াতের সর্বোত্তম মাস। আর মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকাও উত্তম কাজ। এজন্য এ মাসে মানুষকে দ্বীনের পথে নিয়ে আসার জন্য আলোচনা করা, কোরআন ও হাদিসের দারস প্রদান, বই বিতরণ, কোরআন বিতরণ ইত্যাদি কাজ বেশি বেশি করা।

মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন শরীফে বলেছেন ,‘ওই ব্যক্তির চাইতে উত্তম কথা আর কার হতে পারে— যে আল্লাহর দিকে ডাকল, নেক আমল করল এবং ঘোষণা করল যে, আমি একজন মুসলিম।’ (সূরা হা-মীম সাজদাহ, আয়াত নং : ৩৩)

হাদিস শরীফে বলা হয়েছে , ‘ভালো কাজের পথ প্রদর্শনকারী এ কাজ সম্পাদনকারী অনুরূপ সাওয়াব পাবে।’ (সুনান আত-তিরমিজি, হাদিস : ২৬৭০)

৯। তওবা ও ইস্তেগফার করা 

তবে শব্দের অর্থ হলো ফিরে আসা। অর্থাৎ গুনাহের কাজ আর না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া। রমজান মাস তবে ইস্তেগফার করার উত্তম মাস। মহান আল্লাহ তায়ালা সব সময় বান্দার তওবা কবুল করে থাকেন। মহান আল্লাহ তায়ালা তবে করলে খুশি হন। 

মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন , ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর, খাটি তাওবা; আশা করা যায়, তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং তোমাদের এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন— যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত।’ (সুরা: আত-তাহরিম, আয়াত নং : ০৮)

হাদিস শরীফে বলা হয়েছে ,হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন ,হে মানবসকল! তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবাহ এবং ক্ষমা প্রার্থনা করো, আর আমি দিনে তার নিকট একশত বারের বেশি তাওবাহ করে থাকি।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৭০৩৪)

১০। বেশি বেশি দোয়া ও জিকির করা 

দোয়াও জিকির  হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। রমজান মাসে মহান আল্লাহ তায়ালা বান্দার দোয়া বেশি বেশি কবুল করে থাকেন। ইফতারের আগে মুহূর্তে যে দোয়া গুলো করা হয় মহান আল্লাহ তায়ালা ওই দোয়াগুলো তাড়াতাড়ি কবুল করে থাকেন। 

হাদিস শরীফে বলা হয়েছে ,‘ইফতারের মূহূর্তে আল্লাহ রাববুল আলামিন বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। মুক্তির এ প্রক্রিয়াটি রমাদানের প্রতি রাতেই চলতে থাকে।’ (আল-জামিউস সাগির, হাদিস : ৩৯৩৩)

অন্য হাদিসে এসেছে, ‘রমজানের প্রতি দিবসে ও রাতে আল্লাহ তাআলা অনেককে মুক্ত করে দেন। প্রতি রাতে ও দিবসে প্রতি মুসলিমের দোয়া কবুল করা হয়।’ (সহিহ আত-তারগিব ওয়াত তারহিব : ১০০২)

১১।  লাইলাতুল কদর তালাশ করা 

পবিত্র রমজান মাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত রয়েছে যা হাজার হাজার রাত অপেক্ষা উত্তম। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন শরীফে বলেছেন ,‘কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।’ (সুরা কদর, আয়াত নং : ০৪)

১২। সামর্থ থাকলে উমরা পালন করা 

এ মাসে একটি উমরাহ করলে একটি হজ আদায়ের সমান সাওয়াব হয়। আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘রমজান মাসে উমরা করা আমার সাথে হজ আদায় করার সমতুল্য।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮৬৩)

১৩। তারাবীহ নামাজ আদায় করা 

তারাবীহ নামাজ আদায় করা রমজান মাসের অন্যতম আমল। রমজান মাসে তারাবীহ নামাজ আদায় করা সুন্নত। 

হাদিস শরীফে বলা হয়েছে ,‘যে ব্যক্তি ঈমানের থে সাওয়াব হাসিলের আশায় রমাদানে কিয়ামু রমাদান (সালাতুত তারাবীহ) আদায় করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে’ (সহীহ আল-বুখারী : ২০০৯)

১৪। শুকরিয়া আদায় করা 

রমজান  মাস পাওয়া এক বিরাট সৌভাগ্যের বিষয়। সেজন্য আল্লাহ তা‘আলার বেশি বেশি শুকরিয়া আদায় করা এবং আগামী রমজান পাওয়ার জন্য তাওফীক কামনা করতে হবে ।

 রমজান  সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে: ‘‘আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা শোকর কর।’’ (সূরা আল বাকারাহ,আয়াত নং  : ১৮৫)

অন্য  আয়াতে বলা হয়েছে ,‘‘আর যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন, ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয় আমার আজাব বড় কঠিন’।’’ (সূরা ইবরাহীম : ৭)

হাদিস শরীফে বলা হয়েছে ,আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত , নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়ামাতের শুকরিয়া আদায় করে বলতেন অর্থাৎ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য (সুনান আত-তিরমিযী : ২৭৩৮)

১৫। ইফতার করা 

 

সময় হওয়ার সাথে সাথে ইফতার করা বিরাট ফজিলাতপূর্ণ আমল। কোন বিলম্ব না করা । কেননা হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি সিয়াম পালন করবে, সে যেন খেজুর দিয়ে ইফতার করে। খেজুর না পেলে পানি দিয়ে ইফতার করবে। কেননা পানি হলো অধিক পবিত্র।’ (সুনান আবু দাউদ, হাদিস : ২৩৫৭)

নবী (সা.) যখন ইফতার করতেন তখন বলতেন, ‘পিপাসা নিবারিত হলো, শিরা উপশিরা সিক্ত হলো এবং আল্লাহর ইচ্ছায় পুরস্কারও নির্ধারিত হলো।’ (সুনান আবু দাউদ, হাদিস : ২৩৫৯)

১৬। ইফতার করানো 

অন্যকে ইফতার করানো একটি বিরাট সওয়াবের কাজ। প্রতিদিন কমপক্ষে একজনকে ইফতার করানোর চেষ্টা করা দরকার। কেননা হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে ইফতার করাবে, সে তার সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করবে, তাদের উভয়ের সওয়াব থেকে বিন্দুমাত্র হ্রাস করা হবে না।’ (সুনান ইবন মাজাহ, হাদিস : ১৭৪৬)

১৭।  ফিতরাহ দেয়া

 এ মাসে সিয়ামের ত্রুটি-বিচ্যুতি পূরণার্থে ফিতরাহ দেয়া আবশ্যক। ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের সালাত আদায়ের পুর্বে ফিতরাহ আদায় করার আদেশ দিলেন। (সহীহ আল-বুখারী :১৫০৩)

১৮। মিসওয়াক করা

 মেসওয়াকের প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশেষ  গুরুত্বারোপ করেছেন। হাদীসে এসেছে: অর্থাৎ মেসওয়াক মুখের জন্য পবিত্রকারী, এবং রবের সন্তুষ্টি আনয়নকারী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোযা রেখেও মেসওয়াক করতেন বলে বিভিন্ন বর্ণনায় পাওয়া যায়।(সহীহ ইবন খুযাইমাহ : ১৩৫)

১৯। সাহরী খাওয়া 

সাহরী খাওয়ার মধ্যে বরকত রয়েছে এবং সিয়াম পালনে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হাদীসে এসেছে: ‘‘সাহরী হল বরকতময় খাবার। তাই কখনো সাহরী খাওয়া বাদ দিয়ো না। এক ঢোক পানি পান করে হলেও সাহরী খেয়ে নাও। কেননা সাহরীর খাবার গ্রহণকারীকে আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর ফেরেশতারা স্মরণ করে থাকেন’’ (মুসনাদ আহমাদ : ১১১০১, সহীহ)

২০। তাকওয়া অর্জন করা 

তাকওয়া এমন একটি গুণ, যা বান্দাহকে আল্লাহর ভয়ে যাবতীয় পাপকাজ থেকে বিরত রাখে এবং তাঁর আদেশ মানতে বাধ্য করে। আর রমজান মাস তাকওয়া নামক গুণটি অর্জন করার এক বিশেষ সময় । 

পবিত্র কুরআন শরীফে বলা হয়েছে ,  ‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে করে তোমরা এর মাধ্যমে তাকওয়া অবলম্বন করতে পারো’’ (সূরা আল বাকারাহ ,আয়াত নং : ১৮৩)

রমজান মাসের সকল সময় সূচি এবং দোয়া click here

Sharing Is Caring:

Leave a Comment