মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন পৃথিবীর সকল জীবের মৃত্যু নিরধারন করে রেখেছেন ।পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন ,
প্রত্যেক প্রানিরই একদিন মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতে হবে।
মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষ এবং জীন জাতিকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তার
ইবাদাত বন্দেগী করার জন্য ।মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে উল্লেখ করেছেন ।
আমরা সবাই জানি, মৃত্যুর পর মুসলিম এবং অমুসলিম সবাইকে কবরে তিনটি প্রশ্ন করা হবে ।প্রত্যেক মুমিন ব্যক্তি এ তিনটি প্রশ্নের উত্তর
দিতে পারবে ফলে তাদেরকে আরও একটি প্রশ্ন করা হবে ।কিন্তু কাফের ব্যক্তিরা এ তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে না তাই তাদেরকে
আর কোন প্রশ্ন করা হবে না ।
এজন্যই আমাদের জানা দরকার মৃত্যুর পর কবরে মুমিনদের জন্য ৪ টি প্রশ্ন করা হবে আর কাফেরদের জন্য তিনটি প্রশ্ন করা হবে ।
মুমিন ব্যক্তিরা সহজেই এ প্রশ্ন গুলোর উত্তর দিয়ে দিবে ফলে তারা জান্নাত লাভ করবে ।আর কাফের ব্যক্তিরা এ প্রশ্ন গুলোর উত্তর দিতে
পারবে না ফলে তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে ।
মৃত্যুর পরে কবরে যে তিনটি প্রশ্ন করা হবে
প্রশ্ন তিনটি হলঃ
১ । মান রাব্বুকা ?
অর্থঃ তমার রব কে ?
২ । মা দ্বিনুকা ?
অর্থঃ তোমার দ্বীন কি ?
৩ । মান নাব্যিয়ুকা ?
অর্থঃ তোমার অনুসরণীয় নবি কে ?
মুমিন ব্যক্তিরা এ তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দেবে ফলে তাদেরকে আরও একটি প্রশ্ন করা হবে তা হল ,তুমি এসব জানলে কোথায় থেকে ?
অর্থাৎ তোমার জ্ঞানের উৎস কি ?তখন মুমিন ব্যক্তি উত্তর দিবে আমি এসব জেনেছি পবিত্র কুরআন শরিফ থেকে ।
যাদেরকে কবরে প্রশ্ন করা হবে না
৯ প্রকার মানুষকে মৃত্যুর পরে কবরে প্রশ্ন করা হবে না ।মহান আল্লাহর দয়ায় তারা এ তিনটি প্রশ্নের সম্মুখীন হবে না ।তারা দুনিয়াতে এমন
আমল বা এমন কাজ করেছে যার কারনে তাদেরকে আর কোন প্রশ্ন করা হবে না ।তারা উত্তর না দিয়েই জান্নাতে প্রবেশ করবে ।
তারা হলঃ
১ । নবি রাসুলগন
নবি রাসুল গন কে মৃত্যুর পরে কবরে প্রশ্ন করা হবে না ।কারণ তারা হল আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ ।মহান আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে বিশেষ প্রতিনিধি
হিসেবে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন ।মানুষকে হেদায়াতের জন্য মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন নবি রাসুল গণকে প্রেরণ করেছিলেন ।তাই মৃত্যুর
পরে কবরে তাদেরকে প্রশ্ন করা হবে না ।
২ । শহিদ ব্যক্তি
শহিদ ব্যক্তিদের কবরে প্রশ্ন করা হবে না ।হজরত মুহাম্মাদ (সা) ইরশাদ করেছেন ,শহীদদের কবরে প্রশ্ন করা হবে না কেননা মাথায় তরবারির আঘাত
কবরের বিপদ হতে কম নয় ।যদি তার অন্তরে আল্লাহর ভয় না থাকত তাহলে সে তরবারির ভয়ে পালিয়ে জেতে পারত কিন্তু সে পালিয়ে না গিয়ে মৃত্যুকে
হাসি মুখে গ্রহন করে নিয়েছেন ।ফলে শহিদ ব্যক্তিদের কবরে প্রশ্ন করা হবে না ।
৩ । ইসলামি রাষ্ট্রের সিমান্তরক্ষী সৈনিক
তাদেরকে প্রতিনিয়ত শত্রু দলের সঙ্গে সংগ্রাম করতে হয় ।মুসলিমদের জান মালের হেফাজতের দায়িত্ব তারা বহন করে । এ ব্যক্তিদের সম্পর্কে পবিত্র
কুরআনে বলা হয়েছে এবং হাদিস শরিফেও বলা হয়েছে ।
এদের মর্যাদা এতই যে এদের কবরে প্রশ্ন করা হবে না ।
৪ । মহামারিতে আক্রান্ত ব্যক্তি
যখন কোন এলাকায় মহামারি ছরিয়ে পরে ,তখন কোন ব্যক্তি মৃত্যুকে ভয় না পেয়ে আল্লাহর ওপর ভরসা করে ওখানেই অবস্থান করে ,এটা মনে করে
যে মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন তার ভাগ্যে যা লিখেছেন তাই হবে ।
তখন যদি মহামারিতে ওই ব্যক্তি মৃত্যু বরন করে তাহলে তাকে শহিদের মর্যাদা দেয়া হবে ।তাকে কবরে কোন প্রশ্ন করা হবে না ।তাকে জান্নাতে প্রবেশ
করানো হবে ।(মুসনাদে আহমাদ ,হাদিস নংঃ ২০৭৬৭ )
তবে মহামারিতে আক্রান্ত হলে তাকে মহান আল্লাহর কাছে সুস্থতার কামনা করতে হবে এবং চিকিৎসা গ্রহন করতে হবে ।মহানবি হজরত মুহাম্মাদ (সা)
নিজেই সাহাবিদের সুস্থতার জন্য দোয়া করতে উৎসাহিত করেছেন এবং বলেছেন প্রত্যেক রোগের রয়েছে আরোগ্য
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) হতে বর্ণিত ,হজরত মুহাম্মাদ (সা) বলেছেন ,সুস্থতার জন্য বেশি বেশি দোয়া করুন ।(মুসতাদরাকে হাকিম ,হাদিস নংঃ ১৯৩৯)
৫ । নাবালেক শিশু
নাবালেক বালক বালিকা মারা গেলে তাকে কবরে প্রশ্ন করা হবে না ।ইবনে সালাহ (রহ) বলেন , কোন শিশু মারা গেলে তাকে কালেমায়ে শাহাদাত তালকিন করার
দরকার নাই কেননা তাকে কবরে প্রশ্ন করা হবে না ।
মহানবি হজরত মুহাম্মাদ (সা) বলেছেন ,কোন মহিলার গর্ভপাত হলে কিংবা এক বা একাধিক শিশু মারা গেলে সেই মহিলার জন্য ওই শিশুরা জাহান্নাম থেকে পর্দা স্বরূপ
হবে ।(বুখারি শরিফ ,হাদিস নংঃ ১০১,মুসলিম ,হাদিস নংঃ ২৬৩৩)
আরও বলা হয়েছে ,কোন শিশু মারা গেলে সে তার পিতা -মাতার কাপর ধরে জান্নাতে নিয়ে যাবে ।(সহিহাহ ,হাদিস নংঃ৪৩২)
৬ । প্রতি রাতে সুরা মুলক পাঠ কারি ব্যক্তি
যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সুরা মুলক পাঠ করবে ,কেয়ামতের দিন এই সুরা পাঠকারীর জন্য সুপারিশ করবে ।মহানবি হজরত মুহাম্মাদ (সা) বলেছেন ,পবিত্র কুরআনে ত্রিশ আয়াত
বিশিষ্ট একটি সুরা আছে যেটি কারো পক্ষে সুপারিশ করলে তাকে মাফ করে দেওয়া হবে ।সুরাটি হল সুরা মুলক ।(সুনানে আবু দাউদ ,হাদিস নংঃ ১৪০০,সুনানে তিরমিজি ,
হাদিস নংঃ ২৮৯১)
হজরত মুহাম্মাদ (সা) প্রতি রাতে সুরা মুলক পাঠ করতেন ।(নাসাঈ ,হাদিস নংঃ ৭১১,সহিহুত আত তারগিব ,হাদিস নংঃ ১৫৮৯)
৭ । জুমার দিনে মৃত ব্যক্তি
যে ব্যক্তি বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে অথবা জুমার দিনে মারা যাবে তাকে কবরে প্রশ্ন করা হবে না যদি সে ইমানদার ও আমলকারি ব্যক্তি হয়ে থাকে । হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে
উমর (রা) বর্ণনা করেছেন ,হজরত মুহাম্মাদ (সা) বলেছেন,যে মুসলমান জুমার দিনে বা রাতে মৃত্যু বরন করবে ,নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তাকে কবরে ফেতনা থেকে বাঁচিয়ে
রাখবেন ।(তিরমিজি ,হাদিস নংঃ ১০৯৫,মিসকাত ,হাদিস নংঃ ১৩৬৭)
৮ । সত্যবাদি ও সিদ্দিক ব্যক্তি
আল্লাহ তায়ালা ও তার রাসুল গনের ওপর বিশ্বাস স্থাপন কারি ব্যক্তিদের সত্যবাদি সিদ্দিক বলা হয় । সত্যবাদি সিদ্দিক ব্যক্তিদের কবরে প্রশ্ন করা হবে না ।
মহানবি হজরত মুহাম্মাদ (সা) বলেছেন ,কোন ব্যক্তি যদি সরবদা সত্যি কথা বলে এবং সত্য কথা বলার দৃঢ় ইচ্ছা পোষণ করে ,তার নাম আল্লাহ তায়ালার কাছে “সিদ্দিক” হিসেবে
লিপিবদ্ধ হয় ।(সহিহ মুসলিম ,হাদিস নংঃ ৬৮০৫)
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন ,আজ সত্য বাদিদের সত্যবাদিতা তাদের উপকারে আসবে ।(সুরাঃ মায়িদা ,আয়াত নংঃ ১১৯)
৯ । সুরা ইখলাস পাঠকারী ব্যক্তি
যে ব্যক্তি সুরা ইখলাস পাঠ করতে করতে মৃত্যু বরন করবে বা কোন রোগের কারনে বিছানায় পতিত হবে তখন বিছানায় শুয়ে শুয়ে সুরা ইখলাস পাঠ করতে করতে মৃত্যু বরন
করে ,তার কবরে প্রশ্ন করা হবে না ।(ফাতয়ায়ে শামি ১/৬২৯)