মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) যে ব্যক্তিদের অভিশাপ দিয়েছেন

সব পাপই ঘৃণিত। কিছু কিছু পাপ আছে যা খুবই নিন্দনীয় ,অপরাধ।আর সব পাপের ফল হিসেবে মৃত্যুর পরে কঠিন তম শাস্তি ভোগ করতে হবে। মৃত্যুর পরে এসব পাপীদের জায়গা হবে জাহান্নামে। 

জাহান্নামের শাস্তির বর্ণনায় বলা হয়েছে প্রত্যেক পাপিদেরকে সাপ এবং বিচ্ছু দংশন করবে ।হাদীসে বলা হয়েছে ওই সাপের এক বিন্দু লালা যদি পৃথিবীতে পড়ত ,তাহলে পৃথিবী তামা হয়ে যেত। পৃথিবীতে কোনো কিছুই জন্মাত না। 

এসব পাপীদেরকে আগুনের কুণ্ডলীর মধ্যে নিক্ষেপ করা হবে। জাহান্নামের আগুনের তাপ  হবে দুনিয়ার আগুনের থেকে ৭০ গুন্ বেশি। এ আগুনের তাপে তাদের গায়ের চামড়া খসে পড়বে ,পুনরায় আবার জোড়া লাগবে আবার খসে পড়বে। এভাবে চলতেই থাকবে। 

জাহান্নামীদেরকে খাবার হিসেবে জাক্কুম নামক একধরণের ফল খেতে দেয়া হবে ,যা খেলে মাথার মগজ থেকে শুরু করে মানুষের শরীরের ভিতরের সব কিছু গলে পায়ু পথ দ্বারা বের হয়ে যাবে। 

মহান আল্লাহ তায়ালা এসব পাপীদের ওপর অসন্তুষ্ট।মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) এসব পাপীদের অভিশাপ দিয়েছেন। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) যেমন পৃথিবীতে সুসংবাদ নিয়ে এসেছেন তেমনি মানুষকে সতর্কবাণী শোনানোর জন্য প্রেরিত হয়েছে। 

হাদিস শরীফের বিভিন্ন জায়গায় হজরত মুহাম্মদ (সা)  তার উম্মতদেরকে পাপ সম্পর্কে সচেতন করেছেন এবং পাপের ফল সরূপ আমাদের যে কঠিন তম শাস্তি ভোগ করতে হবে এ কথা উল্লেখ করেছেন ।হজরত মুহাম্মাদ (সা) শুধু সতর্ক করেন নি বরং পাপিদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন ।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে উদ্দেশ্য করে বলেছেন ,আমি আপনাকে সমগ্র মানবজাতির জন্য সুসংবাদ ও সতর্ককারী রূপে প্রেরণ করেছি। কিন্তু মানুষ তা জানে না। (সূরা সাবা : ২৮) মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) যে সব মানুষদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন তাদের পরিচয় দেয়া হলো : 

১। যে অন্যকে অস্ত্র তাক করে ভয় দেখায়।

অন্যায়ভাবে বা দুষ্টুমি করে কারো দিকে ধারালো অস্ত্র তাক করে ভয় দেখানো ,এটা শরীয়তে চরমভাবে নিষিদ্ধ। যারা এ কাজে লিপ্ত মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন। 

তাবেরই হজরত শিরিন (রহ )বলেন ,আমি আবু হুরায়রা (রাঃ)কে বলতে শুনেছি ,মহানবী হ্প্যারোট মুহাম্মদ (সাঃ) বলেন ,যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রতি মারণাস্ত্র দ্বারা ইঙ্গিত করে সে তা পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত ফেরেশতারা তাকে অভিশাপ করতে থাকে। যদিও সে তার আপন ভাই হয়। ( মুসলিম ,হাদিস নং : ৬৫৬০)

২।  যে মাদক কারবার করে 

মদ পানকারী,মদ  বিক্রেতা এবং নেশাজাতীয় সকল দ্রব্যের সাথে সম্পৃক্ত সকল ব্যক্তিদের হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) অভিশাপ দিয়েছেন। ইবনু উমর (রা) থেকে বর্ণিত ,হজরতমুহাম্মাদ (সাঃ) বলেন ,মদ পানকারীকে ,মদ পরিবেশনকারীকে ,তার ক্রেতা ও বিক্রেতা ,তার প্রস্তুতকারক ,যার জন্য প্রস্তুত করা হয় তাকে ,তার বাহককে ও যার জন্য বহন করা হয় তাকে আল্লাহ তায়ালা অভিশাপ দিয়েছেন। (সুনানে আবু দাউদ : ৩৬৭৪,সুনানে ইবনে মাজাহ : ৩৩৮০ ,তিরমিযী : ১২৯৫)

৩। চোর ব্যক্তি 

যে ব্যক্তি অন্যের মাল চুরি করে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাকে অভিশাপ দিয়েছেন। আবু হুরায়রা (রা ) থেকে বর্ণিত ,মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেন ,চোরের ওপর লা’নত হোক ,যখন সে একটি হেলমেট চুরি করে এ জন্য তার হাত কাটা হয় এবং সে যখন একটি রশি চুরি করে এ জন্য তার হাত কাটা হয়। (সহীহ মুসলিম : ১৬৮৭)

৪। সুদের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তি 

যারা সুদের সাথে সম্পৃক্ত তাদের প্রত্যেককে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) অভিশাপ দিয়েছেন। রাসূল (সাঃ) বলেন ,সুদদাতা ,সুদগ্রহীতা ,সুদসংক্রান্ত দলিল সম্পাদনকারী ও সুদের লেনদেনের সাক্ষী সবার প্রতিই আল্লাহর লা’নত। (মুসলিম : ৩৯৮৫)

৫।  মূর্তি ভাস্কর্য বা ছবি নির্মাণকারী 

হজরত আবু জুহায়ফা (রা) থেকে বর্ণিত ,মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) ছবি নির্মাণকারীদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন। 

৬। যে স্ত্রী তার স্বামীর বিছানায় সারা দেয়  না 

আবু হুজায়রা (রা ) বলেন ,রাসূল (স) বলেছেন ,কোনো লোক যদি তার স্ত্রী কে নিজ বিছানায় ডাকে আর সে কোনো ওজর ছাড়া তা অস্বীকার করে এবং সে ব্যক্তি স্ত্রীর ওপর দুঃখ নিয়ে রাত্রি যাপন করে ,তাহলে ফেরেশতারা এমন স্ত্রীর ওপর সারা রাট লা’নত দিতে থাকে। ( বুখারী :৩২৩৭)

৭। তালাক দেয়ার উদ্দেশ্যে বিবাহ করা 

আমিরুল মুমিনীন আলী (রা) থেকে বর্ণিত ,মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন ,যে স্বামী তালাক দেয়ার উদ্দেশ্যে বিয়ে করে ,সে এবং যে স্বামী তালাক দেয়ার পর পুনরায় গ্রহণের ইচ্ছায় তাকে অন্যের নিকট বিয়ে দিয়ে তার জন্য হালাল করে নেয় ,তারা উভয়েই অভিশপ্ত। ( আবু দাউদ : ২০৭৬)

৮। পিতা মাতাকে লা’নত করা 

আবু তুফায়ল আমির ইবনে ওয়াসীলাহ (রহ) বলেন ,আমি আলী ইবনে আবু  তালিব (রাঃ) এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। এক ব্যক্তি তার কাছে এসে বলল ,নবী (সাঃ)আপনাকে আড়ালে কি বলেছিলেন ?

বর্ণনাকারী বলেন , তিনি রেগে গেলেন এবং বলেন ,নবী (সা) লোকদের কাছ থেকে গোপন রেখে আমার নিকট একান্তে কিছু বলেননি। তবে তিনি আমাকে ৪ টি কথা বলেছেন। বর্ণনাকারী বলেন ,এরপর লোকটি বলল ,হে আমিরুল মুমিনীন !সে চারটি কথা কি ?তিনি বলেন 

১।  যে ব্যক্তি তার পিতা  মাতাকে অভিশাপ করেন ,আল্লাহ তাকে অভিশাপ করেন। 

২। যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া ভিন্ন কারো নাম পশু জবাই করে আল্লাহ তাকে অভিশাপ করেন। 

৩। যে ব্যক্তি কোনো বিদাতি লোককে আশ্রয় দেয় আল্লাহ তাকে অভিশাপ দেন। 

৪। যে ব্যক্তি জমিনের চিহ্নসমূহ অন্যায়ভাবে পরিবর্তন করে তাকে আল্লাহ তায়ালা অভিশাপ দেয়  (মুসলিম : ৫০১৮)

৯। যে ব্যক্তি শরীরে উল্কি বা ট্যাটু অঙ্কন করে  

আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রা)থেকে বর্ণিত ,আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হোক সেসব নারীর ওপর ,যারা শরীরে উল্কি বা ট্যাটু অঙ্কন করে। আর সে সব নারীদের ওপার অভিশাপ যারা চুল ,ভ্রু তুলে ফেলে এবং সেসব নারীদের ওপর যারা সৌন্দর্যের জন্য সম্মুখের দাঁত কেটে সরু করে ,দাঁতের মধ্যে ফাক তৈরী করে ,যা আল্লাহর সৃষ্টির মপধ্যে পরিবর্তন আনে। 

১০।  ভিন্ন লিঙ্গের পোশাক পড়া 

আবু হুরায়রা (রা ) বলেন ,রাসূল (সা) অভিশাপ করেছেন ওই সব পুরুষকে ,যারা নারীর অনুরূপ পোশাক পরে এবং ওই সব নারী ,যারা পুরুষের অনুরূপ পোশাক পরে।  (আবু দাউদ : ৪০৯৮).

১১। যারা সমকামী 

পুরুষে পুরুষে বা মহিলায় মহিলায় যৌন মিলন করে রাসূল (সা) তাদের অভিশাপ দেয় 

১২। যারা পশুর সাথে সঙ্গম করে 

পশুর সাথে সঙ্গমকারী ব্যক্তিকে রাসূল (সা) অভিশাপ দেয়। 

১৩। যে ব্যক্তি অন্ধকে ভুল পথ নির্দেশ করে 

এমন ব্যক্তিকে রাসূল (সা ) অভিশাপ দেন। (সহীহ মুসলিম : ৩৭৭১,মুসনাদে আহমদ : ৫৮৯১ ,সহীহ বুখারী : ১৩৭০)

Sharing Is Caring:

Leave a Comment