মহান তায়ালা পৃথিবীর সব প্রাণীকেই কোনো না কোনো বিশেষ কারণে সৃষ্টি করেছেন। কিছু কিছু প্রাণী প্রকৃতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মহানবী হজরত মুহাম্মদ(সা) তাদের হত্যা করতে নিষেধ করেছেন।
অনেক প্রাণী আছে যেগুলো আমরা উপকারী মনে করি ,আমরা ভেবে নেই এদের কোনো প্রয়োজন নেই কিন্তু তাদের প্রয়োজনীয়তা আছে। এসব প্রাণীদের ওপর বিশেষ দৃষ্টি স্থাপন করলে দেখা যাবে যে ,এসব প্রাণীদের অনেক গুন্ আছে যা আমরা খেয়াল করি না।
ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা.) চার প্রকার প্রাণী হত্যা করতে নিষেধ করেছেন, পিঁপড়া, মৌমাছি , হুদহুদ পাখি এবং চড়ুইসদৃশ বাজপাখি। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫২৬৭)
আবার কোনো কোনো হাদিসে ব্যাঙ এর কথা বলা হয়েছে। এসব প্রাণী কেন হত্যা করা যাবে না সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো :
১। পিপীলিকা বা পিঁপড়া
পিঁপড়াকে হত্যা করা ইসলামে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পিপড়াও মহান আল্লাহ তায়ালার তাসবীহ পাঠ করে। তারাও আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে।
রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমাদের সাধারণ ব্যক্তির ওপর আমার যতখানি মর্যাদা, ঠিক তেমনি একজন আলেমের মর্যাদা একজন আবিদের (ইবাদতকারী) ওপর। তারপর রাসুল (সা.) বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতারা এবং আসমান-জমিনের অধিবাসীরা, এমনকি গর্তের পিঁপড়া এবং পানির মাছ পর্যন্ত সেই ব্যক্তির জন্য দোয়া করে যে মানুষকে কল্যাণকর জ্ঞান শিক্ষা দেয়। (তিরমিজি, হাদিস : ২৬৮৫)
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, কোনো এক নবীকে একটি পিঁপড়া দংশন করলে তিনি সে পিঁপড়ার বস্তি জ্বালিয়ে দেওয়ার আদেশ দেন এবং তা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
তখন আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রতি ওহি প্রেরণ করে বলেন, তোমাকে তো একটা পিঁপড়া দংশন করেছে। আর তুমি এমন এক জাতিকে ধ্বংস করলে যারা আল্লাহর মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করত। (নাসায়ি, হাদিস : ৪৩৫৮)।
তাই অকারনে পিঁপড়া হত্যা করা উচিত নয়। পিঁপড়া যদি কোনো ক্ষতি করে থাকে তাহলে তাকে তাড়ানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে কিন্তু হত্যা করা যাবে না।
২। মৌমাছি
মৌমাছি মহান আল্লাহ তায়ালার এক অপূর্ব সৃষ্টি এবং অনেক উপকারী প্রাণী। মৌমাছি আমাদের জন্য ভেজালমুক্ত মধু আহরণ করে। আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা) মধু খেতে খুব ভালোবাসতেন।( শামায়েলে তিরমিযী ,হাদিস নং : ১২১) মৌমাছিকে আরবিতে “নাহল “ বলা হয়। পবিত্র কুরআন মজীদে নাহল নাম একটি সূরা অবতীর্ন হয়েছে।
মৌমাছি খুবই পরিশ্রমী পতঙ্গ। এক পাউন্ড মধু সংগ্রহ করতে ৫৫০ মৌমাছিকে প্রায় ২০ লক্ষ ফুলে ভ্রমণ করতে হয়। এই মধু সংগ্রহ করতে একটি মৌমাছিকে প্রায় ১৪.৫ লক্ষ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হয়। যা দিয়ে পৃথিবীকে তিন বার প্রদক্ষিণ করা সম্ভব।
মধু সংগ্রহ ছাড়াও মৌমাছি আমাদের অনেক উপকার করে থাকে। যেমন : পৃথিবীতে মানুষ যত রকম চাষাবাদ করে থাকে তার ৭০ভাগ নির্ভর করে মৌমাছির ওপর।
মৌমাছি যখন ফুলে ফুলে উড়ে মধু সংগ্রহ করে তখন তাদের গায়ে ফুলের পরাগরেণু লেগে থাকে। মৌমাছি যখন অন্য ফুলে মধু সংগ্রহ করতে যায় তখন তার গায়ের পরাগরেণু সেই ফুলের গায়ে লেহে পরাগায়ন হয়ে থাকে।
মৌমাছি আমাদের এভাবে উপকার করে থাকে। তাই মৌমাছিকে হত্যা করা যাবে না। কিন্তু মৌমাছি যদি আক্রমণ করে তাহলে তাকে হত্যা করে নিজের প্রাণ বাচানি যাবে। বিনা কারণে হত্যা করা যাবে না।
৩। হুদহুদ পাখি
ইংরেজিতে একে হুপো বা হুপি বলে ডাকা হয়। আরবি ও উর্দুতে একে ডাকা হয় হুদহুদ নামে। মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিটি দেশ, এমনকি ইউরোপের কোনো কোনো দেশেও এর দেখা পাওয়া যায়। বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতেও মাঝেমধ্যে এই পাখির দেখা পাওয়া যায়।
হুদহুদ পাখির অনেক প্রজাতি আছে। আমাদের দেশে মানুষ এই পাখিকে মোহনচূড়া বা কাঠকুড়ালি হিসেবে চেনে। আমাদের দেশের মোহনচূড়াই হজরত সোলায়মান (আ) এর হুদহুদ পাখি কি না তা নিয়ে সংশয় আছে।
পাখিটির শরীর বাদামি এবং ডানা ও লেজে সাদা-কালো দাগ রয়েছে। মাথায় আছে রাজমুকুটের মতো সুন্দর একটি ঝুঁটি। এরা ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে ফসলের জন্য উপকারী পাখি হিসেবে পরিচিত। তাই অনেক দেশে আইন করে এদের সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
৪। চড়ুই সদৃশ্ বাজপাখি
অনেকের মতে এটি শ্রাইক পাখি আবার কারো মতে বাজপাখি । যাকে আমাদের দেশে কষাই পাখি বলা হয়।
এরা ঠিক মাংসের দোকানের মতো শিকার কাঁটাজাতীয় জিনিসে গেঁথে রাখে। মাটিতে থাকা বা উড়ন্ত পোকামাকড়, কীটপতঙ্গ, ছোট গিরগিটি, টিকটিকি, নির্বিষ সাপের বাচ্চা, ইঁদুরছানা ইত্যাদি খেতে পছন্দ করে।
এ ছাড়া তাদের খাবার তালিকায় রয়েছে তেলাপোকা ও ঝিঁঝিপোকা। যার প্রতিটি জিনিসই মানুষের ঘর ও ফসলের জন্য ক্ষতিকারক। আর এই শিকারি পাখি মানুষের অজান্তেই অনেক উপকার করে থাকে । তাই এই পাখি হত্যা করা নিষেধ ।
৫। ব্যাঙ
ব্যাঙ অনেক প্রজাতির হয়ে থাকে। ব্যাঙ মানুষের অনেক উপকার করে থাকে। এটি প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করে। জমির উর্বরতা বাড়ায়। ফসলের পোকা মাকড় খেয়ে থাকে তাই কীটনাশকের প্রয়োজন হয় না। ফলে ফসলের সুরক্ষা বাড়ে এবং কিনাশক না দেয়ার কারণে জমির উর্বরতার নষ্ট হয় না। ব্যাঙ ভূমিকম্পের পূর্বাভাস ও দিয়ে থাকে।
ব্যাঙ যখনি সাপ লোকালয়ের দিকে আসতে থাকে তখনই পাহারাদার হিসেবে সেখানে দাড়িয়ে থাকে যাতে মানুষের কোন ক্ষতি না হয়। যখন সাপ আসে তখন ব্যাঙ তার নিজের শরীর থেকে তিন-চার গুন বৃদ্ধি করে এবং এক ধরনের দুর্গন্ধ বের করে যার কারনে সাপ রাস্তা পরিবর্তন করে অন্য রাস্তায় চলে যায়। এতে করে মানুষের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।এমনকি ব্যাঙ এভাবে মানুষকে রক্ষা করতে কোনো কোনো সময় নিজেই সাপের খাবার হয়ে যায়। তাই অকারণে ব্যাঙ হত্যা করা যাবে না।
ব্যাঙের প্রস্রাবকে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র ঘোষণা করেছেন। কেননা হজরত ইব্রাহিম (আ) কে যখন অগ্নিকান্ডে নিক্ষেপ করা হয়েছিল তখন ব্যাঙ সাহায্য করেছিল।
ব্যাঙ আগুনের ওপর প্রস্রাব করে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছিল। যদিও তার সাহায্য কাজে আসেনি তবুও সে সাহায্য করেছিল। তাই ব্যাংকে হত্যা করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।