মুনাফিকের চরিত্র ও পরিনাম কি হতে পারে জেনে নিন বিস্তারিত ।

মুনাফিকের চরিত্র ও পরিনাম কি হতে পারে জেনে নিন বিস্তারিত ।

মুনাফিক শব্দটি নফক শব্দ থেকে গঠিত।নফক অর্থ গর্ত ,সুরঙ্গ। অনেকে বলে থাকেন নাফেকুল ইয়ারবু শব্দ থেকে মুনাফিক শব্দ গঠিত। পাহাড়ি ইঁদুরকে নাফেকুল ইয়ারবু বলা হয়। কারণ পাহাড়ি ইঁদুর অনেক চালাক। এরা পাহাড়ে গর্ত খনন করে থাকে এদের সহজে ধরা যায় না।মুনাফিকের চরিত্র ও পরিনাম ।

তেমনি মুনাফিক ব্যক্তিদের ও সহজে ধরা যায় না। তারা খুব চালাক হয়ে থাকে। মুনাফিক ব্যক্তিরা মুমিন ব্যক্তিদের সাথে মিশে থাকে। তারা মুমিনদের সাথে নামাজ আদায় করে থাকে কিন্তু মন থেকে  নামাজ আদায় করে না। লোক দেখানো নামাজ আদায় করে। মুনাফিকের চরিত্র ও পরিনাম

মুনাফিক ব্যক্তিরা হলো এমন যে ইসলাম মুখে প্রকাশ করে কিন্তু অন্তর থেকে করে না ,অন্তরে কুফরী লালন করে থাকে। তাই তাদের সহজে  চেনা যায় না। 

ইসলামের কিছু আনুষ্ঠানিক ইবাদত পালন করলেই মুসলিম হওয়া যায় না। মুসলিম হতে গেলে আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতিটি কথার প্রতি গভীর আস্থা ও বিশ্বাস থাকতে হবে এবং সে অনুযায়ী পৃথিবীতে চলতে হবে। যারা মুখে বলে যে, তারা আল্লাহর বিধানকে বিশ্বাস করে কিন্তু তাদের অন্তর একথার ওপর স্থির নয়; ইসলামের পরিভাষায় তাদেরকে বলে মুনাফিক।

মুসলমাদের শ্রেষ্ট ইবাদাত হলো নামাজ। একজন মুমিন ব্যক্তি যখন নামাজে দাঁড়ায় তখন তার মন থাকে বিনীত ও ভয়ার্ত। নামাজে দাঁড়িয়ে শুধু মহান আল্লাহ তায়ালাকেই স্মরণ করে থাকে। কিন্তু মুনাফিকরা যখন নামাজে দাঁড়ায় তখন সে মুমিন ব্যক্তির মতো দাঁড়ায় না।

লোক দেখানো নামাজ পরে ঠিকই কিন্তু নামাজে দাঁড়িয়ে পার্থিব জগতের মধ্যে ডুবে থাকে। নামাজে দাঁড়িয়ে দুনিয়ার কথা চিন্তা করে। 

মুমিনরা পবিত্র ঘর মসজিদে জামাতবদ্ধ হয়ে নামাজ আদায় করে নিজেদের ভেতরের বন্ধনকে সুদৃঢ় করে। আর মুনাফিকরা মসজিদে গিয়ে নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে। মুমিনদের একতাকে তারা ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে চায়।

মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন ,অবশ্যই মুনাফিকরা আল্লাহতায়ালাকে ধোঁকা দেয়, (মূলত এর মাধ্যমে) তিনিই (আল্লাহই) তাদের প্রতারণায় ফেলে দিচ্ছেন, এরা যখন নামাজে দাঁড়ায় তখন একান্ত আলস্য ভরেই দাঁড়ায় তারা কেবল লোকদের দেখায়। এরা আল্লাহতায়ালাকে কমই স্মরণ করে। (সূরা : নিসা ,আয়াত নং : ১৪২) মুনাফিকের চরিত্র ও পরিনাম

 

মুনাফিকের চিহ্ন 

‌‌‘‘আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, মুনাফিকের চিহ্ন তিনটি।সেগুলো হলো : 

১।  যখন কথা বলে, মিথ্যা বলে

২।  যখন অঙ্গীকার করে, তা ভঙ্গ করে 

৩। আমানতের খেয়ানত করে। ’’  (বুখারী-২৬৮২, মুসলিম ১/২৫)

এই স্বভাবগুলো যার মধ্যে আছে সে মুনাফিক। যার মধ্যে এর কোনো একটি স্বভাব থাকবে তা ত্যাগ করা না পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফিকের একটি স্বভাব থেকে যায়। 

মুনাফিকের পরিনাম

মুনাফিকের দল নিজেরা সবসময় পাপ কাজ, অন্যায় কাজের মাঝে ডুবে থাকে। অপরের সম্পদ জোর করে ভোগ দখল করে। তারা দুর্বল মানুষের ওপর প্রতিপত্তির জোরে অবিচার করে। তাদের কাছে কেউ যখন কোনো পরামর্শের জন্য আসে তখন তারা তাদেরকে সুপরামর্শের বদলে কুপরামর্শ দেয়। 

মহান আল্লাহ তাআলা সুরা বাকারার ৮ থেকে ২০ পর্যন্ত মোট ১৩টি আয়াত মুনাফিকদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে নাজিল করেছেন। তা ছাড়া বিভিন্ন সুরায় আরো ৩৮টি আয়াতে মুনাফিকদের আলোচনা করেছেন। মুনাফিকের আরো চারিত্রিক কিছু বৈশিষ্ট্য হলো : 

১। দুমুখো স্বভাবের 

মুনাফিক ব্যক্তিরা দুই রকম আচরণ করে থাকে। তারা মুখে এক কথা বলে অরে অন্তরে আরেক রকম থাকে।অথচ ইসলামে বলা হয়েছে একজন প্রকৃত মুমিনের তিনটি গুন্ থাকতে হবে। তা হলো : ১। অন্তরে বিশ্বাস , ২।  মুখে স্বীকার , ৩। স্বীকৃতি অনুযায়ী কাজ করা। 

মুনাফিক ব্যক্তিরা শুধু মুখে ঈমানের স্বীকৃতি দিয়ে থাকে অন্তরে বিশ্বাস করে না। 

২।  মিথ্যাবাদী 

মুনাফিকরা মিথ্যাবাদী হয়ে থাকে । তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.) সম্পর্কে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী। ’ (সুরা : মুনাফিকুন, আয়াত : ১)

৩। উপহাসকারী 

মুনাফিকরা মুমিন ও কাফির সবার সঙ্গে মেশে। মুমিনদের সঙ্গে মিশে মুমিনদের পক্ষের লোক বলে দাবি করে। আবার কাফিরদের সঙ্গে মিশে বলে আমরা তোমাদেরই লোক। মূলত কারো সঙ্গে তাদের আন্তরিক ও গভীর ভালোবাসা নেই। 

মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘যখন তারা মুমিনদের সঙ্গে মিলিত হয় তখন বলে, আমরা ঈমান এনেছি, আবার যখন নিরিবিলি তাদের শয়তানদের (কাফির নেতাদের সঙ্গে) মিলিত হয় তখন বলে, আমরা তো তোমাদের সঙ্গেই আছি। আমরা তাদের (মুমিনদের) সঙ্গে শুধু ঠাট্টা-তামাশা করছি মাত্র। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৪)

৪।  ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী 

মুনাফিক ব্যক্তিরা সমাজের মানুষের মধ্যে নানা রকম ফ্যাসাদ বা অশান্তি সৃষ্টি করে দিয়ে থাকে। তারা একজনের কথা অন্য জনকে বলে বেড়ায়। 

৫। প্রতারক 

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘অবশ্যই মুনাফিকরা আল্লাহর সঙ্গে প্রতারণা করছে, অথচ তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতারিত করে। বস্তুত তারা যখন নামাজে দাঁড়ায় তখন একান্ত শিথিলভাবে লোকদেখানোর জন্য দাঁড়ায়। তারা আল্লাহকে অল্পই স্মরণ করে। এরা দোদুল্যমান অবস্থায় ঝুলন্ত; এদিকেও নয়, ওদিকেও নয়। ’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৪৩-১৪৪)

মুনাফিকদের আরো অসংখ্য বৈশিষ্ট্য ও চারিত্রিক দোষ-ত্রুটি কোরআন ও হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে। মুনাফিকের চরিত্র ও পরিনাম

 

মুনাফিকের চরিত্র ও পরিনাম

মুনাফিক ব্যক্তিদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। মহান আল্লাহ তায়ালা মুনাফিকদের ক্ষমা না করার ঘোষণা দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন- ‘তুমি এদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো কিংবা না করো (এ দু-টোই) তাদের জন্য সমান। (কারণ) আল্লাহতায়ালা কখনোই তাদের ক্ষমা করবেন না; আল্লাহতায়ালা কোনো নাফরমান জাতিকে হেদায়েত দান করেন না। (সুরা মুনাফিকুন, আয়াত-৬)

জাহান্নাম হলো ভয়াবহ শাস্তির স্থান।  জাহান্নামীদের খাবার দেওয়া হবে গলিত রক্ত, পুঁজ এবং কাঁটাযুক্ত ফল এবং তাদেরকে পান করতে দেওয়া হবে ফুটন্ত গরম পানি; যা তাদের নাড়ি ভুঁড়িকে ছিঁড়ে দিবে। আল্লাহতায়ালা মুনাফিকদেরকে এমন ভয়াবহ আজাবের স্থান জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন এবং তারা সেখানে চিরদিন অবস্থান করবে। 

সেখানে তাদের অবস্থা এমন হবে যে, তারা মৃত্যু কামনা করবে কিন্তু তাদেরকে মত্যু দেওয়া হবে না। আল্লাহতায়ালা মানুষের অপরাধ অনুপাতে তাদেরকে জাহান্নামের বিভিন্ন স্তরে রাখবেন।

মুনাফিকদের স্থান হবে জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে। মহান আল্লাহতায়ালা বলেন- ‘এ মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে অবস্থান করবে, তুমি সেদিন তাদের জন্যে কোনো সাহায্যকারী খুঁজে পাবেনা।’ (সুরা নিসা, আয়াত-১৪৫)

 

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) ঘুম থেকে উঠে যে ৫ টি কাজ করতেন

 

Sharing Is Caring:

Leave a Comment