মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) ঘুম থেকে উঠে যে ৫ টি কাজ করতেন

সকালে ঘুম থেকে উঠলে শরীর ও মন দুইটাই ভালো থাকে। সকালে ঘুম থেকে উঠা স্বাস্থ্যের পক্ষে অনেক উপকারী। [হজরত মুহাম্মদ (সা)] তাছাড়া ভোররাতে বা দিনের শুরুতে সবচেয়ে বেশি কল্যাণ থাকে। শুধু ইবাদত বন্দেগিই নয়, বরং পার্থিব কাজের জন্যও এটি সবচেয়ে উপযুক্ত ও বরকতময় সময়।

সকাল বেলা অনেক  বরকতময় সময়। দেরি  ঘুম থেকে উঠলে সময়ের বরকত হয় না। অলসতা ও ক্লান্তির সৃষ্টি হয়।

সখর গামেদি (রা.) হতে  বর্ণিত, রাসুল (সা.) এ দোয়া করেছেন, ‘হে আল্লাহ, আমার উম্মতের জন্য দিনের শুরু বরকতময় করুন।’ এ জন্যই রাসুল (সা.) কোনো যুদ্ধ অভিযানে বাহিনী পাঠানোর সময় দিনের শুরুতে পাঠাতেন। 

ঘুমের সময় জীবনটা কেমন যেন থেমে থাকে। ঘুম থেকে উঠেই জীবনের গতি শুরু হয়। এই শুরুটা যেন ঠিকঠাক হয়, সে জন্য ঘুম থেকে উঠার পরে কিছু করণীয় কাজ থাকে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) ঘুম থেকে উঠে কিছু কাজ করতেন। 

আমাদের ও উচিত মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) এর পথ অনুসরণ করা। কেননা রাসূল (সা) যে কাজ করতেন এবং যে কথা বলতেন তা সবই সুন্নত কাজের অন্তর্ভুক্ত। তাই এই কাজ গুলো করলে আমরা অনেক নাকি লাভ করতে পারবো এবং মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) এর শাফায়াত পাওয়া যাবে। 

 

 হজরত মুহাম্মদ  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘুম থেকে উঠে যে কাজগুলো করতেন

১।  দ্রুত ঘুম থেকে উঠতে হবে।

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) খুব দ্রুত ঘুম থেকে উঠতেন এবং ঘুম থেকে উঠে চোখ ও মুখে হাত বুলাতেন ঘুম দূর করার জন্য। হাদিস শরীফে এসেছে, নবীজি মোরগের ডাক শুনলেই উঠে যেতেন।(বুখারী :১১২১)

ইবনে আব্বাস রাদিঃ বলেন, আমি আমার খালা মাইমুনার বাড়িতে রাত কাটালাম, দেখলাম নবীজি উঠে ঘুম দূর করার জন্য চেহারায় হাত বুলিয়ে নিচ্ছেন। (বুখারী : ৪৫৭)

 

২।  দোয়া পড়তে হবে 

ঘুম থেকে উঠে সর্ব প্রথম আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে দোয়া পড়তে হবে। হযরত হুজায়ফা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল (সাঃ) রাতে যখন শয্যায় যেতেন গালের নাবালে হাত রাখতেন।তারপর বলতেন , “আল্লাহুম্মা বিইছমিকা আমুতু ওয়া আহইয়া।”

আর যখন ঘুম থেকে উঠতেন, তখন বলতেন ,আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি আহ ইয়ানা বাদামা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুশুর’।” (বোখারি ৬৩১৪)।

অর্থ : সকল প্রশংসা সেই আল্লাহ তা’আলার, যিনি (সাময়িক) মৃত্যু থেকে আমাদিগকে পুনরায় জীবিত করেছেন। আর আমাদের সকলের শেষ গন্তব্য তারই দিকে। (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ)

ঘুম কিছুটা সাময়িক মৃত্যুর মতোই। এই সাময়িক মৃত্যুর পর আবারো স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পেরে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত। তাই ঘুম থেকে উঠে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে এ দোয়া পড়তে হবে। 

 

৩।  তেলাওয়াত করা 

ঘুম থেকে উঠে সূরা আলে ইমরানের শেষ রুকু তেলাওয়াত করা মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) এর অভ্যেস ছিল। সূরা আলে ইমরানের শেষ রুকুতে ১২ টি আয়াত রয়েছে।

এই আয়াতগুলোতে আছে, আল্লাহর সৃষ্টি মহত্ত্ব, দোয়া, ঈমান-কুফুর ও আমল বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু আলোচনা।মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) ঘুম থেকে উঠে তেলাওয়াত করতেন।  বান্দার তো দিনের শুরুতেই এই বিষয়গুলোর সাথে পরিচিত হওয়া উচিত। কোরআন তিলাওয়াত দিয়ে দিন শুরু হওয়া উচিত।

 

৪।  পরিচ্ছন্নতা 

ঘুম থেকে ওঠে নবীজি মেসওয়াক করতেন, উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধৌত করতেন তারপর ওজু করতেন এবং বিশেষভাবে তিনবার নাক পরিষ্কার করতেন। কেননা হজরত  উমর (রা) বলেন, নবীজি ঘুম থেকে ওঠে প্রথমেই মেসওয়াক করতেন। (মুসনাদে আহমদ :৫৯৭৯)

নবীজি বলেছেন, ঘুম থেকে ওঠে তিনবার হাত না ধুয়ে পানির পাত্রে হাত দিয়ে দিও না।মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন ,ঘুম থেকে উঠে প্রথমে ওযু করবে এবং তিন বার নাক পরিষ্কার করবে। (বুখারী :৩২৯৫)

হাদিস  শরীফে বলে হয়েছে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। তাই ঘুম থেকে উঠে মেসওয়াক করে মুখ পরিষ্কার করে নিতে হবে।  কেননা মুখে খাদ্যকণা ইত্যাদি জমে থাকে। লালা জমে থাকে। এতে দুর্গন্ধ ও জীবাণু সৃষ্টি হয়।

তারপর হাত ধুতে হবে। কেননা ঘুমে থাকাকালীন সময়ে কোথায় কোথায় হাত গিয়েছে, কি কি লেগেছে, সে তো তা জানেনা। তাই পানিতে হাত দেওয়ার আগেই ধুয়ে নিবে। নাকে বিশেষভাবে তিনবার পানি দিবে। কেননা ঘুমের সময় নাক খুলা ছিল। নাকে নানা কিছু এসেছে। হাদিসের ভাষায়, নাক পরিষ্কার করলে  শয়তান ও তার ওয়াসওসাও থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। 

৫। পরিবারকে জাগানো ও নামাজ আদায় করা 

পরিষ্কার হয়ে ঘরের মানুষদের জাগাতে হবে এবং নিজেও নামাজ আদায় করে নিবে। হজরত মুহাম্মদ (সা)  বলেছেন, যে ব্যক্তি রাতের ঘুম থেকে নিজে ওঠে, স্ত্রীকেও ওঠায় এবং দুই রাকাত নামাজ আদায় করে, তো সে ও তার স্ত্রী অধিক জিকিরকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।(আবু দাউদ : ১৪৫১)

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) আরো বলেছেন ,ঘুমে থাকাকালীন সময়ে শয়তান মানুষের গর্দানে তিনটি গিঁট মারে। এবং প্রত্যেকটি গিঁট বলতে থাকে, রাত এখনো অনেক বাকী, আরও কিছু সময় ঘুমিয়ে থাকো।

ঘুম থেকে ওঠে আল্লাহর জিকির করলে, প্রথম গিঁট খুলে যায়, ওজু করলে আরও একটি গিঁট খুলে যায় এবং নামাজ পড়তে তৃতীয় গিঁটও খুলে যায়। মানুষ কর্মোদ্যমী হয়ে যায়, তার মনও উৎফুল্ল হয়ে যায়।

আর কোনো ব্যক্তি যদি ওযু করে নামাজ আদায় না করে তাহলে সে  কর্মোদ্যমহীন হয়ে যায়, মনেও উৎফুল্লতা থাকেনা। (বুখারী :১১৪২)

 

শবে বরাত নামাজের নিয়ম এবং ফজিলত

 

Sharing Is Caring:

Leave a Comment